somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একটি জাতির অবক্ষয় !!!

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি বেশ কয়েকদিন ধরেই আমার ফ্রেন্ডস ,ফলোয়ারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে ও ভোট দিতে উৎসাহিত করে আসছি । সন্ত্রাসীরা ভোট নিয়ে যাবে কিংবা ভোট দিলেও গুনবে না এমন ভয় কে অমূলক বলেছি । যারা আমায় বলত ভাই ,ভোট দিতে গিয়ে দেখবো ,আমার ভোট হয়ে গেছে...!!! কিংবা ভোট দিতে যাবো ,জানের ভয় আছে না ...!!! তাদের বলেছি আপনারা এই গুটিকয়েক সন্ত্রাসীদের ভয় পাবেন না,দেখবেন পরিস্থিতি বিপরীতও হতে পারে... বিপরীত কিছুও ঘটতে পারে... আমরা সবাই ভোটকেন্দ্রে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ...

আমি আজকে খুব অসহায় বোধ করছি ।আমার লজ্জা হচ্ছে এই বাংলাদেশকে দেখে।বেলাশেষে এমনটাই কি আমাদের চাওয়া ছিল।আমি কখনো বলিনি ঐ মার্কা কে ভোট দিন ,আমি বলেছি আপনারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন ।কারন,আজকে যদি আপনি ভয় পেয়ে আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকেন তবে ভবিষ্যতে কোন অন্যয়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সৎ সাহস পাবেন না ।কিন্ত এত নগ্ন ভাবে মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে যা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সত্যি কলঙ্কজনক একটি অধ্যায় ।

আজকে নির্বাচনের একটা ছোট্ট চিত্র তুলে ধরি ।
সকাল ৯ টার দিকে বাবাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ,বাবা ভোট দিয়েছো ? বাবা কথা বলতে খুব অসংকোচবোধ করছিল ।কি যেন লুকাচ্ছিল।আমি বাবাকে চেপে ধরলাম, বাবা ভোট দিয়েছও ?? না দিলে যাও আম্মুকে নিয়ে ভোট দিয়ে আসো ।কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বাবা বলল, ভোট ওরা দিয়ে দিছে ।আমি বললাম ,কে দিয়েছে ?? তুমি কেন্দ্রে গিয়েছিলে ?? নাকি শুনা কথায় বিশ্বাস করে বসে আছো ।তোমার ভোট কেউ দেয়নি ,যাও আম্মুকে নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসো।
বাবা এবার অনেকটা বিরক্তির সুরে বলল,আরে বাবা গেছিলাম । তয় গতকাল রাইতেই বাড়িত আইয়া কইছিল,আপনার ভোট হইয়া গেছে ।সকালে কেন্দ্রে যাইয়া আঙ্গুলে দাগ দিয়া আইসেন । তাই,সকালে কেন্দ্রে গেছিলাম ঘুরে ফিরে আইলাম।তয় আঙ্গুলে দাগ দিতে দেইনি ।বাবার শেষ বাক্যটা অনেকটা গর্বের সুরে বললেন ।

আমার প্রশ্ন হল,আমার পরিবারের ভোট আগের রাতে কে দিয়ে দিল? এমন লাখ লাখ বাবা-মা আজকে শুধু কেন্দ্র ঘুরতে গিয়েছিল ,ভোটাধিকার প্রয়োগ না করেও অন্যায়ের সাক্ষী হিসেবে আঙ্গুলে বেগুনী দাগ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ...
অনেক তরুণেরা প্রথমবার ভোট দিতে গিয়েছিল কিন্ত তাদের ভোটার নাম্বার টাই দেওয়া হয়নি ,অনেকে হয়তো ঐ মার্কাতেই ভোট টা দিতেন যে মার্কায় জাল ভোট হয়েছে গতরাতে ।কিন্ত ভোট টা নিজ হাতে দিতে চেয়েছিলেন ।
অনেকেই লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থেকেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিন্ত প্রিসাডিং অফিসারদের লাঞ্চ(যদিও নিয়ম নেই) ২-৩ ঘণ্টাতেও শেষ হয়নি কিন্ত ভোট দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে ।
অনেকেই আবার আমার বাবার মত হয়তো বলছে,আমার ভোট চুরি করেছে ,তয় আঙ্গুলে দাগ বসাতে দেইনি ।

বাংলাদেশের মত এত জনাধিক্যের একটি দেশে নির্বাচনে সহিংসতা হবে ,এটা মানি ।কিন্ত যখন রাষ্ট্রযন্ত্র সন্ত্রাস কায়েম করে তখন এটাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে।আমরা দেখেছি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শাসকদল কতটা নগ্ন ভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেছে,পুলিশ ,র‍্যাব ,বিজিবি এমন কি সেনাবাহিনীকেও নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করেছে ।অযথা মামলা হামলার মাধ্যমে হয়রানি করেছে ,প্রার্থী ও সমর্থকদের আহত করেছে ।তবু ,বিরোধীপক্ষ জনগনের দিকে তাকিয়ে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চিৎকার ,চেচামেচি করেছে ।কমিশনে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে গেছে ।তারা বলেছে,নির্বাচনের দিন জনগন কেন্দ্রে আসলে সব কৌশল মিথ্যে হয়ে যাবে ।কিন্ত আমরা কি দেখতে পেলাম ।নির্বাচনের দিন তো জনগণকে কেন্দ্রে আসতে দেওয়া হয়নি ।যারা এসেছে তাদেরকেও হয়রানি করা হয়েছে ।একজন মানুষ তার নাগরিক অধিকার যদি প্রয়োগ করতে না পারলো তাহলে সে কোন অর্থে এদেশের নাগরিক ।

বাংলাদেশের মানুষ ভোট কে উৎসব হিসেবে গন্য করে ।এদেশের মানুষ সকল বাধা বিপত্তি উতরে গিয়েও ভোট দিতে যায় । তাইত এবারের নির্বাচনে একটা ভোট দিতে না পারার জন্য মানুষের হাহাকার শুনেছি ,মানুষের আহাজারি শুনেছি ।তরুন ,বৃদ্ধ কিংবা যুবক সব শ্রেনির ভোটার গন এই অন্যায়ের যথা সম্ভব প্রতিবাদ করেছে ,তারা প্রশাসনের কাছে দৌড়ে গিয়ে বলেছে আমায় ভোট দিতে দিচ্ছে না ,আমায় কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ।আমি ভোট দিতে চাই ,আমাকে ভোট দিতে দেওয়া হোক ।কিন্ত প্রশাসন নির্বিকার থেকেছে ।নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে জাল ভোটে বাক্স ভর্তি হয়েছে ।

তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় ,এত কিছু ঘটলো মিডিয়া অনেকটা নির্বিকার থেকেছে ,যেন দেশে কিছুই হচ্ছে না।তারা তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের মতই টক শো চালিয়েছে , চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করেছে ।
কিছু কিছু মিডিয়া শুধুমাত্র নির্বাচনের সেই নিউজ গুলোই কাভার করেছে যা শাসকদলের পক্ষে যায় । অন স্পটে খুব কম সংখ্যক মিডিয়াকেই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে ... তবে কিছু কিছু মিডিয়া বেশ তৎপর ছিল ।এক্ষেত্রে তৎপর ছিল সরকারও তাদের সমপ্রচার বন্ধ করতে । সর্বোপরি ,সাংবাদিকদের উপর কমিশন ও সরকারের অহেতুক নীতিমালা পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকে মনে করেন ।

শাসকদল এদেশের ভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে ,এই কথা আমি আর দশ জনের মত আমিও মানি ।এবং প্রত্যেক সরকারকে নির্বাচিত করাই হয়ে দেশ ও জনগনের উন্নয়নের জন্য ।কিন্ত সেই উন্নয়নের জন্য যদি আমার নাগরিক অধিকার কে বন্ধক রাখতে হয় তাহলে সেই উন্নয়ন কতটা যৌক্তিক ? মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে সেটা একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই প্রমান হয় কিন্ত এবারের নির্বাচনে কি সেটা হয়েছে?তাহলে ,সংবিধানের দোহাই দিয়ে যে সাংবিধানিক নির্বাচন করা হল ,সেই সংবিধানেই বলা আছে প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে সেই ধারাটি কি রহিত করা হল ।এমন হাজারও প্রশ্ন লাখ কোটি মানুষের মনে মনে জপছে কিন্ত কেউ সেই প্রশ্ন টা তুলতে পারছে না ।কারন,আজকে শাসকদলের বিপক্ষে কিছু বললে আগামীকাল ডুবায় লাশ পাওয়া যাবে ,কিংবা তার কন্যা বা বোন ধর্ষিত হবে অথবা পরিবারের কাউকে গুম করা হবে ।সবিশেষে আর কিছু না হলেও সন্দেহবাজন হিসেবে বিশেষ আইনে গ্রেপ্তার করা হবে ।তবে,এইভাবে একটি দেশ চলতে পারেনা ।ইতিহাস এদের কে খুব ভালভাবে মনে রাখেনা ,ইতিহাস এদের নোংরা আস্তাবলে নিক্ষেপ করে ঠিক যেমন নিক্ষেপ করেছে মীরজাফর ,মুসতাকদের ।

আরেকটি কথা বলেইন শেষ করবো ।বর্তমান শাসকদল সব সময় নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি বলেই প্রচার করে । যদিও তাদের কিছু বক্তব্য ঘোর স্বাধীনতা বিরোধীদের মত ।তবু ,মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ কে একটা প্রশ্ন করতে চাই ,অন্যায় ভাবে মানুষের কথা বলার অধিকার ,ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার মত জগন্য কার্যক্রম কোন দেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ কে বাস্তবায়িত করে ?? এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ? আমার ভোট আমি দেবো ,তোমার ভোটও আমি দেবো ? এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,কথা বলবি তো গুম করে দেব ,খুন করে দেবো ? যদি এটাই হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তবে আমরা সেই চেতনা কে থু থু দেই... সেই চেতনা কে ধিক্কার জানাই... আমাদের দরকার নেই এমন মুক্তি চেতনার যা আমার মুখের কথা কেড়ে নেয় ,আমার ভোটাধিকার কেড়ে নেয় ।
আমরা বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কে লালন করতে চাই... তবে সেই আদর্শের আবডালে কোন ভণ্ড ,মিথ্যাচারীর দর্শন নয়।আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উজ্জিবিত থাকতে চাই তবে ,সেই মুক্তি চেতনার ব্যবসায়ী বা খরিদ্দার হয়ে নয় । জয় বাংলা ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪৬
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×