somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের পাঠশালায়: পর্ব-৩৯ | হযরত উসমানের খিলাফত (৬৪৪-৬৫৬ সাল)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৬৪৪ সালে দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমার আততায়ীর হাতে গুরুতরভাবে আহত হলে তাঁর পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। হযরত উমার তাঁর পরবর্তীতে কাকে খিলাফত রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করেন। এক্ষেত্রে যে সমস্যাটি প্রধান হয়ে দেখা দেয় সেটি হল খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি। উমার খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁর পূর্ববর্তী খলিফা দ্বারা। কিন্তু উমার কাউকে সরাসরি তাঁর উত্তরাধিকারী ঘোষণা করতে চাচ্ছিলেন না।

তিনি মনে করতেন, যেহেতু মহানবী কাউকে তাঁর খলিফা রেখে যাননি সেহেতু উত্তরাধিকারী রেখে যাওয়া আবশ্যক নয় । আবার হযরত উমার এটিও চাচ্ছিলেন না যে, তাঁর মৃত্যুর পর খলিফা নির্বাচনের প্রশ্নে মহানবীর মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি আবার দেখা দিক। তাই শেষ পর্যন্ত চিন্তুভাবনা করে তিনি একটি নতুন পদ্ধতি দাঁড় করালেন। তিনি নির্দিষ্ট কাউকে খলিফা মনোনীত করলেন না আবার বিষয়টি পুরোপুরি মুসলমানদের স্বাধীন বিবেচনার ওপরও ছেড়ে দিলেন না।

তিনি ছয়জন সাহাবীর নাম ঘোষণা করে বললেন, খলিফা নির্বাচিত হবেন এদের মধ্যে যে কোন একজন। তবে নির্বাচনের কাজটি জনমতের ভিত্তিতে হবেনা। এ ছয়জনই তাদের মধ্য থেকে একজনকে খলিফা নির্বাচিত করবেন। এক্ষেত্রে যদি তারা সমানভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন তাহলে যে সমস্যাটির সৃষ্টি হবে সেটিরও একটি সমাধান রেখে গেলেন তিনি। খলিফা বললেন, এক্ষেত্রে তাঁর পুত্রের মতামত যুক্ত করে যে কোন এক পক্ষকে ভারী করতে হবে যাতে সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচন করা যায়।

খলিফা উমার তাঁর পরে যে ছয়জনের মধ্য থেকে খলিফা নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন তারা হলেন- উসমান বিন আফফান, আলী ইবনে আবু তালিব, যুবাইর ইবনুল আওয়াম, তালহা বিন উবাইদুল্লাহ, আব্দুর রহমান বিন আউফ ও সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস। খলিফা উমারের মৃত্যুর পর দু’দিন ধরে বহু বাকবিতত্তা ও আলাপ আলোচনা করেও এরা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলেন না। খলিফা উমার ভেবেছিলেন ছয়জনের মধ্যে যে কোন এক বা একাধিক ব্যক্তি নিজের ভোট ছাড়াও অন্য দুএকজনের সমর্থন লাভে সক্ষম হবেন এবং ভোটের আধিক্ষ্যের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচিত হবেন।

কিন্তু বাস্তবে তা হলনা। দুদিন ধরে বহু তর্ক-বির্তকের পর তৃতীয় দিনে ছয়জনের মধ্য থেকে একজন ঘোষণা দিলেন যে, এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য তিনি একটি নতুন সমাধানে কথা ভেবেছেন। যদি বাকী পাঁচজন প্রার্থী খলিফা নির্বাচনের এখতিয়ার তাঁর হাতে ছেড়ে দেন তাহলে তিনি নিজে খলিফা পদের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াবেন এবং বাকী পাঁচজনের মধ্য থেকে যে কোন একজনকে খলিফা বানাবেন। এই সাহাবীর নাম হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ।

আব্দুর রহমান দেখলেন বাকী পাঁচজনের মধ্যে মূলত হযরত উসমান এবং হযরত আলীই হলেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। হযরত তালহা এবং হযরত যুবাইর ছিলেন হযরত আলীর পুরনো মিত্র। মহানবীর মৃত্যুর পর এ দুজন সাহাবী হযরত আলীকেই খলিফা বানানোর পক্ষপাতী ছিলেন এবং হযরত আবু বকর ও হযরত উমারের সাথে বানি সায়েদার চত্বরে না গিয়ে হযরত আলীর সাথেই অবস্থান করেছিলেন।

তাই অনেকেই ভেবেছিলেন তালহা ও যুবাইর হয়তো হযরত আলীর পক্ষেই দাঁড়াবেন এবং এতে প্রভাবিত হয়ে আব্দুর রহমান বিন আউফ হযরত আলীকেই খলিফা নির্বাচিত করবেন। কিন্তু চতুর্থদিন ভোরে দেখা গেল আব্দুর রহমান হযরত উসামানের নামই ঘোষণা করলেন এবং উসমানের হাতে বাইআত গ্রহণ করলেন। তাঁর সাথে সাথে অন্যরাও বাইআত গ্রহণ শুরু করলেন। মদিনার জনাকীর্ণ মসজিদে নববীতেই এ খলিফা নির্বাচনের কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল।

হযরত উসমানের নাম ঘোষণার পর হযরত আলী কোন কিছু না বলে মসজিদে নববী থেকে বের হয়ে যান এবং সমাবেশ পেছনে ফেলে চলে যেতে থাকেন। কিছুদূর চলে যাওয়ার পর কী মনে করে তিনি আবার ফিরে আসেন এবং মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে হযরত উসমানের হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। এতে উসমানের খলিফা হওয়ার পথে আর কোন বাধা থাকল না। মুসলমানদের ইতিহাসের তৃতীয় খলিফা হিসেবে তাঁর শাসনকাল শুরু হল। তিনি মোট ১২ বছর খলিফা ছিলেন।

হযরত উসমান খলিফা হওয়ার পর তাঁর পূর্ববর্তী দুই খলিফার মতই সফলতা ধরে রাখতে সচেষ্ট হন। পারস্যের পলাতক সম্রাটের প্রভাব পুরোপুরি খর্ব হয়েছিল উসমানের সময়েই। খলিফার অনুগত বসরার গভর্নর পারস্যের বিদ্রোহ দমন করেন এবং বিদ্রোহী প্রদেশগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৫১ সালে পারস্যের পলাতক সম্রাট ইয়াজদিগার্দ পারস্যের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আততীয়দের হাতে নিহত হন। মুসলমানরা পারস্যের পূর্বদিকে এগিয়ে কাবুল ও গাজনী পর্যন্ত বিজয় প্রতিষ্ঠিত করেন।

উসমানের সময়ে বাইজেন্টাইনদের সাথে যুদ্ধেও মুসলমানরা সফলতা ধরে রেখেছিলেন। খলিফা উমারের মৃত্যুর পর ৬৪৬ সালে বাইজেন্টাইন সম্রাট নৌবাহিনী পাঠিয়ে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া দখল করে নেন। মিশরের মুসলমান গভর্নর আমর ইবনুল আস তাঁর রাজধানী ফুসতাত থেকে এগিয়ে এসে আলেকজান্দ্রিয়া পুনরুদ্ধার করেন। তবে এরপর খলিফা উসমান আমরের স্থলে আব্দুল্লাহ বিন সাদ বিন আবি সারাহকে মিশরের নতুন গভর্নর নিযুক্ত করেন।

আব্দুল্লাহ মিশর থেকে পশ্চিম দিকে এগিয়ে তিউনিসিয়া পর্যন্ত বিজয় প্রতিষ্ঠা করেন। ৬৫১ সালে তিনি ত্রিপলী দখলে সক্ষম হয়েছিলেন। আমর এবং আব্দুল্লাহর মতই সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানও বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে সফলতা ধরে রেখেছিলেন। মুয়াবিয়া ছিলেন খলিফা উসমানের চাচাত ভাই। খলিফা উসমানের অনুমতি পেয়ে তিনি মুসলমানদের প্রথম নৌবাহিনী গড়ে তোলেছিলেন। এ নৌবাহিনীর সহায়তায় তিনি সাইপ্রাস দ্বীপ অধিকার করেন।

৬৪৯ সালে সংঘটিত এ নৌ-অভিযানে মিশরের গভর্নর আব্দুল্লাহও যোগ দিয়েছিলেন। এরপর রোডস দ্বীপও মুসলমানদের দখলে আসে। মুসলমানরা সিসিলি দ্বীপেও আক্রমণ পরিকল্পনা করে। ৬৪৭ সালে মুয়াবিয়া ও খলিফার বাহিনী এশিয়া মাইনর থেকে আগত এক বিশাল বাইজেন্টাইন বাহিনীকে স্থলযুদ্ধে পরাজিত করেছিল। উসমানের সময়ে বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে মুসলমানরা শেষ উল্লেখযোগ্য বিজয় অর্জন করে ‘যাতুস সাওয়ারী’ নামে এক নৌ-যুদ্ধে। এ যুদ্ধে বাইজেন্টাইন নৌ-বাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে গিয়েছিল।

খলিফা উসমানের এসকল বিজয় ও কৃতিত্ব ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে বিষাদের কালিতে। তাঁর জীবনের নৃশংস পরিণতির তুলনায় এসকল অর্জন যেনো নিতান্তই পরিহাস। খলিফা হওয়ার পর থেকেই দুভার্গের যে কালো মেঘ তাকে ঘিরে ফেলতে শুরু করেছিল তা থেকে তিনি আর কখনোই বের হতে পারেননি। বৃদ্ধ খলিফা উসমানকে তাঁর বিরুদ্ধবাদী মুসলমানরা যে নৃশংসতায় হত্যা করেছিল তার বিবরণ লিখতে গেলে আজও ইতিহাসবিদদের কলম কাঁপে।

৮২ বছরের বৃদ্ধ ও দুর্বল খলিফা উসমানকে হত্যা করার পর তার লাশের সাথে যে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করা হয় তা কোন অংশেই কারবালার ঘটনা থেকে কম ছিল না। কিন্তু কারবালার ঘটনা নিয়ে যেভাবে মাতামতি হয় সেভাবে উসমানের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা হয়না। এর কারণ, কারবালার ঘটনায় যে পক্ষ অধিক শোক প্রদর্শন করেন তাদের অবস্থান হযরত উসমান ও তাঁর চাচাত ভাই মুয়াবিয়ার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে।

খলিফা উসমান তাঁর শাসনকালের অর্ধেক সময় তেমন কোন বিপদের মুখোমুখি হননি। কিন্তু এরপরই দুর্যোগ ঘনিয়ে আসে। ৬৫১ সাল থেকে খলিফার পায়ের নীচের মাটি সরে যেতে থাকে। তখন থেকে মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ ও দলাদলি চরম আকার ধারণ করে। খলিফা উসমান ছিলেন কুরাইশদের বানি উমাইয়া শাখার লোক। উমাইয়া বংশের লোক খলিফা নির্বাচিত হওয়ায় কুরাইশদের আরেক শাখা বানি হাশিম গোত্রের অনেকেই নাখোশ হয়েছিলেন।

তাঁরা হযরত আলীকেই খলিফা হিসেবে চেয়েছিলেন। হযরত উসমান খলিফা হওয়ার পর বানি উমাইয়া ও বানি হাশিমের মধ্যে দলাদলি ও রেষারেষী আরম্ভ হয়। হযরত উসমান ও হযরত আলীর সমর্থকদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। কুরাইশদের দশটি গোত্রের অন্যতম দুই প্রধান গোত্রের মধ্যে এমন অন্তর্দ্বন্দ্বের সুবাধে অকুরাইশ আরবদের দিক থেকে নতুন বিপদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এর নাম বিদ্রোহ। বিশাল ইসলামি কিলাফত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসংখ্য আরব গোত্রের অবদান ছিল।

কিন্তু খিলাফতের ক্ষমতার কেন্দ্রে শুরু থেকেই অবস্থান করছিল কুরাইশরা। যেদিন থেকে খিলাফতের সূচনা হয় সেদিন থেকেই কুরাইশ শাসনেরও সূচনা হয়। মদিনার অকুরাইশ আনসারী সাহাবীদের দাবী অনুযায়ী খাযরাজ গোত্রের নেতা সাদ বিন উবাইদাকে খলিফা না বানিয়ে কুরাইশ গোত্রের নেতা হযরত আবু বকরকে খলিফা নির্বাচিত করা হয়েছিল সেদিন। তবে সাদ বিন উবাইদা এ বিষয়টি নিয়ে তখন আর কোন উচ্চবাচ্য করেননি। খলিফা আবু বকর কিংবা উমারকে কুরাইশ শাসক হিসেবে কোন চ্যালেঞ্জের মুখেও আর পড়তে হয়নি।

কিন্তু হযরত উসমানের শাসনের মাঝামাঝি সময়ে একদিকে যেমন কুরাইশদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়তে শুরু করে অন্যদিকে তেমনি কুরাইশ শাসনের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ শুরু হয়। দুভার্গজনকভাবে এ বিদ্রোহের লক্ষ্যবস্তু হন কেবল উমাইয়া খলিফা, সকল কুরাইশরা নয়। কুরাইশ শাসনের বিরোধীতা খুব শীঘ্রই কেবল উমাইয়া শাসনের বিরোধীতায় মোড় নেয়। এতে খলিফার বিরুদ্ধবাদী অন্যান্য কুরাইশরা এ বিদ্রোহে বিচলিত তো হলেনই না বরং খলিফাকে কোনঠাসা করার ক্ষেত্রে এ বিদ্রোহ তাদের জন্য এক মহাসুযোগ হিসেবে দেখা দিল।

তথাকথিত কুরাইশ শাসনের বিরুদ্ধে এ বিদ্রোহটির সূচনা হয় ইরাকের কুফা নগরী থেকে। ইরাকের কুফা নগরীটি ছিল তৎকালীন ইসলামি দুনিয়ার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের মধ্যে একটি। তৎকালীন খিলাফতের অন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল; সমগ্র সিরিয়া-জর্ডান-ফিলিস্তিনের প্রাণকেন্দ্র দামেশক শহর, মিশরের রাজধানী শহর ফুসতাত, ইরাকের আরেক সমৃদ্ধ নগরী বসরা এবং আরব উপদ্বীপের প্রাণকেন্দ্র মদিনা নগরী। মদিনা ছিল পুরো খিলাফতের রাজধানী এবং খলিফার বাসস্থান ছিল মদিনাতেই।

মদিনার মসজিদে নববী ছিল খলিফার দরবারস্থল। এখানেই তিনি দরবারে বসতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন। খিলাফতের অন্যান্য ঐতিহাসিক নগরী যথা- মক্কা, জেরুজালেম, আলেকজান্দ্রিয়া প্রভৃতি নগরীতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তেমন প্রাধান্য পায়নি। খলিফা উসমান তাঁর নিজের শহর মদিনায় যথেষ্ট প্রভাবের অধিকারী হলেও সেখানে তাঁর বিরুদ্ধবাদীদেরও অভাব ছিল না। বাকী চারটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।

তবে সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনের প্রাণকেন্দ্র দামেশক ছিল খলিফার পুরোপুরি অনুগত। দামেশক ছিল খিলাফতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী কেন্দ্র। এর আওতাধীন এলাকাও ছিল বিশাল। খলিফা উসমানের চাচাত ভাই মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ছিলেন দামেশকের শাসনকর্তা। উমাইয়া পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি খলিফার পাশে শক্তভাবে দাঁড়িয়েছিলেন।

খলিফা উসমানের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহের সূচনা হয় তার পুঙ্খনাপুঙ্খ বিশ্লেষণ হয়তো কোনদিনই সম্ভব হবে না। তবে বেশিরভাগ ঐতিহাসিকই মনে করেন, হযরত উসমানের শাসনের মাঝামাঝি সময়ে বেদুইন মুসলমান সৈন্যদের সামনে দখল করার মতো আর কোন উল্লেখযোগ্য দেশ না থাকায় তারা গণিমত প্রাপ্তির সুবিধা থেকে হঠাৎ করে বঞ্চিত হয়ে পড়েছিল। গণিমতের সমৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা খলিফা ও খলিফার শাসনকর্তাদের শাসন আর সহজে মেনে নিতে চাচ্ছিল না।

বসরার শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ বিন আমেরের উক্তি থেকে এর সত্যতা পাওয়া যায়। খলিফা উসমান তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণ জানতে তাঁর অধীনস্ত সকল প্রাদেশিক শাসনকর্তাদেরকে নিয়ে মদিনায় একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করেছিলেন। সে পরামর্শ সভায় তিনি সবাইকে প্রশ্ন করেন: কেন আমার বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তার কারণ নির্ধারণ করে আমাকে সে সম্পর্কে অবহিত করুন এবং বলুন এখন আমার করণীয় কী?

তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আমের বলেন, আমার মতে এ লোকদের জিহাদে নিয়োজিত রাখাই এর শ্রেষ্ঠতম প্রতিকার। নিষ্কর্মা বসে থাকার দরুণই তাদের মাথায় এ ধরণের ফাসাদ ও কুবুদ্ধির উদয় হয়েছে। যখন তারা জিহাদে লিপ্ত হবে তখন আপনা-আপনিই এসব বিক্ষোভ বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটবে। (ইসলামের ইতিহাস প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)

খলিফা উসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পূর্বে কুফায় সংঘটিত একটি ক্ষুদ্র ঘটনার কথা জানা যায়। খলিফা উসমান কর্তৃক নিযুক্ত কুফার গভর্নর সাইদ ইবনে আস একদিন তাঁর দরবারে সমবেত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সামনে কথা প্রসঙ্গে বলেন, এই কুফা হল কুরাইশদের একটি উদ্যান। নিছক গল্প-গুজবের সূত্রেই তিনি কথাটি বলেছিলেন। কিন্তু কথাটি বিস্ময়করভাবে দরবারের পরিবেশ বদলে দেয়।

মালিক আশতার নামক জনৈক বিশিষ্ট কুফাবাসী গভর্নরের এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলে ওঠেন: যে এলাকটিকে আমরা তরবারির জোরে দখল করেছি সেটিকে তুমি তোমার গোত্রের উদ্যোন মনে করছ? অন্যারাও এরূপ কথাবর্তা বলে পরিবেশ উত্তপ্ত করে ফেলেন। তখন জনৈক আব্দুর রহমান আসাদী গভর্নরের পক্ষ নিয়ে তাদেরকে হুমকি দেন।

এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুর রহমানকে আক্রমণ করে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুর রহমান চেতনা হারিয়ে ফেলেন। গভর্নর দরবার বন্ধ করে সবাইকে বের করে দেন। এতে এসব লোকজন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং এরপর থেকে তারা প্রকাশ্যেই গভর্নর ও খলিফার বিরোধীতা শুরু করে দেয়। তাদের পাশে অনেকেই এসে যোগ দেয়। তবে পরবর্তীতে এসব বিরোধীরা কিছুটা শান্ত হয়ে গিয়েছিল।

খলিফা উসমান কর্তৃক নিযুক্ত মিশরের গভর্নর আব্দুল্লাহ বিন সাদ বিন আবি সারাহ তিউনিসিয়া পর্যন্ত খিলাফতের সীমানা বিস্তৃত করেছিলেন। ৬৫১ সালে মিশরে অবস্থানরত দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সেখানকার গভর্নরের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এ দু’জনের একজন হলেন হযরত আবু বকরের পুত্র মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর এবং আরেকজন হলেন হুযায়ফা। তারা দুজনে গভর্নরের কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন এবং এ নিয়ে গর্ভনরের সাথে তাদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।

এক পর্যায়ে তারাও প্রকাশ্যে গভর্নর এবং খলিফার বিরোধীতা শুরু করে দেন এবং এতে তারা অনেক সমর্থকও পেয়ে যান। তারা প্রচার করতে শুরু করেন যে, খলিফা আব্দুল্লাহ বিন সাদ এর মতো লোকদেরকে- যাদের উপর খোদ রাসূলুল্লাহ অসুন্তষ্ট ছিলেন তাদেরকে বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর নিয়োগ করেছেন। তারা মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন ও বাড়াবাড়ি করছে অথচ তিনি তাদেরকে পদচ্যুতও করছেন না। (ইসলামের ইতিহাস প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)

এ তো গেল মিশরের কথা। আবারও কুফার কথায় আসা যাক। কুফায় মালিক আশতার নামে যে ব্যক্তি কুরাইশ শাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেছিলেন তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মালিক ইবনে হারিস নাখঈ। তাঁর সাথে যুক্ত ছিলেন সাবিত ইবনে কায়েস, আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ, আলকামা ইবনে কায়েছ, জুনদুব ইবনে যুহায়ের, জুনদুয ইবনে কাআব, উরওয়াহ ইবনে আল জাআদ, আমর ইবনে আল হাক্ক, কুমায়েল ইবনে যিয়াদ, যায়েদ ইবনে সুজান, সাসহি ইবনে সুজান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

তাদের বিরোধীতার কথা খলিফার কান পর্যন্ত পৌছায়। খলিফা এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিলে তাদের কুরাইশ বিরেধীতায় ভাটা পড়ে যায়। পরবর্তীতে তারা নতুন মতবাদ নিয়ে মাঠে নামেন। এবার তারা কুরাইশ গোত্রের কেবল উমাইয়া বংশের শাসনের বিরোধীতায় নামলেন। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় তারা কেবল উমাইয়া খলিফা উসমান ও তাঁর শাসনকর্তাদের শাসনের বিরোধীতায় নামলেন। ঘটনাচক্রে সে সময়য়কার গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশগুলোর শাসনকর্তারা ছিলেন খলিফার আত্মীয়।

এ বিষয়টিকে বিরোধীরা সামনে নিয়ে আসলেন। উমাইয়াদের বিপরীতে তারা কুরাইশদেরই আরেক অংশ হাশেমীদের পক্ষ নিলেন। ধীরে ধীরে কুফা ও বসরায় হযরত আলীর সমর্থকদের সংখ্যা বেড়ে গেল। অনেকেই হযরত আলীকে খিলাপতের প্রকৃত হকদার বলে দাবী করতেন। তারা হযরত উসমান ও তাঁর আত্মীয়দেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পথ বেছে নিলেন। ৬৫২-৫৩ সালে কুফা ও বসরায় কুরাইশ শাসনের বিরোধীতার বিষয়টি নতুন পথে মোড় নেয়।

কুফা ও বসরায় অবস্থানকারি মুসলমান সৈন্যরা তখন অলস সময় কাটাচ্ছিল। আপাত অস্বচ্ছলতা তাদেরকে রাষ্ট্রীয় আনগত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়। গণিমতের প্রাচুর্য থেকে বঞ্চিত অবস্থায় শুধু শুধু খলিফার আনুগত্য করার ক্ষেত্রে বেদুইন সৈন্যদের মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তাদের বেকরত্বের জন্য তারা সরকারকেই দায়ী করে। খলিফা ও খলিফার পরিবারের শাসন তাদের স্বাধীনচেতা বেদুইন মানসিকতায় জবরদস্তিমূলক প্রভাব ফেলে। ফলে সহজেই এসব বেদুইন সৈনিকরা খলিফার বিরোধীতায় যোগ দেয়।

এতে উমাইয়া শাসনবিরোধী রাজনৈতিক বলয়টি ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিদ্রোহীদের অনেকেই হযরত আলীর প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করে এবং উমাইয়াদের স্থলে হাশেমীদেরকেই তারা খিলাফতের বেশি হকদার বলে দাবী করে। এভাবে কুরাইশ শাসনের বিরুদ্ধবাদীরা কুরাইশ গোত্রেরই অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গর্ভে আশ্রয় নেয় এবং খলিফার অকুরাইশ প্রতিপক্ষ ও কুরাইশ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক ময়দানে এসে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায়।

এ রাজনৈতিক মৈত্রীর মূলে এক নতুন ইসলামি মতবাদের জন্ম হয়। এ মতবাদের মূল কথা হল- প্রত্যেক নবীই তাঁর একজন খলিফা বা ‘অসি’ অর্থাৎ ‘প্রতিনিধি’ রেখে গিয়েছেন। আর এ অনুযায়ী ইসলামির নবীর প্রতিনিধি হলেন হযরত আলী। অথচ মুসলমানরা হযরত আলীকে বাদ দিয়ে ইতোমধ্যে তিনজন ব্যক্তিকে খলিফা বানিয়েছে। এতে হযরত আলীর অধিকার খর্ব হয়েছে। তাই সকলের উচিত হযরত আলীকে সাহায্য করা এবং বর্তমান খলিফাকে পদচ্যুত করে হযরত আলীকেই খলিফার পদে অধিষ্ঠিত করা।

আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা নামে হযরত আলীর জনৈক সমর্থক এ মতবাদ প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে মদিনা থেকে বিভিন্ন শহর সফরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। কুফা ও বসরার সরকার বিরোধীরা এ মতবাদকে লুফে নেয়। কুফার মালিক আশতার এ মতবাদের একজন বড় অনুসারী ও প্রচারক ছিলেন। বসরা ও কুফার পর আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা সিরিয়ায় যান; কিন্তু সেখানকার মানুষ খলিফা উসমানের অনুগত হওয়ায় কেউ এ মতবাদে কান দেয়নি। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা চলে যান মিশরে। মিশরে খলিফার বিরোধী লোকজন ছিল তাই ইবনে সাবা সেখানে অবস্থান করতে থাকেন।

মিশর, কুফা ও বসরা থেকে খলিফার মনোনীত শাসনকর্তাদের উপর আনাস্থা প্রকাশ করে অনেক চিঠি মদিনায় পাঠানো হয়। খলিফা বিষয়টি তদন্ত করার জন্য মিশর ও ইরাকে দুজন প্রতিনিধি পাঠালেন। কিন্তু মিশরে প্রেরিত প্রতিনিধি হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির সেখানকার বিদ্রোহীদের সাথেই যোগ দেন। তিনি সেখানকার শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ বিন সাদ বিন আবি সারাহ এর বিরোধী পক্ষের সাথে অবস্থান করতে থাকেন এবং মদিনায় ফিরে আসা থেকে বিরত থাকেন। অন্যদিকে ইরাকে প্রেরিত প্রতিনিধি কুফার বিদ্রোহী পরিস্থিতি সম্পর্কে খলিফাকে অবহিত করেন।

৬৫৪ সালে কুফার পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে দেখে সেখানকার গভর্নর সাইদ ইবনে আস খলিফার সাথে দেখা করার জন্য মদিনায় চলে যান। কুফায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান কাব ইবনে আমরকে। কিন্তু কুফাবাসীরা কাব ইবনে আমরকে কোন পাত্তাই দিল না। তারা খলিফা ও খলিফার নিযুক্ত কর্মকর্তাদেরকে প্রকাশ্যে গালি-গালাজ করতে থাকে। এমনকি ইয়াযিদ ইবনে কায়েসের নেতৃত্বে একদল লোক খলিফাকে পদচ্যুত করার উদ্দেশ্যে মদিনার দিকে রওনা হয়ে যায়। তবে কাব ইবনে আমর তাদেরকে ফেরাতে সক্ষম হন।

এরই মধ্যে মালিক আশতার তাঁর দলবল নিয়ে কুফায় এসে পৌঁছান। তিনি ইতোপূর্বে একদল বিদ্রোহীকে নিয়ে হিমসে অবস্থান করছিলেন। কুফাবাসীর চিঠি পেয়ে তিনি গভর্নরবিহীন কুফার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। তিনি কুফায় পৌঁছার পর বিদ্রোহ নবজীবন লাভ করল। মালিক আশতার জনসাধারণের যথেষ্ট সমর্থন লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। বিদ্রোহী জনসাধারণকে তিনি বিদ্রোহী সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাঁর অনুগত বিদ্রোহীদেরকে নিয়ে তিনি ইয়াযিদ ইবনে কায়েসের বাহিনীর সাথে মিলিত হন।

মালিক আশতারের বাহিনী এবং ইয়াযিদ ইবনে কায়েসের বাহিনী মিলিত হয়ে কুফায় একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী সেনাবাহিনী গড়ে উঠল। এ বিদ্রোহী বাহিনী কুফা থেকে বেরিয়ে গিয়ে জারআ নামক স্থানে অবস্থান নেয়। গভর্নর সাইদ ইবনে আস মদিনা থেকে ফিরে আসার পথে তাদেরকে সেখানে দেখতে পান। তখন বিদ্রোহীদের নেতা ইয়াযিদ তাঁর সাথে দুব্যর্বহার করেন। ফলে তিনি পুনরায় মদিনায় চলে যান এবং খলিফাকে এ ঘটনার কথা অবহিত করেন।

খলিফা বিদ্রোহ প্রশমণের জন্য আবু মুসা আশআরীকে নতুন গভর্নর বানিয়ে কুফায় পাঠান। ফলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। কিন্তু কুফা ও এর আশপাশের জেলাসমূহের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপন করে মদিনায় চিঠি পাঠানো বন্ধ হয়নি। কিন্তু খলিফা এসব সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এসব কর্মকর্তাদের কেউ কেউ খলিফার আত্মীয়ও ছিলেন। তাই মদিনারও অনেকে প্রকাশ্যে খলিফাকে দোষারূপ করতে শুরু করে।

খলিফার বিরুদ্ধে আরও কতগুলো অভিযোগ ব্যাপক প্রচার লাভ করে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ছিল কুরআন ধ্বংস করার অভিযোগ। হযরত উসমান খলিফা হওয়ার পর বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছিলেন যে, খিলাফতের বিভিন্ন অঞ্চলের কুরআন পাঠে ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামন নামে জনৈক সাহাবী খলিফা উসমানকে জানান যে, তিনি বসরা, কুফা, রাই, সিরিয়া প্রভৃতি অঞ্চল ভ্রমণ করে দেখেছেন যে, একেক অঞ্চলের মানুষ একেক রকম কুরআন পড়ছে। ইরাকবাসীদের কুরআন পাঠের সাথে সিরিয়াবাসীদের কুরআন পাঠের মিল নেই।

অনুরূপভাবে বসরাবাসীদের কুরআন পাঠের সাথে রয়েছে কুফাবাসীদের বেমিল; কুফাবাসীদের সাথে রয়েছে পারসিকদের বেমিল। হযরত উসমান এ সংবাদ শুনে প্রমাদ গুণলেন। তিনি অভিন্ন কুরআন পাঠের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিলেন। খলিফা তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত কুরআন শরীফের পাণ্ডুলিপিগুলো তলব করলেন। এসব পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা করে দেখা গেল একটির সাথে অপরটির যথেষ্ট অমিল ও অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

খলিফা সবাইকে হযরত যায়িদ বিন সাবিদ কর্তৃক সংকলিত কুরআনের পাণ্ডুলিপিটিকে অনুসরণ করার নির্দেশ দেন এবং কুরআনের বাকী পাণ্ডুলিপিগুলি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। ৬৫১ সালে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। তখন এ ঘটনা নিয়ে কেউ তেমন উচ্চবাচ্য করেনি। কুফায় বসবাসরত সাহাবীদের মধ্যে কেবল হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ খলিফার পাঠানো পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করেননি। তিনি তাঁর নিজস্ব কিরাতের উপরেই অনড় ছিলেন।

খলিফা কর্তৃক বিভিন্ন প্রদেশ হতে সংগৃহীত কুরআনের কপিসমূহ বাজেয়াপ্তকরণ ও ধ্বংস করার ঘটনাটি বিদ্রোহের সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অভিযোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। বিদ্রোহীরা খলিফাকে ব্লাসফেমির অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং এতে তারা অনেক ধর্মভীরু ও গোঁড়া মুসলমানের সমর্থন পেয়ে যায়। খলিফার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ ছিল হযরত আবু যর গিফারীর নির্বাসন।

এছাড়াও রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে খলিফার আত্মীয়-স্বজনদেরকে অকাতরে অর্থ দান এবং খলিফার নিজস্ব কাজে সরকারি চারণভূমির ব্যবহারের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। খলিফার রাজধানী খোদ মদিনায়ই অনেকে মনে করতেন খলিফার যেসকল আত্মীয়রা শাসনকার্য কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীরূপে অনেক প্রদেশে নিযুক্ত রয়েছেন তারা অন্যায়ে লিপ্ত এবং খলিফা স্বজনপ্রীতি করছেন।

কিন্তু এসব অভিযোগ যখন খলিফার সামনে উত্থাপন করা হয়েছিল তখন খলিফার জবাবে সবাই চুপ হয়ে গিয়েছিল। ৬৫৫ সালে খলিফা উসমান হজ্জ সমাপনান্তে মদিনায় ফিরে এসে সেখানে জড়ো হওয়া অভিযোগকারিদের নিয়ে একটি বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে হযরত আলী, হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ ও হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়াম উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সিরিয়া থেকে আগত হযরত মুয়াবিয়াও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে হযরত মুয়াবিয়া সর্বপ্রথম উঠে দাঁড়ান এবং তাঁর বক্তব্যে বলেন “তাঁর (খলিফার) সম্পর্কে মানুষের মুখে মুখে নানা ধরণের কথাবার্তা শোনা যায়। যদি আপনারা এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছে থাকেন তাহলে তা প্রকাশ্যে বলুন। আমি তার উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি আছি। হ্যাঁ, আমি একথাও অবশ্যই বলে দিতে চাই যে, যদি কারো মনে খলিফা বা আমীর হওয়ার সাধ জাগে তাহলে তার বা তাদের মনে রাখা উচিত যে, শেষ পর্যন্ত পিছন ফিরে পালানো ছাড়া তাদের ভাগ্যে আর কিছুই জুটবে না।” এরপর হযরত আলী উঠে দাঁড়িয়ে হযরত মুয়াবিয়ার শেষ কথাটির উপর তাকে কড়া হুশিয়ারি দেন এবং আর কোন কথা না বলে বসে পড়েন। (ইসলামের ইতিহাস প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)

এরপর খলিফা উসমান উঠে দাঁড়ান এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো জানতে চান। একের পর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে খলিফার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলে ধরে এবং খলিফা সেসব অভিযোগের জবাব দেন। কমপক্ষে ছয়জন ব্যক্তির মুখ থেকে তিনি এ প্রকাশ্য মজলিসে একের পর এক আপত্তির কথা শুনেন এবং সেগুলোর জবাব দেন। তবে খলিফার জবাবে অভিযোগকারিরা কতটা সন্তুষ্ট হয়েছিল তা বুঝা যায়নি। বৈঠক সমাপ্ত হওয়ার পর যে যার মতে চলে যায়।

হযরত মুয়াবিয়া সিরিয়ায় ফেরার পূর্বে খলিফাকে অনুরোধ করেন খলিফা যেন তাঁর সাথে সিরিয়ায় চলে আসেন। কারণ মদিনা খলিফার জন্য আর নিরাপদ ছিল না। খলিফা এতে রাজী না হলে মুয়াবিয়া প্রস্তাব দেন যে, তিনি সিরিয়ায় গিয়ে খলিফার নিরাপত্তার জন্য মদিনায় একটি শক্তিশালী বাহিনী পাঠিয়ে দিবেন। খলিফা এতেও রাজি না হলে মুয়াবিয়া বলেন, “আপনি নিশ্চয়ই প্রতারিত হবেন”। এরপর মুয়াবিয়া সিরিয়ায় চলে যান। এর পরবর্তী সময়ে খলিফার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

সিরিয়া ছাড়া খিলাফতের অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে বিদ্রোহীরা খলিফাকে পদচ্যুত অথবা হত্যা করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর হয়। কিন্তু পরবর্তী খলিফা কে হবেন সেটি নিয়ে বিদ্রোহীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। যদিও পূর্ব থেকেই বিদ্রোহীদের মধ্যে হযরত আলীর সমর্থকের সংখ্যাই ছিল বেশি এবং ‘হুব্বে আলী’ বা ‘আলী প্রেম’ কথাটি একটি স্লোগানে পরিণত হয়েছিল তবুও বিদ্রোহীদের কেউ কেউ হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়াম এবং কেউ কেউ হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহকে খলিফা বানাতে চেয়েছিল।

তবে আপাতত এ বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তারা খলিফা উসমানকে উৎখাতের দিকেই মনযোগ দেয়। বিদ্রোহীরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তিনটি বিদ্রোহী কেন্দ্র যথা- কুফা, বসরা ও মিশর থেকে তিনটি সেনাবাহিনী খলিফাকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে মদিনায় রওনা হবে। প্রত্যেক বাহিনীতে থাকবে এক হাজার সৈন্য। প্রথমে মিশর থেকে এক হাজার লোকের একটি কাফেলা রওনা হয়। কুফা থেকে মালিক আশতারের নেতৃত্বে আরেকটি কাফেলা রওনা হয়। একইভাবে বসরা থেকেও আরেকটি কাফেলা রওনা হয়।

অনেক পথ অতিক্রম করার পর তিনটি কাফেলা একসাথে মিলিত হয় এবং একটি কাফেলা হিসেবে মদিনার দিকে রওনা হয়। কিন্তু মদিনায় পৌঁছার পূর্বে নতুন খলিফা নির্বাচনের প্রশ্নে কাফেলাটি আবারও তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি অংশ ভাগ হযরত আলীর সমর্থক। এদের মধ্যে মিশরীয়দের সংখ্যা ছিল বেশি। আরেক ভাগ ছিল হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়ামের সমর্থক। এদের মধ্যে বসরার লোকজন ছিল বেশি।

আরেকটি অংশ ছিল হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহর সমর্থক। মদিনার উপকন্ঠে পৌঁছার পর তিন কাফেলা থেকে তিনটি প্রতিনিধি দল মদিনায় প্রবেশ করে। এরা যার যার পছন্দের নেতার সাথে দেখা করে। প্রত্যেকটি দলই তাদের পছন্দের নেতাকে খলিফা বানাতে চায় এবং সে নেতার হাতেই বাইআত গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু হযরত আলী, হযরত তালহা ও হযরত যুবাইর কেউই তখনকার পরিস্থিতিতে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে খলিফা হিসেবে বাইআত নেওয়াকে সমীচীন মনে করলেন না।

হযরত উসমান খলিফা থাকা অবস্থায় তারা বাইআত নিতে অস্বীকার করলেন। আরেকটি ব্যাপার হল, একই সময়ে নতুন তিন ব্যক্তি খলিফা হিসেবে বাইআত নিলে হযরত উসমানকে নিয়ে খলিফার সংখ্যা দাঁড়াত চার। এর ধরনের উদ্ভট পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেটি সবার জন্যই ক্ষতিকর হতো। তাই তারা বিদ্রোহীদেরকে ফিরে যেতে বললেন। কিন্তু মিশর থেকে আগত হযরত আলীর সমর্থকরা দাবী জানালো অন্ততঃপক্ষে মিশরের গভর্নরকে অপসারণ না করা হলে তারা ফিরবে না।

হযরত আলী খলিফা উসমানের কাছে গিয়ে জানালেন যে, মিশরের গভর্নর আব্দুল্লাহ বিন সাদ বিন আবি সারাহকে অপসারণ না করা হলে বিপদ হতে পারে। খলিফা এ দাবী মেনে নিলেন। একই সাথে হযরত আলীর সুপারিশ অনুযায়ী তিনি মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের নতুন গভর্নর নিযুক্ত করেন। মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর প্রথম থেকেই হযরত আলীর একজন সমর্থক ছিলেন এবং বিদ্রোহে লিপ্ত ছিলেন। মিশরের গভর্নরের সাথে তার ঘোর শত্রুতা ছিল।

মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর মিশরের গভর্নর নিযুক্ত হওয়ায় হযরত আলীর সমর্থক বিদ্রোহীরা চলে যেতে সম্মত হল। একইভাবে হযরত তালহা এবং হযরত যুবাইরের সমর্থকরাও মদিনা ছেড়ে চলে গেল। কিন্তু তিন-চারদিনের মধ্যেই বিদ্রোহীদের তিনটি দলই ফিরে এল এবং মদিনায় প্রবেশ করে খলিফা উসমানের বাসগৃহ ঘেরাও করে ফেলল। বিদ্রোহীদের হঠাৎ করে এ ফিরে আসার কারণ হিসেবে তারা একটি পত্রের কথা বলল।

তারা জানালো, খলিফা উসমান মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে মিশরের নতুন গভর্নর নিযুক্ত করেছেন বলে কথা দিলেও তিনি মিশরের বর্তমান গভর্নরের কাছে লিখা তাঁর পত্রে এরকম কিছুই উল্লেখ করেননি। বরং উল্টো তিনি তাঁর পত্রে মিশরের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, বিদ্রোহীরা মিশরে পৌঁছামাত্রই যেন তাদেরকে হত্যা করা হয়। এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের ওপরেও কার্যকরী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খলিফার পাঠানো এ পত্র নাকি তারা খলিফার এক ভৃত্যের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে।

খলিফার সেই ভৃত্য মিশরের পথে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই বেরিয়েছিল এবং তাদেরকে অতিক্রম করার সময় তারা তাকে আটকে ফেলে এই পত্র উদ্ধার করে। বসরা ও কুফার বিদ্রোহীরা জানায় মিশরীয় বিদ্রোহীদের সাথে তাদের অভিন্ন স্বার্থ জড়িত থাকায় তারাও মিশরীয়দের সাথে ফিরে এসেছে। বিদ্রোহীরা হযরত আলীকে জনসমক্ষেই ঘিরে ধরল এবং জানাল যে, তারা খলিফাকে হত্যা করতে চায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই সবাই ধরে নিল যে, হযরত আলীই খলিফা হত্যার পরিকল্পনায় বিদ্রোহীদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এমতাবস্থায় হযরত আলী উপস্থিত জনসাধারণের সামনে নিজেকে এ ব্যাপারে নির্দোষ ও নিরপেক্ষ প্রমাণের প্রয়োজন অনুভব করলেন। তিনি বিদ্রোহীদেরকে রাগ দেখিয়ে বলেন: এরূপ কাজে আমি কি করে তোমাদের সাহায্য করতে পারি? তখন তারা বলল: কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে পত্র পাঠিয়ে জানিয়েছিলেন যে, যদি আমরা ফিরে আসি তাহলে আপনি আমাদেরকে খলিফা উৎখাতের ব্যাপারে সাহায্য করবেন। হযরত আলী উপস্থিত জনসাধারণের সামনে এ ধরণের চিঠি লিখার কথা অস্বীকার করে বললেন যে, তিনি বিদ্রোহীদেরকে এ ধরনের কোন চিঠি লিখেননি।

এরপর তিনি মদিনা ছেড়ে ‘আহজারুয যায়ত’ নামক স্থানে চলে যান। খলিফা মদিনাতে অবরুদ্ধ হয়েই রইলেন। তিনি মিশরের গভর্নরের কাছে লিখা কথিত চিঠিটির কথা বার বার অস্বীকার করলেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথায় কর্ণপাত করল না। অবরুদ্ধ অবস্থায় খলিফা লক্ষ করলেন যে, পুরো মদিনা শহর বিদ্রোহীদের অনুকূলে চলে এসেছে। অনেক বিশিষ্ট সাহাবী নিরপেক্ষতার ভান করে বাস্তবে বিদ্রোহীদের জন্য খলিফা হত্যার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন।

এমতাবস্থায় তিনি মিশর, সিরিয়া, কুফা ও বসরার শাসনকর্তাদের কাছে সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখলেন। কিন্তু এসব চিঠি পৌঁছাতে এবং সাহায্য আসতে কমপক্ষে দেড়-দুই মাস সময় প্রয়োজন ছিল। বিদ্রোহীরা এক মাস ধরে খলিফাকে পদচ্যুত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু ত্রিশদিন পর্যন্ত খলিফা পদত্যাগে রাজী হলেন না। তাই ত্রিশদিনের মাথায় তাকে পুরোপুরিভাবে গৃহবন্দী করা হল। ত্রিশ দিন পর্যন্ত তিনি বাসগৃহের বাইরে এসে নামায পড়তে পেরেছিলেন।

কিন্তু এরপর তাকে আর ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হল না। তাঁর বাসগৃহে পানি ও খাবার সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হল। ফলে খলিফা এবং তাঁর পরিবার পানির অভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে গেলেন। একজন প্রতিবেশীর গোপন সহায়তায় খলিফা ও তাঁর পরিবার সামান্য কিছু খাবার ও পানি পেয়েছিলেন। এভাবে আরও দশদিন কেটে যায়। দশম দিনে সংঘটিত হয় খলিফার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত খলিফা পদত্যাগে রাজী হননি। অবরোধের চল্লিশতম দিনে এবং পানিবিচ্ছিন্ন হওয়ার দশম দিনে খলিফা উসমান নৃশংসভাবে নিহত হয়েছিলেন।

পানি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পিপাসার্ত ও বৃদ্ধ খলিফা একবার ছাদে উঠে তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করার কথা বলেন। এতে কেউ কেউ প্রভাবিত হয়। কিন্তু কুফার বিদ্রোহী নেতা মালিক আশতার সবাইকে সর্তক করে দিয়ে বলেন, এটি উমাইয়াদের একটি ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর কথায় বিদ্রোহীরা অনড় রইল। এই মালিক আশতারই পরবর্তীতে উমাইদের বিরুদ্ধে হাশেমীদের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি হযরত আলীর ডান হাতে পরিণত হয়েছিলেন। সিফফীনের যুদ্ধে হযরত আলীর সেনাপতি হয়েছিলেন তিনি।

মালিক আশতার সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়ার সামরিক শক্তি ও যোগ্যতা সম্পর্কে ভালভাবেই অবহিত ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যদি খলিফা উসমান বিদ্রোহীদেরকে আরও কিছুদিন ভুলিয়ে রাখতে পারেন তাহলে মুয়াবিয়ার বাহিনী এসে পড়বে এবং দামেশকের সৈন্যদের তলোয়ারের খোরাক হওয়া ছাড়া বিদ্রোহীদের আর কিছুই করার থাকবেনা। তাই বিদ্রোহীদেরকে তিনি আসন্ন ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারে সচেতন করে দেন।

বিদ্রোহীরা এ পরিস্থিতিতে খলিফাকে ক্ষমতায় বহাল রেখে পিছু হটার ঝুঁকি নিতে চাইল না। তারা ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, উমাইয়া খলিফাকে পদত্যাগে বাধ্য না করা গেলে প্রয়োজনে তাকে হত্যা করে হলেও উমাইয়া শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। একমাত্র এ পথেই তারা ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা খুঁজে পেয়েছিল। দিন যতই পার হচ্ছিল খলিফার সাহায্যকারি বাহিনী এসে পড়ার সম্ভাবনা ততই ঘনিয়ে আসছিল। তাই বিদ্রোহীরা আর দেরী করতে চাইল না।

অবরোধের চল্লিশতম দিনে তারা খলিফার বাড়ীর দরজায় আগুন লাগিয়ে দিল এবং ভিতরে ঢুকে পড়ল। খলিফার কক্ষে সর্বপ্রথম প্রবেশ করেন মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর। খলিফা তখন কুরআন পাঠে মগ্ন ছিলেন। মুহাম্মদ খলিফার কাছে পৌঁছেই খলিফার দাড়ি টেনে ধরেন এবং তাকে বলেন, “হে নির্বোধ বৃদ্ধ! এ বার্ধক্যেও তোমার খিলাফতের শখ রয়েছে।” খলিফা মুহাম্মদকে জানালেন যে, তাঁর পিতা হযরত আবু বকর আজ বেঁচে থাকলে তিনি খলিফার দাড়ি টেনে ধরতে লজ্জা পেতেন।

কারণ মুহাম্মদের পিতা প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর হযরত উসমানকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। মুহাম্মদ এ কথা শুনে বৃদ্ধ খলিফার দাঁড়ি ছেড়ে দেন এবং কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। এরপর কক্ষে প্রবেশ করে অন্য দুজন বিদ্রোহী। এ দুজন বিদ্রোহীকে দেখে খলিফা তাঁর নিচের জামা ভালো করে বাঁধলেন। লাজুক খলিফা চাচ্ছিলেন না তাঁর মৃত্যুর পর তাকে নগ্ন করা হউক। একজন বিদ্রোহী লোহার অস্ত্র দিয়ে খলিফার মাথায় বাড়ি দিল। সাথে সাথে খলিফার মাথা থেকে প্রবল বেগে রক্ত ঝরতে শুরু করল।

টপ টপ করে রক্ত ঝরে পড়তে থাকল তার সামনে রাখা কুরআনের পাতায়। এরপর তাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করা হল। খলিফা তাঁর হাত দিয়ে সে আঘাত থেকে বাঁচাতে চাইলেন। এতে খলিফার হাত কেটে গেল। আহত খলিফা আঘাতকারিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, “তুমি যে হাতটি এইমাত্র কেটে ফেললে তা দিয়ে সর্বপ্রথম কুরআন লিখা হয়েছিল।” আঘাতকারি আবারও আঘাতের জন্য তলোয়ার তুলে ধরলে খলিফা পত্নী নায়লা ছুটে এলেন। তিনিও খালি হাতে তলোয়ারে আঘাত আটকাতে চাইলেন।

এতে তাঁর হাতেরও কয়েকটি আঙ্গুল কেটে পড়ে যায। এরপর সরাসরি খলিফার পেটে আঘাত করা হয়। আহত ও রক্তাক্ত খলিফা মেজের ওপর পড়ে থাকেন। একজন বিদ্রোহী তাঁর বুকের উপর দাঁড়িয়ে তাকে নয়বার বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করে। এবার আরেকজন তাঁর পাঁজরের হাড়গুলো ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলে, “তুমি কেন আমার পিতাকে এমনভাবে বন্দী করেছিলে যে, তাকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়েছিল?’ খলিফার মৃত্যু নিশ্চিত করার পর আঘাতকারিরা তাঁর কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।

এরপর খলিফার বাড়ী লুটপাট করা হল। এমনকি তাঁর দেহের কাপড়ও খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবুও বিদ্রোহীদের ক্ষোভ মিটল না। তারা খলিফার লাশ ফেলে রাখল আবর্জনার স্তুপের উপরে। তারা লাশের সৎকারে বাধা দেয়। তিন দিন ধরে খলিফার লাশ এভাবেই পড়ে থাকে। অবশেষে মহানবীর জনৈক পত্নী উম্মে হাবিবা মসজিদে নববীর সিঁড়িতে দাড়িয়ে বিদ্রোহীদেরকে উদ্দেশ্য করে এক সাহসী বক্তব্য প্রদান করেন।

উম্মে হাবিবার প্রকৃত নাম ছিল রামলা বিনতে আবু সুফিয়ান। তিনি ছিলেন উমাইয়া গোত্রপ্রধান আবু সুফিয়ানের কন্যা। আবু সুফিয়ান একসময় পুরো কুরাইশ বংশেরও প্রধান নেতা ছিলেন। হযরত মুয়াবিয়া ছিলেন উম্মে হাবিবার সৎ ভাই। উমাইয়া খলিফা হযরত উসমান ছিলেন একইসাথে তাঁর খালাত ও চাচাত ভাই। হযরত উসমানের হত্যাকাণ্ডের পর উমাইয়ারা যখন মদিনা ছেড়ে পালাচ্ছে তখন উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ানের এই সাহসী কন্যা মসজিদে নববীর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তাঁর বলিষ্ঠ বক্তব্য দ্বারা হযরত উসমানের সৎকারের অনুমতি আদায় করেন।

বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে উম্মে হাবিবা তাঁর ঘোষণায় বলেন: হে বিদ্রোহীরা! যদি তোমরা উমানকে সমাহিত করার অনুমতি না দাও তাহলে আমি রাসূলের পত্নী ঘোষণা করছি যে, আমি মাথার চুল উন্মুক্ত করে মদিনার রাস্তায় নেমে পড়ব এবং আমিই উসমানকে সমাহিত করব। এ ঘোষণার পর বিদ্রোহীরা খলিফার লাশ সমাহিত করার অনুমতি দেয়। এ প্রসঙ্গে হযরত কা’ব বিন মালিক বলেন, যদি উসমানের লাশ সমাহিত করার অনুমতি দেওয়া না হতো এবং উম্মে হাবিবা উন্মুক্ত চুল নিয়ে মদিনার রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন তাহলে এই অভিশপ্ত পৃথিবীর উদ্দেশ্যে আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হতো!

খলিফা উসমানের সাহায্যার্থে কয়েকটি প্রদেশ থেকে যেসব বাহিনী এগিয়ে আসছিল তারা পথিমধ্যেই খলিফার মৃত্যুর সংবাদ পায়। খলিফার মৃত্যু এবং নতুন খলিফা নির্বাচনের খবর পেয়ে তারা নিজ নিজ প্রদেশের উদ্দেশ্যে ফিরে যায়। কুফা থেকে কা’ব ইবনে আমর একটি দল নিয়ে মদিনার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যেই তিনি খলিফা হত্যার সংবাদ পান। মুয়াবিয়া মদিনায় গোলযোগের খবর পেয়ে হাবীব ইবনে মাসলামাকে মদিনায় পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এতে কোন লাভ হল না।

মদিনার প্রকৃত খবর দেরীতে পাওয়ায় মুয়াবিয়া কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। মিশরে যখন খলিফার অবরুদ্ধ হওয়ার সংবাদ পৌঁছে তখন সেখানকার শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ বিন সাদ বিন আবি সারাহ নিজে একদল সৈন্য নিয়ে খলিফার সাহায্যার্থে মদিনা অভিমুখে রওনা হন। কিন্তু তিনি পথিমধ্যেই খবর পেলেন যে, তিনি মিশর ত্যাগ করার পর সেখানকার বিদ্রোহী নেতা মুহাম্মদ বিন আবু হুযায়ফা মিশর দখল করে নিয়েছেন। মুহাম্মদ বিন আবু হুযায়ফা মিশর থেকে মদিনায় আগত বিদ্রোহী দলটির সাথে ছিলেন না।

মুহাম্মদ বিন আবু বকর সে দলটির সাথে মদিনায় এসে খলিফা উৎখাতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ বিন আবু হুযায়ফা মিশরেই অবস্থান করছিলেন এবং সুযোগমত মিশরের ক্ষমতাও দখল করে নিলেন। হুযায়ফা কর্তৃক মিশরের মসনদ দখলের সংবাদ পেয়ে গভর্নর আব্দুল্লাহ তাঁর গন্তব্য বাদ দিয়ে পুনরায় মিশরের দিকে ফিরে চলেন। ফিরে যাওয়ার সময় যখন তিনি ফিলিস্তিন অবস্থার করছিলেন তখনই তাঁর কাছে খলিফার মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছায়।

এমতাবস্থায় তিনি মিশরে ঢুকতে ভরসা পেলেন না। তাই সেখানে থেকে রওনা হলেন সিরিয়ার দিকে যাতে সিরিয়ার শাসনকর্তা মুয়াবিয়ার সাথে মিলে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। হযরত উসমানের হত্যাকাণ্ডের সময় হযরত আলী, তালহা ও যুবাইর ছাড়াও আরও কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবী মদিনায় অবস্থান করছিলেন। এদের মধ্যে হযরত সাদ বিদ ওয়াক্কাস ছিলেন উল্লেখযোগ্য। মদিনা বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ার সময় আমর ইবনুল আসও সেখানে ছিলেন।

খলিফা অবরুদ্ধ হওয়ার পর তিনি ফিলিস্তিনে চলে যান এবং সেখানেই খলিফার মৃত্যুর সংবাদ পান। পরবর্তীতে তিনি মুয়াবিয়ার প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দ্বিতীয় প্রজন্মের যেসব সাহাবীরা মদিনায় ছিলেন তাদের মধ্যে হযরত আবু বকরের পুত্র মুহাম্মদের ভূমিকার কথা ইতোমধ্যে বলা হয়েছে। হযরত উমারের পুত্র আব্দুল্লাহ ছিলেন দ্বিতীয় প্রজন্মের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সাহাবী।

তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতেন। দ্বিতীয় প্রজন্মের হলেও তিনি যথেষ্ট বয়ষ্ক ও সম্মানীত ছিলেন। দ্বিতীয় প্রজন্মের অন্যান্য যেসব ব্যক্তিবর্গ পরবর্তী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তারা হলেন হযরত মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াযিদ, হযরত আলীর পুত্র হাসান ও হোসাইন এবং হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়ামের পুত্র আব্দুল্লাহ।

মদিনা বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ার পর প্রধান তিন সাহাবী হযরত আলী, তালহা ও যুবাইর রাজনৈতিক দৃশপট থেকে নিজেদেরকে আড়ালে রাখতে চেষ্টা করেন। যে কোন রাজনৈতিক কলঙ্ক থেকে মুক্ত থাকার জন্য তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করতেন। হযরত আলী মদিনার বাইরে গিয়েও অবস্থান করছিলেন। খলিফার মৃত্যুর সময় তিনি বাইরেই ছিলেন।

বিদ্রোহীরা খলিফা হত্যার এক সপ্তাহ পর এ তিনজনের মধ্য থেকেই একজনকে খলিফা নির্বাচিত করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করল। বিদ্রোহীদের মধ্যে তিনজনেরই অনুসারী লোকজন ছিল। কিন্তু হযরত আলীর অনুসারীরাই ছিল সংখ্যায় বেশি। কুফার নেতা মালিক আশতার হযরত আলীর পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় বিদ্রোহীদের মধ্যে হযরত আলীর অবস্থান ছিল অন্য দু’জনের চেয়ে এগিয়ে।

খলিফা উসমানকে হত্যার পর বিদ্রোহীরা প্রথম এক সপ্তাহ মদিনায় একটি অস্থায়ী সরকার পরিচালনা করে। বিদ্রোহী নেতা গাফিকী ইবনে হারব মাক্কী ছিলেন এ অস্থায়ী সরকারের প্রধান। কিন্তু তাঁর সরকার কোন কার্যকর সরকার ছিল না। কারণ ইসলামি ঐতিহ্য অনুসারে একজন খলিফার নেতৃত্বে সরকার গঠনের নিয়ম প্রতিষ্ঠিত ছিল। বিদ্রোহীরা প্রথম থেকেই হযরত আলী, তালহা ও যুবাইর ছাড়া অন্য কাউকে খলিফা বানানোর কথা চিন্তা করেনি।

তাই গাফিকীর নেতৃত্বে কোন খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং কার্যকর খিলাফত গঠনের কাজ সম্পন্ন করার জন্যই এ অস্থায়ী শাসন চালু হয়েছিল। বিদ্রোহীদের দূরদর্শী নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন একটি কার্যকর খিলাফত সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে তাদের পুরো বিদ্রোহই ব্যর্থ হয়ে যাবে এবং এই বিদ্রোহ একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বিদ্রোহের বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে একজন গ্রহণযোগ্য খলিফা নির্বাচন ও একটি কার্যকর খিলাফত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু তখনকার কলংকজনক পরিস্থিতিতে হযরত আলী, তালহা ও যুবাইর কেউই নিজ থেকে খলিফা হওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে চাচ্ছিলেন না। তারা এটি ভেবে ভয় পাচ্ছিলেন যে, সদ্য প্রয়াত খলিফা হযরত উসমানের স্থলাভিষিক্ত হতে গিয়ে তারা আবার হযরত উসমান হত্যার পরিকল্পনাকারি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়েন কিনা। তাই তারা প্রত্যেকেই চাচ্ছিলেন মদিনার অধিকাংশ অধিবাসী এবং বিদ্রোহীরা তাদেরকে বার বার খলিফা হওয়ার জন্য অনুরোধ করুক।

এজন্য তারা প্রথমে খলিফা হতে কিছুটা অনাগ্রহ দেখালেন। কিন্তু হযরত আলী বেশি দেরী করাটাকে সমীচিন মনে করলেন না। তাকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করার পর তিনি খলিফা হিসেবে বাইআত গ্রহণের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন। মদিনাবাসী ও বিদ্রোহীরা দলে দলে এসে তাঁর হাতে বাইআত করল। বিদ্রোহী ও মদিনাবাসীদের মধ্যে হযরত আলীর সমর্থকের সংখাই ছিল বেশি। তাই তাঁর খলিফা হওয়াটা যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেল।

লেখক: আসিফ আযহার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাবিপ্রবি
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: http://www.asifajhar.wordpress.com
ফেসবুক: Asif Ajhar, যোগাযোগ: 01785 066 880

বি.দ্র: রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে লেখকের সবগুলো বই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে লেখকের নামে সার্চ দিলেই যথেষ্ট।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×