somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার বাকরখানি প্রস্তুত প্রণালি সহ :D :) :D

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাকরখানি ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি জাতীয় খাবার বিশেষ। এটি বাংলাদেশের পুরান ঢাকাবাসীদের সকালের নাস্তা হিসাবে একটি অতি প্রিয় খাবার। ময়দার খামির থেকে রুটি বানিয়ে তা মচমচে বা খাস্তা করে ভেজে বাকরখানি তৈরি করা হয়। ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের বাকরখানি পাওয়া যায় পুরান ঢাকায়। বাকরখানি তে সাধারণত ময়দার সাথে স্বাদবর্ধক আর কিছু দেয়া হয় না। তবে চিনি দেয়া বাকরখানিও একেবারে বিরল নয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাকরখানি রসালো ও সুমিষ্ট।বাকরখানি রুটির নামের পেছনে আছে এক করুণ ইতিহাস। জনশ্রুতি অনুসারে, জমিদার আগা বাকের তথা আগা বাকির খাঁর নামানুসারে এই রুটির নামকরণ করা হয়েছে।



নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর দত্তক ছেলে আগা বাকের। প্রখর মেধার অধিকারী আগা বাকের যুদ্ধবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন। রাজধানী মুর্শিদাবাদের নর্তকী খনি বেগম এবং আগা বাকের পরস্পরের প্রেমে পড়েন। কিন্ত উজিরপুত্র নগর কোতোয়াল জয়নাল খান ছিল পথের কাঁটা, সে খনি বেগমকে প্রেম নিবেদন করলে তিনি জয়নাল খানকে প্রত্যাখান করেন। প্রত্যাখ্যাত হয়ে জয়নাল খনি বেগমের ক্ষতির চেষ্টা করে এবং খবর পেয়ে বাকের সেখানে যান ও তলোয়ারবাজিতে জয়নালকে হারিয়ে দেন। অন্যদিকে জয়নালের দুই বন্ধু উজিরকে মিথ্যা খবর দেয় যে, বাকের জয়নালকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। উজির ছেলের হত্যার বিচার চায়।



নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ পুত্র বাকেরকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। অবশেষে বাকেরের হাতে মারা যায় বাঘ। ইতিমধ্যে জয়নালের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ফাঁস হয়ে গেছে ও সে জোর করে খনি বেগমকে ধরে নিয়ে গেছে দক্ষিণ বঙ্গে। উদ্ধার করতে যান বাকের খনি বেগমকে। পিছু নেন উজির জাহান্দার খান। ছেলে জয়নাল খান বাকেরকে হত্যার চেস্টা করলে উজির নিজের ছেলেকে হত্যা করেন তলোয়ারের আঘাতে। এই অবস্থাতে জয়নাল খনি বেগমকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে। বাকেরগজ্ঞে সমাধিস্থ করা হয় খনি বেগমকে। আর বাকের সবকিছু ত্যাগ করে রয়ে গেলেন প্রিয়তমার সমাধির কাছে – দক্ষিণ বঙ্গে। বাকের খাঁর নামানুসারেই বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ (পটুয়াখালি-বরিশাল) অঞ্চলের নাম হয় বাকেরগঞ্জ। ঐতিহ্য্যবাহী বাকরখানি রুটির নামের পেছনেও রয়েছে বাকের-খনির প্রেমের ইতিহাস। অবশ্য নামকরণের ব্যাপারে অন্য আরেকটি জনশ্রুতি রয়েছে।



সে অনুযায়ী, মির্জা আগা বাকের ঢাকায় বাকরখানি রুটি প্রচলন করেন। তিনি বৃহত্তর বরিশালের জায়গীরদার ছিলেন। তার প্রেয়সী ছিল আরামবাগের নর্তকী খনি বেগম। তাদের মধ্যে গভীর প্রেম ছিল বলে কথিত আছে। পরবর্তীতে আগা বাকের ২য় মুর্শিদ কুলি খাঁর কন্যাকে বিয়ে করেন। কিন্তু খনি বেগমের স্মৃতি তিনি ভুলে যান নি। তার আবিস্কৃত এবং প্রিয় খাদ্য বিশেষভাবে তৈরি রুটির নাম তার প্রেমকাহিনীর উপর ভিত্তি করেই নামকরণ করা হয়েছিল বাকের-খনি রুটি। পরবর্তীতে এই নাম কিছুটা অপভ্রংশ হয়ে বাকরখানি নাম ধারণ করে। জনশ্রুতি মেনে নিলে ধরে নিতে হয়, বাখরখানির সৃষ্টি আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে।



চানখাঁরপুল পার হয়ে নাজিমুদ্দিন রোড, এ সড়কের দুই পাশে পর পর অনেক দোকান। বিভিন্ন আকৃতি ও স্বাদের বাকরখানি পাওয়া যায় এখানে। আছে কাবাব বাকরখানি, চিনি বাকরখানি, ছানা বাকরখানি, খাস্তা বাকরখানি, নোনতা বাকরখানি, পনির বাকরখানি, নারিকেল বাকরখানি, ঘিয়ের বাকরখানি, মাংসের বাকরখানিসহ এ খাবারের আরো অসংখ্য পদ। সাধারণ বাকরখানির প্রতিটির দাম দুই টাকা থেকে চার টাকা হলেও কাবাব, পনির বা মাংসে বানানো এ খাবারের দাম একটু বেশি। অর্ডার দিয়েই বানিয়ে নিতে হবে আপনাকে।



এসব দোকানের বাকরখানিই মোড়কজাত করে শহরের অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডি, উত্তরা, বনানী, গুলশানের ডিপার্টমেন্ট স্টোরে সরবরাহ করা হয়। চকবাজার, আমলিগোলা, নাজিরাবাজার, বংশাল, ইসলামবাগ, হাজারীবাগ, আবুল হাসনাত রোড, সিদ্দিকবাজার, বনগ্রাম, মৈশুণ্ডি, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, একরামপুর, গেণ্ডারিয়া, নারিন্দা, দয়াগঞ্জসহ পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকায় রয়েছে বাকরখানির দোকান।



পুরান ঢাকায় হাজারো পরিবার আছে যারা বংশপরম্পরায় বাকরখানির কারিগর। সুস্বাদু এ খাবারের কথা বলতে গিয়ে এখনো পুরান ঢাকার মানুষ আগা বাকের ও খনি বেগমের প্রেমকাহিনীটা স্মরণ করেন। 'বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে স্থাপিত এ নগরীকে বলা হয় প্রাচ্যের রহস্য নগরী। তার নানা রহস্যের এক রহস্য এ বাকরখানির রন্ধনশিল্পটিও!' বলছিলেন কায়েতটুলির হাজি মোহাম্মদ বিল্লাল।
ঢাকাবাসীর সকালের নাশতা হিসেবে অতি প্রিয় এ বাকরখানি ময়দার খামির থেকে তৈরি হয়। খামির করতে পানির বদলে পরিমাণমতো সয়াবিন-ডালডা ব্যবহার করা হয়। তারপর ভাজা হয় তন্দুরের তাপে। বিভিন্ন আকারের এ খাস্তা মচমচে রুটি মুখে দেওয়ার পর মাখনের মতো গলে যায় নিমেষেই। আজ শহরবাসীর খাদ্য তালিকায় চলে এসেছে বার্গার, পিৎজা, স্যান্ডউইচ। কিন্তু বাকরখানির চাহিদা অতীতে যেমন ছিল এখনো তেমনি আছে। বদলায়নি এর চমৎকার স্বাদ। তিন শতাব্দীর ঐতিহ্যের ধারক এ খাবারটি এখনো চাহিদার শীর্ষে। 'পুরান ঢাকার বনেদি পরিবারগুলো বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে মালাই-মাখনের বাকরখানির অর্ডার এখনো দেয়।' জানালেন নাজিমুদ্দিন রোডের বিজয় বাকরখানি রুটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতকারক নিজাম।



ঢাকার আদিবাসীরা ছিলেন ভোজনবিলাসী, খাদ্যরসিক। তাদের এ অভিধাকে বাঁচিয়ে রাখতেই যেন এ ফাস্টফুডের যুগেও সগৌরবে টিকে আছে এ ঐতিহ্যবাহী এ খাবার।



অনেক তো হল বাকড়খানির কথা কি খেতে ইচ্ছে করছে? তাহলে আর দেরি কেন জেনে নিন বাকর খনির প্রস্তুত প্রণালী



বাকরখানি
উপকরণ
ক. ময়দা ১ কাপ, ডালডা ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ, তেল ১ টেবিল চামচ, লবণ ১ চা চামচ, পানি পরিমাণমতো।
প্রস্তুত প্রণালি
১. ময়দা গলানো ডালডা, তেল ও লবণ মেখে খাস্তা করে নিন।
২. এবার পরিমাণমতো পানি দিয়ে ময়দা ময়ান করে ঢেকে রাখুন ২ ঘণ্টা।
খ. তেল ১ কাপ, ডালডা ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ।
প্রস্তুত প্রণালি
১. ডালডা গরম করে গলিয়ে ঠাণ্ডা করুন।
২. ডালডা ও তেল একসঙ্গে মিলিয়ে বিট করে রাখুন।
গ. ময়দা ১ কাপ, কর্নফ্লাওয়ার আধা কাপ, তেল ১ কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ।
প্রস্তুত প্রণালি
ময়দা, কর্নফ্লাওয়ার, তেল_সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে রাখুন।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. ক-এর উপকরণ দিয়ে তৈরি খামির ৪ ভাগ করে প্রতিটি দিয়ে যতটুকু সম্ভব খুব পাতলা রুটি বেলে নিন।
২. রুটির চারদিকে ১ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে খ-এর ডালডার মিশ্রণের প্রলেপ দিন। এর ওপর গ-এর উপকরণ দিয়ে তৈরি ময়দার মিশ্রণ ছিটিয়ে দিন।
৩. রুটি দুই ভাঁজ করে আবার ডালডার প্রলেপ দিয়ে ময়দা ছিটিয়ে দিন। এভাবে আবার করুন।
৪. ভাঁজ দেওয়া খামির ঢেকে রেখে দিন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা।
৫. এবার ৪টি খামিরের প্রতিটি থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে গোল বাকরখানি বানিয়ে ছুরি দিয়ে আঁচড় কেটে দিন।
৬. তন্দুরীতে সেঁকে নিন বা ইলেকট্রিক ওভেন ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রি-হিট করে ২০ মিনিট বেক করে নিন।

তথ্য সুত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
১৫টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×