somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগদ্য: বন্ধুহীন শহরে

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


০৮০২২০১৪-০১
আমি এক শীতল ভোরে কুয়াশার পথ আঁকছিলাম আর তুমি জানালে ঘুমের ছবি আঁকছো, দৃশ্যের ভিতর বাহির আটকে দিচ্ছে তোমার দৃষ্টি। আমাদের কি মিল! নিদারুণ কুয়াশাপাত, হিমেল হাওয়াদের সঙ্গতা আকাশের নিঝুম কান্না হয়ে আছে। দুচোখের পাতায় আটকে আছে অনেকদিন না দেখা ভোর— দৃশ্যান্তর ভেদ করে অদৃশ্যে হারানো। আমার কোন বন্ধুহীন শহর ছিলো না—অথচ আজকেই জানলাম জন্মাবধি রক্তের ভিতর বয়ে যাওয়া শহরে আমার কোন স্বজন নেই। শহর ও কি তাহলে বদলে যায় দেখার ভুলভাল কৌশলের কাছে। এইসব দৃশ্য দেখে আমার ঘুম আসে না—সুরমা মরে যাচ্ছে তার বিগত যৌবনের মত, কীনব্রীজ ঝুলে আছে ঝুলেই আছে সুরমার হাহাকার সাথে নিয়ে। এই শহরের ভিতর বাহির আমি চিনতাম—কেবল মানুষগুলো চিনি নি কোনদিন। বন্ধুরা এখানে অচেনা হয়ে উঠে হঠাৎই, নিকটজন দূরের গ্রহের মত প্রতিবেলা সরে সরে যায়। যে ছবি বুকে নিয়ে আমার নিঃশ্বাস ফেলা সে ছবি ম্লান হয়ে গেছে হঠাৎ কোন বনেদি অহমিকায়। কারো চোখের ভিতর মায়া নেই, সকলি মায়াময় ভ্রান্তি।

তুমি বললে এতো ইমোশন ভালো না। আমি কি ইমোশনের কাঙ্গাল নাকি। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আমিও পানবিড়ি খাই, কত চেনা অচেনা লোক দেখি, কই কোনোদিনই তো ইমোশনাল হয়ে উঠি নি, তবে আজকে কেনো এইসব আজগুবি কথাবার্তা। যে যায় সে চিরদিনই যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। দৃশ্যের ভিড়ে কিছু কিছু দৃশ্য চোখবন্দি হবে না এ আর নতুন কি। আর কে না জানে সময় এক মায়াহরিণী, কেবল দৌড়েই তার মুক্তি।

কত আপনজন ছিলো একদিন এখানে, দূরগত তারাদের মত আমারও একি হাল এখন। মুঠোভর্তি শূন্যতা নিয়ে ফোনবুক সার্চ দিয়ে দেখি এ এক আজব শহরে আমি নেমেছি, মৃত্যুর নীরবতা পায়ে পায়ে, লোকেদের মুখের মানচিত্র একদম বদলে যাওয়া কোন বিবর্তনের মত। আশপাশ, প্রতিবেশ, দৃষ্টি ও দৃশ্য সকলি অচেনা—কেবল আমিই পুরনো স্মৃতি ঘেঁটে আহত ও রক্তাক্ত হই।

একদিন জানবো হয়ত যে সকল বোধের নির্মাণ আমারও হয়েছিলো, তারা সব মেকি, অহঙ্কারি ভ্রান্তি ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু আমিতো জানিই, মানুষ জন্মগতই ছন্নছাড়া, বেহিশেবি এবং স্বার্থপর। স্বার্থের ঠুলি খুলে দেখো, প্রতি স্তরে লিখা আছে দগদগে রক্তপাত; প্রাচীন পুরাণ।

একা একা, খুব একা আমি আমি এই শহরে চলাচল করি, সাবধানে, যেনো ভুলেও কোন মুখ না দেখতে পারি, আমি মুখোশ দেখতেই বরঙ পছন্দ করি, যেহেতু মুখের কোন স্থায়ী আদল আমি মনে করতে পারি নি কিংবা যাদের মুখ আমি অবয়ব দিয়েছিলাম তারা সকলি মুখোশ হয়ে গেছে এখন। তাদের একজন আবার নতুন মুখোশ পরে আমাকে চিনাতে আসে আমার পুরনো শহর, ধূলিময় রাস্তা আর কৈশোরিক ফানুসময় দিনগুলো। আহা কি মায়া—সেইসব পুরনো সময় পাঠ করি, দিস্তা দিস্তা কাগজের সাধ্য ছিলো না এসব ধরে, অথচ এখন এক পাতাতেই কুল পাই না।

পথ দীর্ঘ যাত্রার। পিছনে কে এলো গেলো এসবে কিছু যায় আসে না ঠিকই, কিন্তু কিছু পদচ্ছাপ, কিছু পদাবলি মনের মুকুরে থেকে যায়, হঠাত আনমনে অবেলায় ডেকে যায়, ডেকেই যায়। যখন পাহাড়ে ঊঠেছিলাম তখন কি জানতাম এই পাহাড় একদিন থাকবে না আর এর স্মৃতি আমাকেও কাঁপাবে আহত করবে আমূল, আর পাহাড়ের খাঁজে আটকে যাওয়া তোমার মায়ামায়া চোখের দৃশ্যে আমারো মৃত্যু হবে। কিংবা যখন সুরমার তীরে হেঁটেছি, তিরতির কাঁপিয়েছি সুরমার চিকচিকে বালুকণা, তখন কি বুঝেছিলাম—দীঘল স্বপ্নখানি আমারো বিগত যৌবনা নারীর কান্না হয়ে উঠবে কোনোদিন। স্বপ্ন মূলত ভ্রান্তি, ভ্রম। আর এর নামি মায়া। মায়া স্বপ্নের চারপাশেই লেগে থাকে; রাঙতা কাগজের মত, হারানো শৈশবের মত।

কে বলেছে জীবন পূর্ণতা পায় না। জীবনের পূর্ণতা অনেকভাবেই আসে। আর যেহেতু জীবনের কোন স্থায়ী আবাস আমরা করতে পারি না, তাই এর রূপরেখা বাকবদল হয়ই, হতে বাধ্য, তাই আমরা মিছে আফসোস করি জীবন অপূর্ণ। মানুষের বদলে যাওয়া মুখ, সে মুখের অচেনা দৃশ্যের ভিতর পুড়ে যাওয়ার ভয়, তাদের আহামরি বেশভূষা, আদতে আমাদেরকে জয়ের নেশায় দৌড়াতে শেখায়, এটা এমন একটা দৌড় প্রতিযোগিতা যে এর প্রস্তুতিনামা রক্তের ভিতর এমনিতেই লিখা হয়ে উঠে, আমাদের দগদগে রক্তস্রোতের ভিতর।

যে কথা ভেবেছি অনেকদিন ভুলে যাবো তোমাদের প্রিয় শহর, প্রিয় শাহরিক চঞ্চলতা, আসলে কি ভুলে যাওয়া যায়। এই যে লিখছি এ তো ভুলে যাওয়ার খেদ নয়, বরঙ মনের মণিতে জমে উঠা দীর্ঘ যাতনায়, দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী মনে রাখারই অন্তহীন প্রয়াস। ভুলে যাই প্রিয় সুরমা নদী, ভুলে যাই প্রিয় রোদ, ফুলের বারুদ। । ভুলে যাই বন্ধুগণ, মনে রেখোনা একদিন এ নগরে আমিও হেঁটেছি তোমাদের পায়ে পায়ে, বাতাসের পৃষ্ঠাতে এখনো ধূলিধূলি স্মৃতি, খুলে দেখো পেয়ে যাবে দীর্ঘদীর্ঘ দিবস রজনীর হাহাকার, বরণোন্মুখ ইতিহাস।

প্রিয় রোদ লিখেছে—we are eagerly waiting for you, welcome.

উত্তরে লিখেছি--I am trying to forget all the relationship and relationship makes to breakdown. Every relation has its expiration. I think, me out of my time period to keep up the relation which surrounds me. Or I am a great misfit.

প্রিয় ফুল লিখেছে—Welcome friend, we are happy to your return. বদলে একটা হাহাকার ছড়িয়েছি শুধু। Thanks

প্রিয় ধূলি লিখেছে—পুরনো স্মৃতি খুলে দেখি পলেস্তারার চাপা পড়া স্তূপে তুমিও ছিলে একদিন। But I have forgot everything.

প্রিয় আকাশ লিখেছে—Time ruins everything, everything you made, everything you kept, you memorized, but only time will remember the past for our betterment or nostalgic remembrance.
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×