আর্জান্টিনা-নাইজেরিয়া ফুটবল ম্যাচের আয়োজক(স্পন্সর) বেক্সিমকো গ্রুপ। আমাদের হাই অফিশিয়াল কর্তারা আমাদের একটা নোটিশ দিয়ে আগেই জানিয়েছিলেন-আমরা কারা কারা খেলা দেখতে আগ্রহি? আমরা কয়েকজন সিদ্ধান্ত নেই অন্তত প্রাক্টিস ম্যাচ দেখবো। কিন্তু যাতায়ত এবং দুরত্ব জনিত কারনে ফতুল্লা স্টেডিয়ামে প্রাক্টিস ম্যাচ দেখার ইচ্ছাও পরিত্যাগ করি। হঠাত করেই সিদ্ধান্ত হয়-মেসী বাহিনী বংগবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রাক্টিস ম্যাচ খেলবে। আইটি ডিপার্ট্মেন্টে আমার কয়েকজন কলিগ জানালো-তারা কেউ কেউ আর্জেন্টাইন দলের প্রাক্টিস ম্যাস দেখতে যাবে, আবার বেশ কয়েকজন মার্সেন্ডাইজার, পিএম এবং সিএম লেভেলের অফিসারও আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়ার খেলা দেখার টিকেট কিনে ফেলেছেন।
আমরা ছয় বন্ধু হঠাত করেই সিদ্ধান্ত নেই-প্রাক্টিস ম্যাচ দেখতে যাবো। সেভাবেই আমরাও টিকেট সংগ্রহ করি। আমরা ছয় বন্ধু ২ টি মোটর সাইকেল চেপে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি লাঞ্চের পরপরই। গাবতলী পারহয়ে টেকনিক্যাল পৌঁছেই র্য্যাবের ইশারায় মোটর সাইকেল থামাই। কোথায় যাবো? এক মোটর সাইকেলে তিনজন কেন? হেলমেট নাই কেন?
বলি-আর্জেন্টিনার প্রাক্টিস ম্যাস দেখতে যাচ্ছি।
টিকিট দেখালাম।তারপর পুরা দেহ তল্লাশী! খুবই লজ্জার কথা-এলিট ফোর্স আমাদের লজ্জা স্থানেও হাত ঢুকিয়ে দেয়! মন্দ কিছু আবিস্কার করতে নাপেরে হেব্বী প্যাদানী-তিনজন কেনো মোটর সাইকেলে চড়েছি?
বলি-"ছোট চাকরি করি, পয়সা বাঁচাতে"। তাঁদের মন গলেনা-অনেক ধরাধরি করারপর আমাদেরকে ছেড়েদিল-এক মোটর সাইকেলে দুই জনের বেশী যেতে পারবোনা শর্তে! দুই জনকে একটা মুড়ির টিন বাসের পেটে চালান করে দিয়ে আস্তে করে বললাম-“কল্যাণপুর যাইয়া নাইম্যা পরিস, আমরা আইতাছি”। বাধ্য হয়ে চার জন মোটর সাইকেলে কল্যাণপুর পৌঁছে বাস যাত্রী দুই বন্ধুকে নিয়ে রওয়ানা করি-সেই আগেরমতই প্রতি মোটর সাইকেলে তিন জন করে।
গণ ভবনের কাছে আসতেই আবার সার্জেন্টের হাত ইশারা। থামলাম। যা বলার বলি-কিন্তু সার্জেন মোস্তাক সাহেব ছাড়বেননা! দুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক কনস্টবল ঈশারা করে আমাদের একজনকে কাছে ডাকলো। দুইশ টাকা চাইলো-নাহলে থানায় নিয়ে যাবে! থানার কথা শুনেই আত্মারাম খাঁচা ছেড়ে যাবার অবস্থা! দিলাম দুইশ টাকা! কনস্টবল স্যারে উপদেশ দিলেন-“সাবধানে চালাইবেন-টাকা পয়সার চাইতে জীবনের মুল্য অনেক বেশী”! এক বন্ধু শব্দ করেই বলে-“তোর মাথায়া ঠাডা পরবে ঠোলার বাচ্চা ঠোলা”।
আবার ধরা খাইলাম সংসদ ভবনের সামনে। আমাদের সামনেও একটা মোটর সাইকেলে তিনজন। ওদেরকে পুলিশ থামতে বললেই বলে-ছাত্র লিগ, ন্যাম ফ্লাটে যাবো, এম্পি আসলাম ভাইর লোক। আমরাও সাহস করে বলি-“ছাত্র লিগ। এম্পি মুরাদ জং ভাইর বাসায় গেছিলাম”! পুলিশ ভাই স্বগক্তি করে বললো-সব হালায়ই এম্পি মিনিস্টার দেহায়”! মতস ভবনের সামনে আবার ধরা খাই। এবারও "ছাত্র লিগ..."-বলেছি। কিন্তু ত্যাদোর সার্জেন্ট ছাড়েনা! এবার কনস্টবল স্যারের মাধ্যমে রফা হয় একশ টাকায়!
পল্টনে হিমু ভাইর অফিসের গ্যারাজে মোটর সাইকেল রেখে হেব্বী নাস্তা খাই ক্যাফে ঝিলে। স্টেডিয়াম এলাকায় গিয়ে দেখি-মহা প্রলয়! দর্শক তেমন নাই-চারিদিকে শুধু পুলিশ-র্যাব! ভাবখানা এমন যেনো এখনই যুদ্ধ শুরু হবে!
অনেক চেক ফেকের পর ঢুকি স্টেডিয়ামে। মেসীকে দেখাতো দূরেরকথা অতদু্র থেকে বুঝেছি-স্টেডিয়ামের মাঝখানে অতগুলো খেলোয়াড়ের মধ্যে কেউ একজন মেসী হবেই!
টাকারও শ্রাদ্ধ করলাম-উপরি হিসেবে সারা রাস্তায় র্যাব-পুলিশের ধাতানী খাইলাম!