শুরুতেই আমি কয়েকটি মৌলিক ও অকাট্য সত্যের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। সেটা হচ্ছে,
১) বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ধর্মকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই কেননা বিশ্বরাজনীতিতে ধর্ম এখন প্রধান নিয়ামক (Prime factor), এক নম্বর বিচার্য বিষয় (First issue)। ধর্ম থেকেই সৃষ্ট জঙ্গিবাদ যা বর্তমানের মানবজাতির ক্যান্সার হিসাবে বিবেচিত, ভোটের রাজনীতিতে ডানপন্থী ও রক্ষণশীল দলগুলোর প্রধান হাতিয়ারও সেই ধর্ম। পৃথিবীর বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পালে দমকা হাওয়া লেগেছে যা সেক্যুলার দলগুলোর জন্য প্রধান সংকট বলে মনে করা হচ্ছে।
২) পশ্চিমা বস্তুবাদী ধ্যানধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধর্মকে একেবারে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করার যে চিন্তা ও চেষ্টা করা হয়ে থাকে সেটা বাস্তবমুখী নয়, কারণ পৃথিবীতে গুটিকয় নাস্তিক ছাড়া আর সকলেই স্রষ্টার অস্তিত্বে, কোনো না কোনো ধর্মে এবং পরকালীন জীবনে বিশ্বাস রাখে। তাদের এ বিশ্বাস অস্থি-মজ্জায় মিশে আছে যা প্রতিনিয়ত তাদের চিন্তা-চেতনা ও কার্যকলাপে প্রভাব বিস্তার করে। ধর্মব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে ধর্মের প্রকৃত রূপ হারিয়ে যাওয়ায় বিকৃত ধর্মগুলো মানুষের জন্য শান্তিদায়ক নয়, উপরন্তু ধর্ম নিয়ে হাজারো অপকর্ম ও বিকৃতি প্রচলিত আছে বিধায় অনেক মানুষ ধর্মীয় আচার-আচরণ ও পুরোহিত-আলেমদের ধ্যানÑধারণার প্রতি বিরক্ত, অনেকেই ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা হারিয়েছে কিন্তু নাস্তিক হয় নি। সুতরাং ধর্মকে জাতীয় জীবন থেকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিজীবনে নির্বাসিত করে রাখার চিন্তা করা ভুল। রাষ্ট্রের প্রথম উপাদান হচ্ছে মানুষ, সেই মানুষের চিন্তা চেতনা ও বিশ্বাস থেকে ধর্মকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর পথ হঠকারিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
আমরা যদি বিভিন্ন মতবাদের তাত্ত্বিক বিষয়গুলোকে আপাতত বাদ রেখে একটু বাস্তবতার দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, চলমান দুনিয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে বড় বড় সমস্যাগুলো বিরাজ করছে সেগুলোর উৎপত্তি ধর্মকে কেন্দ্র করেই। মধ্যযুগে ইউরোপে খ্রিষ্ট ধর্ম মানুষের জাতীয় জীবনের সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান দিতে পারছিল না, অথচ ধর্মযাজকগণ ছিলেন প্রবল ক্ষমতার অধিকারী। তখন রাজা আর চার্চের মধ্যে, ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে তুমুল সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল। ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোনোভাবে সমন্বয় করতে না পেরে নিরুপায় রাষ্ট্রনায়কগণ ধর্মকে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গন থেকে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন, এরই পারিভাষিক নাম ধর্মনিরপেক্ষতা। সাধারণ মানুষের ধর্মপ্রাণতা আর রাজনীতিকদের ধর্মহীন রাষ্ট্রের চিন্তাধারার বিপরীতমুখী এ যাত্রা আজও আমাদের জীবনে নিত্যনতুন সংঘাত আর সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটিয়ে যাচ্ছে। এটা এখন রাষ্ট্রনায়কদের বড় মাথা ব্যথার কারণ যে, ধর্মকে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না, আবার ধর্মজীবীদের হাতে দেশকে তুলেও দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ নানাবিধ কারণে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন তা এদের মধ্যে গড়ে ওঠে নি। তাদের হাতে রাষ্ট্রশক্তি গেলে সেখানে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ভয়াবহ রূপ নেবে, বিকৃত ধর্মের কারণে মানুষ অন্ধত্ব, পশ্চাৎপদতার গহীনে নিমজ্জিত হবে। এক কথায় আরেকটি মোল্লাতান্ত্রিক তালেবানি রাষ্ট্র (ঞযবড়পৎধপু) কায়েম হবে যা সাধারণ মানুষের কাম্য নয়। মানবজাতিকে বহুল উচ্চারিত যে প্রশ্নের সমাধান এখন করতে হবে তা হলো: ---------------পরের পর্বে চোখ রাখুন।
দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৪