somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়াসক্ত

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় তিন বছর পর তারাকান্দি যাচ্ছি।উদ্দেশ্য মাসুদার সাথে দেখা করব।মনটা তাই খুব খুশি।সেই তিন বছর আগে ওকে দেখেছিলাম,আর দেখা হয়নি।মেয়েটা কি আগের মতোই আছে নাকি অনেকখানি বদলে গেছে?

মাসুদার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ওর বিয়েতে।বিয়েটা ওর সম্মতিতেই হয়েছিল।বর উচ্চশিক্ষিত।ভদ্র চেহারার লোকটি সরকারি চাকুরিজীবি ছিলেন।মাসুদার বাবা মেয়ের জন্য একটা সরকারি চাকুরে বরই খুঁজছিলেন।লোকটা ভীষণ ভাগ্যবান।বেঁচে থেকেই নিজের মেজো মেয়েকে পছন্দমতো পাত্রের হাতে তুলে দিতে পেরেছিলেন।পাগলের মতো কি সব ভাবছি!গাড়ি খুব দ্রুত চলছে তবু রাস্তা বেশি মনে হচ্ছে।আর কতদূর...

মাসুদার বাবা যমুনা সার কারখানার একজন কর্মকর্তা।পরিবার সহ কলোনীতে থাকেন।মাসুদা সন্তান সম্ভবা।ও এখন কলোনীতেই আছে।মেয়েদের প্রথম সন্তান নাকি তার বাবার বাড়িতে হয়।তাই আমি কলোনীতেই যাচ্ছি।কারণ ওখানে গেলেই আমি মাসুদার দেখা পাবো।তিন বছর পর আবারও প্রাণভরে দেখব ওকে।ওর অজান্তেই জাগিয়ে তুলবো আমার সুপ্ত ভালবাসাকে।যে ভালবাসার কথা মাসুদা কোনদিন জানেনি-বোঝেনি এমনকি জানতেও চায়নি কখনো।

তারাকান্দির মাটিতে পা রাখার পর বুঝলাম অনেক পাল্টে গেছে আমার প্রিয় এলাকাটা।এ অঞ্চলের মাটির বুকে গজিয়ে উঠেছে অনেক বহুতল ভবন।সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সবই পাল্টায়।মাসুদাও তেমনিভাবে পাল্টে গিয়েছিল।আমি স্বপ্নেও ভাবিনি ও বিয়েতে রাজি হবে।থাক ওসব...

কলোনীর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।ঢুকতে সাহস পাচ্ছি না।কিছু কেনা দরকার।কারণ আজ ওর বাসায় আমি প্রথম যাচ্ছি তাও আবার একটা বিশেষ সময়ে।আচ্ছা মাসুদার ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে?ছেলে হলে আমি খুব খুশি হবো।একসময় ভাবতাম আমার মেয়ের প্রথম কান্না শুনবে মাসুদা।পরম যত্নে আমার মেয়েকে বুকে টেনে নেবে।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখব আমার জীবনের সবচেয়ে মায়াবী মূহুর্ত।
কলিংবেল টিপে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর দরজা খুললো ১৭-১৮ বছরের একটা মেয়ে।ও আমাকে না চিনলেও আমি ওকে ঠিকই চিনেছি।ঝর্ণা,আমার মাসুদার আলতাসুন্দরী।কথাটা মনে হয় ভুল বললাম!মাসুদা কি কখনো আমার ছিল?

বাসার সামনে এতগুলো ব্যাগ হাতে অচেনা একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা সম্ভবত অবাক হয়েছে।

:ঝর্ণা বলতো আমি কে?
-আপনি রিসাদ ভাইয়া,তাই না?আসুন ভিতরে আসুন...

আমাকে দেখে ও যতখানি বিস্মিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিস্মিত আমি ওর কথা শুনে।মেয়েটা আমাকে চিনলো কিভাবে?ও তো আজকের আগে আমাকে কখনো দেখেইনি।

এই প্রথম আমি ওদের ঘরের ভিতর পা রাখলাম।সবকিছু কেমন যেন নীরব নীরব!বাসার সবার সাথে পরিচিত হলাম।এর আগে মাসুদার বিয়েতে আমি এসেছিলাম,কিন্তু আমাকে কেউ চিনতো না তখন ও ছাড়া।মাসুদাকে দেখেই চলে গিয়েছিলাম সেদিন।

খেয়াল করলাম সবাই যেন আমাকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।আমি মাসুদার কথা বলতেই ঝর্ণা আমাকে পাশের ঘরে নিয়ে গেল।দেখলাম সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা দোলনায় ঘুমাচ্ছে।অবিকল মাসুদার প্রতিচ্ছবি!ঝর্ণা বলল,আপুর মেয়ে।আমি ধৈর্য্য হারিয়ে বললাম,মাসুদা কোথায়?ও বলল,চলুন বাইরে যাই ভাইয়া।আমি উত্তর দেয়ার আগেই ঝর্ণা বাইরে চলে গেল।আমিও ওকে অনুসরণ করলাম।মনের মধ্যে একটা খটকা লাগলো।বাসার সবাই মাসুদার বিষয়ে এত নীরব কেন?

ঝর্ণা আমাকে বাড়ির পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছে নিয়ে গিয়ে তর্জনী দ্বারা নতুন মাটির দিকে ইঙ্গিত করলো।হঠাত্‍ আমার শরীর অবশ হয়ে গেল।থপ করে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম।নতুন মাটি কৃষ্ণচূড়ায় লাল হয়ে আছে।দু'হাতে মাটি তুলে ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করলাম।আশ্চর্য!মাটিতে ঠিক মাসুদার শরীরের ঘ্রাণ।কতক্ষণ বসেছিলাম জানি না।ঝর্ণার হাতের স্পর্শে চেতনা ফিরল।ওর সাথে বাসায় গেলাম।শুনলাম মেয়েটাকে জন্ম দেয়ার সপ্তাহখানেক পরেই মাসুদা চলে গেছে ওপারে।আর শুনলাম,মাসুদার স্বামী নাকি এই মেয়েকে নিতে নারাজ।তার পরিবার নাকি ছেলে চেয়েছিল।হায়রে মানুষ..!

আমি মাসুদার মেয়েটিকে ওদের কাছে চাইলাম।ওরা খুব সহজেই রাজি হয়ে গেল।মাসুদার শেষ ইচ্ছাও নাকি এটাই ছিল।মেয়েটাকে বুকে নিয়ে ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।

আমার মেয়েটা এখন কথা বলতে পারে,হাঁটতে পারে।বাবা বাবা বলে ডাকে।রাতে একসাথে খাবে বলে আমার ফেরার পথ চেয়ে বসে থাকে।পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি।আমার মেয়েটার দিকে তাকালেই সব ভুলে যাই।শুধু মনে হয় "মায়া" আমার মেয়ে,আমার মাসুদার মেয়ে।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×