somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনটি নির্মম দৃশ্যকল্প ও একটি অতি-কল্পনা

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
ধরুন আপনি আর আপনার খুব প্রিয় কেউ কোন একটা মেয়ে পাশা্পাশি ফুটপাথে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছেন,

মেয়েটা হতে পারে আপনার বোন, কিংবা বান্ধবি

কিংবা ধরে নেই অনেক দিন সাধনার পর সদ্য মন জয় করতে পারা আপনার জগতের রাজকন্যটা...

বিকেলের মৃদুমন্দ বাতাস বয়ে যাচ্ছে, আপনি মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনতে শুনতে হাঁটছেন, হাসছেন, আপনিও মজার কিছু একটা বলায় সেও হেসে ফেলছে, আপনি অভিভূত হয়ে তার হাসির দিকে তাকিয়ে আছেন ... একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে?

ঠিক তখনি হঠাৎ ফুটপাথের পাশের রাস্তাটা দিয়ে প্রায় ঝড়ের গতিতে ছুটে আসা কয়েকটি মোটর বাইকের উপর থকে একজন আপনার পাশে দাঁড়ানো সেই মেয়েটির ওড়না ধরে হ্যাঁচকা টান দিলো, মেয়েটা কিছু বুঝে উঠার আগেই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সামনে, কিছুদুর হেঁচড়িয়ে টানায় তার মুখের একপাশের চামড়া, মাংশ উঠে এসেছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে ধুলোময় ফুটপাথটা

আপনি হতচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ... মাত্র তিন চার সেকেন্ডের ভেতরে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছেন না

হঠাৎ চিৎকার করতে করতে ছুটে গেলেন আপনি ... আপনার হাত রক্তে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে ...

আপনার প্রিয় মানুষটা আপনার হাতের উপর কাটা মাছের মত ছটফট করছে বর্ণনাতীত যন্ত্রণায়

... আপনি কিচ্ছু ভাবতে পারছেন না ... আপনার মনে হচ্ছে এক্ষুণি এই দুঃস্বপ্নটা ভেংগে যাবে ... আপনি উঠে দেখবেন আপনার প্রিয়মানুষটা তার বাসায় নিরাপদে আছে...

আপনার সাথে দেখা করার জন্য বের হতে হয় নি তার আজ,

কিন্তু দূর থেকে ভেসে আসা সেই মানুষের গর্ভ থেকে বের হওয়া পশু গুলোর মিলিয়ে যাওয়া অশ্লীল হাসির আওয়াজ বলে দিচ্ছে, এটা দুঃস্বপ্ন নয়, এটা দুঃস্বপ্ন নয় ...

... ...

২.
এবার আরেকটা দৃশ্যকল্পনা করা যাক ... এবার আপনার ভাগ্যটা অতটা খারাপ না ... ছেলেগুলো যাস্ট দূর থেকে ভয়ানক খারা নোংরা কিছু শব্দ আপনাদের দিকে ছুড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো ...

আপনার মাথার ভেতর সাথে সাথে আগুন জ্বলে উঠলো ... আপনার সামনে আপনার প্রিয়মানুষটাকে এরকম অপমান? বেচারি লজ্জায় কুঁকড়ে গেছে...

আপনি কিছু চিন্তা না করেই পিছে পিছে একটা দৌড় দিয়ে ফুসফুসের সব শক্তি এক করে চিৎকার করে উঠলেন "ঐ শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চারা" ...

মোটর সাইকেল গুলো থেমে গেলো, আপনি দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছেন, অদ্ভুত একটা ঘোরে আছেন আপনি ... ঘোর কাটতে শুরু করলো যখন সেই ছেলে গুলা পিছনে ফিরে এসে আপনাকে ঘিরে ফেললো-

"কি বললি তুই? আরেকবার বল"
"তোরা কি বলসস?"
"তুমি এলাকায় *গী নিয়া ঘুরবা আমরা কিছু বলতেও পারুম না?"
"কুত্তার বাচ্চা মুখ সামলায়া কথা ..."

আপনি কথা শেষও করতে পারবেন না, আপনার উপর ছেলে গুলা বন্য পশুর মতই ঝাঁপিয়ে পড়বে

আপনার আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকা প্রিয় মানুষটার সামনেই আপনাকে মারতে মারতে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যাবে

মজার ব্যাপার হলো আশেপাশের মানুষগুলো যাস্ট অন্ধ কিংবা বধির হয়ে যাবে ... তারা জানে এরা কারা, এদের পাওয়ারের, কিংবা মোটর সাইকেলের উৎস কি,

আপনার বিভৎস মৃত্যু কিংবা মেয়েটার হাহাকার কিছুই তাদের স্পর্শ করবে না :)

... ...

৩.
এবার আরেকটু পজিটিভ ভাবে চিন্তা করি ...

এলাকার মানুষ এইসব বাইক ওয়ালা পশুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ, টিভিতে, ফেসবুকে এটা নিয়ে কথাবার্তা হওয়ায় তাদের মধ্যে সচেতনাও বেড়েছে,

একদিন তারা করলো কি, হাতেনাতে এরকম একটা গ্যাংকে ধরে আচ্ছামত মাইর দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলো

পুলিশ যথারীতি এতদিন কিছু না করলেও বা না জানলেও পাব্লিক মেরে ধরিয়ে দেবার পর খুব সিরিয়াস ভাব টাব নিয়ে তাদের থানায় নিয়ে গেলো।

তারপর কি ঘটলো জানেন? জ্বি, ঠিক ধরেছেন!!

এই ছেলে গুলা তাদের যে বাপদের পাওয়ারে চলে, যে বাপরা তাদের বাইক কিনে দেয়, তারা এসে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে। কেউ মামলা করে নি। পুলিশও তাই কিছু করতে পারে নাই।

কি কিউট ব্যাপার স্যাপার, তাই না? :)

... ...

৪.
এবং একটি অতি-কল্পনাঃ

বাইক নিয়ে তিনটা ছেলে সাঁ সাঁ করে ছুটে যাচ্ছে। তাদের মনে আজ বড় আনন্দ। এলাকার নেতা ভাই থেকে মাসিক হাত খরচটা পেয়ে গেছে। আজকে ফূর্তি হবে, ফূর্তি!! রাস্তায় টসটসা কোন মক্কেল পেলে একটু মজাও পাওয়া যাবে... মেয়ে গুলা যখন ওড়নায় টান খেয়ে চিৎকার করে, কি যে আনন্দ লাগে ... কোন ড্রাগেও এই আনন্দ নাই!!

হঠাৎ তারা খেয়াল করলো সামনে তাদের রাস্তাইয় কয়েকটা লোক দাঁড়িয়ে আছে, তাদের হাতে লাঠি মত কি দেখা যাচ্ছে

তারা গতি কমিয়ে আনে, সামথিং ইজ রঙ

হঠাৎ তাদের মনে কুডাক দিতে শুরু করে, তারা বাইক থামিয়ে পিছনে ফিরে আবিষ্কার করে তাদের পিছনের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে

তারা এদিক উদিক তাকায়, ফুটপাথ ভর্তি মানুষ, দোকানের লোকজন, সবাই স্থির চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, পালাবার কোনো রাস্তা নাই

তারা বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে, লোক গুলো বাঁশ হাতে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে...

ছেলেগুল কুলুকুলু করে ঘামতে থাকে, একজন কাঁপতে কাঁপতে মোবাইল বের করে কাকে যেন ফোন দিতে যায় ... সে মোবাইল ধরে রাখতে পারছে না ... হঠাৎ তার হাত থেকে ফোনটা কেরে নেওয়া হলো

ছেলেটা ঢোক গিলে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা প্রানহীন চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটায় কোন হিংস্রতা নাই, বিদ্বেষ নাই, শুধু একটা প্রাণহীন দৃষ্টি। সে ঠান্ডা মাথায় প্রতিশোধ নিবে শুধু।

ছেলেটা শিউরে উঠে। এই মানুষটাকে সে চিনতে পারছে। শেষ এই চোখ দুটো সে যখন দেখেছিলো তখন এই মানুষটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলো তার প্রিয় মানুষটার রক্তাক্ত দেহটা কোলে নিয়ে। একই রকম প্রাণহীন চোখে।

পরদিন সকালের পেপারের প্রথম পাতায় খবর এলোঃ "সেই বাইক আরোহী খুনিরা গণধোলাইয়ে নিহত, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ"

[প্রথম তিনটা ঘটনা নির্মম বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে লিখা হলেও শেষ অংশটা সত্যি হবে কিনা জানা নেই। তবে কল্পনা করতে ভালো লেগেছে]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×