somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করে দিতে পরিকল্পনা করেন গোলাম আযম

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল ১৪০ সদস্যের শান্তি কমিটি গঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম ছিলেন শান্তি কমিটির ৩ জন মুল নেতার একজন। ৪ মে শান্তি কমিটির বৈঠকে বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করে দিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেন শান্তি কমিটির নেতা গোলাম আযম।

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চতুর্থ দিনের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনকালে এসব কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ। এর সপক্ষে তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র যেমন, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক সংগ্রামের বিভিন্ন সংবাদের কাটিং এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সরকারি ও অন্যান্য উৎস থেকে জব্দ করা বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে যুক্তি প্রদর্শন করেন।

বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমন। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের ৬১টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ১৪টি অভিযোগের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে।

বুধবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধরনের অভিযোগ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত ৩টি ও উস্কানি সংক্রান্ত ৫টি অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। উস্কানি সংক্রান্ত বাকি ২৩টি অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন রাষ্ট্রপক্ষ। এর আগে মঙ্গলবার উপস্থাপন করা হয় পরিকল্পনা বিষয়ক ৬টি অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক। আর রোববার ও সোমবার প্রথম দু’দিনে যুক্তিতর্কের সারসংক্ষেপ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিষয়ে যুক্তি উত্থাপন করেন প্রসিকিউটররা।

প্রসিকিউটর সীমন বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল গঠিত ১৪০ সদস্যের শান্তি কমিটির মুল ৩ নেতার একজন ছিলেন গোলাম আযম। কুষ্টিয়া থেকে জব্দ করা তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছে পাঠানো একটি গোয়েন্দা রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে সীমন জানান, ৪ মে শান্তি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় শান্তি কমিটির নেতা একিউএম শফিকুল ইসলামের এলিফ্যান্ট রোডের বাসায়। ওই বৈঠকে শান্তি কমিটির নেতা গোলাম আযম বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

আগামী রোববার ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন মুলতবি করেছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে পাকিস্তানি সেনাদের উস্কানি দেওয়া সংক্রান্ত গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর সপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন রাষ্ট্রপক্ষ।

গোলাম আযমের মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া বর্তমানে শেষ ধাপে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের পরে আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করলে আইন অনুসারে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করবেন ট্রাইব্যুনাল। উল্লেখ্য, নির্ধারিত ১২ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন সাফাই সাক্ষীকে হাজির করে সাক্ষ্য দেওয়াতে পেরেছেন আসামিপক্ষ। একমাত্র সাফাই সাক্ষী গোলাম আযমের ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী গত বছরের ১২ নভেম্বর থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাফাই সাক্ষ্য দেন তার বাবার পক্ষে। রাষ্ট্রপক্ষ তার জেরা শেষ করেন ১১ ফেব্রুয়ারি।

অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার ৭ সাক্ষীসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৭ জন সাক্ষী এর আগে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষ তাদের জেরাও সম্পন্ন করেছেন। তাদের মধ্যে ১ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া ঘটনার সাক্ষীরা হলেন, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও গবেষক ড. মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবউদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, মানবাধিকারকর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের সোনা মিয়া, একজন শহীদ পরিবারের নারী(ক্যামেরা ট্রায়াল), দেশবরেণ্য গীতিকার ও সুরকার মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, রাজধানীর নাখালপাড়ার ফরিদ আলম এবং মহসিন আলী খান।

আর জব্দ তালিকার সাক্ষীরা হলেন- বাংলা একাডেমীর সহ গ্রন্থাগারিক মো. এজাব উদ্দিন মিয়া, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) রাজনৈতিক শাখার উচ্চমান সহকারী সেলিনা আফরোজ, কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের উচ্চমান সহকারী কাজী আইয়ুব হোসেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার কামালের বোন ডা. মুনিয়া ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় যাদুঘরের কিপার ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত সাঁট মুদ্রাক্ষরিক জামিনুর শেখ।
Click This Link

মানবতাবিরোধী ৫ ধরনের অপরাধের ৬১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে গত বছরের ১৩ মে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। ১০ জুন তার বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ১ জুলাই থেকে শুরু হয় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ।

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ হলো, মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, উস্কানি, পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্য করা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেওয়া।

অভিযোগগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা ও তাদের সঙ্গে চক্রান্ত করার জন্য ছয়টি, তাদের সঙ্গে পরিকল্পনার তিনটি এবং উস্কানি দেওয়ার ২৮টি এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ২৪টি অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ জানুয়ারি গোলাম আযমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়।

পরে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কারাগারে পাঠানোর পর চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বিচার চলছে।

এর আগে গত বছরের ৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের জমা দেওয়া ওই আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মোট ৬২টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৬১টি গ্রহণ করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। পরে কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের মাধ্যম। মোট ৩৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র সংযুক্ত করা হয়।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×