somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ মুজিব, জনপ্রিয় নেতা থেকে স্বৈরশাসক?

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের সব থেকে জনপ্রিয় নেতা। জীবনের শুরু থেকেই তিনি কাজ করে গেছেন দেশের মানুষের জন্য। তবে জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি এমন সব কাজ করেছে যা তাকে মানুষের চোখেই ভিলেন হিসাবে উপস্থাপিত করেছে। একজন জনপ্রিয় নেতা থেকে কিছু ক্ষেত্রে তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বৈরশাসক। তাঁর এই রূপান্তরের পেছনে রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি যেমন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে উজ্জ্বল ছিলেন, তেমনি তাঁর শাসনকালে কিছু সিদ্ধান্ত তাঁকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে।
শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তার শিকড় গভীর এবং তা ১৯৪০-এর দশক থেকে শুরু হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামে অংশ নেন। ভাষা আন্দোলনে শুরু থেকেই তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই কারণে তাকে জেলেও যেতে হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে শক্তিশালী করেন। এই দাবি বাঙালি জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে, যা তাঁকে পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর নেতৃত্ব ছিল অতুলনীয়। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেন, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়। স্বাধীনতার পর তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং তাঁর জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে ছিল।
কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তাঁর শাসনকালে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও পরিস্থিতি তাঁর ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৭৫ সালে বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করা। এর ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয় এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এই পদক্ষেপকে অনেকে স্বৈরশাসনের দিকে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন। যে গনতন্ত্রের জন্য, দেশের মানুষের অধিকারের জন্য, এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দেশের ক্ষমতা অর্পনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন সেই তিনি নিজে সকল গনতান্ত্রিক পথ বন্ধ করে দিয়ে একক দলের রাজনীতি শুরু করেন। ইতিহাসে এর থেকে বড় আইরনি আর কী হতে পারে? এছাড়া, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি নির্বাহী, আইন প্রণয়ন, এবং বিচার বিভাগের উপর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা পান। এটি গণতান্ত্রিক ভারসাম্যকে দুর্বল করে এবং তাঁর শাসনকে কেন্দ্রীভূত করে তোলে।
শেখ মুজিবের শাসনকালে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জও তাঁর জনপ্রিয়তাকে ক্ষুণ্ণ করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি, অবকাঠামোগত সংকট, এবং খাদ্য ঘাটতির মুখোমুখি হয়। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এই সংকটকে আরও তীব্র করে। তাঁর সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতি, যেমন শিল্প ও ব্যাংকের জাতীয়করণ, প্রাথমিকভাবে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হলেও, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে তা অর্থনৈতিক স্থবিরতার দিকে নিয়ে যায়। এই ব্যর্থতা মধ্যবিত্ত ও ব্যবসায়ী শ্রেণির মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
এছাড়া, তাঁর শাসনকালে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠে। রক্ষীবাহিনী নামক একটি আধাসামরিক বাহিনী বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, এবং ভিন্নমত পোষণকারীদের দমনে ব্যবহৃত হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এই বাহিনীর কার্যক্রম জনমনে ভয় ও অসন্তোষের জন্ম দেয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও সীমিত করা হয়, মাত্র চারটি সংবাদপত্র বাদ দিয়ে অন্য সব সংবাদ পত্র নিষিদ্ধা করা হয়। মত প্রকাশের সকল মাধ্যমকে গলা টিপে মেরে ফেলা হয়।

তবে, শেখ মুজিবের সমর্থকরা যুক্তি দেন যে, তিনি একটি অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনা করছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, এবং আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা দেশে স্থিতিশীলতা আনবে এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ত্বরান্বিত করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×