somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের পাঠশালায় (প্রাচীন যুগ) - ৭ (৫ম অংশ)

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
৭ম অধ্যায় : ইতিহাসের পথে রোম-৫ম অংশ


অগাস্টাস সিজার বিজয়গর্বে বলেছিলেন, তিনি চিরকালের মত শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু তিনি, জানতেন না এটা ছিল কবরখানার শান্তি। সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বংসের কিনারায় এসে পৌছেছিল। শুধু মাত্র মিসরের জীবন কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। তা ছাড়া সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশগুলির অর্থনৈতিক জীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছিল। বাণিজ্য প্রায় বন্ধ; বিক্রেতা আছে ক্রেতা নেই। কারিগরদের অবস্থা শোচনীয়; প্রাচ্যের প্রজাদের ওপর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে করের বোঝা। এর ওপর রাজপ্রভুদের জন্য বাধ্যতামূলক শ্রমের চাপে তারা বিপর্যস্ত। কিন্তু স্বচ্ছল জীবন ছিল ধনবান রোমান দাস মালিকদের। গৃহযুদ্ধের সময় লুটের মাল হাত করে তারা প্রভুত ধনের মালিক হয়। আগে শুধু অভিজাত প্যাট্রেসিয়ানরাই দাস-মালিক হত। এখন শুধু অভিজাত প্যাট্টেসিয়ানরা নয়, বণিকরাও প্রচুর পরিমাণে দাস ও জমির মালিক হয়ে গিয়েছে। গৃহযুদ্ধের সময়কার লুণ্ঠনের অর্থ মালিকরা খরচ করছিল বিলাসিতায়। কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ ছিল অনিশ্চিত। ধন তারা খরচ করছিল ঠিকই কিন্তু সঞ্চয়ের নতুন পথ খোলা নেই। কোন দেশ আর বাকি ছিল না যা রোমান দাস মালিকদের লুণ্ঠনে উজাড় হয় নাই।

প্রথম শতকের সম্রাটরা আর্থ-রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলেন। আগেকার সিনেটের কনসালরা তাদের ১ বছরের মেয়াদ শেষে প্রোকনসাল হয়ে যে কোন বিজিত রোমান দেশের গভর্নর হয়ে বসতেন। সেখানে তারা স্বৈরশাসনের মাধ্যমে ব্যাপক লুণ্ঠন চালিয়ে নিজের ধনভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারতেন। সংস্কারের সময় এদেরকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। স্বৈরশাসনের পরিবর্তে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। প্রদেশের শাসকের নাম হয় প্রকুরেটার। প্রকুররেটারকে শাসন সংক্রান্ত বিবরণ রোমের সদর দপ্তরে পাঠাতে হত। প্রজাদের অভিযোগে প্রকুরেটারকে অপসারণের ব্যবস্থাও রাখা হয়। প্রজাদের উপর দুটি কর আরোপ করা হয়। পোলকর ও ভূমিকর। বিজিত দেশসমূহের প্রজাদের রাষ্ট্রের নাগরিকত্ত্বও দেয়া হয়।

কিন্তু এসব সংস্কার সাম্রাজ্যকে উদ্ধার করতে পারল না। শোষণের মাত্রা কমে নাই। ক্রীতদাসদের অবস্থা আগের মতই রইল। শতবর্ষব্যাপী গৃহযুদ্ধের ধকল সইতে হল ক্রীতদাস ও প্রজাদেরকেই। ইতিহাসের একটি আমোঘ সত্য হল শাসকদের যুদ্ধের ধকল ভোগ করতে হয় জনগণকেই। সেই সময়ে সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। রোমের অধিবাসী ছিল প্রায় পাঁচ লক্ষ। এদের মধ্যে বেকার প্রলেতারিয়ানদের সংখ্যাই ছিল দুই থেকে তিন লক্ষ। সম্রাটের পক্ষ থেকে এদের মধ্যে বিনামূল্যে রুটি বিতরণের ব্যবস্থা করে ও নানা ধরনের বিনোদনের মাধ্যমে তাদেরকে শান্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিদ্রোহ থেকে তাদের নিবৃত্ত করা পুরোপুরি সম্ভব হয় নাই। রুটি ও বিনোদনের মাধ্যমে তাদেরকে কোনমতে শৃঙ্খলায় রাখা সম্ভব হলেও দাস এবং বিজিত দেশের প্রজাদের শান্ত রাখা খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছিল।

রোমান ঐতিহাসিকরা বলেন যিসাসের জন্মের পরের প্রথম শতকেও খন্ড বিদ্রোহ কিছুদিন পরপরই দেখা দিয়েছে। বিদ্রোহ সামলাতে শাসকরা নৃশংস পদ্ধতির আশ্রয় নেয়। কঠোর আইনের দ্বারা দাসদের শায়েস্তা করা হয়। একজন ক্রীতদাস বিদ্রোহ করলে মালিকের ঘরে যত ক্রীতদাস রয়েছে তাদের সবাইকেই ফাঁসি দেওয়ার আইন করা হয়। এই জল্লাদের আইনেও দাসদেরকে মুখবুজে দুঃসহ শোষণ ও অত্যাচার মেনে নিতে বাধ্য করা যেত না। অন্যদিকে ইতালির বাইরে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে প্রজারা সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করত। শতবর্ষী গৃহযুদ্ধের খরচের চাপে তাদের অর্থনৈতিক জীবনের মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল। যুদ্ধ শেষ হলেও তাদের অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নয়ন হয়নি।

যিসাসের জন্মের পরে প্রায় চারশ বছর রোম সাম্রাজ্য টিকেছিল। প্রজাতন্ত্র থেকে রাজতন্ত্র ব্যবস্থায় প্রবেশ করেও রোম সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সংঘাত থেমে যায় নি। উত্থান-পতন, হিংসা লোভ, বিদ্রোহ-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ইতিহাস হয়ে আছেন পরবর্তী রোম সম্রাটরা। টিবেরিয়াস সিজার ক্ষমতায় ছিলেন ৩৭ সাল পর্যন্ত। তাঁর সময়েই যিসাসের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ ঘটেছে এর পরে ক্ষমতায় আসেন ক্যালিগুলাস (৩৭-৪১), ক্লভিয়াস (৪১-৫৪), নীরো (৫৪-৬৮)। এদের মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর ছিলেন নীরো। তিনি ছিলেন যেমনই নিষ্ঠুর তেমনই খামখেয়ালী। গল্পে আছে একবার রোমে আগুন লেগেছিল। দাউদাউ আগুনে যখন রোম শহর পুড়ে যাচ্ছিল নীরো তখন নিরাপদে বসে পরম নিশ্চিন্তে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। খৃষ্টানদের তিনি দুচোখে দেখতে পারতেন না। খৃষ্টানদের ওপর তিনি অমানুষিক নৃশংসতায় নির্যাতন চালিয়ে ছিলেন। শোনা যায় নেবুচাঁদনেজারের মত নীরোও পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।

গৃহযুদ্ধের পরবর্তী সময়েও রোমান সম্রাটরা অত্যাচার ও বিলাসীতায় একজন আরেকজনের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। অগাস্টাস সিজারের পরবর্তী সম্রাট টিবেরিয়াস চারশ ইহুদিকে রোম থেকে সার্ডিনিয়ায় নির্বাসিত করেন। সম্রাট ক্যালিগুলাসকে ইতিহাসবিদরা অর্ধ উম্মাদ বলেছেন। লাম্পট্য ছিল তার প্রবাদপ্রতিম বিলাসিতার চূড়ান্ত অনুষঙ্গ। তার বিলাসিতার জন্য রোমান রাজকোষ ব্যয় করত তৎকালীন রোমান মুদ্রায় বর্তমান ইংল্যান্ডের প্রায় দুই কোটি পাউন্ড সমপরিমাণ অর্থ। ক্যালিগুলাস জেরুজালেমের রোমান কর্তৃপক্ষকে আদেশ প্রদান করেন অবিলম্বে সলোমনের ধর্মগৃহের পবিত্র হোলিসের ওপর তার নিজের মূর্তি স্থাপনের। এই আদেশ বিদ্রোহী করে তোলেছিল ইহুদিদের। একে তো অর্থনৈতিকভাবে ইহুদি প্রজারা পঙ্গু হয়ে পড়েছিল রোমান শোষণের তীব্রতায়। তার ওপর আবার ধর্মীয় প্রভুত্ব বিস্তারের চেষ্টা। তাও আবার এমন ধর্ম যেখানে নরপশু শাসকই দেবতা। এই ধর্মের চেয়ে ইহুদি, মোয়াবীয়, আমোনীয় প্রভৃতি সমাজের নবিদের প্রচারিত ধর্ম শতগুণে উন্নত ও মানবিক ছিল। তাই কখনও এসব জাতির মানুষ রোমানদের অপধর্ম গ্রহণ করেনি।

জেরুজালেমের ধর্মগৃহ তাদের সকলেরই শ্রদ্ধার পাত্র ছিল। ক্যালিগুলাসের বিকৃত অভিলাষ তাদেরকে বিদ্রোহের পথে টেনে আনে। অর্থনৈতিক শোষণের জন্যই এ বিদ্রোহে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছিল। শুধু ধর্ম-সচেতন মানুষ নয়, সাধারণ প্রজারাই ছিল বিদ্রোহের মূল বাহিনী। মূলত অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তির আকাঙ্খাই ধর্মীয় প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে বারবার সংগঠিত বিদ্রোহে রূপ নিয়েছিল। ৬৬-৬৭ সালের দিকে জুডিয়ায় সবচেয়ে বড় বিদ্রোহের সূচনা হয়। ৭০ সালে সম্রাট টিটাস নারকীয় নৃশংসতায় জেরুজালেম ধ্বংস করে এ বিদ্রোহ দমন করেন। ক্যালদীয় সম্রাট নেবুচাদনেজারের পর রোমান সৈন্যরা আবারও জেরুজালেমের ধর্মগৃহ ও দাউদের প্রাচীর ধূলায় মিশিয়ে দিল। দশ লক্ষ ইহুদিদের অনেকেই হয় তাদের তরবারির নিচে প্রাণ দেয় অথবা পালিয়ে যায়। সম্রাট হাডারিয়ানস বাইরে থেকে ইহুদিদের জেরুজালেমে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা অরোপ করলে আরেক দফা বিদ্রোহ হয় এবং যথারীতি ভয়ানক নৃশংসতায় বিদ্রোহ দমন হয়। জেরুজালেম ইহুদি শূণ্য হয়ে যায়। এ সময় থেকেই পালিয়ে যাওয়া ইহুদিরা সারা আরবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। জেরুজালেমের ইহুদিরা সে বছর থেকে যে শৃঙ্খলিত বন্দী জীবনে প্রবেশ করে তা থেকে তারা মুক্তি লাভ করে সুদীর্ঘ ৫৬৭ বছর পরে। ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম খলিফা ওমরের বাহিনীর জেরুজালেম বিজয়ের পরে আসে তাদের সে মুক্তি।

ধর্মীয় আদলে এসব বিদ্রোহ হলেও মূল কারণটি ছিল অর্থনৈতিক শোষণ। কিন্তু রোমান ক্রীতদাস কিংবা প্রলেতারিয়ানদের বিদ্রোহই হোক আর প্রাচ্যের প্রজা বিদ্রোহই হোক প্রতিটি বিদ্রোহই শেষ হয়েছে ব্যার্থতা ও পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। পরাধীনতার শেকল আরও চেপে বসেছে গলায়। এমতাবস্থায় এটাই স্বাভাবিক যে বিপন্ন মানুষ ধর্মের মধ্য থেকেই সান্তনা নেওয়ার চেষ্টা করবে। ধর্ম তখন আর বিদ্রোহী নয় বরং শান্তি ও সমপিত জীবনের কথা বলে এবং দুঃখ বেদনা ও গ্লানিময় জীবনকে সহ্য করে বেঁচে থাকার আধ্যাত্মিক প্রেরণা জাগায়। মানুষের শক্তি দ্বারা মুক্তির আশা ছেড়ে দৈব শক্তিতে মুক্তি অনুসন্ধানের কথা বলে। দুঃখের দিনে আধ্যাত্মিক প্রেরণা ও সাহস মানুষের বেঁচে থাকার খুবই বড় অবলম্বন।

রোমান অত্যাচারে বিপন্ন প্রাচ্যের জীবনে এরকমই একটি অবলম্বন হয়ে দেখা দেয় খ্রিস্টধর্ম। তবে নবি যিসাসের জীবদ্দশায়ও তা প্রাচ্যের প্রজাদের জীবনে খুব বড় প্রভাবক হয়ে দেখা দেয় নি। অন্যান্য নবিদের মতই যিসাসকেও ইহুদি সমাজের একজন সাধারণ নবি হিসেবে গণ্য করা হত। কিন্তু সময় ও প্রেক্ষপটের কারণে ধীরে ধীরে তাঁর প্রচারিত শিক্ষাগুলোই একসময় রোমান প্রজাদের দুঃখ ও দারিদ্রপীড়িত পরাজিত জীবনে সান্তনা ও স্বস্তি ও এনে দিতে শুরু করে। অধ্যাত্মিক সান্তনায় মানুষ দুঃখ ভুলতে চেষ্টা করে। শুধু ইহুদি প্রদেশগুলো নয়, গ্রিস - রোম ও এশিয়া মাইনরেও তাঁর শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ে। নবি যিসাস জীবদ্দশায় গুরুত্বপূর্ণ নবি হিসেবে আলাদা গুরুত্ব না পেলেও সেমেটিক নবিদের মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁর শিক্ষাই শাসক পূজারি প্যাগান গ্রিক ও রোমানদের মধ্যে প্রবেশ করে। এটা ছিল ইতিহাসের অভূতপূর্ব ঘটনা।

এই ইতিহাসটি এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। পরবর্তী সময়ে যিসাসের অনুসারিদের প্রচারিত খ্রিস্টধর্ম হঠাৎ করে ছড়িয়ে যায় রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে। প্যাগানরা একসময় তাদের অদ্ভুত দেব-দেবীদের ছেড়ে দলে দলে এই ধর্মে দীক্ষা নিতে শুরু করে। তবে ইতিহাসে এই ধর্মের গুরুত্ব প্রতীয়মান হয় যিসাসের আবির্ভাবের অনেক দিন পরে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে খ্রিস্ট মতবাদ রোমান ক্রীতদাসদের মাঝে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করে এবং তারা দলে দলে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নিতে থাকে। রোমানদের মধ্যে যারা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সেন্ট পল ও সেন্ট পিটারের অবদান ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। দুজনকেই জীবন দান করতে হয়েছিল। পিটারকে যেখানে হত্যা করা হয় বহুদিন বাদে সেখানে নির্মিত হয় সেন্ট পিটারের গির্জা। খ্রিস্টধর্মের প্রসারে সম্রাট ডায়োক্লিটিয়ান (২৮৪-৩০৫ খ্রি.) শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। এর প্রসার রোধে তিনি যে হত্যাকান্ড চালান, তা খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য হত্যাযজ্ঞ। এই নিধন খ্রিস্টধর্মকে নির্জীব করতে পারল না।

খ্রিস্টমতবাদ এক প্রবল জোয়ার সৃষ্টি করে সারা রোমান সাম্রাজ্যে। জোয়ারের তোড়ে ভাসিয়ে নেয় দাস ও সাধারণ দরিদ্র রোমানদের। এ পরিস্থিতি শংকিত করে তোলেছিল রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনকে। খ্রিস্ট মতবাদের প্রতি বৈরী মনোভাব ধরে রাখলে পরিণামে তা বিদ্রোহের জন্ম দিতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে তিনি সাম্রাজ্যের অখন্ডতা ও শান্তি রক্ষার জন্য খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নেন এবং খ্রিস্টধর্মের প্রতি সহনশীল হওয়ার নীতি গ্রহণ করেন। এটা ৩১৩ সালের ঘটনা। এটা ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ঘটনা। কোন সম্রাটের নবিদের ধর্ম গ্রহণের ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগের পারস্য সম্রাট সাইরাস ইহুদিদের পৃষ্টপোষকতার জন্য বিখ্যাত হলেও তিনি মুসার ধর্ম গ্রহণ করেননি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বড় সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে কনস্টানটাইনই প্রথম নবিদের ধর্ম গ্রহণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি মানব সভ্যতার ইতিহাসকে অত্যন্ত গভীরভাবে প্রভাবিত করেছেন। রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী তিনি রোম থেকে সরিয়ে এনেছিলেন বাইজানটিয়ামে (বর্তমান তুরষ্কের ইতাম্বুল) এবং এর নামকরণ করেছিলেন নোভা রোমা অর্থাৎ নতুন রোম। কিন্তু অচিরেই তাঁর নামে এর নামকরণ হয়ে যায় কনস্টানটিনোপল।

৩৯৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট থিওডোসিয়াস খ্রিস্টধর্মকে রাজধর্ম ঘোষণা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার দুই পুত্র হনোরিয়াস ও আর্কাডিয়াসের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করে দেন। পশ্চিমাংশ পান হনোরিয়াস। তাঁর রাজধানী মিলান পূর্বাংশ পান আর্কাডিয়াস। এর রাজধানী কনস্টানটিনোপল। যেহেতু বাইজানটিয়াম দুর্গকে কেন্দ্র করে এই নগরী গড়ে উঠেছিল তাই সাম্রাজ্যের পুর্বাংশের নাম হয়ে যায় বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য। একসময় পশ্চিমাংশের পতন ঘটলেও পূর্বের এই বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য টিকে থেকে গিয়েছিল আরও বহুদিন। পশ্চিম ইউরোপ চলে গিয়েছিল টিউটন জাতিগুলোর হাতে। ৪০০ সাল থেকেই ইউরোপ জুড়ে টিউটনদের আধিপত্য দেখা দেয়।
কী দাপট ছিল রোমের সৈনিকদের! তাদের পদভারে কেঁপে উঠত তিন-তিনটে মহাদেশ। ইউরোপ-এশিয়া, আফ্রিকা! হাজার বছরের পুরনো রোমান সাম্রাজ্য। তবু এই বিশাল সাম্রাজ্যের রাজধানী রোমই লুটে নিয়ে গেল একের পর এক অর্ধসভ্য যাযাবর টিউটন জাতির লোকেরা। গথদের কাছে প্রথম মাথা নোয়ালো রোম। তারপর এল ভ্যান্ডালরা। পরে বার্গান্ডিয়ান, পূর্ব-গথ, এলেমান্নি, ফ্রাঙ্ক - একের পর এক। আজকের ইউরোপের আদি পুরুষ এই টিউটনরা। ইংরেজ, ফরাসি, জার্মানি, নরওয়োজিয়ান, হাঙ্গেরিয়ান, রাশিয়ানরা এদেরই বংশধর। টিউটনরা ৪০০ সালে ব্রিটেন আক্রমণ করে। সেখানকার রোমান সৈন্যরা পরাজিত হয়ে রোমে ফিরে আসে। সে বছর সম্রাট হনোরিয়াস গথদের আক্রমণ থেকে রোম রক্ষা করতে পেরেছিলেন। ব্রিটেন উপদ্বীপে যে সব টিউটনরা বসবাস শুরু করে তাদের নাম অ্যাঙ্গল ও স্যাক্সনস। অ্যাঙ্গলদের নাম অনুসারে তাদের দেশের নাম হয় ইংল্যান্ড।

টিউটনদের আরেকটি দল গলদেশ অর্থাৎ ফ্রান্স দখল করে নেয়। এদের বলা হত ভ্যান্ডাল। এরা যেখানেই যেত ভয়াবহ তান্ডবলীলা চালাত। তাই এদের নামানুসারে ইংরেজিতে একট শব্দ আছে ‘ভ্যান্ডালিজম’ যার অর্থ মূল্যবান কোন কিছুর ওপর অবিচার ধ্বংসলীলা চালানো। ইতালির উত্তরের টিউটিনদের নাম গথস। এরা সুযোগ পেলেই ইতালিতে ঢুকে পড়ত। প্রথম ও দ্বিতীয় শতকে এদেরকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এর পরেই এদের চাপ বাড়তে থাকে। অন্যদিকে প্রাচ্যের পারসীয় ও আর্মেনীয়রাও রোমান সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়তে শুরু করে। কিন্তু এসব অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য রোমের সেই শক্তি আর অবশিষ্ট ছিল না। দাসত্বের ভিত্তির ওপর ইতালির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আর টিকে থাকতে পারছিল না। ইতালির অর্থনৈতিক জীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দাসভিত্তিক অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য অনবরত দাস সরবরাহ চাই। কিন্তু দাসের যোগান তখনই সম্ভব যখন দেশ জয়ের কাজ চলতে থাকে। রোমের পক্ষে তখন সে পথ বন্ধ। ফলে দাস ভিত্তিক উৎপাদন অচল হয়ে যায়। সামুদ্রিক বাণিজ্যও ছিল বন্ধের পথে। কৃষি উৎপাদনে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে মালিকরা ল্যাটিফান্ডিয়ার জমি দাসদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া শুরু করে। ফসলের মালিক হত দাসই। মনির একটি অংশ কর হিসেবে নিত। প্রলেতারিয়ানদের মধ্যেও জমিবণ্টন হতে থাকে।

এভাবে দাস ও প্রলেতারিয়ানরা পরিণত হয় প্রজায়। এদের নতুন নাম হয় কলোন। ভূস্বামী দাস মালিকরা পরিণত হয় সামন্ত জমিদারে। ফলে ইতালির অর্থনীতি সামন্ততন্ত্রের আকার ধারণ করতে থাকে। এ অবস্থায় বিশাল সৈন্যবাহিনীর ভরণ পোষণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। নতুন দেশ লুণ্ঠনের লোভেও কেউ সেনাবাহিনীতে আসবে - সে পথও বন্ধ। চতুর্থ শতকে টিউটনদের অনবরত আক্রমণে রোমান সামরিক শক্তি আরও দুর্বল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে আত্মরক্ষার জন্য সেনা বাহিনী পোষা কঠিন হয়ে পড়ে। টিউটনরা ইতালিতে ঢুকে পড়ে জমি দখল করে যৌথ গ্রাম ব্যবস্থায় উৎপাদন শুরু করে। বড় বড় ভূ-স্বামীরা নিজস্ব রক্ষীবাহিনী গঠন করে এদেরকে বাধা দিতে চেষ্টা করত। কখনও সফল আবার কখনও বিফল হয়ে তাদের সাথে আপোষ করতে বাধ্য হত। শহরের পলাতক দাসেরা এসব ভূ-স্বামীদের কাছে আশ্রয় নিয়ে প্রজায় পরিণত হত। ধীরে ধীরৈ এসব ভূ-স্বামীরাই সামন্ত অধিপতি হয়ে উঠতে শুরু করে। সম্রাটের শক্তি বলতে আর কিছু ছিল না। সম্রাটরা বাধ্য হয়েই এসব সামন্তদের হাতে শাসনভার ছেড়ে দিতেন।

চতুর্থ শতকের শেষের দিকে টিউটনদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার আর কোন উপায় থাকে না। গথরাই প্রথম ইতালিতে ঢুকে পড়ে । পঞ্চম শতকে রোমান সাম্রাজ্যের পুরোটাই চলে যায় টিউটনদের দখলে । তখন টিউটনরা আর যাযাবর নেই। রোমানদের কাছ থেকে উৎপাদন প্রযুক্তির ব্যবহার শিখে তারাও সভ্য জীবনে প্রবেশ করছে। তবে রোম বারবার টিউটন জাতিগুলোর হাতে লুন্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। রোমান সম্রাটরা টিউটনদের সাথে আপোষ করে কোনমতে টিকে থাকার চেষ্টা করছিলেন। গথ সেনাপতিরা আপোষ প্রস্তাব অনুযায়ী নিজেদেরকে সম্রাটের সামরিক কর্মচারী পরিচয় দিলেও তারা মোটেও সম্রাটের আদেশের ধার ধারত না । পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি সময়ে তারাই প্রকৃতপক্ষে রোমের শাসক হয়ে দাড়ায়। ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে তারা রোমান সম্রাট রেমূলাস অগাস্টালুসকে সরিয়ে দিয়ে তাদের নেতা ওডোয়েকারকে রাজা ঘোষণা করে। মূলত এ ঘটনার মধ্য দিয়েই অবসান ঘটে হাজার বছরের পুরনো রোমান সাম্রাজ্যের । টিকেছিল শুধু পূর্বাংশ নিয়ে কনস্টান্টিনোপাল। টিউটনরা ছিন্ন ভিন্ন রোমান সাম্রাজ্যে শাসন করতে থাকে । টিউটনদের মধ্যেও খ্রিস্টধর্ম প্রসার লাভ করে । আর্য গ্রিক ও রোমানদের কাছ থেকেই অনার্য টিউটনরা খ্রিস্টধর্মের শিক্ষা পেয়েছিল। এভাবে আর্যরাই এক সময়ে এসে পরিণত হল অনার্য সেমেটিক ধর্মের প্রচারকে। অধিকাংশ টিউটনই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল।

টিউটনদের মধ্যে একসময় ফ্রাঙ্করা ইউরোপ জুড়ে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। এদের ভেতর চার্লস মার্তেল ও পেপিন এই দুই রাজার চেষ্টায় পশ্চিম ইউরোপে একটি সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। শার্লেমানের সময়ে এ সাম্রাজ্য চুড়ান্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। নির্মম আক্রমণের মধ্যে দিয়ে পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে তিনি যে বিশাল সাম্রাজ্যের পত্তন করেছিলেন তা ছিল নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের আগে পর্যন্ত ইউরোপের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। ৮০০ সালে খ্রিস্ট ধর্মজগতের গুরু স্বয়ং পোপ তাঁর মাথায় সম্রাটের মুকুট পরিয়ে দিয়েছিলেন। শার্লেমানের মৃত্যুর পর ইউরোপ আবার টুকরো টুকরো হয়ে যায়। খ্রিস্টধর্মের তোড়ে টিউটনদের আদি ধর্ম হারিয়ে গেলেও আমাদের জীবনে এখনও তার কিছু নিদর্শন বিদ্যমান। সপ্তাহের কিছু দিনের নাম হয়েছে তাদের দেবতাদের নামে। যেমন-

টিউইসডে -‘টিউ’ দেবতার নামে হয়েছে টিউইসডে।
উডনেসডে - গথদের শ্রেষ্ট দেবতা ছিল আকাশের দেবতা উডেন।
থার্সডে - ‘থর’ দেবতার নামে হয়েছে থার্সডে।
ফ্রাইডে - ‘ফেরা’ দেবতার নামে হয়েছে ফ্রাইডে।

৪৭৬ সাল পর্যন্ত সভ্যতার ইতিহাসকে প্রাচীন যুগ ধরা হয়। তখন থেকে শুরু হয় মধ্যযুগ। মধ্যযুগ শেষ হয় ১৪৫৩ সালে। মধ্যযুগের সব চেয়ে বড় ঘটনা হল ইসলামী খিলাফতের আবির্ভাব। ১৪৫৩ সালে ওসমানীয় সুলতান ফাতেহ আল মাহমুদের কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের ঘটনাকে মধ্যযুগের শেষ ধরা হয়। তখন থেকে সূচনা ঘটৈ আধুনিক যুগের। কনস্টান্টিনোপলের পতনের ফলে ইউরোপের সাথে এশিয়ার বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে যায়। ইউরোপিয়দের মধ্যে শুরু হয় সমুদ্রপথে ভারতে আসার বিকল্প পথ আবিষ্কারের চেষ্টা। এ চেষ্টা করতে গিয়ে ১৪৯২ সালে কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেন। অবশেষে ১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা গামা আফ্রিকার দক্ষিণ হয়ে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করতে সমর্থ হন। ইতালিতে শুরু হয় রেনেসাঁ অর্থাৎ পুরনো গ্রিকো রোমান জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন ও শিল্পকলার পূর্ণজাগরণের প্রচেষ্টা।

বই পোকায় বইটি পড়তে চাইলে এই লিংকে যান:
http://banglabookhouse.com/book/MjI3/Itihaser-Pathshalay-PrachIn-zug

লেখক: আসিফ আযহার, শিক্ষার্থি, ইংরেজি বিভাগ, শা.বি.প্র.বি.
ঠিকানা : ৫৬, ঝরনা আ/এ, ঝরনারপার, কুমারপারা,সিলেট-৩১০০।
যোগাযোগ: ০১৮১৬ ৯৪৭৩২৩,
E-mail: [email protected]
FB: Asif Ajhar
Blog: http://www.asifajhar.blogspot.com
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×