somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের ওপর বাড়ি

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নেসার ভাইরা বগালেক যাওয়ার একটা প্ল্যান ঠিক করছিল অনেক আগে থেকে।

শুধু বগালেক যাবে মনে করে তেমন আগ্রহ পাইনি ভিতর থেকে । পরে যখন শুনলাম শুধু বগালেক না, কেওক্রাডংও উঠবে তখন আর মনকে মানাই কি করে! নিজেকেও বগালেক যাওয়ার টিমে যুক্ত করে নিলাম।

উনাদের প্ল্যান অনেক আগে থেকেই করা । ১৯ শে জানুয়ারি । নেসার ভাই ডাক্তার মানুষ । সারাদিন ইন্টার্নি থাকে । তিনমাস পর পর শুধু তিন দিনের ছুটি পান । উনিশ তারিখের প্ল্যান এই কারণে করা । মাঝখানে শুক্রবার আছে।

প্ল্যান মোটামুটি ঠিকঠাক । আঠারো তারিখ রাতে সবাই বিদ্যানন্দে গিয়ে থাকবো । খুব ভোরে শুরু করবো মেঘ পাহাড়ের দেশের দিকে যাত্রা । দল মোটামুটি ভারীই আছে । নাফিজ ভাই, সাঈদ ভাই, তৌকির ভাই, নেসার ভাই, মাহের ভাই, তানভির ভাই, সৌরভ ভাই, জুনায়েদ ভাই, আজোয়াইদ্যা । সৌরভ দা বাদ । বেচারার ফাইনাল প্রফ ।

তৌকির ভাই যাওয়ার জন্য ছুটি নিয়ে চলে আসলো ঢাকা থেকে । কিন্তু চট্টগ্রাম আসার পর পড়ে গেলো বিপদে । উনার মাস্টার্সের ফরম পুরণের ডেইট পড়লো ২০ তারিখ । ওইদিন ছাড়া আর পারা যাবে না । বেচারার সে কি অবস্থা ! কিছুক্ষণ পর বলে, “ সমস্যা নাই । পরীক্ষা না হয় আগামি বছর দেবো । কিন্তু ট্যুর মিস দিচ্ছি না।” আমরাও উস্কানি দিয়ে যাচ্ছিলাম সমান তালে । যাওয়ার আগের দিন শুনি আরেক বিপদ । সাঈদ ভাই যাবেন না । উনি অসুস্থ হয়ে গেছেন । দল আস্তে আস্তে হালকা হতে শুরু করলো।

আঠারো তারিখ রাতে সবাই বিদ্যানন্দে চলে আসলাম । নেসার ভাই চলে গেলেন সাঈদ ভাইয়ের বাসায় । উনাকে যেমন করে হোক নিয়ে আসবেন । তৌকির ভাইও আছেন আমাদের সাথে । বেচারার শেষ পর্যন্ত যাওয়া হচ্ছে না । আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ফানি মানুষটা উনি । উনি না থাকলে কি আর জমে ! মজার অর্ধেক যাওয়ার আগেই শেষ । আমাদেরও মন খারাপ, উনারও মন খারাপ মতন অবস্থা । তবুও হাসিহাসি মুখ করে কার্ড খেলতে বসলেন বেচারা।

ভোর পাঁচটায় সবাই ঝটপট উঠে রেডি হয়ে যেতে লাগলাম । ব্যাগ-ট্যাগ তাড়তাড়ি গুছিয়ে বের হয়ে গেলাম বিদ্যানন্দ থেকে । দুই নাম্বার গেইট থেকে একটা টেম্পু রিজার্ভ করে চলে গেলাম বহদ্দার হাট বাস টার্মিনালে । ওখানে বসে নাশ্তা করতে করতে চলে এলেন নেসার ভাই আর সাঈদ ভাই । ততক্ষণে টিকিট কেটে ফেলা হইছে । সাড়ে ছয়টায় গাড়ি, পুর্বাণী।

নাশতা-তাশতা শেষে গাড়িতে উঠে বসলাম সবাই । গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর শুরু হলো সেলফি আর চেকিং দেওয়ার পালা । আমি বসলাম সৌরভ ভাইয়ের পাশে । উনি আবার আমাদের সেলফি স্পেশালিষ্ট । গাড়ি ছুটছে বান্দরবানের দিকে । জানুয়ারির সকাল । কুয়াশায় ঢেকে আছে পুরো রাস্তাঘাট, দু-পাশের সব কিছু । পটিয়ার কাছাকাছি যেতে যেতে দেখি মোটামুটি সবাই নাক ডাকা শুরু করে দিছে । সৌরভ ভাই কিছুক্ষণ এইসব ঘুমন্তদের ছবি টবি তোললেন । একটু পর উনিও কাঁত।

ধীরে ধীরে কুয়াশা কাটতে শুরু করলো । জানালার কাঁচ গরম হওয়া শুরু করল আস্তে আস্তে । হালকা হালকা মিষ্টি রোদ । কেরানিহাট পৌছাতে পৌছাতে সাড়ে আটটা বেজে গেলো । চট্টগ্রাম কক্সবাজার হাইওয়ে থেকে গাড়ি ঢুকলো বান্দরবানের পথে। উঁচুনিচু পাহাড়ি রাস্তার শুরু এখান থেকে । আধঘন্টার মধ্যেই বান্দরবানে চলে এলাম । শহরে ঢোকার আগেই ঘটলো এক বিপদ । আমাদের আগে আগে আসা বাসটা হটাৎ করেই উল্টে গেলো শহরে ঢুকার একেবারে মুখেই । ভাগ্যিস মারা যায়নি কেউ । কিছু হতাহত হইছে অবশ্য । যাক, ভালোই ভালোই আমরা বান্দরবানে পৌছালাম । এবার পাল্লা দিয়ে শুরু হলো টয়লেট খোঁজা আর চান্দের গাড়ি খোঁজা।

কোনো রকম ভাঙ্গাচোরা টাইপের এক হোটেলের চিপার মধ্যে বাথরুম একটা আবিষ্কার করা গেলো একটু পর । একজনের পর একজন লাইন দিলাম ওখানে । ইতিমধ্যে আমাদের করিৎকর্মা ম্যানেজার সাহেব( সৌরভ ভাই ) চান্দেরগাড়ি খুঁজে বের করে ফেলেছেন । ছোট্ট ছিমছাম গাড়ি । হুড়মুড় করে উঠে পড়লাম সবাই । গাড়ি ছেড়ে দিলো একটু পর । বান্দরবান ছেড়ে গাড়ি ছুটলো রুমা বাজারের দিকে । সেই একই আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা । গাড়ি ছুটছে বাতাসের বেগে ।

চিম্বুক পৌছে গাড়ি থামলো একটু । চিম্বুক দিয়ে সোজা চলে গেলে আরেক সৌন্দর্যময় জায়গা নীলগিরি। আমরা যাবো হাতের বামের নিচু রাস্তাটা দিয়ে । চিম্বুকে ছোট্ট একটা সেনা চৌকি আছে । এখানে সেনাবাহিনীকে জানায়া রুমা কিংবা থানচি ঢুকতে হয় । আমাদের ড্রাইভার গাড়ি থামায়া অনুমতি নেওয়ার জন্য নামতে গেলে উপর থেকে একজন বলল, অনুমতি লাগবে না । ড্রাইভার উঠে আবার টান দিলো গাড়ি । আবারো উল্কার বেগে । পাহাড়ি রাস্তার ড্রাইভারদের মনে হয় জানের কোনো মায়া নাই । একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে ঝুপ করে নেমে গেছে খাড়া দেড়-দুইশ ফিট । এদের কোনো বিকার নাই । একটু এদিক-ওদিক হলে একেবারে জীবন্ত কিমা । ভুল বললাম, কিমাও খুঁজে পাওয়া যাবে না ।

চান্দের গাড়ির সবচেয়ে বড় মজা হলো এই গাড়িগুলার ছাদ নাই । আমরা সবাই রডের ফাঁক দিয়া মাথা বাইর করে চিল্লাতে চিল্লাতে আগাচ্ছিলাম । এরকম জার্নিতে গান ছাড়া চলে না । কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো তানভির ভাই একজন ছাড়া আর সবাই গানের ব্যাপারে বকলম । উনার আবার গান পুরোটা মনে থাকে না । একটা ধরে, দুই লাইন গাওয়ার পর ভো----লা । আর পারে না । সেই অর্ধেক অর্ধেক গানের সাথে আমরাও যে যেভাবে পারি ধরছিলাম একটু আধটু । চলতে চলতে হঠাত পড়লো পাহাড়ি ছড়া, নাকি সাঙ্গু খাল জানি না । দেখতে ছরার মতই । সাঙ্গু হওয়ার কথা না । উপর দিয়ে লোহার পুল । দুই পাশের দৃশ্য অসম্ভব সুন্দর । সবার মোবাইল ক্লিক ক্লিক করে উঠলো প্রায় একই সাথে । নেসার ভাইয়ের ডি এস এল আর তো আছেই । একটু পরে আবার ছড়া, আবার লোহার পুল । এরপর আবার উচুনিচু পাহাড়ি পথ । গাড়ি ছুটছে ।

ধীরে ধীরে পথ ফুরায়া এলো । আমরা সাড়ে এগারোটার দিকে রুমা বাজার স্টেশনে গিয়ে পৌছালাম । স্টেশনের একটু আগে চাকমা চেহারার এক তরুণ ড্রাইভারের কাছে জিজ্ঞেস করলো গাইড আছে কিনা । ড্রাইভার নাই বলায় তরুণ লাফ দিয়ে গাড়ির পা-দানিতে উঠে পড়লো । বাজারের কিছুটা আগে স্টেশন । গাড়ি থেকে নেমে নাফিজ ভাই আর সৌরভ ভাই কথা বললো তরুণের সাথে । তরুণটি গাইড, আমাদের সাথে গাইড হিসাবে যাইতে চায় । একটা ব্যাপার বলতে ভুলে গেছি । গাইড ছাড়া রুমা বাজার থেকে আর ভেতরের দিকে যাওয়া যায় না । আমরা অলরেডি শহর থেকে একটা গাইড ঠিক করে এসেছি । সৌরভ ভাইয়ের বন্ধুদের কয়দিন আগে কেওক্রাডং ঘুরিয়ে এনেছে ওই গাইড । ছেলেটির কথাবার্তা ভালো লাগায় আর বম হওয়ায় কন্টাক্ট করা গাইড ফেলে ওকেই নিয়ে নেওয়া হলো । নাম খাপকুম বম ।

স্টেশন থেকে অল্পটুক হাঁটলে বাজার । বাজারে গিয়ে সোজা ঢুকলাম চায়ের দোকানে । কেউ সিঙ্গারা-সমুচা, কেউ পাউরুটি । এর মধ্যে তানভির ভাই কোথা থেকে জানি কলার একটা ছরা নিয়ে এলো । এবার সবাই কলার উপর হামলা । আমাদের চায়ের দোকানে ঢুকিয়ে দিয়ে খাপকুম বাড়িতে চলে গেলো তার কাপড়-চোপড় আনার জন্য । আমরা খেতে খেতে ও চলে এলো ব্যাগ নিয়ে । খাপকুম তারপর আমাদের নিয়ে গেলো এল দোকানে । ওখানে গিয়ে ট্রাভেল ফরম কিনলো একটা । ওটাতে সবাই নাম ঠিকানা পুরণ করলাম বসে বসে । তারপর রিপোর্ট করার জন্য সবাই গেলাম রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে । সিড়ি দিয়ে কিছুটা উপরে ক্যাম্প । ক্যাম্পে উঠে দাঁড়ায়া থাকতে হলো অনেক্ষণ । পরে একজন সৈনিক এসে নাম ঠিকানা চেক করে স্বাক্ষর নিয়ে ছাইড়া দিলো ।

এরপর আবার বাজারে ফিরে এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা শুরু হয়ে গেলো । সবকিছু আকাশছোঁয়া দাম । পঞ্চাশ টাকার গামছা একশ টাকা । শহর থেকে মশার অডোমস কিনেছি পঁচিশ টাকা করে । এখানে চল্লিশ টাকা । দোকানদারের সাথে আমার কিছুটা ঝগড়াই হয়ে গেলো । এদিকে সৌরভ ভাই আর নাফিজ ভাই খাপকুমের সাথে মিলে রাতের জন্য মুরগি টুরগি এইসব কেনায় ব্যস্ত । আমাদের কোন কাজ না থাকায় আমরা হাঁটছিলাম আর নেসার ভাইয়ের ক্যামেরার মডেল হলাম কিছুক্ষণ । হঠাৎ দেখি জুনায়েদ ভাই সাঙ্গু আবিস্কার করলো বাজারের একেবারে কিনারে । উপর থেকে ঠিক বুঝা যায় না। মানুষ হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে এপার-ওপার । ঘাটে অনেকগুলো ডিঙ্গি নৌকা বাঁধা । এখান থেকে ঘণ্টা দুয়েক উজান বেয়ে গেলে রিজুক ঝর্না । ডিঙ্গিওয়ালারা ডাকছে রিজুক ঘুরতে যাওয়ার জন্য । আজ যাওয়ার সময় তো নাই । অন্য আরেকবার হবে নিশ্চয় । ঘাটে বসে কিচ্ছুক্ষণ ছবি-টবি তোললাম সবাই । অনেক সুন্দর ঘাট । শীতের কারণে কিছুটা মন মরা । কিন্তু বর্ষা এলে ফুলে ফেঁপে উঠবে এই নদীর শরীর ।

ঘাট থেকে বাজারে ফিরে দেখি সব কিছু রেডি, কিন্তু গাড়ি নাই । গাড়ির জন্য কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে জিজ্ঞেস করলে খাপকুম জানালো, গাড়ি সব সময় রেডি । ও আবার সবাইকে হাঁটিয়ে একটা ভাঙ্গাচোরা টাইপের ব্রীজ পার করালো । ব্রীজ পার হইয়া কিছুদুর হেঁটে দেখি কমলাবাজারের গাড়ি দাঁড়ায়া আছে । ছাদখোলা জীপ । এখান থেকে কমলা বাজার সারা সপ্তাহ লোকাল গাড়ি যাওয়া আসা করে না । শুধু বৃহস্পতিবার একদিন গাড়িগুলা লোকাল করে । কারণ পাহাড়ি মানুষগুলো সাধারণত মাসে একবার দুবারের বেশি এদিকে আসে না । এরা একসাথে তেল মরিচ সব কিনে নিয়ে চলে যায় । অনেকে আছে দুই-তিন মাস পর একবার নামে এদিকে । পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে আবার যখন তখন যাওয়া যায় । এই গাড়িগুলা অন্য সময় কেওক্রাডং এর ওদিক থেকে আদা আর তরি-তরকারিও আনা নেওয়া করে ।

ট্যুরিষ্টদের আরো একটা দল দেখি যাচ্ছে বগালেকের দিকে । তারা আমাদের গাড়িটা শেয়ার করতে চাইলো । কিন্তু সাঈদ ভাই রাজি হলেন না । অন্য দল সাথে থাকলে মজা পাওয়া যাবে না । অগত্য নিজেরা নিজেরা যাওয়ার সিদ্ধান্তই থাকলো । গাড়িতে উঠতে যাবো, দেখি মাথায় করে দুইটা চালের বস্তা তোলে ফেললো দুইজন ।

জিজ্ঞেস করলাম চালের বস্তা কেন ? জানালো, আমরা ওখানে যার কাছে থাকবো তার জন্য, মানে সিয়ামদির জন্য । সাঈদ ভাই আবার বেঁকে বসলেন ।
বললেন, সিয়ামদি ফিয়ামদি বুঝি না । আমাদের সাথে চাল নেওয়া যাবে না ।
বেচারারা বাধ্য হয়ে চালের বস্তা নামিয়ে ফেললো । গাড়িতে উঠে বসেছি । দুইজন পাহাড়ি এসে বললো, তারা যেতে পারবে কিনা । সামনে বাড়ি । নাফিজ ভাই বললেন, উঠো । বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্যদিন পাহাড়িরা আদা কিংবা ট্যুরিষ্টদের গাড়ি ব্যবহার করে । খাপকুম উঠে গেলো গাড়ির ছাদে । কমলা বাজারের দিকে ছুটলো আমাদের জীপ ।

গাড়ি একটুক্ষণ চলার পর দেখি থেমে গেলো হঠাৎ । হাতের বামে একটা লেকের মত । ডানপাশে রুমা থানা ।
খাপকুম বললো, নামেন সবাই । থানায় রিপোর্ট করতে হবে ।
সবাই নামলাম । হেঁটে থানার ওখানে গিয়ে আবার নাম-ধাম লিখো । সাইন করো । বিশাল প্যারা । না করেও উপায় নাই । সাইন টাইন করে আবার গাড়িতে উঠলাম সবাই । গাড়ি চালু করে দিলো ড্রাইভার । একটু পর সামনে তাকিয়ে মাথা উল্টে যাওয়া মত অবস্থা । এটা তো রাস্তা না ! গাড়ি হিমালয় পর্বতে উঠে যাচ্ছে যেন! কি আওয়াজ ! গাড়ি যেনো অনন্তকাল ধরে শুধু উঠছে আর উঠছে । সবার কলিজা মোটামুটি প্রায় শুকায়াই গেলো ।

গাড়ি যখন উঠা শেষ তখন সাঁ করে খাড়া নিচে নেমে গেলো রাস্তা । নাফিজ ভাইয়ের চোখমুখ দেখি আর বুঝা যাচ্ছে না । ফ্যাকাসে হইয়া গেছে। গাড়ি নামতে নামতে কী বাঁক । ড্রাইভার এই রাস্তার সাথে আগে থেকে পরিচিত না থাকলে সোজা খাদে । এতক্ষণে সবার হাসাহাসি মিলায়া গেলো । সবাই কেমন যেনো আতংকিত হয়ে পড়েছে । নাফিজ ভাই বললেন, দোয়া দরুদ পড় সবাই । কথা শুনে তানভির ভাই হেসে দিলো । আবার মোটামুটি হাসি চললো কিছুক্ষণ । সৌরভ ভাইয়ের অবস্থাও খুব খারাপ । ভয় পেয়ে গেছেন । হঠাৎ দেখি গাড়ি বামে মোড় নিচ্ছে । পাশে প্রায় অনেক নিচে খাদ । দেখা যায় না এই অবস্থা । আমি নিজেও কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম । এমন ভয়ংকর রাস্তা বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি নাই । হঠাত দেখা যাবে গাড়ি পাহাড়ের চুড়ায় । একটু পর দেখা যাবে একেবারে নিচে, গভীর খাদে । দুই পাশ থেকে বাঁশের ঘন ঝুপ একেবারে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে । গাড়ি চলতে চলতে গাড়ির দুই পাশ দিয়ে বাঁশের আগা এসে গায়ে লাগে । কি যে ব্যথা লাগে তখন ! আজওয়াইদ্যার ভাষায় হেড মাষ্টারের পিটুনি ।

গাড়ির ঝাঁকুনি আর হেড মাষ্টারের পিটুনি খাইতে খাইতে আমরা চললাম কমলা বাজারের দিকে । এই ভয়ংকর পথ যেন আর শেষ হচ্ছে না । চলছে তো চলছে । অনন্তকাল ধরে চলছে এই যাত্রা । এতো ঝাঁকুনি, ছবি তোলার বা সেলফি তোলার সাহস কেউ করলো না । করার কথাও না । এই সময় হচ্ছে ইয়া নফসি ইয়া নফসি করার সময় । সেলফি তোলার সময় না ।
নাফিজ ভাই বারবার বলছেন, এই রাস্তা গাড়িতে আসার কি দরকার ছিলো ? হেঁটে হেঁটে আসলেই তো ভালো হতো । ভুল হইয়া গেছে । বিরাট ভুল । এই রাস্তা জানলে আমি বগালেক আসতাম না ।
অবশেষে এক সময় এই ভয়ংকর রাস্তা শেষ হলো । আমরা কমলা বাজার গিয়া পৌছালাম । বাজার বললে ভুল হবে । বলা যায় কমলা পাড়া । দুই-তিনটা দোকান মাত্র । দোকনে ব্যবসার মুল উপাদান হলো বাঁশ । ছোট ছোট বাঁশের কঞ্চি সুন্দর করে কেটে সাজায়া রাখা হইছে । কমলা বাজার থেকে খাড়া ট্র্যাকিং করে বগালেকে উঠতে হবে এখন । আর ওই ট্র্যাকিং এর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী হলো এই বাঁশ । একটা দশ টাকা । সবাই যার যার পছন্দমতো বাঁশ বেছে নিয়ে হাঁটা ধরলাম বগালেকের উদ্দেশ্যে । সবার আগে আগে খাপকুম । সে কোন বাঁশ টাশ নেয়নি । পাহাড়ে চড়া পেটা শরীর । এক ফোটা চর্বি নাই শরীরে । কেমন তর তর করে উঠে যাচ্ছে দেখে হিংসা হয় । মাঝখানে আমরা। নেসার ভাই আর জুনায়েদ ভাই ছবি তোলার জন্য পিছিয়ে পড়েছেন । নেসার ভাই হচ্ছেন আমাদের ট্যুরের সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষ । বেচারা সবার ছবি তোলেছেন কিন্তু তার ছবি তোলার কেউ নাই । আর ট্যুরের একমাত্র ডি এস এল আর উনার হাতে । কেউ ছবি তোললেও উনার আবার পছন্দ হয় না।




বাঁশে ভর দিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠছি সবাই । ব্যাগ এক ভারি, তার উপরে মোটাসোটা শরীর । একেবারে খাড়া ট্র্যাকিং । অবস্থা একেবারে কাহিল । বিশ-পঁচিশ মিনিট মত উঠার পর সবাই আধামরা অবস্থা । পিপাসায় বুকের ছাতি ফেটে যাওয়ার জোগাড় । খাপকুম বললো, থামেন এখন । পানি টানি খান ।

দেখা গেলো কারো কাছেই পানি নাই । ভাগ্যিস আমি আধা লিটার করে দুই বোতল নিছিলাম । তানভির ভাইয়ের কাছে আর আধা লিটার । এই অল্পটুকুন নিয়ে কোনমতে চালানো গেলো। এক ঢুক আধ ঢুক । আরো অনেক পিপাসা । এতক্ষণ পর্যন্ত সাঈদ ভাই কোন কথা বলেন নি ।
এবার বললেন, আচ্ছা রাতের বেলা বগালেক থেকে গাড়ি পাওয়া যাবেনা ? আদার গাড়িতে করে চলে যেতাম !
নাফিজ ভাই বললেন, আমি যদি এই জীবনে দ্বিতীয়বার আবার বগালেকের নাম ধরছি !
ওদিকে নেসার ভাই লম্বা হয়ে শুয়ে গেছেন রাস্তায় । সবার মাথা নষ্ট অবস্থা । আমার শুধু পানি খেতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু কোথাও পানি নাই । কারো কাছেই পানি নাই । খাপকুমকে জিজ্ঞাস করলাম, আর কত টুক ?
ও বললো, অল্প । পনের-বিশ মিনিট লাগবে ।
ওর কথা বিশ্বাস করার কোন মানে হয় না । গ্রাম-গঞ্জের এই মানুষগুলো যখন বলবে এক মাইল, তখন বুঝতে হবে তিন-চার মাইলের কম না ।

অবশেষে আধা ঘন্টা মত হেঁটে পৌছালাম বগালেকে । প্রথম দর্শনে তেমন কিছু মনে হলো না । উপরে কচুরিপানায় ভরা । পাহাড়ের মাঝখানে পুকুর টাইপ ব্যপার । পাশে একটা গাছের গুঁড়ি । হাঁপাতে হাঁপাতে ওইটাতে গিয়ে বসে পড়লাম আমি আর নাফিজ ভাই । খাপকুম আর সৌরভ ভাই পৌছাইছে আরো আগে । ওরা আর্মি ক্যাম্পে উইঠা গেছে । বগালেক ঢুকতে হাতের ডানপাশে আর্মি ক্যাম্প । সবুজ রং করা । আর্মিদের সবকিছু কেমন যেন ভালো লাগে । একটু পর আমাদেরও ডাক এলো।ক্যাম্পে এক কন্টেইনার পানি রাখা ট্যুরিষ্টদের জন্য । সবাই পানির উপর ঝাঁপায়া পড়লাম । পানি টানি খাওয়া শেষে জুনায়েদ ভাই চকলেট বাইর করলেন। সবাই আবার চকলেট খাইলাম। সৈনিকেরা সাঈদ ভাই, নেসার ভাই আর আজওয়াদের ব্যাগ চেক করতে চাইলো । সাঈদ ভাই খুলে ব্যাগ দেখালেন । সৈনিকটা বললো, হাত ঢুকায়া দেন । সাঈদ ভাই হাত ঢুকায়া দিলে বললো, আরো ভেতরে দেন । সাঈদ ভাইয়ের পর এলো আজওয়াদের পালা । বেচারা আগে থেকেই সিগারেটের প্যাকেট বাইর করে দেখিয়ে দিলো । সৈনিক অনেক্ষণ ধরে শুঁকে দেখলো গাঁজা টাজা আছে কিনা । সব ঠিকঠাক দেখে যাওয়ার অনুমতি মিললো এবার । ক্যাম্প থেকে নেমে আমরা বগালেকের পাড় বেয়ে সিয়ামদির কটেজের দিকে আগালাম এবার ।





সিয়ামদির কটেজে পৌছে জুতা-টুতা খুলতে গিয়ে দেখি কালো জুতা ধুলায় সাদা হইয়া গেছে । কাপড়-চোপড়ের অবস্থা আরো খারাপ । গামছা আর হাফ প্যান্ট নিয়ে নিয়ে সবাই নেমে গেলাম কটেজের নিচের লেকে । পানিতে নেমে দেখি পিচ্ছিল পিচ্ছিল সব পাথর । পানি খুব ঠন্ডা । নাফিজ ভাই আর আমি সাঁতার দিয়া আসলাম একটা । অন্যরা ভয়ে তেমন নামছে না । এর আগেই সাঈদ ভাই সবার ভেতরে ভয় ঢুকায়া দিছেন । লেকের গভীরতা নাকি এক হাজার ফিট । আর বড় বড় মাছ । অপ করে গিলে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে ! গোছল-টোছল শেষে কটেজ ফিরে দেখি সবাই সিয়ামদির দোকানে চলে গেছে খাওয়ার জন্য । দোকানে এসে দেখি কোনো কথা নাই । সবাই খালি গপাগপ গিলছে । খাবার মেনুও তেমন কিছু না । বাঁধাকপি ভাজি, ডিম ভাজা আর ডাল । কিন্তু সবাই যে হারে টানা শুরু করছে ! ভাগ্যিস খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন পরিমাণ নাই । যে যতটুক খেতে পারে । কিন্তু শহর টহর হলে শুধু ভাতের জন্যই একজনের একশ টাকা করে বিল আসতো । এখানে লাঞ্চ আর ডিনার শুধু একশ টাকা । যে যতটুক খেতে পারে । সকালের নাস্তা আশি টাকা । খিচুড়ি অথবা নুডলস । খাওয়া শেষে দেখি কারো উঠার জো নাই । পরে চা খাইয়া তাড়াতাড়ি কটেজে ফিরে যে যেভাবে পারে কাঁতচিত হয়ে ঘুম ।

ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার সময় । আশেপাশে দেখি সবাই তখনো ঘুমে । উঠে টয়লেটে গিয়ে দেখি বেগতিক অবস্থা । তিন-চারটা কটেজের জন্য একটা মাত্র টয়লেট । নিচের লেক থেকে মোটর দিয়ে পানির লাইন আনা হইছে এখানে । গাছের সাথে পানির ট্যাপ । কিন্তু টয়লেটে বিকট গন্ধ । পায়খানা উঠে এসেছে একেবারে মুখে । টুপ করে পড়লেই লাফ দিয়ে কিছু নিচের থেকে উপরে উঠে আসে । বিরাট ঝামেলা । টয়লেট থেকে ফিরে দেখি নেসার ভাই বের হইছেন ক্যামেরা নিয়া, সাথে আজওয়াদ আর জুনায়েদ ভাই । আমিও চললাম তাদের সাথে । লেকের ডান পাড় ঘেঁষে আমরা হাঁটা ধরলাম । নেসার ভাই পটাপট ছবি তোলেই যাচ্ছেন । জুনায়দে ভাই তার মোবাইলে । আবছায়া আলোতে সুন্দর হচ্ছে ছবিগুলো । ছবি তোলতে তোলতে আমরা আর্মি ক্যাম্পের অপজিট পারে চলে এলাম । অন্ধকার হয়ে গেছে পুরোপুরি । পাড়ে ছোট্ট একটা দোকান । দোকানের পাশ দিয়ে নিচে নেমে গিয়ে একটা পাড়া । চাকমা পাড়া । বগালেকের সবাই আবার বম । শুধু নিচের পাড়াটা চাকমাদের ।






নেসার ভাই বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে লেকের ছবি তোলছেন এখনো । দুইটা বাচ্চা আগুন নিয়া খেলছে পাড়ে । ওদের ছবিও তোললেন । পাড় বেয়ে উপরের দিকে উঠতে গিয়ে দেখি উপরে উঠ নিষেধ । ওখনে দাঁড়ায়াই একটা মরা গাছের ছবি তোললেন অনেকক্ষণ । ফটোগ্রাফার হিসাবে নেসার ভাই অসম্ভব ধৈর্যশীল । ছবি-টবি তোলা শেষে রাত সাড়ে আটটার দিকে কটেজের দিকে ফিরলাম আমরা । কটেজে ফিরে এসে দেখি সবাই উঠে গেছে । রাতে খাবে কি খাবে না এই নিয়ে চলছে আলোচনা । পরে খাওয়ার সিদ্ধান্তই নেওয়া হলো । বারবিকিউ হতে রাত হইয়া যাবে । সবাই আরেকবার টান দিলাম । দুপুরের বাঁধাকপির বদলে এখন মিষ্টি কুমড়া । ডাল আর ডিম ভাজা আগের মতই । পাহাড়ের এই খাবারগুলো মনে হচ্ছে অমৃত । খাবার দাবার শেষ করে সবাই পাহাড়ের দিকে হাঁটতে গে্লো । আমি, নেসার ভাই, জুনায়েদ ভাই আর আজওয়াদ গেলাম না । আমরা আর্মি ক্যাম্পের দিকে অল্পটুক হেঁটে কয়েকটা ছবি টবি তোলে কটেজে এসে ঘুমায়া পড়লাম ।

নড়চড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ । কটেজগুলোর মাটি থেকে উপরে আর বেড়ার চাতাল হওয়ায় কেউ হাঁটলে ক্যাঁচক্যাঁচ করে আওয়াজ হয় । চোখ মুছে মুছে বাইরে এসে দেখি বারবিকিউ রেডি হচ্ছে । প্রধান শেফ নাফিজ ভাই । উনার সহকারী সৌরভ ভাই । মাহের ভাই লাঠি দিয়ে আগুন নেড়েচেড়ে দিচ্ছেন । তানভির ভাই আপাতত কিছু করছেন না । উনি বিশিষ্ট খাদক । উনার কাজ পরবর্তীতে ! এদিকে বাকিদেরও ডেকে দেওয়া হলো ঘুম থেকে । প্রথম দফা তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে খেতে বসে নিমেষেই উধাও হইয়া গেলো সব । খাপকুমের বারবিকিউ মাখাটা হয়েছে অসাধারণ । আমার লাইফের সেরা বারবিকিউ বলতে পারি নির্দ্বিধায় । আবার তৈরি করা হলো সেকেন্ড শিফট । চুলার উপর থাকতেই ঠিক করা কোন পিছ কার । সাঈদ ভাই গম্ভীর গলায় জানালেন, উনার পিচটার উপর অন্যায় করা হচ্ছে । ওটাতে নাকি আগুন কম লাগছে । দুর্নীতিটা আসলে করছিলেন সৌরভ ভাই । উনি উনার মাংসটা বেশি পোড়াচ্ছিলেন । পোড়ানো শেষ হলে আবার এক টান । বারবিকিউ খাওয়া শেষ করে পানি খেতে গিয়ে দেখি সিয়ামদির দোকান খোলা । পুরো শরীর জুড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো । আমরা বাঙ্গালীরা হলে এই কাজ করতাম না । আমাদের মধ্যে থেকে বিশ্বাস নামের বস্তুটি প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে । এই পাহাড়িরা এখনো অত বিশ্বাসহীন হয়ে যায়নি । এরা মানুষের কথা বিশ্বাস করে । মানুষকে বিশ্বাস করে । কথা দিলে কথা রাখে যেভাবেই হোক.


পানি-টানি খাওয়া শেষে সবাই কটেজে এসে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম । সম্ভবত পশ্চিমমুখী ব্যালকনি । চাঁদ উঠেছে আকাশে । সুকান্তের রুটির মত বিশালাকার চাঁদ । লেকের পানিতে ছায়া পড়ে দেখাচ্ছে অপার্থিব সুন্দর । এই সৌন্দর্যের জন্ম এই পৃথিবীতে নয় । অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে । পাশের কটেজ থেকে গান ভেসে আসছে । আমায় ভাসাইলিরে, আমায় ডুবাইলিরে ... । তানভির ভাইও এদিকে গান ধরলেন । এর মধ্যে কে যেন ভেতর থেকে নেসার ভাইয়ের বাইনোকোলারটা নিয়ে আসলো । পালা করে চাঁদের বুড়ি আর পাহাড় দেখলাম সবাই । এদিকে গান চলছে । সোনার মেয়ে, তোমায় দিলাম ভুবন ডাঙ্গার হাসি । সোনার মেয়ে ... । ভেতর থেকে পাল্লা দিয়ে চলছে জুনায়েদ ভাইয়ের নাসিকা গর্জন ।

নেসার ভাই বললেন, ওরে, কেউ একজন জুনাইদ্যার নাকে সাইলেন্সার লাগাই দেনা রে বাপ । ঘুমাইতে পারছি না । বেচারাও শেষ পর্যন্ত বের হয়ে আসলেন ব্যালকনিতে।

আস্তে আস্তে বালিশ আর কম্বলও আসলো ব্যালকনিতে । সাঈদ ভাই শোনালেন আমাদের ছোট নদীর হিন্দী, আরবী আরো বিভিন্ন রকম ভার্সন । রাতের পানিতে চাঁদের ছায়া সুন্দর হয় জানতাম । কিন্তু বগালেকের পানিতে চাঁদের ছায়া হয় সৌন্দর্যের চুড়ান্ত । এই ছায়ায় নেশা ধরে যায় । এই রকম এক জলছায়া দেখে সম্ভবত মহামতি বৌদ্ধ ঘর ছেড়েছিলেন । গৃহত্যাগী এই ছায়া দেখে প্রগাঢ় আনন্দ হয় । প্রকৃতি এতো মায়াময় ! মানুষের জন্য এতো বিপুল সৌন্দর্য সে সৃষ্টি করে রেখেছে চারপাশে ! বোকা মানুষ শুধু সংঘাতে আর সঙ্গমে এই জীবন কাটিয়ে দেয় । ঘুরেও দেখে না প্রকৃতির এই বিশাল সৌন্দর্য ভান্ডার । কটেজের ব্যালকনিতে বসে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হলো । এই পৃথিবীর অসংখ্য সুন্দরের মধ্যে অন্তত একটা সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য আমার হইছে । আস্তে আস্তে সবাই ঘুমায়া যেতে লাগলো । আমি আর তানভির ভাই আরো অনেক্ষণ ছিলাম বাইরে । পরে আমরাও ঢুকে ঘুমিয়ে পড়লাম । কাল সকালে কেওক্রাডং এর পথ ধরতে হবে।

বিশ তারিখ সকালে ঘুম ভাংলো সকাল আটটার দিকে । সবাই উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে একেবারে গোছগাছ করে বের হইয়া গেলাম । এর মধ্যেই সাড়ে নয়টা বেজে গেছে । রোদ চলে আসছে মাথার উপর । সবাই তাড়াহুড়া করে সিয়ামদির দোকানে ঢুকলাম । কেউ নূডলস, কেউ খিচুড়ি । তানভির ভাই আবার দুটোই একসঙ্গে । তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বের হয়ে সিয়ামদির দোকানের সামনে ছবি তুললাম কয়েকটা । তারপর যাত্রা শুরু করে দিলাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতা কেওক্রাডং এর দিকে।



দুই পাশে গভীর জঙ্গল । মাঝখানে পায়ে হাঁটার সরু পথ । ওই পথ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম আমরা । পাথুরে রাস্তা । দুইপাশেও পাথুরে মাটি । এই ট্র্যাকিং এর পথটা তেমন কঠিন না । অন্তত কমলা বাজার থেকে বগা লেকের পথের মত না । অনেক ভালোই বলতে হয় । পনের বিশ মিনিট হাঁটার পর ছোটখাটো একটা ঝর্না । সবাই বসে ওখানে ঝিরায়া নিলাম কিচ্ছুক্ষণ । বোতল বের করে পানি খেলাম সবাই । গতকাল সবার শিক্ষা হইয়া গেছে । আজ সবার ব্যাগেই পানির বোতল । আবার হাঁটা ধরলাম জঙ্গলের পথ বেয়ে । কিছুদুর যাওয়ার পর দেখি রাস্তা দিয়া একটা জীপ খাড়া উঠছে উপর দিকে । এই রাস্তাটা নতুন হচ্ছে । আর্মিরাই করছে । মাটি কেটে ফেলা হইছে । এখনই গাড়ি উঠে যাচ্ছে কেওক্রাডং এ । আর বছর দুয়েকের মধ্যে পুরা রাস্তা পিচ হইয়া যাবে । মানুষ সোজা গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারবে কেওক্রাডং, জাদিপাই । আমরা মনে হয় ট্র্যাকিং করে উঠা শেষের দিকের ট্যুরিষ্ট । পরবর্তী ভ্রমণকারীরা ট্র্যাকিং এর এই স্বাদটা পাবে না । মানুষ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য নষ্ট করে ফেলছে প্রকৃতি । এই ব্যাপারটা খুবই ভয়ানক । প্রকৃতিও এক সময় প্রতিশোধ নেবে মানুষের উপর।

রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আবার ঢুকে গেলাম জঙ্গলে । সামনে থেকে কিসের যেন শোঁ শোঁ আওয়াজ আসছে । খাপকুম বললো, চিংড়ির ঝর্নায় এসে গেছি । কাছে গিয়ে দেখলাম আহামরি কিছু না । একশ বিশ-তিরিশ ফিট উপর থেকে ঝপ করে নিচে নেমে গেছে একটা বিশাল পাথর । পানির তেমন বেগ নাই । খৈয়াছড়ার কাছে এই ঝর্না দুধের শিশু । তবে নামটা বেশ মজার মনে হলো । চিংড়ি ঝর্না । এই রকম নাম কেন হলো জিজ্ঞেস করলে খাপকুম কোন উত্তর দিতে পারলো না । কে একজন যেন বললো, এখানে চিংড়ি পাওয়া যায় তাই চিংড়ি ঝর্না । ব্যাপারটা বেশ হাস্যকর । যেখানে এই পাহাড়িদের সাথে মাছেরই কোন সম্পর্ক নাই সেখানে আবার চিংড়ি । এরা মাছটা কোনো ভাবেই খেতে পারে না । সারা জীবনেও এক-আধবার খেতে পায় কিনা সন্দেহ । এখান থেকেই পাইপ দিয়ে বগালেকে খাবার পানি নেওয়া হয় । আমি নিশ্চিত সৌরভদা থাকলে এই পাইপে পস্রাব করে দিতো । উনি যেখানেই যায় সুইমিং পুলে পস্রাব করে দেয় । এই ঝর্নায় কাটিয়ে দিলাম প্রায় তিরিশ-চল্লিশ মিনিট।

আবার যাত্রা শুরু করলাম । এখন পথ একটু খারাপ । পাহাড় বেয়ে উঠতে হচ্ছে আবার নামতে হচ্ছে । আবার পাহাড় বেয়ে উপরে। আবার নিচে । এরকম তিনটা পাহাড় পার হওয়ার পর এক পাহাড়ের চুড়ায় জিরালাম কিছুক্ষণ । বিস্কিট-টিস্কিট খেলাম । আবার হাঁটা শুরু করলাম । শক্তি ক্ষয় হয়ে আসতে শুরু করলো ধীরে ধীরে । এবার নিচে নাইমা আবার খাড়া উঠতে হচ্ছে । সবার আগে আগে আমি আর খাপকুম । ক্লান্তি ভুলে থাকার জন্য খাপকুমের সাথে গল্প জুড়ে দিলাম । তার থেকে জানলাম বমরা খ্রীষ্টান । এরা ঘটা করে বড়দিন পালন করে । ওই সময় গয়াল জবাই করা হয় ওদের পাড়ায় । মিশনারীরা কত আগে ঢুকে গেছে এই জঙ্গলে ভাবলে অবাক লাগে । এখন আবার কোন মিশনারী নাই । বমরাই গীর্জার ফাদার । তবে এখনো নাকি কেউ কেউ বিদেশ থেকে চিকিৎসা সহায়তা দিতে আসে।

বিয়ে-টিয়ে করেছে কিনা জিজ্ঞেস করায় হাসলো একটু । বললো, করিনি এখনো। তবে একজনের সাথে প্রেম আছে । রুমা বাজার হাই স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে সে । তাকেই বিয়ে করবো বছর দুয়েক পর । আমার সাথে গল্প করতে কেন যেন ওর মজাই লাগছে । আরো জানালো বিয়ের পর গাইডের পেশা ছেড়ে দেবে । এই পাহাড় নাকি তার ভালো লাগে না । তারচেয়ে কৃষি কাজ করবে বাসায় বসে বসে । প্রেমিকাও নাকি বলে দিছে এই কাজ আর করা যাবে না । তিন-চারদিন ঘরের বাইরে থাকা যাবে না কোনভাবে । শুনে আমিও হাসলাম, খাপকুমও হাসলো।

কথায় কথায় সিয়ামদির কথা উঠলো । উনার নাকি কোন এক ঢাকাইয়ার সাথে বিয়ে হইছিলো । আমার মনে হয় এরা ঢাকাইয়া বলতে শহরাঞ্চলের মানুষকেই বুঝায় । দুটো ছেলে সিয়ামদির । ছেলেগুলা শহরে চাকরি-বাকরি করে কোথাও । জামাই হারামজাদা এখন আর আসে না । আমি কল্পনায় দেখলাম তরুণী বয়সের সিয়ামদিকে । পান খায়া ঠোঁট লাল করে দোকানদারী করছে ষোলো-সতেরো বছরের এক বম তরুণী । শহরাঞ্চলের এক দল যুবক ঘুরতে এসেছে পাহাড়ে । ওখানকারই কোন এক যুবকের প্রেমে পড়ে গেছে এই তরুণী কিংবা তরুণীর প্রেমে পড়ে গেছে ওই যুবক । তারপর বিয়ে, বাচ্চাকাচ্চা । এরপর কোনো একদিন পাহাড়ের নিঃসঙ্গতায় হাঁপায়া গেলো শহুরে যুবক । চলে গেলো সব ছেড়েছুড়ে । তারপর শহরের যন্ত্রণায় ভুলে গেলো এই পাহাড় আর পাহাড়ের মতো শান্তশিষ্ট এক তরুণীর কথা । তরুণী কিন্তু এখনো আলগোছে হৃদয়ের একপাশে রেখে দিছে ওই বাঙালি তরুণকে । জীবনটা কাটায়া দিলো একা একা । কিংবা কি জানি ! হয়তো সময়ের সাথে সাথে ভুলেই গেছে এতোদিনে । লেখকদের কেন যেন প্রেম বাঁচায়া রাখতেই বেশি পছন্দ । আমি প্রথমটাই মনে মনে ধরে নিলাম।

পিছন থেকে আজওয়াদ আর নাফিজ ভাই আইসা আমাদের ধরে ফেললো এবার । চারজন মিলে হাঁটছি এখন । হঠাৎ খাপকুম বলল, রাস্তার একপাশে চলে আসেন । গাড়ি আসছে উপর থেকে । আমরা তিনজনই অবাক হইয়া তাকালাম খাপকুমের দিকে । কিসের গাড়ি ! কোন আওয়াজ তো নাই কোথাও । খাপকুম দাঁড়ায়া আছে । আমরাও দাঁড়ালাম তার সাথে । অনেকক্ষণ পরে দেখি গাড়ির আওয়াজ আসছে উপর থেকে । আমার এবার হতবাক হয়ে তাকালাম খাপকুমের দিকে । এতো শ্রবণ শক্তি এদের ! পরে ভাবলাম এটাই তো হওয়া স্বাভাবিক । এই শ্বাপদসংকুল পাহাড়ে টিকে থাকার জন্য তো এদের শ্রবণ শক্তি তীক্ষ্ণ হওয়া দরকার । উঠন্তি শেষ হলে দেখা গেলো একটা যাত্রী ছাউনি । টিন দিয়ে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে মানুষ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য । আমরা যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে বসলাম । আমাদের পিছু পিছু দেখি এক বম দম্পতি । মেয়েটা বিশাল এক ট্রাভেল ব্যাগ নিয়েছে কপালের সাথে বেঁধে । আর ছেলেটার কোলে ঝুলনো বাচ্চা । মেয়েটা হেসে হেসে ওদের ভাষায় কথা বলছে খাপকুমের সাথে । মেয়েটার সাথে খাপকুমের কথা শেষ হলে খাপকুম জানালো, মেয়েটা কেওক্রাডং এর মালিকের মেয়ে । বাপের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে।

জিরানো শেষ হলে আবার হাঁটা শুরু করলাম । খাপকুম জানালো আর বেশি নাই । আর আধা ঘন্টা মত হাঁটলে একটা পাড়ায় পৌছাবো । ওখান থেকে আর পয়তাল্লিশ মিনিটের পথ । এর মধ্যে ছাতা মাথায় দুই কিশোরী এসে জুটলো আমাদের পিছনে । এর মধ্যে একটা নাকি আজওয়াদের দিকে বেশ চোরা চোরা চাহনী দিছে । আজওয়াইদ্যাও দিছে নিশ্চয় । হালায় দেখায় ভাল, কিন্তু কি যে ফাজিলের ফাজিল তা আর কেও জানুক না জানুক, আমি তো জানি ! তার দীর্ঘদিনের প্রেমের কথা ভেবে আগ বাড়েনি হয়ত ! সাঈদ ভাই শুনে গম্ভীর গলায় বললেন, এদের সাথে কিন্তু ধারালো দা থাকে আজওয়াদ । বেশি তাকাবে তো ঝোলা থেকে দা বের করে কপ করে ফেলে দিবে কল্লা । ভাবখানা এরকম যেন, কল্লা না ফেললে উনিও একটু চোখ-টোখ মেরে দেখতেন । বেচারা ! হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ খুব সুন্দর একটা জায়গায় এসে পৌছালাম আমরা । বামপাশে পাহাড় আর ডান পাশে ঝুপ করে নেমে গেছে অনেক দুর । সামনে তাকালে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো পাহাড়ের সারি । অসম্ভব সুন্দর জায়গা । এখান থেকে কেওক্রাডং এর চূড়া দেখা যায় । ওখানে দাঁড়িয়ে সবাই ছবি তোললাম কিছুক্ষণ । তারপর আবার হণ্টন!



আধ ঘণ্টা মতন পরে পৌছালাম দার্জিলিং পাড়ায় । ছোট্ট ছিমছাম পাড়া । তিরিশ-চল্লিশ ঘর মানুষের বাস এখানে । রাস্তার উপর একটা ভলিবল খেলার কোর্ট । পাড়ায় ঢুকে এক তরুণীর দোকানে নিয়ে গেলো খাপকুম । তরুণীর সাথে আবার খাপকুমের বেশ খাতির । দোকানে ঢুকে খাপকুম নিজেই চা বানাতে লেগে গেলো । তরুণীর বাড়িটা দোকানের সাথে একসাথে লাগোয়া । ঘরের ভেতর মাটি থেকে আধা ফুট মত উচু করে চৌকি পাতা । আমরা সবাই চৌকিতে গড়াগড়ি শুরু করে দিলাম । পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি দুইটা পঞ্চাশ । বাব্বাহ, এতো সময় ধরে ট্র্যাকিং করলাম । চা-টা খেয়ে আবার চলতে শুরু করলাম কেওক্রাডং এর দিকে । এখন আর তেমন ক্লান্তি লাগছে না । নাকি চুড়া দেখা যাচ্ছে বলেই কিনা জানি না । এখন দেখি সবার হাঁটার স্পীড বাইড়া গেছে।

অবশেষে আমাদের এতদিনের গন্তব্য কেওকারাডঙ্গের চুড়ায় এসে পৌছালাম । হঠাৎ ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো । কোন ক্লাস ঠিক মনে নাই । বাংলা বইয়ে একটা গল্প ছিলো । পায়ের নিচে এভারেষ্ট । তেনজিং আর হিলারির এভারেষ্ট জয়ের কাহিনী ছিলো ওইখানে । ওই গল্পের কোনো এক জায়গায় লেখা ছিলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম কেওক্রাডং । উচ্চতা ১২৩০ মিটার । এভারেষ্টের কাছে কিছুই না। তবুও মনে দাগ কেটেছিলো নিজের দেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ।
বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেওক্রাডং এ কিভাবে যেতে হয়?
বাবা বলেছিলো, ওখানে মানুষ যেতে পারে না!
আজ সেই শৃঙ্গে আমি দাঁড়ায়া আছি । কত শত শত মানুষ আমাদের আগে এখানে এসেছে তবুও কেন জানি অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে । ছোটবেলায় যদি কেওক্রাডং উঠতে পারতাম যে আনন্দ হত ঠিক সেই রকম আনন্দ।

কেওক্রাডং এ মাত্র একটাই ঘর, লালা বমের । কেওক্রাডং এর মালিকও সে । তার বাড়ির সামনে বড় করে সাইনবোর্ডে লেখা, ট্যুরিষ্ট মোটেল, কেওক্রাডং । মুল চূড়াটায় লালার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে আর্মিরা একটা ক্যাম্প করেছে । দশ-বারোজন সৈনিক থাকে এখানে । পাশে একটা হেলিপ্যাড । লালার বাড়িটা দুতলা কাঠের । নিচে নিজেরা থাকে । উপরটা ট্যুরিষ্টদের ভাড়া দেয় । পাশে আরো কয়টি সিঙ্গেল কটেজ । আমরা প্রথমে আলাদা কটেজে উঠতে চাইছিলাম । খাপকুম বললো, ওখানে প্রচন্ড ঠান্ডা । বাধ্য হয়েই দুতলায় উঠলাম । সবাই কাপড়-চোপড় চেঞ্জ করে দেখি খেতে বসে যেতে চাচ্ছে । গোসল নাকি পরে করবে । ক্ষিধা পেয়েছে রাক্ষসের মতো । কিন্তু এখন খাওয়া হয়ে গেলে খাওয়ার পর আর গোসল করা হবে না । আমি আর নেসার ভাই গোসল করতে চললাম । আমাদের গোসল করার কথা শুনে আজওয়াদ আর জুনায়েদ ভাইও চলে এলো । গোসলের জায়গা কেওক্রাডং এ যেদিক দিয়া উঠেছিলাম সেদিকে । দুই-চার মিনিট হাঁটার পর হাতের বামদিকে খাড়া নেমে গেছে নিচে । রাস্তার উপর লেখা আছে এখানে ট্যুরিষ্টদের গোসলের ব্যবস্থা আছে । নিচে নেমে দেখি ছোট একটা কুয়া । নিচের কোন ছড়া থেকে পাম্প দিয়ে পানি তোলে এখানে জমানো হয় । আরেকটা পাম্প দিয়ে খাওয়ার জন্য তোলা হয় উপরে । পানিতে নেমে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম । এমন মারাত্নক ঠান্ডা । নড়তেও পারছি না, উপরেও উঠে যেতে পারছি না । এদিকে জুনায়েদ ভাই শুরু করে দিছেন চিল্লাচিল্লি। “এইত ব্যাটা, পানি ঘোলা করে ফেলছিস কি জন্য? আমরা গোসল করবো না?”
পরে যখন বুঝলো, আমি আসলে ঠান্ডায় নড়াচড়া করতে পারছি না, তখন আজোওয়াদ দৌড়ায়া আইসা আমাকে টেনে তুলল। পানির অবস্থা বুঝতে পেরে এরা আর কেউ গোসল করার সাহস করলো না । অগত্য আমি একা একাই গোসল করলাম।

গোসল শেষে ফিরে এসে দেখি সবাই খাওয়ার টেবিলে । আমিও আর উপরে উঠলাম না । হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় গায়ে গামছা পেছিয়ে খেতে বসে গেলাম । ওদিকে আর্মি ক্যাম্প থেকে খাপকুম ডাকছে রিপোর্ট করার জন্য । তাড়াতাড়ি খেয়ে উপরে উঠে সাইন করলাম । আর্মিদের মধ্যে দেখি দুই ধরণের মানুষ । কেউ কেউ আছে অসম্ভব বদমেজাজি । আগাগোড়া বেয়াদপ টাইপ । এরা সিভিলিয়ানদের মানুষ মনে করে না । আবার কেউ কেউ আছে খুব অমায়িক । অসম্ভব ভদ্র আচরণ করেন । কেওক্রাডং এর আর্মিগুলো খুব ভালো । মিশুক টাইপ । বগালেকে একজন পাইছিলাম আস্ত খাটাশ । সাইন করার পর ওরা জানালো, ছয়টার পর হেলিপ্যেডে উঠা যাবে না । আমরা তাড়াতাড়ি চূড়া থেকে নেমে হেলিপ্যাডের দিকে রওয়ানা হলাম । এখানে পরেও আসা যাবে । সন্ধ্যার পরে হেলিপ্যাডে আর উঠা যাবে না ।





এর মধ্যে খবর এলো খাপকুমের দাদি মারা গেছে । খাপকুমকে বললাম চলে যাওয়ার জন্য ।
ও বললো, এখন একা যেতে পারবো না । ভয় করবে । তাছাড়া আর্মিরাও আপনাদের একা রেখে যেতে দিবে না ।
বেচারা হাসি হাসি মুখ করে আমাদের সাথে হেলিপ্যাডে ছবি তোলতে লেগে গেলো । হেলিপ্যাডের মনে হয়, এমন কোন জায়গা নাই, যেখানে দাঁড়ায়া কেউ না কেউ ছবি তুলেছে । ইচ্ছা ছিলো কেওক্রাডং এ সূর্যাস্ত দেখবো । কিন্তু কপাল খারাপ । হঠাৎ করে মেঘ করে সব ঢেকে দিছে । ডোবার আগে অবশ্য একটু করে দেখা গেছিলো।
নেসার ভাই বললেন, সূর্যের দিকে পিঠ দিয়া সবাই লাফ দেন । ছবি তুলি ।
দেখা গেলো আমরা সবাই লাফ দিছি । খাপকুম নিচে । আবার আমরা যখন নিচে নেমে এলাম খাপকুম তখন লাফ দিছে । ওদিকে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় হেলিপ্যাড থেকে নেমে যাওয়ার জন্য আর্মিরা ডাকাডাকি শুরু করে দিছে । হেলিপ্যড থেকে নেমে সবাই গিয়ে আবার মূল চূড়ায় উঠলাম । ওখানে একটা পাকা ছাউনি । পাশে প্রধানমন্ত্রীর নাম লেখা স্মৃতিফলক । উনি ১৪ সালে প্রথম কেওক্রাডং আসেন । ছাউনিতে বসে অনেক্ষণ গল্প-গুজব করলাম সবাই।

সাতটার সিকে জেনারেটর ছাড়লো আর্মিরা । চারদিক আলোকিত হয়ে গেলো সাথে সাথে । সবাই মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো । বাড়ির সামনে ছোট একটা বসার জায়গা করেছে লালা । সেখানেই ট্যুরিষ্টরা চার্জ দেয় । পাশে একটা আগুনের কুন্ড । খাপকুম জ্বালাইছিলো একটু আগে । ওখানে বসে বসে আগুন পোহাচ্ছিলাম ।
হঠাৎ উপর থেকে আর্মিরা বললো, আপনাদের কেউ কি হেলিপ্যাডে গেছে ।
বললাম, না ।
আবার ওরা বললো, ভালো করে দেখেন । গেলে কিন্তু ঝামেলা হবে ।
আমি দৃঢ় গলায় বললাম, না ।
উপর থেকে নেসার ভাইও বললেন, ভালো করে দেখ । কেউ গেছে টেছে কিনা ।
উনাকেও বললাম, না ।
হেলিপ্যাডে গেছে লালার বাড়িতে কাজ করতে আসা কাজের ছেলে দুইটা । হঠাৎ দেখি লুঙ্গি পরা আর্মিগুলো দমাদম ড্রেসআপ হয়ে গেলো । অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দৌড় দিলো হেলিপ্যাডের দিকে । ছেলে দুইটাকে ধরে নিয়ে এনে সে কি বকাবকি! আর্মিরা ভাবছিলো, কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ হেলিপ্যাড আক্রমণ করছে।

খাওয়া-দাওয়া শেষে আগুন পোহাতে বসলাম সবাই । লালাও এসে যোগ দিলো আমাদের সাথে । লালারা মূলত কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা । জলবিদ্যুৎ তৈরি করার সময় তাদের বাড়িঘর ডুবে গেলে লালার দাদা বান্দরবানে চলে আসেন । লালার কথাবার্তা শুনে মনে হলো চট্টগ্রাম শহরের হোমড়া-চোমড়াদের সাথে তার পরিচয় আছে । সেন্ট প্লাসিড স্কুল থেকে পাশ করেছে এস এস সি । দুনিয়াদারী সম্পর্কেও দেখি বেশ খবরাখবর রাখে । এই পাহাড়ে বসেও ফেসবুক, ইন্টারনেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল । লালার ছোট ছেলেটা পড়ে ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে । পাহাড়িদের মধ্যে এই জিনিসটা দেখেছি । তারা কষ্টের সব পয়সা দিয়ে ছেলেমেয়েকে ভালো ভালো স্কুল কলেজে পড়ান । আসার সময় একজনের সাথে দেখা হইছিলো । মেয়েকে পড়ায় ব্যাঙ্গালোরের বোর্ডিং স্কুলে । শুনে আমি থ হয়ে গেছিলাম । নিতান্ত গোবেচেরা টাইপের একজন লোক । মেয়েকে বোর্ডিং স্কুলে পড়ায় শুনে উনি কি করেন জানার লোভ সামলাতে পারিনি । বললো, কৃষি কাজ করেন । আদা আর জুম চাষ করেন পাহাড়ে । উনার বাড়ি কেওক্রাডং থেকে আরো আড়াই ঘন্টা মত ভেতরে । মাসের বাজার করে ফেরার সময় আমাদের সাথে পরিচয় । আমাদের মধ্যবিত্ত বাবারা ছেলেমেয়েদের বোর্ডিং স্কুলে পড়নোর কথা চিন্তাও করতে পারেন কিনা সন্দেহ!

লালা বমের অবশ্য টাকা পয়সার কোন অভাব নাই । কেওক্রাডংসহ আশেপাশে দুই হাজার একর জমি তার । আসার সময় যে দার্জিলিং পাড়া পড়েছিল সেটাও । সামনে ঘন্টা দুয়েক গেলে জাদিপাই ঝর্না । ওটাও নাকি তার জায়গায় । জাদিপাই যাওয়ার খুব ইচ্ছ ছিল । কিন্তু কেওক্রাডং থেকে ওদিকে যাওয়া ট্যুরিষ্টদের জন্য নিষিদ্ধ । কয়দিন আগে এক গাইডসহ দুইজন টুরিষ্টকে গুম করে ফেলা হইছে ওখানে । তাই কপাল খারাপ । কেওক্রাডং থেকে ফিরে যেতে হবে । লালার বাবার ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গয়ালের খামার । একটু পর উনি উঠে গিয়ে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে এলেন আমাদের দেখানোর জন্য । প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া । লালার বাবাকে শ্রেষ্ঠ গয়াল চাষী হিসাবে পুরস্কৃত করা হইছে । লালা কোন সাল বললেন ঠিক মনে নাই । ছিয়াশি না ছিয়ানব্বই, ওই বছরেই তার জুমে আগুন ধরে যায় । সব গয়াল পুড়ে ছাই হয়ে যায় ওই আগুনে । এখন অবশ্য লালা তেমন কিছু করেন না । মোটেলটা চালান । আদা আর জুম চাষ করেন । লালা যেখানে বসেন সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার পরিবারের বিশালাকার ছবি টঙ্গানো । উনি কেওক্রাডং এসেছিলেন ১৪ সালে । লালা ওই সময় প্রধানমন্ত্রীকে হেলিপ্যাডের পাহাড়টা উপহার দেন।

দশটা বাজার পর আর্মিরা জেনারেটর বন্ধ করে দিলো । আমাদের আড্ডাও ভেঙে গেলো সেই সাথে । লালা ঘরের ভেতর চলে গেলো ঘুমানোর জন্য । আমরা উঠে গেলাম বাড়ির পেছনের টিলায় । এখানে তিনটা কটেজ । একটা আছে সেনাবাহিনীর । বাকি দুইটা লালার । রাতের নিস্তব্ধতাটা কেমন যেন ভৌতিক ভৌতিক । আকাশে তারার সংখ্যা গোনা যাচ্ছে একটা একটা । চাঁদ নেই । কিছুক্ষণ পর পর সেনাবাহিনীর টর্চ লাইট ঘুরে আসছে প্রান্তরের এমাথা-ওমাথা । এখানে বসে এবার শুরু হলো ভুতের গল্প । গল্প করতে করতে রাত অনেক বেশি হইয়া গেলো । সবাই তাড়াহুড়া করে ঘুমাইতে গেলাম । ভোরে উঠে রওয়ানা দিতে হবে ।
ভোরে উঠে টয়লেট সারার পর দেখি সৌরভ ভাই উঠেছেন ।
উনি বললেন, চলো চুড়ায় যাই শেষবারের মতন ।
গেলাম দুজন । শেষবারের মত কেওক্রাডং এর চুড়ায় সেলফি হয়ে গেল কয়েকটা । এমনে ছবিও তোললাম । মেঘের জন্য সূর্যোদয় দেখতে পেলাম না । শেষ রাতের দিকে বৃষ্টিও হইছে কিছুটা । নিচে নেমে এসে দেখি সবাই রেডি হয়ে গেছে । আমরাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাশতা করতে বসে গেলাম । খিচুড়ি আর ডিম ভাজা । খেয়েদেয়ে বের হবো, লালা নিজের থেকেই এসে ছবি তোললো আমাদের সাথে । নেসার ভাই তার কার্ড দিয়ে বললেন, মেডিকেলে আছি । হাসাপাতালে এলে যোগাযোগ করবেন কিন্তু । লালার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এবার বগালেকের পথ ধরলাম আমরা।

নামার সময় সাঈদ ভাই বললেন, যাওয়ার সময় আমরা কিন্তু দেরি করতে পারবো না । টিম ওয়ার্ক করতে হবে তাড়তাড়ি পৌছানোর জন্য । ছবি টবি তোলা যাবে না কোনমতে । বিশেষ করে সেলফি । সেলফির কারণে আমাদের অনেক সময় লস হয়ে গেছে গতবার। আমরা ততক্ষনাৎ বুঝে গেলাম বাঁশটা কোনদিকে গেছে । আমাদের মধ্যে একমাত্র সেলফি স্পেশালিষ্ট সৌরভ ভাই । কেওক্রাডং এ আসার পথে উনি এক হাজার-ই তুলছেন সেলফি!

উঠার থেকে নামাটা তাড়াতাড়ি হয় । আমরা খুব তাড়াতাড়িই দার্জিলিং পাড়ায় নেমে এলাম । মাঝখানে জুনায়েদ ভাইয়ের পা-টা মচকে গেছে একটু । তবে তেমন সমস্যা হয়নি । দার্জিলিং পাড়ায় চা-টা খেয়ে কিছুক্ষণ জিরায়া আবার হাঁটা ধরলাম । নাফিজ ভাই আর সাঈদ ভাই আগে আগে হাঁটছেন । আমরা পেছনে ছবি তোলছি, ভিডিও করছি ইচ্ছা মতন । যাত্রী ছাউনিতে পৌছে দেখি উনারা রেগে টং হইয়া আছেন । আমরা আগে থেকে প্রিপারেশন নিয়া ছিলাম । ছাউনির আগে আগে গিয়ে জুনায়েদ ভাই ল্যাঙ্গানো শুরু করে দিছেন । দেরি কেন হলো আর এক্সপ্লেইন করতে হলো না । আর সবার দেখি জুনায়েদ ভাইকে নিয়ে সে কি টেনশন । উনার পায়ের দোহাই দিয়ে সারা রাস্তা সুবিধা নিলাম আমরা । অবশ্য ভালোই হইছে । মাহের ভাইয়ের কোমর দোলানো নাচ ভিডিও করা গেছে এই কারণে।

দশটা নাগাদ আমরা নেমে আসলাম চিংড়ি ঝর্নায় । ওখানে কিছুক্ষণ জিরায়া টিরায়া একেবারে সোজা বগালেক । এসে দেখি নাফিজ ভাইয়ের সে কি হাসি ! উনার এতো মধুর হাসির মর্মার্থ বুঝতে পারলাম । উনার ডাঊনলোড ভালো হইছে । এই ডাউনলোড নিয়ে নেসার ভাইয়ের বেশ প্যারা গেছে গতকাল । সিয়ামদির দোকানে কিছুক্ষণ জিরায়া তারপর আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে কমলা বাজার নামার পথ ধরলাম আমরা । যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি রুমা বাজার ফিরতে হবে আমাদের । খাপকুমের দাদি মারা গেছে গতকাল । বগালেক থেকে কমলা বাজারের রাস্তাটা উঠার সময় যেই রকম প্যারা দিছিলো ও’রকম মনে হচ্ছেনা এখন । নামতে নামতে তানভির ভাই জুনায়েদ ভাই আর নেসার ভাইকে নিয়ে ওয়াজও শোনালো কিছুক্ষণ । নিচে নেমে দেখি গাড়ি রেডি হয়ে আছে । খাপকুম আগেই ফোন দিয়া আনায়া রাখছে । তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলাম সবাই । দেরি না করে গাড়ি ছেড়ে দিল রুমা বাজারের দিকে।

ভোর রাতে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ । গতবারের থেকেও অবস্থা আরো বেগতিক । দুয়েকবার গাড়ি পিছলাও খেলো । ভাগ্যিস ড্রাইভার খুব এক্সপার্ট ছিল । নইলে একেবারে খাদের নিচে । ওই খাদের দিকে তাকালে মাথা চক্কর দিয়া উঠে । নাফিজ ভাই চোখ-মুখ বন্ধ করে কেঁচকি মেরে বসে আছেন । সৌরভ ভাইয়ের মুখ রক্তশুন্য হইয়া গেলো । গাড়ি কোন রকমে রূমা থানায় এসে পৌছালে সবার ভেতরে স্বস্তি আসলো । নেমে থানায় রিপোর্ট করতে হলো । চকোলেট-টকোলেট খেয়ে আবার গাড়িতে উঠলাম । অবশেষে পৌছালাম রুমা বাজার । বাজারে নেমে তাড়তাড়ি আর্মি ক্যাম্পে গিয়া সাইন-টাইন করে খাপকুমকে বিদায় দিয়া দিলাম আমরা । বেচারার সাথে ভালো করে বিদায়ও নেওয়া হলো না।

আর্মি ক্যাম্প থেকে নেমে খাবারের দোকান খুঁজছি আমরা । একটা দোকানের সামনে এক কর্মচারিকে জিজ্ঞেস করলাম কোন হোটেলে খাবার ভালো হবে ?
ছেলেটা বললো, হাতের ডানে গেলে সাতকানিয়া ভাতঘর । ওখানে ভালো হবে ।
নাফিজ ভাই জিজ্ঞেস করলো তোর বাড়ি কই ?
উত্তরে বললো, সাতকানিয়া ।
শুনে হাসি পায়া গেলো । বায়তুশ শরফের জব্বার সাহেবের গল্পটা মনে পড়ে গেলো হঠাৎ কইরা। উনি নাকি ওয়াজ করার সময় একদিন বললেন, একটা মানুষ চাঁদের দেশে গেলো । সেখানে দেখলো কোন দোকান-পাট নাই । অনেক দুরে টিমটিমে আলো জ্বলছে । সেখানে গিয়ে দেখেন একটা চায়ের টং । চা-টা খেয়ে বিল দেওয়ার সময় যখন বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলো তখন লোকটি নাকি জানালো, “জী, আঁরো বাড়ি অনর সাতকানিয়া।”
সাতকানিয়াদের ব্যবসায়-বানিজ্যের এই অবস্থা! তারা পুরো চট্টগ্রাম ছাইয়া ফেলছে। খাওয়া-দাওয়া শেষ কইরা হেঁটে চলে আসলাম স্টেশনে । গাড়ির জন্য দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ । সামনে যেটা আছে বেশি দাম চাচ্ছে । পরে একটা ল্যান্ডক্রোজার ঠিক হলো । সবাই উঠে পড়লে গাড়ি ছেড়ে দিলো বান্দরবানের উদ্দেশ্যে।

কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না । ঘুম ভাঙলো একেবারে বান্দরবানের কাছে এসে । একটু পরে স্টেশনে এসে পৌছালাম । ওখানে কিছুক্ষণ কাটায়া ছয়টার বাসে ফিরলাম আবার পুরানো জঞ্জালে । এর মধ্যে দেখি সবার ভয়-ডর কোথায় চলে গেছে । আবার প্ল্যান নেওয়া হচ্ছে বান্দরবানে আসার । এবার নাকি একদিন দুইদিন নয় । আট-দশ দিনের জন্য আসতে হবে পাহাড়ের সাহ্নিধ্যে । কত কিছু বাকি ? রিজুক, জাদিপাই, তাজিংডং, সাফা হাকং ... । কমলা বাজার থেকে রুমা বাজার ফেরার সময় যেই নাফিজ ভাই চোখ-মুখ বন্ধ করে ফেলেছিলেন, তার উৎসাহ দেখি সবার চাইতে বেশি।

গাড়ি চলছে। নিজেদের ঠিকানায় ফিরতে ফিরতে অচেনা-অজানা পাহাড়গুলোকে কথা দিলাম, আবার ফিরবো। নিশ্চয় ফিরবো মেঘেদের ওপর বাড়িগুলোতে…

৫ মার্চ, ’১৬। ফাগুনের সকাল।
ফয়েস লেক, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৪
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×