ওহুদের যুদ্ধ মাত্র শেষ হলো। যুদ্ধের মাঠে শহীদ হয়ে পড়ে আছেন ৮৫জন সাহাবী। কিছুসংখ্যক সাহাবীদের ভুলের কারণে অনেক বড় মাশুল দিতে হলো মুসলিমদেরকে; একটা বড় অংশের সাহাবীদের জীবন দিতে হলো। শহীদ হলেন হামজা রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু, হানজালা রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুসহ অনেক নামকরা সাহাবীপ্রমুখ।
চাচা হামজা রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এমন কান্না তিনি আর কখনও কাঁদেননি, সাহাবীরাও তাঁকে এমন কান্নারত অবস্থায় কখনও দেখেননি। কিন্তু তিনি রসূল; তাঁর ধৈর্য তাঁর অনুভূতিকে ছাপিয়ে যায়, তিনি শান্ত হন।
বেশ কিছু সময় পরে হামনাহ রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দৌড়ে এলেন। তার ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। হামনাহ বিনতে জাহাশ রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা ছিলেন নবী করীম সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের মামাতো বোন, আম্মাজান যায়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহার আপন বোন আর মুসআব ইবনে উমাইর রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর বিবি। নিজেকে সমবরণ করে নরম সুরে বললেনঃ হে হামনাহ, ধৈর্য্যের সাথে আল্লাহর কাছে পুরস্কারের আশা কর; তোমার ভাই আব্দুল্লাহ শহীদ হয়েছে। হামনাহ রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা বলে উঠলেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজি'উন। রসূলুল্লাহ আবারও বললেনঃ হে হামনাহ, তোমার মামা হামজাও শহীদ হয়েছেন, ধৈর্য্যের সাথে আল্লাহর কাছে পুরস্কারের আশা কর। হামনাহ রদ্বী'য়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা আবারও বলে উঠলেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজি'উন। রসূলুল্লাহ পুনরায় বললেনঃ হে হামনাহ! শান্ত হও, ধৈর্য্য ধর আর আল্লাহর কাছে পুরস্কারের আশা কর; তোমার স্বামী মুসআবও শহীদ হয়েছে। এবার আর হামনাহ রদ্বী'য়াল্লাহু তা'আলা আনহা নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না, হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। তার কান্না দেখে নবীজীও নিজেকে সমবরণ করতে পারলেন না। টপটপ করে নিশ্চুপ অশ্রুধারায় সিক্ত হলেন। হঠাৎ যেন চারিদিকের বাতাস ভারী হয়ে উঠল।
আজকে নবীজী বেঁচে থাকলে হয়ত এমন করেই স্বামীহারা-পুত্রহারা-ভাইহারা ফিলিস্তিনী মা-বোনদের সান্ত্বনা দিতেন। তাদের দুঃখে দুখী হয়ে তাঁর মুবারক চোখযুগল সিক্ত হত অশ্রুধারায়। কত মা-ভাই-বোনেরা যে তাদের একই পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে নিঃস্ব-একাকী হয়ে গেছে তার হিসেব নেই। আল্লাহ তাদের এই শাহাদাতকে কবুল করুন, তাদেরকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে দিন আর আমাদের বলিয়ান করুন ঈমানী শক্তিতে যাতে করে আমরাও তাদের পদাঙ্গ অনুসরণ করতে পারি, শাহাদাতের তীব্র বাসনাকে লালন করে জিহাদের পানে।
এই যুদ্ধ আমাদের সবার আর বিজয় একান্তই আল্লাহর। বেঁচে থাকার অধিকার তারই যে জালিমের জুলুমে মৃত্যুভয়ে ভীত নয়।
আসিফুল আলম
সিডনী, অস্ট্রেলিয়া
০২.১১.২০২৩

(ছবিতে সদ্য শহীদ একটি ফিলিস্তিনী পরিবার)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



