আমি নীলুফারে জিগাইলাম-ও নীলু!তুমি কি চীনা মাটির বাসনে কখনো ভাত খাইছো?
নীলু চুলের বেণী খোঁচাইয়া খোঁচাইয়া খুলতেছিল তখন।আমার প্রশ্ন সে শুনলো নাকি শুনলো না,নাকি শুইনাও না শোনার ভান কইরা চুপ মাইরা থাকলো তা আমি বুঝলাম না।কতক্ষণ পরে আমি আবার জিগাইলাম-কইলানা খাইছো নাকি খাও নাই।
-কি?
:ভাত।
-ভাত খাওয়া কোন প্রশ্ন হইলো?
:প্রশ্নডা চীনামাটির বাসন নিয়া।
-চীনা মাটির বাসন!আবার করোছে তাইলে প্রশ্নডা...
:ক্যান তুমি কি শোন নাই আগের দুইবার?
-হায় হায় কি কও!তুমি দুইবার জিগাইয়া ফালাইছো আর আমি সেই প্রশ্ন শুনিই নাই!আমারে একটা চড় দেও,দেও চড়!
আমি নীলুর কথা শেষ হইতে না হইতেই ওর ডাইন গালে যতটা সম্ভব কইষা একটা চড় মারলাম।চড়টা মারার পর মনে হইলো বেশি জোর হয় নাই।ডাইন হাত দিয়া মারলে গালে দাগ বইয়া যাইতো।দাগ দেইখা মনে শান্তি শান্তি লাগতো।কিন্তু ডাইন হাত দিয়া চড় মারনের কোন উপায় নাই।হাতের তালুতে অনেকখানি কাইটা গেছে।কেমনে কাটছে আমি জানি না।আমি কারণ না জানলেও আমার ডাইন হাত ঠিকই কাটছে;আর যার কারণে আমি নীলুরে ঠিকমতো কষাইয়া চড় মারতে পারি নাই।
চড় খাইয়া নীলু গালে হাত দেয় নাই।সে আমার দিকে তাকাইয়া দাঁত বাইর কইরা হাসতাছে।ডাইন গালে চড় খাইলে হাসি আসে কি না আমি মনে করার চেষ্টা করলাম।এইরকম কোন ঘটনা মনে পড়লো না যে আমি ডাইন গালে চড় খাইয়া গালে হাত না দিয়া ক্যালাইতেছি।নীলুর একটা হাত টাইনা ওরে একটু আমার কাছে আনলাম।ওর হাসির বেগ কইমা গেল তাতে।আমি কৈফিয়ত চাইতাছি এমন একটা ভাব নিয়া ওর দিকে তাকাইলাম।
:কি গো হাসছিলা ক্যান?
-তুমি ডাইন হাত দিয়া চড় মারতে পারো নাই তাই।
:তাইলে হাসি কইমা গেল ক্যান?
-তুমি আদর কইরা কাছে টানলে আমার ডর লাগে।তোমার ভালবাসা আমারে ভীতু বানায় দেয়।
আমি নীলুর হাত আমার হাতের মুঠায় নিয়া বইসা থাকলাম অনেকক্ষণ।কতক্ষণ ঠিক মনে নাই।যখন নীলু আমারে কইলো-আমাগো কোন চীনামাটির বাসন নাই,তখন ওর দিকে তাকাইয়া আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম।চেষ্টা মনে হয় ভালো হইলো!
নীলুর চোখ দিয়া পানি পড়তাছে।কথায় কথায় ভরা কলস উল্টাইয়া দেওনের মানুষ নীলু না।খুব কষ্ট না পাইলে নীলু কোনদিন কান্দে নাই চোখ লাল কইরা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩