এই নগরে আমাদের পৃথিবী কেমন যেন ছোট হয়ে গেছে,
জানালার শিকের বাইরে যতটুকু দেখা যায় ঠিক ততটুকুই,
একটা রুগ্ন আমগাছ, একটা হ্যাঙলা শিশু আর বাগানবিলাসের ঝাড়
তার পর চলটা ঊঠে যাওয়া নোনাধরা ইটের পাঁচিল,
তার পরে আর দৃষ্টি চলেনা, ইমারতের পরে ইমারতে ঢাকা পড়ে
যতটুক চোখ যায়, মাথার উপর শুধু একটুকরো আকাশ।
রাত হলে এই ঝক ঝকে নগরে আকাশের তারারাও মুখ লুকায়,
আলোর মেলাতে চাঁদকেও ঝাপসা লাগে।
এই নগরে বন্দী মানুষেরা ভোর হলে ঝাকে ঝাকে কাজে যায়,
বেলা বাড়লে রাস্তায় গর্জন করে হাজার বাহন,
ব্যস্ত ফেরিওয়ালা ছুটে চলে দ্বার থেকে দ্বারে,
দোকানে বাহারি ফলে দোকানীরা ফর্মালীন বিষ ঢালে ,
শিশুরা পিঠে বিশাল বইএর বোঝা নিয়ে ছুটে চলে ঘাড় বাকা করে,
দুষ্টু কাকেরা ডাস্টবিনের ময়লা ছড়িয়ে দেয় রাস্তায় রাস্তায়,
দু একটা ঘেয়ো কুকুর ঝগড়া করে উচ্ছিষ্টের মালিকানা নিয়ে,
কোন বয়োবৃদ্ধ বাবা হাটেন বাজারের ব্যাগ নিয়ে
অনেক আগেই তার মিটে গেছে সব জীবনের সাধ।
এ নগরে বাতাসে উড়ে বেড়ায় শীষে আর কার্বন,
ট্রাফিক সিগনালে সিকনি ঝেড়ে ঝেড়ে ফুল বেঁচে ছোট্ট কিশোরী,
ভিক্ষের থালা ঘোরে গাড়ীর জানালায় জানালায়,
বাসের ভীড়ে ঘামে ঘেমে পিষ্ট হয় মানুষ,
রিকশার বেল বাজে টুং টাং, হর্ন বাজে কর্কশ সুরে।
এ নগরে পৃথিবী এই এত টুকুই,
এখানে কেউ জানেনা রডডেন্ড্রন ঝোপ কেমন হয় দেখতে,
কেউ খবর রাখেনা কবে নৌকা বাইচ হবে,
বাতাসা, মুড়কী, কদমা কোথায় মেলে।
এ নগরে মানুষের আশা বাতাসে মিলায়,
হাহাকার দুকরে মরে পরিচিত দেয়ালে,
এখানে প্রতিদিন পৃথিবী ছোট হয়ে যায়,
তারপরও প্রতিদিন এ নগরে মানুষ বাড়ে,
সবুজ ছেড়ে দলে দলে মানুষেরা কংক্রিটের জঙ্গলে ভীড় করে,
প্রতিদিন নতুন শিশুদের জন্ম হয় অজানা প্রত্যাশায়,
ঘর্মাক্ত রমনে একাকার হয় নারী পুরুষেরা,
ক্ষুধায় কেউ দেহ বেঁচে, কেউ পুরোন কাগজ ঘাটে,
পাচতারা হোটেলে কেউ উদ্দাম ডিস্কোতে মাতে,
মাইকে গান বাজিয়ে বিয়ে হয় পাড়া ওপাড়ায়,
ছোট্ট পৃথিবীর মাঝে মানুষেরা আরো ছোট হয়ে যায়।