somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ঢাকা টু ঢাকা অযান্ত্রিক-দ্বিচক্রযান ভ্রমনকাহিনী ভায়া টঙ্গি-পূবাইল-মনহরদী-ডেমরা-যাত্রাবাড়ি

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাইসাইকেল বা সংক্ষেপে বাইক কিনার পর প্রথম লম্বা রাইড দিয়েছিলাম সোনারগাঁ দেখতে যেতে- মোট ৭১কিমি ছিল তা। রাইডটা ছিল গত বছর ডিসেম্বরের দিকে খুব সম্ভবত। আর তারপর দীর্ঘ ৮ মাস কোন লম্বা রাইড দেই নাই। বাসার আশে পাশে যাতায়াতের কাজ সারতাম। বর্ষায় তাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। :|

যাই হোক অনেকদিন পর গত ২২/২৩তারিখে দিকে প্রনব ভাই (বুয়েট'০৯, কেমি) জানালেন পূবাইল যাচ্ছেন ওনারা ৪ জন- আমি চাইলে যাইতে পারি। জানালাম যে নিঃসন্দেহে রাজি। যথাদিন মানে ২৫ তারিখ আসল। জুনিয়র তানভির (বুয়েট'১২, মেকা) সকাল ৫.৩০ এর দিকে জানালো সে হাজির বুয়েটে। সকাল ৬টার দিকে মিলনস্থল-বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে হাজির হল আমার ক্লাসমেট ত্রিশু (বুয়েট'১১, মেকা) আর ভাইয়ারা ৪জন- নাফি ভাই, অনিক ভাই, সুদিপ্ত ভাই আর প্রনব ভাই- সবাই বুয়েট'০৯ ব্যাচের। পৌনে সাতটার দিকে শুরু হল রাইড। পলাশী মোড় হয়ে হাতিরপুলের সামনে দিয়ে সার্ক ফোয়ারার সামনে এসে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে উঠলাম। যেতে যেতে আমাদের প্রথম ব্রেক নিলাম আমরা এয়ারপোর্টের একটু পরে। কলা-কেক হল আমাদের বিরতিকালীন নাস্তা। এরপর আবার চলা শুরু এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই টঙ্গিতে পৌছলাম এবং টঙ্গি ফ্লাইওভার এর উপর নেওয়া হল আমাদের দ্বিতীয় বিরতি। এইবারের বিরতি ছবি তোলার বিরতি।



আবার আমাদের চলা শুরু। তবে এখানে বলে রাখি যে এতক্ষন সবার সাথে তাল মিলিয়েই চালাচ্ছিলাম কিন্তু ফ্লাইওভারে উঠে সব তেল বের হয়ে গেসে- সো সাইকেলও আমার ধীর হয়ে আসতে শুরু করল। যাইহোক চলা শুরু। যেতে যেতে মাজুখান ব্রিজ আসলো। ব্রিজ পেরিয়েই হাতের বামে যে রোডটা পড়ে তাতে আমরা ঢুকে পরলাম এবং মিনিট ১৫ এর মত রেস্ট নিলাম সবাই। কি জানি একটা ফুলকে ধুতরা ফুল বলে উপাধি দিয়ে আবার আমাদের যাত্রা শুরু। এইবার আর থামাথামি নাই। একেবারে পূবাইল- মীরের বাজার চৌরাস্তায় এসে থামলাম। এখানে এসে প্রনব ভাই জানালেন যে তার বাড়ি হল হাতের ডানে যে "ঢাকা বাইপাস" আছে তা দিয়ে ২০কিমি এর মত দূরে- আমরা যাইতে চাই কিনা। যাওয়ার সুবিধাও জানালেন যে গিয়ে গোসল টোসল করে ঘুম দিয়ে নেওয়া যাবে। আমরাও রাজি হয়ে গেলাম। ভাবলাম কত আর আর হবে- বড় জোর এক/দেড় ঘন্টার সাইক্লিং। মীরেরবাজারে বিশাল পরটা দিয়ে ডিম আর ডালভাজি মেরে দিয়ে যাত্রা শুরু আবার আমাদের। আর বলা বাহুল্য যে এসব খানাপিনার স্পন্সর আমাদের বড়ভাইরা- কারন আমরা বুয়েটিয়ানরা বিশ্বাস করি বড়ভাইদের সাথে ঘুরতে গেলে (ঘুরতে গেলে বলসি কিন্তু- অন্য সময় পরিস্থিতি বুঝে কারন তাদের পকেটও ভবানি হইতে পারে) নিজেদের পকেটে হাত দেওয়া তো দূরে কথা- মানিব্যাগ আনাও হারাম! শুরু হল যাত্রা।

শুরুতেই বলে রাখি এই যাত্রার কথা আমার মেলা দিন মনে থাকবে। যাচ্ছি তো যাচ্ছিই- রাস্তা আর শেষ হয় না! একটু পর প্রনব ভাই জানালেন যে উনি ভুল বলেছেন- রাস্তা আসলে ৩৫ কিমি। অলরেডি বুয়েট থেকে ৩৫কিমি মেরে দিসি- আরো ৩৫! আল্লাহর নামে আবার প্যাডেল মারা শুরু। আমার অবস্থা আস্তে আস্তে কাহিল হইয়া যাইতেসে। সবাই সামনে গিয়ে আমার জন্য ওয়েট করে। যাই হোক নিজের ব্যর্থতার কথা আর নাই বলি। পথিমধ্যে কোন একটা ব্রিজে উঠার সময় ঢালে অনিক ভাই পড়ে গিয়ে পায়ে অল্প ছিলে ফেললেন। তারপর আবার আমাদের প্যাডেল মারা শুরু। মাঝে একবার একবাড়ির সামনে থেমে বোতলে পানি ভরে নিলাম সবাই। পানি নিয়ে পুরা ট্যাঙ্কিই খালি করে দিলাম আমরা। প্রনব ভাই আবার জানালেন যে এবারও উনি ভুল ধারনা করেছেন- দূরত্ব আরও ৫কিমি বেশি মানে ৪০কিমি। আমি চোখে সরিষাফুল দেখা শুরু করলাম। একে তো কাউয়া-মরা-রোদ তার উপর এতখানি পথ আমি অনেকদিন চালাই না সাইকেলে। সো সবার থেকে পিছিয়ে পরতে লাগলাম। কিন্তু এবার থেকে ভাইয়াদের কেউ না কেউ আমার সাথে সাথে থাকলেন। অবশেষে এল ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে। প্রনব ভাই এবার জানালেন- আর মাত্র(!) ৫কিমি দূরে তার বাড়ি। প্যাডেল মারা is continued again। এই ৫কিমি আর শেষ হয় না। যেতে যেতে একবার জিজ্ঞেস করলাম যে আদৌ তার বাড়ি এদিকে কিনা নাকি হুদাই নিয়া আসছেন। অবশেষে (অবশেষে আবার বলি- আবার বলাটা আসে) অবশেষে সাড়ে ১১টার দিকে দীর্ঘ ৬০কিমি পেরিয়ে বাড়িতে পৌছলাম। আসলে মীরের বাজার থেকে ২০কিমির মতই দূরত্ব- কিন্তু ক্লান্তি আর রোদের কারণে দূরত্ব বেশী মনে হয়েছে।

প্রথমেই বলি- প্রনব ভাই এর বাড়িটা শিরাম। ঝকঝকে তকতকে বাড়ি। গাছগাছালির ছায়ায় ঠান্ডা একটা পরিবেশ। ঢুকেই সবাই টপলেস মানে গেঞ্জি- শার্ট খুলে ফ্যানের নিচে ঠান্ডা হউয়া শুরু করলাম। একেকজনের চেহারা রোদে তেতে লাল হয়ে আছে। সবাই প্রকৃতির সাথে কথা বলতে আর হাতমুখ ধুতে বাথরুমের সামনে লাইন দিল। তানভির পিচ্চি আগের রাত ঘুমায় নাই। So পোলায় আক্ষরিক অর্থেই হেইলা পইড়া গেল বিছানায়। বাকিরা আমরা ঠান্ডা ফ্লোরে যে যেদিকে পারলাম শয়ন-অবস্থান নিলাম। আর এদিকে শুরু হয়ে গেল- আন্টির রান্না আর টিভিতে বঙ্গ দেশীয় চলচ্চিত্র দর্শন। আধা/পৌনে একঘন্টার মত সময়ের পরে সবাই আবার বাথরুমের সামনে লাইন দিল। এবার গোসলের জন্য। ইতোমধ্যে প্রনব ভাই আর উনার আম্মা আপ্যায়নের চূড়ান্ত করেছেন। আমার মাথাব্যাথা করতেসিল। ঘরে প্যারাসিটামল নাই বলে প্যারাসিটামল আর অনিক ভাই এর পা এর ছিলে যাওয়া অংশের জন্য ব্যান্ডএইড প্রনব ভাই ঝড়ের মত কোন ফাকে যে নিয়ে আসলেন টেরই পেলাম না। আর আন্টি এদিকে রান্নার ফাঁকে আমাদের কে শরবত-বিস্কুট দিয়ে গেলেন। যাইহোক গোসল শেষ। সবাই ফ্রেশ হয়ে বাংলা সিনেমা দেখা কন্টিনিউ করলাম। যথাসময়ে রান্নাও শেষ। বলার মত অংশ হল- কই মাছের কাটা বাছার ঝামেলা এড়াতে কই মাছ খাওয়া এড়িয়ে গিয়ে বুঝলাম মস্ত ভুল কইরালাইছি। মাছ ভাজিটা শিরাম হইসিল :D দেশী কই বইলা কথা ;) যাইহোক খাওন শেষ- সবাই রেডি হয়ে বিদায় নিয়ে বাড়ির সামনে ছবি তুলে আবার আমাদের যাত্রা শুরু করলাম বেলা ৩টার একটু আগে।



এবার আমাদের ফিরতি পথ হল ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে ধরে ডেমরা হয়ে। ফেরার পথে আর বলার মত কিছু নাই। ঢাকা-সিলেট রোড সহ সারাদেশের হাইওয়ের ড্রাইভারদের স্বভাব যা- নিজের অংশের রাস্তা তাদের ভাল্লাগে না, রাস্তার ডানদিকটাই বেশী প্রিয়। ফলস্বরূপ একাধিকবার উলটা দিক থেকে আসা বাসের চাপে রাস্তা থেকে নেমে দাড়াতে হয়েছে। ডেমরা ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় ঢুকলাম। তারপর যাত্রাবাড়ি-সায়দাবাদ-টিকাটুলি হয়ে মতিঝিল হয়ে আমি আমার বাসায় চলে আসলাম আর বাকিরা বুয়েটে চলে গেল। ততক্ষনে সারাদিনে মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব ৯৩কিমি আর বাজে প্রায় ৬টা।

আর এভাবেই আমাদের ৭জনের প্রায় ১১ঘন্টার ৯৩কিমি দীর্ঘ ও মনে রাখার মত (অন্তত আমার কাছে) একটা জার্নির সমাপ্তি হল।

[পুনশ্চঃ ১. পুরা পথে ভাইয়াদের যে সাপোর্ট আর হেল্প পেয়েছি তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই আমার। বিশেষত টায়ার্ড হয়ে পড়ার কারনে বার বার পিছিয়ে পড়ায় ওনাদের বিরক্তি লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওনাদের কেউ না কেউ পথে আমার সাথে ছিলেন আর বাকিরা সামনে বেশী এগিয়ে গেলে দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন। আর বাসায় প্রনব ভাই এর আতিথেয়তা- এককথায় অসাধারণ! :D

২. বাসায় এসে গোসল করে দেখি পায়ের হাফপ্যান্ট আর স্যান্ডেলে ঢাকা অংশ ছাড়া বাকি অংশ রোদে পুড়ে কালো হয়ে গেসে এবং পায়ের পাতার অংশের পোড়া দাগ বেশ ভাল মত বোঝা যায়- একটু সাদা (বেল্টে ঢাকা অংশ) তারপর একটু কালো (খোলা অংশ)- পুরাই জেব্রা ক্রসিং। আর পায়ের মাসলের ব্যাথা পরেরদিনও ছিল এতটুক বলাই যায়]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×