somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'সোয়াইন ফ্লু' ও শুকর ব্যবসায় মন্দাভাব

০২ রা মে, ২০০৯ ভোর ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বব্যাপী 'সোয়াইন ফ্লু'র (swine flu) প্রাদূর্ভাব এ মুহুর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ইতিমধ্যে (২৮শে এপ্রিল পর্যন্ত) মেক্সিকোতে এই রোগে ১৫২ জন মারা গেছে যাদের বয়স ২০ থেকে ৫০। সম্ভাব্য মহামারী ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ৪০ বছরে এই প্রথম তাদের জনস্বাস্থ্য সতর্কতা চার মাত্রায় উন্নীত করেছে। সোয়াইন ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ওষুধ নির্ধারিত না থাকায় আতঙ্কের মাত্রা আরও বেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার সেদেশের নাগরিকদের মেক্সিকো, আমেরিকা, জার্মানী, কানাডাসহ আক্রান্ত দেশগুলো সফর না করার বা সফরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে।

চলমান অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে সোয়াইন ফ্লুর বিরূপ প্রভাব দ্রুত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও ইতিমধ্যে লন্ডনসহ কয়েকটি শহরে শেয়ার বাজারেও ধ্বস নেমেছে। অর্থনীতির আরেকটি ক্ষেত্রে এ রোগের বিরূপ প্রভাব লক্ষ্যনীয়, আর তা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী শুকরের মাংসের ব্যবসা। শুকরের মাংসের চাহিদা ইতিমধ্যে বেশ কমে গেছে। বিশ্বে কানাডা এ মাংসের সবচেয়ে বড় রফতানীকারক দেশ। এখন সে দেশেও 'সোয়াইন ফ্লু' আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে এখবর বের হওয়ার পরে তাদের শুকরের মাংসের ব্যবসায় মন্দাভাব নেমে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের শুকরের মাংস উতপাদনকারী সংস্হার সভাপতি এগের কিংমা ব্যবসার মন্দাভাব কাটাতে জোর গলায় বলছেন, তাদের মাংস সোয়াইন ভাইরাস মুক্ত। আমেরিকায়ও শুকরের মাংসের ব্যবসায় অনুরূপ মন্দাবস্হা।

কেউ কেউ বলছেন, সোয়াইন ফ্লুর সাথে শুকর ব্যবসার মন্দাভাবের মূল কারণ, এই ফ্লুর নামকরণে। ইংরেজীতে swine মানে শুকরজাতীয় সর্বভূক প্রাণী (যেমন, pig, hog ও boar) যাদের শরীর অত্যধিক চর্বিযুক্ত এবং যাদের খাট ঘাড় ও লম্বা নাক আছে।

ইতিহাস থেকে (Merrium-Webstar online dictionary), 'swine fever' কথাটির প্রথম প্রচলন হয় আফ্রিকায় ১৮৮৬ সালে এবং রোগটি 'African swine fever' নামেও পরিচিত। এর জন্য দায়ী ডিএনএ ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম হল 'Asfivirus Asfarviridae'। রোগটি মূলত swine প্রজাতির শুকরদের হয়। রোগটির উপসর্গ স্বাভাবিক ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই। গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, গলায় ব্যথা, বমিভাব ও শারীরিক দুর্বলতার উপসর্গের কথা জানা গেছে। রোগটি 'pig plague' নামেও পরিচিত। ইংরেজী উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, এই রোগটি ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডে ও ১৯৭৮ সালে আমেরিকায় দেখা যায়।

বলা হচ্ছে, মানুষের মাঝে 'সোয়াইন ফ্লু' নামক রোগটির কারণ H1N1 নামক আরেকটি ভাইরাস। তাই স্বভাবতই শুকর ব্যবসায়ীদের দাবী মানুষের শরীরে এই সোয়াইন সেই সোয়াইন নয় যা শুকরদের হয়। আমেরিকার Agriculture Secretary টম ভিলসাক বলেছেন, মানুষের মাঝে এরোগের কারণ খাদ্য থেকে নয়, ফলে এর নামকরণ 'সোয়াইন ফ্লু' করাটা ভূল ছিল। প্যারিসভিত্তিক বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হাও এই নামকরণের বিরোধিতা করেছেন। কেউ বলছেন, এরোগের নামকরণ হওয়া উচিত 'Mexico flu', কেউ বলছেন 'North American influenza'।

মানুষের সোয়াইন ফ্লু এবং শুকরের শুকরের সোয়াইন ফ্লুর মাঝে সম্পর্ক প্রকৃতপক্ষে আছে কিনা তা বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যত গবেষণাই হয়ত: বলে দেবে। অনেকের হয়ত মনে আছে ২০০২-০৩ সালে হংকং, চীন, সিঙ্গাপুরে SARS (Severe acute respiratory syndrome) নামক অনুরূপ ফ্লুর কারণ হিসেবে শুকরের মাংসকেই দায়ী করা হয়েছিল এবং তখনও বিশ্বব্যাপী শুকর ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছিল। ইংরেজী উইকি থেকে জানা যায়, ২০০২ এর নবেম্বর থেকে ২০০৩ এর জুলাইয়ে এরোগে মোট ৮,০৯৬ জন আক্রান্ত হয় এবং ৭৭৪ জন মারা যায়। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য রোগটির প্রাদূর্ভাব থেমে যাওয়ার পরে এনিয়ে আর কোন গবেষণার ফল জানা যায়নি। বিশ্বের মানুষ জানতে পরেনি SARS এর মূল কারণকি আসলেই শুকর থেকে এসেছে? এক্ষণে মানুষের 'সোয়াইন ফ্লু'র ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে বলে অনেকে মনে করছেন।

উল্লেখ্য, বিশ্বের বড় বড় ধর্মগ্রন্হগুলোতে মদের মতো শুকরের মাংসও অপবিত্র বস্তু হিসেবে খাওয়া হারাম করা হয়েছে (দেখুন, বাইবেলের ওল্ডটেস্টামেন্ট: ডিউটরনমি ১৪:৮-৯, লেভিটিকাস ১১:৭-৮, আল-কোরআন ২:১৭৩, ৫:৩, ৬:১৪৫, ১৬:১১৫)। ধর্মীয় পন্ডিতদের মতে আল্লাহ শুকর খাওয়া হারাম করার মূল কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে, এটি অপবিত্র, এর মাধ্যমে ৭০ টিরও বেশি রোগ ছড়ায় (বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত) এবং এটি নৈতিক অধ:পতনের জন্য দায়ী। Taenia Solium বৈজ্ঞানিক নামের মারাত্নক কৃমি শূকরের মাংস থেকে আসে এবং এর ডিম রক্তের মাধ্যমে শরীরের সব জায়গায় পৌঁছে যায় ও পরিণামে স্মৃতিশক্তি লোপ, হৃদরোগ ও অন্ধত্ব সহ অন্যান্য রোগ হয়। শুকরের মাংসের অতিরিক্ত চর্বি মানসিক রোগ ও হৃদরোগের জন্যও দায়ী। আগেই বলা হয়েছে, শুকর সর্বভূক প্রাণী, ফলে এটি সবধরণের ময়লা খায়। এদের মালিকরা যতই এদের পরিস্কার রাখার চেষ্টা করুক নোংরা হওয়ায় এদের স্বভাব। এমনকি একটি শুকর অন্য একটি শুকরকে নিজের প্রিয় শুকরের সাথে যৌনকাজ করার আহ্বান জানায় (যা প্রাণীকুলের মধ্যে বিরল)। ধর্মীয় পন্ডিতদের মতে শুকরের মাংস খেলে মানুষের মাঝে উপরে উল্লেখিত রোগ-বালাই ছাড়াও শুকরের অনুরূপ স্বভাব সৃষ্টি হয়। ফলে এরা নিজের স্বামী বা স্ত্রীকে নির্দ্বিধায় অন্যের সাথে পরিবর্তন করে। পাশ্চাত্যের শুকরভোগীদের দ্বারা এরকম ঘটনা অহরহ পত্রপত্রিকায় দেখা যায়।

এর কারণ, ইহুদী ও মুসলমানরা শুকরের মাংস খাওয়া থেকে ধর্মীয় কারণে বিরত থাকলেও, খ্রীস্টানরা এ বাঁধা মানে না। তারা নিউ টেস্টামেন্টের কিছু বাক্যের ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে বলছে, ঈসা (আ: ) নিজেই তাওরাতের (বাইবেলের ওল্ডটেস্টামেন্ট) শুকরের মাংস নিষিদ্ধ বিষয়ক নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। যেমন, ম্যাথিউ (১৫:১৭) ও মার্কে (৭:১৮-২০) ঈসা (আ: ) বলেছেন, 'তোমরা কি দেখনা? বাইরে থেকে ঢুকে কোন কিছুই মানুষকে অপবিত্র করে না। এটা বাইরে থেকে এসে হৃদয়ে প্রবেশ করে না, পাকস্হলীতে যায় এবং এরপরে বাইরে চলে যায়।' বাইবেল লেখকরা ব্যাখ্যায় বলেছেন 'এর মাধ্যমে ঈসা (আ: ) সব খাদ্য জায়েজ বলে ঘোষণা করেছেন'। অথচ সবাই জানেন (এমনকি খ্রীস্টানরাও, দেখুন ম্যাথিও ৫:১৭-২০, ২৩:২৩), ঈসা (আ: ) কোন নতুন ধর্মীয় নিয়ম আনেননি, তিনি মুসা (আ: ) এর নিয়মগুলো পূন প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছেন। তাই শুকর জায়েজ বিষয়ক কথাবার্তা বাইবেল লেখকদের উদ্ভাবন বৈ কিছু নয়।

পরিশেষে বলতে হয়, আজ মানুষ মূলত আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম না মানার কারণেই জীবনের সকল ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়ছে। বিশ্বব্যাপী ধূমপান, অবৈধ যৌনতা, মদ ও শুকরের মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে বছরে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু ও শত শত পরিবার ভেঙ্গে গেলেও এগুলো থেকে মুনাফাভোগীরা ও শয়তানের পদাংক অনুসারীরা কখনও এসব পরিত্যাগ করবে না। আন্তার্জাতিক ভাবে মিডিয়ায় এসবের সর্বনাশী কুফল সেভাবে প্রচার হয়না। রসায়নে ডক্টরেট করা এক বন্ধু বলেছিলেন, এসবের ব্যবসার সাথে জড়িত দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারগুলোতে ধূমপান, অবৈধ যৌনতা, মদ ও শুকরের মাংসের কুফলের উপর কোন গবেষণা না হয়। এর পরেও যা হয় সেসবের ফলাফল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা মানুষের কাছে পৌঁছতে দেয়না। কিন্তু দায়িত্বশীল মিডিয়া ও প্রতিষ্ঠানের উচিত সাধারণ মানুষদের এব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক করা। সরকার ও জনসচেতনমূলক সংস্হাগুলো 'সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ধূমপান স্বাস্হ্যের জন্য ক্ষতিকর, স্বাস্হ্য মহাপরিচালক' মার্কা দায়সারা বিজ্ঞাপণ দিলে কাজ হবেনা। বরং এর জন্য দরকার এসব নিষিদ্ধকরণ আইন ও সঠিক বাস্তবায়ন। (লেখাটি প্রকাশিত,নয়াদিগন্ত)।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০০৯ ভোর ৫:৪০
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×