somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবুজের উত্তরীয় জড়িয়ে শেষ হল যে ভ্রমণ বিরিশিরি, সুসং দূর্গাপুর, গজনী, লাউচাপড়া

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শনিবার, ২৬-১১-২০১১ আগ্রাসি, বানভাসি সবুজে মন প্লাব । আহা আবার কবে যে যাব ? সবুজ চাদরে নিজেকে জড়াব । নিসর্গের মাঝে নিজেকে হারাব ।
" ওই তো অঢেল সবুজের সমারোহ / পাহাড়ের গায়ে হালকা নরম রঙ;
রোদ্দুরে শুধু চনমনে বিদ্রোহ, / রোদ্দুরে শুধু দিকবিজয়ীর ঢং ।
রোদ্দুরে।।
ছোটে রোদ্দুর - সবুজের ফাঁকে ফাঁকে হরিণের মত "
২#



কর্ণঝরা (জামালপুর) নামটাই কেমন রিনিঝিনি অনুভূতি ছড়ায়, তাই না ? আমার দৃষ্টি যদি আমার প্রতি শেষমেশ প্রতারণার ক্রূর দৃষ্টি না হানে, সেই ভরসায় মস্তিস্কের পাঠানো সিগন্যাল আমাকে বলছে - কোন এক সাইনপোস্টে আমি নামটা দেখেছিলাম কর্ণজোড়া । তবে প্রথমটাই তো বেশি ভাল্লাগে, তাই না ?

কর্ণঝরায় ওয়াচ টাওয়ার (আরো স্পেসিফিক্যালি বললে জায়গাটা লাউচাপড়া) মিনি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত, ফলে সেটা গজনীর ওয়াচ টাওয়ার থেকে বেশি উঁচু । সবগুলো সিড়ি ডিঙ্গিয়ে টাওয়ারের সবচে উঁচু তলায় উঠে নিজেকে মনে হল পৃথিবীর উপরে আমি !! যতদূর চোখ যায় ততদূর সবুজের তেপান্তর।
৩#



নই ন্যূনতম শ্রবণযোগ্য কন্ঠেরও গায়ক, তাতে কী ? এই লাইনটা লিখার আগে “নই সুন্দরীতমা, তাতে কী” – কোন একটা লেখার এমন শিরোনাম হঠাত মনে পড়ে যাওয়া এই প্যারার সূচনা নির্ধারণ করে দিয়েছে । সে যাকগে, বেসুরো গলা নিয়েও লাউচাপড়ার ওয়াচ টাওয়ারে গাইতে ইচ্ছে করছিল সোলসের সেই গানঃ
ভালবাসি এই সবুজ মেলা / প্রাণ জুড়ানো তার শ্যামল ছায়া;
মন মাতানো বাঁশির সুরে / প্রিয় লোকালয় আসে ফিরে ।

কিংবা অন্য গানের এই দুটি লাইনঃ
এই অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁয়ে / নির্ভয়ে নীলাকাশ রয়েছে নুয়ে ।

জায়গাটা ছিল ভ্রমণে ঘুরে দেখার শেষ আইটেম । কর্ণজোড়ায় পৌঁছালেই সেখানকার স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে জায়গাটা দেখিয়ে দেবে। ভ্রমণ শেষে আমাদের দলের একজন কথাপ্রসঙ্গে জানাল যে সে ওয়াচ টাওয়ারের টিকেটে লাউচাপড়া কথাটি দেখেছে । সে যাই হোক, এখানে যাবার আগে ঘুরে এসেছিলাম গজনী (শেরপুর) । শেরপুর এভাবে আমরা ভালই ঘুরেছি । সময়াভাবে মধুটিলা মিস হল । গজনীর কিছু ছবি ।
৪#


৫#



বৃত্তবন্দি চঞ্চলা হরিণ ।
৬#



গজনী দেখা শেষ করে কর্ণজোড়ার প্রস্তাব তুলতেই মাইক্রোর ড্রাইভার বলল, শেরপুর ফিরে গিয়ে তারপর আনুমানিক ঘন্টা দেড়েক মত লাগবে কর্ণজোড়া যেতে । পাশে দাঁড়ানো এক স্থানীয় বললেন, গজনী থেকেই হাতের ডানে গজনী পিকনিক স্পটকে রেখে সোজা ১৪/১৫ কিমি “টনটনা” রাস্তা কর্ণঝরা স্পটে চলে গিয়েছে । আরে অল্প রাস্তাই তো । হুররে বলে দে ছুট । টেরটা পেলাম কিছুদূর পর । একটু পরে রাস্তা সরু হয়ে শুধু মাইক্রো চলবার মত হয়ে গেল । তারও একটু পরে মাটির রাস্তা, অবশ্য টনটনাই বটে । তারপরেরও একটু পরে নির্জন বনের ভেতর দিয়ে চলেছি আমরা । চলছি তো চলছি । একটু ভয়ই হতে লাগল বটে । আর রাস্তাও এরকম যে এখন ফিরে যেতে হলে ব্যাক গিয়ারে পিছন দিক করে গাড়ি চালিয়ে ফিরতে হবে । যাক, আবার লোকালয়ের দেখা । স্বস্তি । হঠাত একটা কালভার্টের এমন অবস্থা যে নামতে গেলে গিয়ার বক্স আটকে যায় । গাড়ি নামতে গেলে প্রচুর মাটি লাগবে । স্পট না দেখে ফিরে যেতে মন চাইছিল না আর হাতেও বাড়তি সময় নেই ঘুরপথে আসবার । আশে পাশে কোদালের খোঁজ করা হল । স্থানীয়রা বাসা থেকে দুটি কোদাল এনে দিলেন । কাজ হল শেষমেশ ।

গজনী আর কর্ণজোড়া – হাতে সময় থাকলে দুটিই ঘুরে আসুন । গজনীতে সবুজের প্রাচীর ।
৭#



শুক্রবার, ২৫-১১-২০১১
এই ভ্রমণ কিন্তু শুরু হয়েছিল বিরিশিরি/সুসং দূর্গাপুর (নেত্রকোনা) হয়ে বিজয়পুরের সেই গোলাপি আর সাদা মাটির পাহাড়, সবুজ লেকের উদ্দেশ্যে । সোমেশ্বরী নদীর তীরে জায়গায় জায়গায় বালু কিছুটা খুড়লেই স্বচ্ছ পানি ।
৮#



সেখানে পৌঁছে বিস্মিত হওয়া ছাড়া আমাদের আর উপায় ছিল না । গোলাপি আভা ছড়িয়ে পাহাড় হাসছে ।
৯#


১০#



কত রঙবেরঙের মাটি রে ।
১১#


১২#



সেই লেক ! সেই লেক !! ইচ্ছে হচ্ছিল লাফ দিয়ে লেকের মাঝখানে নেমে যাই । কিন্তু সাঁতার যে ............/:)/:)
১৩#


১৪#



এপারে নদী, ওপারে পাহাড়ের রেখাচিহ্ন
১৫#



নিচের ছবিটা রামকৃষ্ণ আশ্রম । সাধু জোসেফের ধর্মপল্লীর ছবি আর দিলাম না । সুন্দর, সো মিস করবার দরকার নেই, ঘুরে নেবেন
১৬#



ডিজিটাল চোখ ঃ
সনি w১৭০, দশ মেগাপিক্সেল ৫x অপটিক্যাল জুম ক্যামেরা ।

পথ ও রাহা খরচ বিষয়ক কিছু পাঁচালি ঃ
ঢাকা-ময়মনসিংহ-বিরিশিরি-ময়মনসিংহ-শেরপুর-গজনী- কর্ণজোড়া-ময়মনসিংহ-ঢাকা অর্থাৎ আমাদের পুরো পথ মাইক্রোতে ঘুরেছি। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ মাইক্রোর জন্য গুণেছিলাম ৩৫০০/-। ড্রাইভারকে খাওয়ানো আলাদা । ময়মনসিংহ থেকে বিরিশিরি আর শেরপুর এই দুদিন শুধু মাইক্রো ভাড়া ছিল ৬৫০০/- এবং এর বাইরে গ্যাস/তেল ও ড্রাইভারের খাওয়া ছিল আলাদা খরচ । বিরিশিরি/সুসং দূর্গাপুর এসে নৌকায় সোমেশ্বরী নদী পাড়ি দিয়ে রিক্সা বা মটর সাইকেল যোগে বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড়, সংলগ্ন লেক,ও রাণিক্ষং ইত্যাদি আরো তিন চারটি স্পট । তিনটা হোন্ডা, খরচ লেগেছিল ১১০০ টাকা। ময়মনসিংহে একজনের রেফারেন্সে ডর্মিট্রিতে ফ্রি থাকার সুযোগ পাওয়ায় আমরা ময়মনসিংহ থেকে বিরিশিরি আর শেরপুর মুভ করেছি । যদি খরচা দিয়েও দুদিন কোন হোটেলে থাকতাম তাহলে হয়ত আমাদের জনপ্রতি আনুমানিক পাঁচ হাজার টাকা পড়ত ।

যারা বাসে অথবা ভেঙ্গে ভেঙ্গে টুর দিতে চান কিংবা স্পটের কাছাকাছি রাত যাপন করতে চান, তাদের অনুরোধ করব এই ব্লগে “টাইপ” ট্যাবে কন্টেন্ট সিলেক্ট করে সুসং দূর্গাপুর/বিরিশিরি/গজনী/শেরপুর লিখে অনুসন্ধান দিতে । অনেক পোস্ট পাওয়া যাবে এই ব্যাপারে ।

ও হ্যা, সময়ের হিসেবটা । আমরা বৃহস্পতিবার রাত ৯।৩০ এ মাইক্রোবাসে রওনা দিয়েছিলাম । ফেরার দিন রোববারে সকাল দশটায় অফিস ধরেছি । মাইক্রোবাস একেবারে অফিসের দোরগোড়ায় নিয়ে ঠেকাতে হয়েছিল ।

## আগ্রহীদের সুবিধা হতে পারে ভেবে আমাদের জাতীয় ওয়েব পোর্টাল (http://www.bangladesh.gov.bd) থেকে কিছু লিঙ্ক

১। বিরিশিরির জন্য

http://www.dcnetrokona.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=57

২। লাউচাপড়ার জন্য
http://www.dcjamalpur.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=57

৩। গজনীর জন্য
http://www.dcsherpur.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=57
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩২
৩৩টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×