আমরা যারা বিদেশ বিভুঁইয়ে পড়ে থাকি বিশেষ করে সৌদি আরবে যারা আছেন তাঁরা সম্ভবত জলাতঙ্কের মতো ডাক্তারাতঙ্কে ভুগেন। এখানে বেশিরভাগ ডাক্তার মাসরি মানে মিসরের আর তাদের কাছে গেলে মনে হয় একটু আগেই জুতা সেলাই করছিলেন সেখান থেকে মাঝ পথে রোগী দেখতে এসেছেন।
কিছুদিন ধরে বাথরুম এ গেলে কষ্ট হচ্ছিলো। আমি ভেবেছিলাম কোষ্ঠকাঠিন্য টাইপের কিছু তাই শুরুতে তেমন আমল দেইনি। কিন্তু হঠাৎই একটা ফোড়ার মত দেখা গেলো সাথে প্রচন্ড ব্যাথা, না বসা যাচ্ছে না শোয়া যাচ্ছে। অনেক ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, বৌ আর বাচ্চারাও সাথে যেতে চাইলো। ওদেরকে সাথে নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে ওবায়েদ হাসপাতাল এ পৌঁছে গেলাম।
একজন স্পেসালিস্ট সার্জনকে দেখালাম উনি দেখে বললেন এটা একটা perinephric abscesses। দ্রুত অপারেশন করতে হবে। আচানক ভয় পেয়ে গেলাম জীবনে কোনোদিনও ছুরি কাঁচির নিচে শুইনি।
এখানে রোগী অবস্থায় একা একা থাকা যে কত কষ্টের তা কেবল ভোক্তভোগীরাই বলতে পারবে। আদিবের আম্মু কাছে থাকাতে একটু সাহস পাচ্ছিলাম। সেদিনই আমার সব কাগজ জমা দিয়ে আসলাম আর ভাবছিলাম কত টাকা যেন চার্জ করবে হাসপাতালে। আলহামদুল্লিলাহ সন্ধ্যায় আমাকে জানালো ইন্সুরেন্স থেকে এপ্রুভাল পাওয়া গেছে, সুতরাং ইন পেশেন্ট হিসেবে আমার এক রিয়ালও লাগবে না। পরের দিন সকালে হাসপাতাল এ ভর্তি হলাম। আমাকে জানানো হলো দুপুর একটায় আমার সার্জারি।
নানা রকম টেস্ট আর স্যালাইন চলতে লাগলো। দুপুর একটা পনেরোর দিকে নার্স আসলো। সব কিছু খুলে ফেলতে বললো, আমার হাত ঘড়ি খুল্লাম, মানিব্যাগটা বৌয়ের হাতে দিলাম। শার্ট প্যান্ট খুলে অপারেশন গাউন পরলাম, ভালো মতো চেয়ে দেখি গাউনের কোথাও কোনো পকেটই নাই। একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করলো আমাকে, মনে হচ্ছে পৃথিবীর কোনও কিছুই আমার না। আমার আর কিছুই নেই। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। আমাকে নিতে ষ্ট্রেচার আসলো, আমি ওতে শুয়ে পরলাম, একজন নার্স আমাকে নিয়ে যাচ্ছে -অপরিচিত একটা মুখ। আমার বুকের হাতুড়ির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি আর মনে হচ্ছে......মনে হচ্ছে মৃত আমার দেহটাকে অন্তিম শিয়ানে রাখার জন্য নিয়ে যাচ্ছে শববাহকের দল। এ যেন অন্তিম যাত্রা আমার....
পরিশেষ :
আল্হামদুলিল্লাহ, আল্লাহ্পাকের ইচ্ছায় এখন ভালো আছি আর উপলব্দি এটাই যে একদিন এভাবেই খালি হাতে চলে যেতে হবে দুনিয়া থেকে কাজেই সময় থাকতে আমাদের মূল্যবান সময়কে কাজে লাগাতে হবে যেন মৃত্যুর পর আফসোস করা না লাগে।
---সমাপ্ত--
ছবিসূত্র: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:২৪