somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের সকাল, নামায আর কুরবানী

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলায় আমার প্রিয় প্রাণী ছিলো ছাগল। কারন বেশিরভাগ ঈদেই বাসায় একটা বা দুইটা খাসী কুরবানী করা হতো। গরুর ভাগায় আমরা খুব একটা যেতাম না। যদিও ঈদের খুব বেশী হলে এক সপ্তাহ আগে ছাগল বাসায় আনা হতো, ঐ কয়দিনে আমার খুব সখ্যতা হয়ে যেতো ওদের সাথে। ছাগলের চোখ দুটো খুব মায়া মায়া লাগতো আমার। একবার শুধু একটা ছিলো চরম রকমের বেয়াড়া। কাছে গেলেই সে গুতাতে আসতো। বেচারার সংগে একটু ভালো খাতির করার কোন সুযোগই সেবার আমি পাইনি।

আরেকবার দুটো ছাগল কুরবানি করা হচ্ছে। একটাকে শুইয়ে ছুরি বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আরেকটা ছাগল সেই দৃশ্য দেখলো। তারপর পাশের লেবু গাছের পাতা ছিড়ে খেতে লাগলো। আমার বড় ভাই তখন আমাকে বলছে, 'দেখ দেখ এর জন্যই এরে বলে ছাগল, এ অবস্হায়ও সে পাতা চিবুচ্ছে।'

ঈদের সকালে আমার একটা কাজ খুব ভালো লাগতো। সেটা হলো ছাগলকে গোসল করানো। একটু সমস্যা হতো শীতের আমেজ থাকলে। চাপকলের গোড়ায় ছাগল কে নিয়ে জোর করে ঠেসে ধরে গোসল করাতে হতো। পানি দেখলেই ছাগল আর স্হির থাকেনা। তাকে একজন ধরে রাখতে হয়, আরেকজন গায়ে ডলে ডলে পানি ঢেলে গোসল করিয়ে দেয়। আমি আর আব্বা মিলেই কাজটা করতাম।

একবার মনে আছে কুরবানীর ঈদে সে কি ভয়ানক বৃষ্টি। আমরা বড় মসজিদের ভিতরে বসলাম। যেতে একটু দেরী হওয়াতে শেষের সারিতে দাঁড়াতে হলো। অন্য সময় বাইরেও লোকে ভরে যায়। কিন্তু বৃষ্টির এমনই জোর আর সেই সাথে বাতাস। শেষের কয়েকলাইনের আমরা সবাই প্রায় ভিজে গেলাম।

কোরিয়াতে কুরবানী ঈদের আলাদা কোন আমেজ নেই। গতানুগতিক নামায পড়ার মতই এখান কার ঈদের নামায। গতরাতে স্নোফল হলো বেশ খানিকটা। বাইরে বেরিয়েছিলাম। জায়গায় জায়গায় পিছলা। সকালেও ফোরকাস্ট ছিলো বৃষ্টি অথবা স্লোফলের। ঘুম ভাংলো ৮ টার দিকে, শব্দে টের পেলাম গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। চরম আলসেমি কাটিয়ে গেলাম মসজিদে।

তখনও জামাতের এক ঘন্টা বাকি। শেষ মাদুর যেখানে পাতা সেখানে বসে পড়লাম আমরা কজন। খোল জায়গায় পানি জমে আছে। উপরে কোন ছাউনি না থাকায় অনেকেই বসতে পারছেনা। একসময় এমন লোক বেড়ে গেলো, বোঝা যাচ্ছিলো অনেকেই জায়গা ঠিক মতো পাবেনা। বসে বসে দেখতে থাকলাম নানা দেশের ভাইদের ভ্রাতৃত্ব আর ইসলামের শিক্ষা।

একজন দুইজন করে কাঁধের উপর দিয়ে লোক পার হতে থাকলো। দেখতে পাচ্ছে ভিতরে কোন জায়গা নেই তবুও টপকিয়ে টপকিয়ে যাচ্ছে সামনে। একসময় নামাযের সময় হলো। আমরা শেষের দিকে যারা বসে ছিলাম। অনেকেই আর কোন দাঁড়ানোর জায়গা খুঁজে পেলাম না। কিছু লোক পলিথিন নিয়ে দাঁড়ালো। আমি মুসলমান ভাইদের নামায পড়া দেখলাম।

বাইরে বের হয়ে দেখি দুইলোক দুটো বুনো ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। একটা ছাগল কোন ভাবেই যাবেনা। গলার দড়ি টেনে কোনভাবেই তাকে সামনে নেয়া যাচ্ছেনা। শেষে ঐটাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়া হলো।

আমাদের এক ছোট ভাই র ল্যাবে আর্মি শাসন শুরু হইছে। ননস্টপ কাজ করায় তারে দিয়ে। সে পেট খারাপ আর মাথা ব্যথার কথা বলে ল্যাবে পরে যাবে বলে নামায পড়তে আসছে।

এরকম ভাবে ঈদ আসে, আমরা সুন্দর নাদুস নুদুস প্রাণীগুলো কুরবানি দেই, অন্তত গলায় ছুরি চালাই, আর কাজের বেলায় ভাইয়ের বুকে ছুরি বসাই। ইসলামের ভালো ভালো দিক গুলো বলার সময় কোন কিছু বাদ রাখিনা। আর করার সময় একটার ও খোঁজ রাখিনা। মাঝে মাঝে মনে হয় বাবা মা মুসলিম আর মুসলিম দেশে জন্ম, নাহলে ইসলামের ভাই ব্রাদার রা যে নমুনা বহন করে আমি অন্তত এই ধর্মে আকৃষ্ঠ হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখিনা।

দামী জামার জায়গামত ছেড়া থাকার চেয়ে না পরাই ভালো।



সবাইকে ঈদ মুবারক....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:৫৪
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×