গত বছর শাহ আহমদ শফী নারীদেরকে তেতুলের সাথে তুলনা করায় সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। ১৩-ই জুলাই ২০১৩ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাওলানা শফীর এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। কারণ সমাজের সার্বিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের অবস্থান পাশাপাশি। তাছাড়া সন্তান উৎপাদন, লালন-পালনে নারীর অবদান পুরুষের তুলনায় কয়েক গুণ বেশী। সুতরাং নারী সমাজকে নিয়ে এমন মন্তব্য অপ্রীতিকর, অগ্রহণযোগ্য।
একটি দেশের সংস্কৃতি দ্বারাই মূলত ঐ দেশের মানুষের মন-মনন নিয়ন্ত্রিত হয়। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ায় সমাজবিজ্ঞানের থিউরি(theory) অনুযায়ী শক্তিশালী দেশের সংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে জেঁকে বসছে। এই বিজাতীয় সংস্কৃতির খারাপ দিক আমাদের সংস্কৃতিকে যেন অপসংস্কৃতিতে পরিণত করতে না পারে তা দেখভালের দায়িত্ব আমাদেরই।
তেতুল-তত্ব নিয়ে সমাজের উচু মহল থেকে সাধারণ পর্যায় পর্যন্ত আলোচনা-সমালোচনা জনসচেতনারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু বিদেশী অপসংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সংস্কৃতির যে বারোটা বাজছে তা নিয়ে যেন কারও কোন মাথা-ব্যথা নেই।
মণীষীদের বক্তব্য অনুযায়ী অর্থ এবং যৌনতা মানুষের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা স্বরুপ। আজ সমাজে যে তাল-গোল পাকানো সংস্কৃতি বিদ্যমান তা যৌনতাকে উস্কে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বিজাতীয় সিনেমা, নাটক বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমা, সিরিয়াল আজ আমাদের সংস্কৃতিকে গিলে খেতে শুরু করেছে।
হিন্দি সিনেমা আজ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে অশ্লীলতা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যা আমাদের যুব সমাজকে করছে বিভ্রান্ত। তারা নারীকে একটি যৌন জীব ছাড়া আর কিছুই মনে করে না। যে কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ধর্ষণ, খুনের ঘটনা । শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা কেউই ছাড় পাচ্ছে না। এই মানবতা বিবর্জিত কামুক দৃষ্টির গ্রাস থেকে।
এদিকে ভারতীয় সিরিয়াল আমাদের মা-বোনদেরকে ঘোরের মধ্য রেখেছে। সংসারে কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, খুন, পরচর্চা, পরকীয়ার মতো ঘৃন্য অপরাধ আমাদের সমাজকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে দাড় করিয়ে দিচ্ছে।
আর এই বিজাতীয় অপ-সংস্কৃতির সিংহ ভাগই আসছে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। সমাজে নারী আজ লাঞ্ছিত, অপমানিত, সংসারে জ্বলছে অশান্তির আগুন। তাই তেতুলতত্ব তথা নারীকে যৌন জীবে পরিণত করার জন্য যে মাধ্যমটি মূলত দায়ী তা হলো স্যাটেলাইট।
স্যাটেলাইটের অবশ্যই ভালো দিক আছে। তবে সামাজিক অবক্ষয় রোধে এসব অশ্লীল যৌন সুড়সুড়ি দায়ক সিনেমা, সিরিয়াল বিশেষ করে পর্ণোগ্রাফির অবাধ বিস্তার রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি । আর এ দায়িত্ব সরকারের এবং তা সমাজে সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করাও সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
তবে হ্যা আমাদের সচেতন শিক্ষিত সমাজেরও এই ধ্বংসাত্নক অপসংস্কৃতি রোধে দল, মত নির্বিশেষে সকল স্বার্থ ভুলে সরকারের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ৩:২৭