somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টু- লেট (১ম পর্ব)

১৫ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক.
বাড়ির নাম ক্ষণিকালয়। কিন্তু বাড়িটি সবার কাছে টু-লেট হাউজ নামে পরিচিত। কারণ এখানে যারা ভাড়া আসে তারা তিন মাসের বেশি থাকে না। কত জন যে এলো গেল কত যেন আসবে কে যানে। এ বাড়ির মালিক মোসাদ্দেক সাহেব রিটায়ার পুলিশ অফিসার। সৎ থাকাতে জীবনে কিছুই করতে পারেন নি। রিটায়ার এর পর পেনসনের সব টাকা দিয়ে এই দুতালা বাড়িটি করেন। এর একতলায় তিনি থাকেন। দু তলা ভাড়া দেন। এ বাড়িতে ভাড়া থাকার জন্য ৩ মাসের ভাড়া অগ্রীম দিতে হয়। আর ব্যাচেল নট এলাউড। তিনি নিজে থেকে ভাড়টিয়ার প্রোফাইল যাচাই করে ভাড়াদেন। শত হলেও পুলিশ অফিসার। এবারের ভাড়াটিয়াদের নিয়ে তিনি খুব খুশি। স্বামী স্ত্রী দুজন। সাথে ছোট্ট একটা বাচ্চা। সুখী পরিবার । এসব ভাড়াটিয়া সৌভাগ্যবান। বিদ্যুত বিল, পানি, গ্যাস সব কম খরচ হয়। আর ভাড়াটিয়া বৌটিকে তার মেয়ে অরুন্ধতির মত লাগে। যে এক্সিডেন্ডে মারা যায়। মেয়েটি গান করছে। আহা প্রাণটা ভরে গেল। কি মধুর কন্ঠ।

গলির মাথায় আসতেই সে শুনতে পেল দূর থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি গানের সুর । তার কাছে মনে হলে এই সুরের জন্য সব কিছু ছেরে সাধু হওয়া যায়।সে যদি মোঘল সম্রাট হতো তাজমহল এমন কয়েকটা বানিয়ে ফেলত। গলির মাঝ বরাবর একটি দোতালা বাড়ি।সুরের রাগিণীর উৎস ওখানেই। বাড়ির যতই কাছে আসছে ততই তার কাছে গানের মূর্ছনা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।সিড়ির ধাপ গুলো ধিরে ধিরে পার হয়ে উপরে উঠছে যত মনটা হারিয়ে যাচ্ছে মায়াবি আবেসে।খোলা দড়জা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল আনমনে গান করছে একজন মায়াবতী । সে কখন তার পিছনে এসে দাড়িয়ে গান শুনছে টেরই পায়নি সুকন্ঠি সুরবালা।
আ- আ- আ- আ……………………….
সুরে ও বাণীর মালা দিয়ে তুমি
আমারে ছুইয়া ছিলে
অনুরাগ কুম কুম দিলে
দেহে মনে
বুকে প্রেম কেন নাহি দিলে
আমারে ছুইয়া ছিলে……………………..

বাহ! বাহ! কি ঝংকার ! তোমার গলায় যাদু আছে । তোমাকে কোয়েল না ময়না বলব?
আমার নাম রানু। রানুই বল।
ঠিক তাই! তুমি হলে আমার রানুনকুলাস ফুল!! সৌন্দর্য আছে সুরভী আছে আর আছে বুকে বিধা কাঁটার মত সুরেলা কন্ঠ।কাঁটা না মিষ্টি ছুরি বলব?
পাগল! তুমি আস্ত একটা পাগল!
পাগলইতো! তোমার প্রেমে!
তাই নাকি! তখনতো সবাই তোমাকে পাগল মজনু বলে খেপাবে!ঢিল ছুরবে!
লোকের নাক ফটিয়ে দিব!বলে দেখুক।
কেন কেন? পাগল হবার সক ফুরুৎ।
তা কেন হবে? কবি বলেন-
যখন সবই আমায় পাগল বলে
তার প্রতিবাদ করি আমি
যখন তুমি আমায় পাগল বল
ধন্য যে হয় সে পাগলামি।
রানুকে হঠাৎ জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে নিল সে।ভালবাসায় সিক্ত কামুক ঠোট যুগল তার মায়াবি মিষ্টি ঠোট দুটোতে ছোঁয়াতে যাবে এমন সময় পাস থেকে আরেকটি সুরেলা কন্ঠ চিৎকার করে তার অবস্থান জানান দিল।
ওয়া ওয়া ওয়া
দেখ আরেক পাগল ক্ষেপেছে! দু পাগল কি করে সামলাই!ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়াল রানু।
তুমি আমার জন্য চা নিয়ে আস। আমি ওকে দেখছি।
তুমি পারবে ওকে সামলাতে?
কেন পারনা! একশবার পারব! আমি ওর আব্বু হই।
তাহলে সামলাও । আমি রান্না ঘরে গেলাম।
বাবু সোনা, চাদু সোনা, কুটু কুটু কুট!
ওয়া ওয়া ওয়া!
আব্বু সোনা, কাদে কাদে না!
ওয়া ওয়া ওয়া
কি মসিবত এর কান্নাতো থামছেই না। রানু রানু রানু!
কি হল? এতটুকুতেই দম শেষ!
না বাবা ! বাচ্চা কাচ্চা সামলানো বেটা ছেলেদের কাজ না! তুমি ওকে নাও চাটা বরং আমি বানাচ্ছি।
পারবে?
ঠিক পারবো? ওরে বাপরে! হাত পুরে গেলোতো!
না রান্না বান্নাও তোমাদের কাজ!
জনাব শুধু রান্নাবান্না কেন? আমরা এখন সব করতে পারি।
সব পারো বুঝি!
হ্যা সব পারি! সুযোগ দিয়ে দেখো একবার!
সবার জন্য সব কাজ নয়!
আচ্ছা পরীক্ষা হয়ে যাক!
ঠিক আছে! ঐ সুটকেসটা একটু তুলে দেখাও!
এ আর কঠিন কি? এক্ষুনি তুলে দিচ্ছি।ওরে বাবা!কত্ত ভারী!
তোল তোল!
তু-ল-ছি তো! নাহ! অনেক ভারী!
তোমার কাপর চোপর দিয়েই তো ভারী করেছ।বুঝ এবার! কি বোঝা বহন করতে হচ্ছে আমায়।
এসব তোমাদের কাজ তোমাদেরই করতে হবে।
তাহলে স্বিকার করলে যে, সকল কাজ সবার জন্য নয়।
তা আর বলতে!! তবে নারী ভারউত্তোলক কিন্তু আছে!
তেমন কিন্তু ছেলে কুকও আছে! তা বলি কেন! বিশ্বে কিন্তু এক নম্বরে আছে মেল কুক। টমি মিয়ার নাম শুনেছ?
বাদ দাওতো টমি টামি! পারি না পারি আমরা আমরাই! আমরা আমাদের মত সুখী।
ঠিক বলেছ আমাদের ঘর আমাদের জান্নাত! আর এ জান্নাতের অমূল্য রত্ন হলে তুমি আর আমার আব্বু সোনা।
হা হা হা বলে হেসে উঠল ওরা দুজন। এভাবেই খুনসুটিতে তাদের জীবন কেটে যাচ্ছিল।কিন্তু এত সুখের মাঝেও তাদের একটাই দুঃখ। মা-বাবা থেকেও তাদের কাছে না পাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×