“বিশ্বকাপ ট্রফি এখন ঢাকায়” এ খবরটি দেখে আমার ম্যারডোনার কথা মনে পড়ছে। একজন ম্যারাডোনা একটি দেশের আইকন। বাংলাদেশে একদিন ম্যারাডোনার চেয়েও ভালো ফুটবলার নিজেকে প্রকাশ করবে এ আমার বিশ্বাস। ম্যারাডোনা, পেলে, ম্যাসি, রুথ গুলিথ, রবার্ট ব্যাজিও, রোনালদো কিংবা যে কোনো ভালোমানের খেলোয়ারদের খেলার মধ্যে একটি চরম সত্য লুকিয়ে আছে। আর তা হলো এরা যখন খেলেন তখন বিপক্ষ দলের ৩-৮ জন প্লেয়ার তাদের গার্ড দিয়ে রাখেন। যাতে এরা গোল না করতে পারেন। যাতে এই সব বড় মাপের খেলোয়াররা সাধারণ খেলায়ারদের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়ায়। তারা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে লাখো দর্শকের সামনে এদের অযথা ফাউল করে লাথি দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু একজন ভালোমানের খেলোয়ারে কথা দুনিয়ার মানুষ মনে রাখে। যারা গার্ড দিয়ে তাদের খেলার বিচ্যুতি ঘটাতে চান তাদের নাম মানুষের মনে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। এই সব ফাউল করা লোকজন কালের প্রবাহে হারিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক সত্য। কিন্তু যে ব্যাক্তি তার সত্যিকারের মেধাকে কাজে লাগিয়ে সাধনা করে তার মনের খেলাটাকে সবার মধ্যে তুলে ধরতে পারেন। তিনিই তো প্রকৃত খেলোয়ার।
ঠিক তেমনি তোমার জীবনে যত বড় আঘাত আসুক না কেনো তুমি যদি তোমার আদর্শতে অটল থাকতে জানো, পৃথিবীর কোনো শক্তিই তোমার মেধার প্রকাশকে আটকে রাখতে পারবে না। আমি বরিশালে ব্যবসা শুরু করেছি বছর খানেক আগে এসে দেখে যাও আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সফলতা। কারন আমি যে মানুষকে ঠকানোর জন্য ব্যবসা করি না। যেমন করে বড় খেলোয়ারদের গার্ডদিয়ে তাকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়, ঠিক প্রতি পদে পদে আমার জীবনে বাঁধা এসেছে। আমি আমার ভিতরের সত্য দিয়ে সব বাঁধা অতিক্রম করতে জানি। এই জানা যে আমার সহজাতো। তুমি অন্যকে নিয়ে সমালোচনা করার কাজে ব্যাস্ত থাকলে জীবনের প্রকৃত স্বাধ পাবে না। ঐ দেখো রবীন্দ্রনাথ আকাশে সূর্যের মতো চিরদিন আলোদিয়ে যাচ্ছে। তিনি তার জীবনে কোনো লেখকের সমালোচনা করেন নি। বরং নতুনদের স্বাগতম জানিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “শেষের কবিতা” উপন্যাসটিতে নিজের কাছে আত্মসমালোচনা করেছেন। কিন্তু যে বৃটিশরা তাদের সেক্সপিয়ার কে কিংবা আল্লামা ইকবালকে যে পাকিস্তানিরা নিরিহ বাংঙালীর কাছে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও এই দু’জনকে বড় প্রমান করতে চেয়েছিলেন তারা কোথায়?
দেখো সাহিত্য গগণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইকবাল, সেক্সপিয়ার সবাই আজও স্ব স্ব স্থানে নিজেকে প্রমাণ করে ভক্তের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন কিন্তু তাদের নাম করে যারা পলিটিক্স করেছেন তারা হারিয়ে গেছেন। তাই তোমাদের উদ্দেশ্যে আমি বলছি মহামানবদের কখনও আলাদা করতে যেও না। নিজের আদালতে নিজে নিয়মিত হাজিরা দেও দেখবে সে আদালতের বিচরক যে সয়ং সত্য। ঠিক তেমনি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় নিজের বিবেকবোধ ও প্রেরন দিয়েই। তুমি যদি অন্যের প্ররোচনায় পড়ে নিজেকে অন্যের খেলার পুতুল বানিয়ে ফেলো তাহলে তুমি তো স্বাধীন স্বত্ত্ব থাকলে না। বন্ধু জীবনে যতো আঘাত আসবে, যতো বেদনা আসবে ততো তুমি নিজেকে বুজতে শিখবে। তুমি যদি তোমার সত্য জ্ঞানকে প্রকাশ করতে পারো তবেই তুমি যুগস্রষ্ঠা হতে পারবে।
ভিতরের মানুষটিকে পাকা খেলোয়ার না বানতে পারলে মাঠে কিভাবে তুমি তোমাকে প্রমাণ করবে বলো? যদি তোমার খেলার মাঠ অন্য কেউ ছিনিয়ে নেয় তাহলে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্বতো নিজের উপরই বর্তায়। তোমার আত্মবিশ্বাস দিয়ে তোমার সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। নিজের কাছে নিজে রানা না হলে অন্যের মাঝে কিভাবে রাজত্ব করবে বন্দু। মুক্ত করে নিজেকে ফুটিয়ে তোলো। সুর্যকে আদর্শভেবে যে সূর্যমুখি তাকিয়ে থাকে সেই সুর্যমুখিকে কি খুব বেশী খারাপ লাগে? সূর্য আর সুর্যমূখী দুটোই যে সুন্দরের প্রতিক।
আঘাত, ঘৃনা, আপমান, শাস্তি, শাসন, ত্রাসনকে জয় করা যায় ধৈর্য্য ও সাহোস দিয়ে। কারণ ধর্য্য আর সাহোস দুটোই যে সুন্দরের প্রতিক। আর সত্যের স্থান সুন্দরের মাঝেই। আসো বন্ধু তুমি তোমার নিজের জ্ঞান দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করো। আসো তুমি তোমার নিজের শক্তি সাহোস দিয়ে সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করো।
এই সমাজের মানুষগুলো শুধু টাইম পাস করতেই জানে। সময়কে কাজে লাগাতে জানে না। তুমি তোমার লক্ষ্য নির্ধারন আগে করো না বরং তুমি যখন বুজবে “লক্ষ্য নির্ধারণ” বলতে কি বুঝায় তখন তোমাকে সবার মাঝে বিকশিত করো।
আজ যে পেলে, ম্যারাডোনা কে আমি দেখছি। তারা তো তাদের ভিতরের শক্তিটাকে অহংকারের জালে বন্দি করে রেখেছেন। দেখুন আজ বাংলাদেশের রাজণীতিবিদদের মতো তারা দুজনেই দম্ভ আর অহংকারের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এখন যদি তাদের মাঠে নামানো হয় কিংবা বর্তমানে তাদের যে কুলষিত মন কৈশরের তাদের শরীরে প্রবেশ করানো হয় তাহলে দেখবে তারা যে আসল খেলা ভুলে গেছে। আর দেখো ঐ মেসী যেনো বাঙালীর এই নব জাগরনের প্রতিক। কোনো বাধাই যে তার কাছে ব্যাপার না। গোলরক্ষকের কাছে মেসী আতঙ্ক। মেসীর কাছে গোলরক্ষক আতঙ্ক না। ঠিক তেমনি তুমি যদি তোমাকে সবার মাঝে নিজেকে তুলে ধরতে পারো দেখবে সবাই তোমাকে নমস্কার করছে তিরষ্কার নয়। তুমিই পারো তোমার অনুভবকে বিশ্বের বুকে স্থায়ী করে তুলতে। তাতে অন্যের প্রভাব পড়ুক তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু তুমি কোনোদিন নিজেকে ফটোকপি বানিয়ে ফেলো না। নায়ক যদি হতেই চাও সত্যিকারের নায়ক হও।
জীবন নাটকে যে তোমার ভিতরের সেই পরম সত্যই চিরকাল নায়ক রূপে বিচরন করে। আর এই নায়কের কখনও লোক দেখানো মেকাপ নেবার প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশের গর্ব বিশ্ব নন্দিত স্থপতি এফ রহমান যদি আগে তার মনে ১০০ তলা বিল্ডি না বানিয়ে রাখতে পারতেন তাহলে তিনি তা বাস্তবায়ন করতে পারতেন না। আবার মালাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মাহতির মোহাম্মদ যদি নিজের কল্পনায় একটি উন্নত দেশের রূপরেখা তৈরি করতে না পারতেন তাহলে মালাশিয়া এতো উন্নত হতো না। মাহতির মোহাম্মদ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহনের পর একটি বনজঙ্গলে ঘেরা জায়গাকে দেখিয়ে বলেছিলেন এখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং হবে। সেই জায়গাটিই আজ পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার।
আগে স্বপ্ন দেখতে না জানলে বাস্তবায়ন সম্ভব না। আজ তোমরা আধুনিক মালাশিয়াকে দেখো কিংবা শিকাগোতে এফ রহমানের জন্য গর্বে মন ভরে ওঠার ভান করো। কিন্তু নিজের মনের ভিতর যে সত্য থাকে, সেই সত্য চোখদিয়ে দেখো একজন ব্যাক্তি মহতির বা এফ. রহমানের মনের আইডিয়া পুরো বিশ্বকে সফল করে তুলছে। আসুন আমরা সবার আগে নিজের মধ্যে দেশপ্রেম অনুভব করি। শুধু এটুকু দিয়ে শুরু করলেই হলো, বাকি পথ তোমাদের জন্য স্রষ্টাই তৈরী করে দিবেন।
আমি টাকা পয়সা চাই বলে আমার উপর রাগ করছেন। তাদের আবারও বলছি আপনারা আমাকে দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আমি দেখেছি অনেক গুণী মানুষ সারাজীবন কষ্ট করে চলেছেন। সেই সত্যকে উপলব্ধি করতে হলে আপনি শুধু আপনার শিক্ষাজীবনের পাঠ্য বইয়ের রচয়িতাদের কথা স্মরণ করুন। তাদের জীবনী দেখুন তারা ত্যাগ করতে পেরেছিলেন বলেই আজ নিজেকে এই ধুলির ধরায় হিরের মতো উজ্জ্বল ও মজবুত করে তুলে ধরতে পেরেছেন।
আমার কথা আপনাদের ভালো না লাগলেও আমার কিছু যায় আসে না। কারন আমি আমার নিজের ভিতরের সত্য সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লিখি আমি কারও মনোরঞ্চন করার জন্য লিখি। সত্যের যে কারও কাছে কাছে কৈফিয়ত দিতে হয় না। কৈফিয়ত দিতে হয় মিথ্যার। যারা পাঠক তৈরী করার জন্য বড় বড় বক্তৃতা দেন। তারা বুঝতে পারেন না একজন ভালো লেখককে এই সমাজ ব্যাবস্থা দিয়ে অপমান করে মেরে ফেলার ফন্দি করলে যে লেখক তৈরি হবে না। আর ভালো মানের লেখক তৈরি না হলে পাঠক কি চাঁদ থেকে আসবে?
লেখক আগে না পাঠক আগে? অবশ্যই লেখক। শরৎচন্দ্রে চট্টপাধ্যায় রচিত “দেবদাস” উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা বানিয়ে। সেই সিনামায় কোটি কোটি রূপি খরচ করে মাধুর দিক্ষিত কে শারী পড়াতে পারেন। শাহরুখক খান কে দিয়ে অভিনয় করাতে পারেন কিন্তু সেই শরৎ বাবু যে সারাজীবন জীবনযুদ্ধ করে গেছেন তা তোমরা ভুলে গেলে। গুণী মানুষদের মৃত্যুর পর সম্মান দিয়ে তাদের অপমান করা ঠিক না। শরৎ বাবু সারাজীবন মিনানমারের রাজধানী রেঙ্গুনে কষ্ট দুখঃ কষ্টে জীবন কাটিয়েয়েন। তার শ্মশান রেঙ্গুনে অবস্থিত। তার আত্মা আমাদের অভিষাপ বাঙালীদের দিকে যে তাকিয়ে আছে। তার সমাধী রেঙ্গুনে থাকলেও তার মনটা যে আজও একজন বঞ্চিত বাঙালীর মধ্যে বাস করে। সেই সত্যিকারের বাংঙালীকে আর লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ করে দাও। বুঝিয়ে দাও তুমি স্পষ্ট ভাবে সত্য বলতে জানো।
বন্ধু আমার আগের লেখাগুলো পাড়া জন্য বিনীত চিত্তে বলছি। ঐ লেখাগুলোর তারিখ আর তার সাথে বর্তমান মিডিয়ার পরিবর্তনের একটি সমন্বয় যদি তোমার চোখে পরে, তাহলে তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়বে বৈকি কমবে না।
https://www.facebook.com/asif.ud
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩০