somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদা জিয়ার নিবন্ধ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবেন না : তারানা হালিম

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের পত্রিকাতেই লিখছি। এটাই আমার জন্য সম্মানজনক। আমি ‘রাঘববোয়াল’ ধরনের রাজনীতিবিদ নই। কিন্তু দেশকে যে ভালোবাসি, দেশের সম্মানকে ছোট করব না কখনোই—এটা হলফ করে বলতে পারি।
আমাদের দেশে গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটি বড় অদ্ভুত, যেখানে সবকিছু করার দায়িত্ব সরকারের, না করার দায়ও তাদের। আমি পণ্ডিত না হলেও বুঝি, গণতন্ত্রে সরকারের দায়িত্ব আছে। আছে বিরোধী দলেরও। তাহলে বিরোধী দলের কাছে কেন আমরা দায়িত্বপূর্ণ আচরণ আশা করব না? দাবি করব না?
খুব কষ্ট পেয়েই লিখছি, যখন কোনো সম্মেলনে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের সদস্য এসে আমাকে বলেন, ‘আপনাদের বাংলাদেশ তো আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে,’ মনে হয় আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছি। যখন সাকিব-তামিমদের প্রশংসা করে বিদেশি স্পোর্টস চ্যানেল, ধমনিতে যেন রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। যখন দিল্লির সাংবাদিকেরা বলেন, ‘মানছি, নারীর অধিকার রক্ষায় তোমরা আমাদের ছাড়িয়ে গেছ,’ তখন চোখ জলে ভরে যায়। এই আবেগ দেশের জন্য। আপনাদের পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দেশটা মা নয়?’ মাকে অপবাদ দিলে আমরা কি চুপচাপ মেনে নেব? এই অপমান কি বিদ্ধ করবে না আমাদের আত্মসম্মানবোধকে? নাকি ক্ষমতার মোহ দেশপ্রেমকে গ্রাস করেছে? আমার দেশের সম্মান তো আমার সম্মান। আমার মায়ের সম্মান। যখন দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধিতে পশ্চিমাদের ছাড়িয়ে যাবে’, যখন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল বলে, ‘বাংলাদেশসহ ১১টি সম্ভাবনাময় দেশ সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে যাবে’, যখন ২৬ ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছর থেকে তিন বিলিয়নের বেশি বেড়েছে, যখন জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে গত বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি, তখন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমস-এ নিবন্ধ লিখে ‘বাংলাদেশের বাণিজ্যসুবিধা তুলে নেওয়ার’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দাবি জানালেন, এ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি ‘শক্তিশালী পদক্ষেপ’ নিতে বললেন, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র-মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী-জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে ধিক্কার দিলেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশের কতটা ক্ষতি করলেন, একটু ভাববেন কি? দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি ‘শক্তিশালী বিদেশি পদক্ষেপ’ কামনা করে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বকে কি হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেননি? কেন বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে দেশকে ছোট করা?
আমাদের স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কোনো শক্তির হস্তক্ষেপ বিরোধীদলীয় নেতা আহ্বান করতে পারেন না। জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের স্বার্থ হননের আত্মঘাতী পথে অগ্রসর হওয়া যায় না, এটি তাঁর মতো শীর্ষ রাজনীতিবিদের অজানা থাকার কথা নয়। আসলে রাজনীতির চরিত্র বড় বিচিত্র!
বিভিন্ন জনসভায় তিনি বলেন, ‘নিজের চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ বড়।’ অথচ চললেন ঠিক বিপরীত পথে? দলকে বড় করে দেখে বিদেশি শক্তির কাছে দেশের ক্ষতি করার আহ্বান জানালেন? তাঁর এই বাণিজ্যসুবিধা না দেওয়ার অনুরোধে যদি তা না দেওয়া হয় এবং তাতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো তা থেকে দেশ বঞ্চিত হয়, তবে তার দায় কিন্তু এই লেখার জন্য তাঁকেই নিতে হবে।
বাণিজ্যসুবিধা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার যে দাবি তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সে জন্য তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে লাখ লাখ পোশাকশ্রমিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন?
এই সরকারের সময়ে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। অথচ তিনি তাঁর সরকারের সময়ের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, কিবরিয়া হত্যাকাণ্ড ও ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথা ভুলে গিয়ে এ দেশকে এখন জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে তুলে ধরে, অনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ভিসা না দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার যে তদবির করলেন, তার জের ধরে যদি এ দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা বিদেশে পড়ার ভিসা না পায়, চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার জন্য কেউ ভিসা না পায়—সেই দায়ও তাঁকে নিতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম এখন আর রঙিন চশমা দিয়ে পৃথিবী দেখে না। তারা স্বচ্ছ। তারা মানবতাবিরোধীদের বিচার চায়। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাকে পছন্দ করে না। আপনি তাদের মনের কথা বুঝতে পারছেন?
মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতাসংগ্রামকে আপনি মুক্তিযুদ্ধ লিখতে পারেননি। লিখেছেন ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার।’ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যেক নাগরিকের (যুদ্ধাপরাধী ছাড়া) আবেগ ও পরিচয় জড়িত। সেই আবেগ থেকেই তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠস্বর হয়ে প্রতিবাদ করছি।
এই সরকারের সময় বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে আমরাই প্রতিবাদ করব। আমি বহুবার বিদেশে বিভিন্ন সম্মেলনে গেছি। লক্ষ করেছি, তারা কখনোই তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলবে না, জানতে চাইবে আপনার দেশের সমস্যা সম্পর্কে। কারণ, নিজের দেশের সম্মান তাদের কাছে অগ্রাধিকার পায়, ‘নিউজ আইটেম’ নয়।
বিএনপির চেয়ারপারসন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানাভাবে চাপ সৃষ্টির, এমনকি বিভিন্ন প্রদত্ত সুবিধা প্রত্যাহার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই সবাইকে, আপনি ওবামা সমর্থনের প্ল্যাকার্ড ধরেছেন অথবা রমনির সমর্থনে—সবাইকেই। কারণ, আপনারা আপনাদের কণ্ঠস্বর আমাদের শুনিয়েছেন।’
যাঁর কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে বিভিন্ন সুবিধা না দেওয়ার আর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানালেন, তাঁর এই নীতিটি থেকেও তো শিক্ষা নেওয়া যায়। তিনি দেশের নাগরিককে তাঁর বা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর সমর্থক হিসেবে দেখেননি বরং দেশের জনগণ কী বলতে চায়, তা শুনেছেন। আপনিও শুনুন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের কণ্ঠস্বর। আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করব, বিদেশিরা নয়। রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, দেশের বিভিন্ন সুবিধা বন্ধ করার আহ্বান করার মধ্যে ক্ষমতার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ পেয়েছে, দেশের প্রতি নয়।
অনুরোধ করি, ব্যক্তিস্বার্থ বা কোনো আকাঙ্ক্ষার কারণে দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন না। স্মরণ করুন দেশকে ভালোবাসার চিহ্নভরা একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা তরুণের সেই চিঠির লাইনটি: ‘মা, দোয়া করো, যেন দেশের জন্য শহীদ হতে পারি।’
লক্ষ করুন, তিনি বীরবেশে ফেরত আসতে চাননি, দেশের জন্য শহীদ হতে চেয়েছেন। আপনাদের এত বেশি কিছু করতে হবে না, কেবল দেশের স্বার্থে দেশের অন্তত ক্ষতি করবেন না।
তারানা হালিম: সমাজকর্মী ও সাংসদ।


Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×