somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাতাফের পাথর রহস্য

১৩ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যারা হজ্জ বা উমরায় গেছেন তারা সবাই নিশ্চয়ই একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন চামড়া পোড়ানো সেই তীব্র গরমে ও খোলা আকাশে সূর্যের কশকশা রোদের নীচে, কাবার চারপাশে তাওয়াফ এর স্থান "মাতাফ" এ পায়ের নীচ পুড়ে যায়না বরং বেশ ঠান্ডা অনুভূত হয়। এর পেছনে রহস্য কি?

মিশরীয় জিওলজিষ্ট ড.যাগলুল আল-নাজ্জার ইতিহাস থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই মূল্যবান অংশ টি তুলে ধরেছেন।

ড.যাগলুল আল- নাজ্জার এর ভাষায়----
" যিনি এই মহান কাজের কারিগর ও উদ্যোক্তা -তিনি একজন ইজিপশিয়ান ইঞ্জিনিয়ার এবং আর্কিটেক্ট যিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতেই বেশী ভালবাসতেন।তিনি ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাঈল। [জন্ম-১৯০৮-মৃত্যু ২০০৮]

মিশরীয় ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম সর্বকনিষ্ঠ ছাত্র যিনি হাই স্কুল শেষে "রয়েল স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং" এ ভর্তি এবং গ্রাজুয়েট হয়েছিলেন! ইওরোপে পাঠানো ছাত্রদের ভেতরেও তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ, ইসলামি আর্কিটেকচার এর ওপর আলাদা বিষয়ে ৩ টি ডক্টরেট ডিগ্রি নেয়া প্রথম মিশরীয় ইঞ্জিনিয়ার তিনি।

ইনিই হলেন সেই প্রথম ইঞ্জিনিয়ার যিনি হারামাইন (মক্কা-মদিনা) সসম্প্রসারণ প্রজেক্টের পরিল্পনা ও বাস্তবায়নের ভার নিজের কাধে নেন। ড.কামাল ইসমাঈল হারামাইন এ নকশা বা আর্কিটেকচারাল তত্তাবধায়ন এর জন্য কিং ফাহাদ এবং বিন লাদেন গ্রুপ এর সুপারিশ থাকা স্বত্তেও কোন পারিশ্রমিক গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানান!! মোটা অংকের চেক উনি ফিরিয়ে দেন। কাজের প্রতি তার সততা এবং আন্তরিকতা তাকে খাদিমুল হারামাইন মালিক ফাহাদ, মালিক আব্দুল্লাহ সহ সকলের প্রিয়পাত্র ও বিশ্বাস ভাজন করে তোলে।

তিনি বাকার বিন লাদেন (বিন লাদেন কোম্পানির অংশী)কে বলেন-
"এই দুটি পবিত্র মাসজিদ এ কাজের জন্য আমি কেন পারিশ্রমিক নেব? তাহলে আমি কি করে আল্লাহর সামনে দাঁড়াব শেষ বিচারের দিনে?"-এ ছিল তার ভালোবাসা কাবার প্রতি।

ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি ৪৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি।মৃত্যু পর্যন্ত তার পুরোটা জীবন তিনি আল্লাহর আনুগত্যে উৎসর্গ করেন। তিনি প্রায় ১০০ বছর বেঁচেছিলেন, পুরো সময় তিনি দুই মসজিদের সেবায় ব্যায় করেন, অর্থ বিত্ত, খ্যাতি, মিডিয়ার লাইম লাইট থেকে দূরে সরে থেকে...

মক্কা মদিনায় হারামাইন এর মার্বেলের কাজের সাথে উনার জীবনের একটি বিস্ময়কর গল্প আছে। উনি প্রথম চেয়েছিলেন মাসজিদুল হারামের মেঝে তাওয়াফকারীদের জন্য আচ্ছাদিত করে দিতে(আগে কংকরময় ছিল,মুযদালিফার মত)। বিশেষত এমন মার্বেল দিয়ে যার তাপ শোষন ক্ষমতা আছে। এই বিশেষ ধরনের মার্বেল সহজলভ্য ছিল না। এই ধরনের মার্বেল ছিল পুরো পৃথিবীতে কেবলমাত্র একটি ছোট পাহাড়ে, যা গ্রীস এ অবস্থিত। উনি গ্রীস গেলেন। পর্যাপ্ত পরিমানে মার্বেল কেনার কন্ট্রাক্ট সাইন করলেন।
(এই ঠাণ্ডার কারণ হচ্ছে বিশেষ ধরণের মার্বেল পাথর। কাবা শরীফের চারপাশের মেঝের জন্য গ্রিস থেকে আনা বিরল # থাসোস মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এই পাথরের বিশেষ গুণ হচ্ছে, তা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে তাপও শুষে নিতে পারে। এছাড়াও এই মার্বেল পাথরের নিচে রয়েছে পানির নালা। যা বালির মধ্যে দিয়ে পানি প্রবাহিত করে নিচে ভিজিয়ে রাখে। যার ফলে সৃষ্টি হয় এই ঠাণ্ডার। সূত্র: আল আরাবিয়া। (al-arabia news agency.org)

ড.কামাল ইসমাঈল কাজ শেষে মক্কা ফিরে গেলেন এবং সাদা মার্বেলের মজুদ ও চলে এল। যথা সময়ে মাসজিদুল হারামের মেঝের বিশেষ নকশায় সাদা মার্বেলের কাজ সম্পন্ন হল।

১৫ বছর পর সৌদি গভার্মেন্ট ড.কামালকে ডেকে, তাকে মাসজিদুন নববীর চারদিকের চত্ত্বরও একই ভাবে সাদা মার্বেল দিয়ে ঢেকে দিতে অনুরোধ জানালেন!!যেমনটি তিনি মাতাফে করেছিলেন।

তিনি বলেন, " যখন আমাকে মাসজিদুন নববীর প্রশস্ত চত্ত্বরের মেঝেতেও একই মার্বেল ব্যবহার করে আচ্ছাদিত করে দিতে বলা হল, আমি দিশেহারা বোধ করলাম! কারন ওই বিশেষ ধরনের মার্বেল গোটা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না কেবলমাত্র গ্রীসের একটি ছোট জায়গা বাদে এবং তাদের যতটুকু ছিল তার অর্ধেক আমি ইতিমধ্যেই কিনে ফেলেছিলাম!! অবশিষ্ট যা ছিল সেটা মাসজিদুন নববীর প্রশস্ত চত্ত্বরের চাহিদার তুলনায় পরিমানে অল্প!

তিনি আবার গ্রীস গেলেন। সেই একই কোম্পানির সি.ই.ও এর সাথে দেখা করে জানতে চাইলেন ওই পাহাড় আর কতটুকু অবশিষ্ট আছে! সি.ই.ও তাকে জানালেন ১৫ বছর আগে উনি কেনার পরপরই পাহাড়ের বাকি অংশ টুকুও বিক্রি হয়ে যায়!শুনে তিনি এতটাই বিমর্ষ হলেন যে তার কফি পর্যন্ত শেষ করতে পারলেন না! সিদ্ধান্ত নিলেন পরের ফ্লাইটেই মক্কা ফিরে যাবেন। অফিস ছেড়ে বেরিয়ে যাবার আগে কোন কারন ছাড়াই অফিস সেক্রেটারির কাছে গেলেন এবং তার নাম ঠিকানা চাইলেন যিনি বাকি মার্বেল কিনেছিলেন।

যদিও এটা অনেক কঠিন ছিল তারপরও কামালের অনুরোধে সে পুরোনো রেকর্ড চেক করে জানাবে বলে কথা দিল। নিজের নাম এবং ফোন নং রেখে বেরিয়ে আসার সময় তিনি ভাবলেন, কে কিনেছে তা জেনেই বা আমার লাভ কি?....স্বগোক্তি করলেন নিশ্চয়ই আল্লাহ ভাল কিছুই রেখেছেন...

পরদিন এয়ারপোর্ট রওনা হবার কয়েক ঘন্টা আগে সেই কোম্পানির সেক্রেটারি ফোনে জানাল সেই ক্রেতার নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। কামাল ধীর গতিতে অফিসের দিকে এগোতে এগোতে ভাবলেন,... এই ঠিকানা আসলে আমার কি কাজে আসবে? মাঝে যখন এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে....

অফিসে পৌছলে সেক্রেটারি তার হাতে ক্রেতার নাম ঠিকানা দিলেন। ঠিকানা হাতে নিয়ে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল যখন তিনি আবিষ্কার করলেন বাকী মার্বেলের ক্রেতা একটি সৌদি কোম্পানি!!!

কামাল সেদিনই সৌদি ফিরে গেলেন। পৌঁছেই তিনি কোম্পানির ডিরেক্টর এডমিন এর সাথে দেখা করলেন এবং জানতে চাইলেন মার্বেল গুলো দিয়ে তিনি কি করেছেন যা অনেক বছর আগে গ্রীস থেকে কিনেছিলেন। সে কিছুই মনে করতে পারলনা। কোম্পানির স্টক রুমে যোগাযোগ করে জানতে চাইলেন, যে সাদা মার্বেল যেগুলো গ্রীস থেকে এসেছিল কি করা হয়েছে? তারা জানাল সেই সাদা মার্বেল পুরোটাই স্টকে আছে কোথাও ব্যবহার করা হয়নি।!!

কামাল শিশুর মত ফোঁপাতে শুরু করলেন। কান্নার কারন জানতে চাইলে, পুরো গল্পটি তিনি কোম্পানির মালিক কে শোনান। ড. কামাল তাকে একটি ব্লাংক চেক দিয়ে তার ইচ্ছামত অংক বসিয়ে নিতে বলেন। কোম্পানির মালিক যখন জানলেন এই সাদা মার্বেলে রাসূলের মসজিদের জন্য নেয়া হচ্ছে তিনি ১ দিরহাম ও নিতে রাজি হলেন না!!!

"ওয়াল্লাহি! আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই,তিঁনিই এই কোম্পানির মালিক!! ফিসাবিলিল্লাহ!! আল্লাহ সুবহানা তা'লা আমাকে দিয়ে এটা কিনিয়েছিলেন এবং তিঁনিই আমাকে এটার কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন!! কারন এই মার্বেল রাসূলের মসজিদের উদ্দেশ্যেই এসেছে"
-এ ছিল কোম্পানির মালিকের কথা।

আল্লাহই উত্তমরূপে জ্ঞাত,এখানে তথ্যে কোনো কমবেশী আছে কিনা।তবে কাবার চত্ত্বরে মার্বেলে বসে এ অসাধারন মিষ্টি শরীর জুড়ানো ঠান্ডা হাজিমাত্রই উপভোগ করেন,আশা করি এ বিষয়ে একচুলও বাড়াবাড়ি নেই!কি বলেন আল্লাহর ঘরের জিয়ারত কারিগন?
সূত্রঃ জেনারেল প্রেসিডেন্সি অ্যাফেয়ার্সের অফিস (আল হারামাইন আশ- শরীফাইন)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:২১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×