somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপি: লিমা তখন সত্যজিৎ রায়কে চেনে না, মহেশ ভাটকে চেনে

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



25 সেপ্টেম্বর, 1994
404 মীরহাজিরবাগ, ঢাকা।
আজ আমার অনেক ব্যস্ততা। আমার ছাত্রী লিমার ছোট বোন ফাতেমা আফরোজ তমা-র চতুর্থ জন্মদিনের সকল আয়োজন সম্পন্ন। প্রায় 200 লোক খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়েছে। প্রোগ্রামটি হবে ছাদে। আমি এ বিষয়ে লিপুর সঙ্গে তার এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জে। অথচ এমন ক্ষণে আমার মনে বারবার মনে পড়ছে আবুল হোসেনের ‘জন্মদিন’ নামের কবিতাটি: ‘আমার জন্মের সঠিক তারিখটা কখনও জানতে পারিনি। যার ক্ষণের কথা মা’র মনে ছিল, কিন্তু সন তারিখটা, যতদিন বেঁচেছিলেন, কিছুতেই মনে করতে পারেননি।...’ অবশ্য কবিতার শেষে তিনি এ কবিতাকে সকল আনুষ্ঠানিকতার অনেক উর্ধ্বে নিয়ে যান।
গত বছর আটকে গিয়েছিলাম কুমিল্লায়। তখন আমাদের ক্লাস হয়েছে নিয়মিত। আর এবার ঢাকায় থেকেও নিয়মিত ক্লাস পাই না। সেদিন এ নিয়ে আমার এক ম্যাডামের সঙ্গে কিছুটা মনোমালিন্যও হয়েছে। অথচ ছোটবেলায় ক্লাস ফাঁকি দিতে পারলেই বাঁচতাম যেন। যেমন এখন ছোটভাই পিয়াস কুমিল্লায় এটা করে। সময় পেলেই শুধু ঘুরবে। মা না থাকলে সে মনে হয় ঘরেই ফিরতো না।
এবার কুমিল্লায় গেলে মোফাজ্জল হায়দার মামার কাছ থেকে কিছু পাঠ্য বই আনতে হবে। মামার অনার্স পরীক্ষার রেজাল্ট নিশ্চিত ভালো হবে। কারণ মামা সিলেবাসভুক্ত প্রায় প্রতিটি বিষয়েরই সব মূল বই পড়ে নেন।
বড় ভাই একটি অডিও ক্যাসেট কিনেছিলেন কুমার শানুর। তখনও তার গান আমরা তেমন শুনিনি। তাই ভাইয়ের প্রশংসা করলাম না। অথচ ঢাকায় এসে কুমার শানুর অন্য গানগুলো শুনে তো অবাক হলাম। বাড়িতে গেলে বলতে হবে বড় ভাইকে যে তিনি ঠিক ক্যাসেটটিই কিনেছিলেন। আমরা এমনই। নীরদ চন্দ্র চৌধুরীকে বিদেশীরা বলে দিতে হয়েছে যে তিনি পন্ডিত। রবীন্দ্রনাথকে বিদেশীরা নোবেল দিয়ে মূল্যায়ন করার পর আমাদের খবর হয়েছে। আজ যদি নরেন বিশ্বাস মারা যান, তখন আমাদের খবর হবে যে, এমন উচ্চারণবিদ আর হবে না।
কিছু কবিতার আবৃত্তিভঙ্গি আমি নিজেই নির্মাণ করছি এবং এগুলোর নোটও রেখে দিচ্ছি। আসলে আমি আগে অভিনয়কলা রপ্ত করতে গিয়েছিলাম এবং পরে আবৃত্তিকলা ।
এখন দেখছি আবৃত্তি এবং অভিনয়কলায় অসম্ভব মিলও রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ কাব্যনাট্য আমার পাঠ্য। এর অভিনয় আমি আজও দেখিনি। কিন্তু গোবিন্দমানিক্যের অভিনয় করার মতো দক্ষ অভিনেতা আমাদের দেশে এখন অনেকই রয়েছে। এ নাটকের ‘জয়সিংহ’কে আমার ভীরু যুবক মনে হয়েছে। রঘুপতি হলো যতো নষ্টের মূল। আমি যদি গোবিন্দমানিক্যের জায়গায় থাকতাম,
রঘুপতিকে মেরে ফেলতাম। এতো ধৈর্য আমার নেই যে, তাকে অনুশোচনার মধ্যে ফেলে সংশোধন করতাম। এই এক নাটক, যেখানে রবীন্দ্রনাথ অসম্ভব প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।
লিপু-লিমারা আমাকে যে রুমটা আমাকে থাকার জন্য দিয়েছে, এটা আগে 400/-(চারশত) টাকা ভাড়া দিতো। আমি তখন লিপুদের পড়াতাম মাসিক 800/- (আটশত) টাকা বেতনে। তারপর লজিং চলে আসি। তিনবেলা খাওয়া আর এই রুমে থাকা। হিসাবে আমারই লাভ হয়েছে। আমাকে টিউশনির বদলে লজিং এর প্রস্তাব দিয়েছেন লিপুর বাবা। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার চিন্তার অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমি আমার ছাত্রী লিমাকে বলি, সত্যজিৎ রায় কে?
সে বলে, ওই লোককে সে চিনে না। আমি যখন আবার তাঁকে বলি, মহেশ ভাট কে? লিমা বলে, ভারতের হিন্দী চলচ্চিত্রের পরিচালক।
‘এরিস্টটলের পোয়েটিকস ও সাহিত্যতত্ত্ব’ পড়ছি। সাধনকুমার ভট্টাচার্যের গ্রন্থ। এতো কঠিন বিষয়, বুঝতে ভীষণ কষ্ট হয়। কুমিল্লায় থাকতে মোফাজ্জল মামার কাছ থেকে শ্রীশচন্দ্র দাশের এবং অতুলচন্দ্র গুপ্তের গ্রন্থ এনে পড়েছি।
মোফাজ্জল মামার পরিবার অত্যন্ত শিক্ষিত পরিবার। আমি বাংলায় অনার্স পড়ার ক্ষেত্রে এই মামার অবদান রয়েছে। মা বলেছেন, তাদের পরিবার সত্যি অনেক উঁচু পরিবার।
আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘স্বাধীনতা উত্তর ছোটগল্প’ প্রবন্ধটি পড়লাম। অসাধারণ। মান্নান সৈয়দ আমাদের শিক্ষক। এটা অবশ্যই আমাদের গর্বের বিষয়।
1991 সালে আমি দৈনিক ইত্তেফাক অফিসের সাহিত্য সম্পাদকের কাছে নিয়মিতই যেতাম। আল মুজাহিদী। কবি। তিনি আমার কবিতা কখনোই ছাপাতেনই না। কিন্তু চমৎকার ব্যবহার করে বসাতেন। কথা বলতেন। স্নেহ করতেন। একদিন তিনি আমাকে বললেন, অসীম তুমি অসীম সাহার বইপত্র কি বেশি পড়ো? আমার হাতে তখন ছিলো অসীম সাহার প্রবন্ধগ্রন্থ ‘প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা’।
1976 সালে ‘মুক্তধারা’র চিত্তরঞ্জন সাহা’ কর্তৃক প্রকাশিত এ গ্রন্থের পৃষ্ঠার মুদ্রিত মূল্য আট টাকা মাত্র। অথচ এ বই আমি পল্টনের ফুটপাথ থেকে কিনেছিলাম মাত্র তিন টাকায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের ছাত্রদের জন্য একটি অসাধারণ গ্রন্থ সিলেবাসে দেয়া হয়েছে। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর ‘রবি-পরিক্রমা’। রবীন্দ্রনাথকে কতোটা পড়লে এমন গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব আমার মাথায় আসে না। তারা কি লেখাপড়াটা মায়ের পেটে থাকতেই শুরু করেছিলেন। এতো মেধাবী লোক, আমাদের দেশে জন্মেছেন, ভাবতেই আমার মাথা অচল হয়ে যায়।
কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থার গফুর নানার বাড়িতে ছোটবেলায় নিয়ে যেতেন আব্বা। মা, বড় ভাই, সিরাজ জ্যাঠা, মামাতো ভাই কবির...সবাই আমরা যেতাম। ওই বাড়িতে ছিলো হাঁস-মুরগীর খামার। আর ছিলো গরুর প্রজনন কেন্দ্র। কবির ভাই গরুর প্রজনন দেখাতে নিয়ে যেতেন। গরুকে একটি লোহার খাঁচায় ঢুকিয়ে একজন লোক হাতে গ্লাভস পরে যা করতেন, সবাই আমরা তা দেখে হাসাহাসি করতাম। অবশ্য আমরা যেতাম ওরস উপলক্ষ্যে।
একবার আমাদের সিরাজ জ্যাঠা গ্রামের বাড়ি থেকে এই গফুর নানার বাসায় আসতে গিয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে যাচ্ছিলেন। পরে জ্যাঠা বাড়িতে গিয়ে এ নিয়ে গল্প করতে গিয়ে হাসতে হাসতে এবং আমাদের হাসাতে হাসাতে দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা হয়েছিলো। জ্যাঠা নাকি জেলখানার পুলিশকে গিয়ে বলেছিলেন, ভিতরে যাবো। সামনে থেকে সরো। পুলিশ নাকি বলেছে, কোথায় যাবেন? জ্যাঠার উত্তর: আমার গফুর পীরের বাড়ি। পুলিশ নাকি বলেছে, এই পীরের বাড়িতে গেলে আর বের হতে পারবেন না। কারণ এটা জেলখানা। এই জেলখানার নাম শুনে সিরাজ জ্যাঠা দশ হাত পিছিয়ে এসে বলেন, খাইছে আমারে! এ যে দেখছি বড় পীরের বাড়ি। পরে জ্যাঠা বিভিন্ন লোককে জিজ্ঞেস করে গফুর নানার বাড়ির অনুষ্ঠানে আসেন।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×