somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তাক্ত মধ্য ফেব্রুয়ারীর স্মৃতি

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ মধ্য ফেব্রুয়ারী।
১৯৮৩-র এই দিনে শিক্ষাভবন অভিমুখে আয়োজিত মিছিলের ঊপর পুলিশের ট্রাক চালিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয় জাফর, জয়নাল, আইয়ূব, কাঞ্চন, দীপালী সাহা সহ নাম না জানা আরো বেশ কিছু ছাত্রকে। বছর দুয়েক পর এই মধ্য ফেব্রুয়ারীতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হত্যা করা হয় রাউফুন বসুনিয়াকে।

নব্বুই-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভুমিতে বেড়ে ঊঠার সময় পত্রিকার পাতায় স্মৃতিচারন থেকেই জেনে ছিলাম স্বৈরশাসনের সূচনালগ্নের সেই প্রতিবাদ মুখর উত্তাল দিনগুলোর কথা। ভালোবাসা দিবসের উন্মাদনায় আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে সেই প্রতিবাদী সময়ের স্মৃতি, হারিয়ে গেছে সেই “রক্তাক্ত মধ্য ফেব্রুয়ারী” শব্দগুচ্ছটি।

সেই সময়ে স্মৃতি ছোঁয়া একটি কবিতা।
কবিতা ও কবির নাম আজ আর মনে নেই।
শিমুল মুস্তাফার কন্ঠে আবৃত্তিতেই ফিরে পেয়েছি এই পুরোনো কবিতা।


মধুর কেন্টিনে যাই
অরুনের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে
বসু, তোমাকে মনে পড়ে যায়।

তোমার সেই সদা হাসিমাখা ফুল্ল ঠোঁট,
উজ্জ্বল চোখের দ্যুতি
সারাক্ষন চোখে চোখে ভাসে
বুঝি এখনই সংগ্রাম পরিষদের মিছিল শুরু করার তাগিদ দিবে তুমি

ওই তো, ওই তো সবার আগে তুমি মিছিলে
কি সুঠাম তোমার এগিয়ে যাবার ভঙ্গিমা
প্রতিটি পা ফেলছো কি দৃঢ় প্রত্যয়ে
কি উচ্চকিত তোমার কন্ঠের শ্লোগান
যেন আকাশ ফেটে পড়বে নিনাদে
হাত ঊঠছে হাত নামছে
মাথা ঝুকছে ঘাড় দুলছে চুল উড়ছে বাতাসে
ওই তো, ওই তো আমাদের ঐক্যের পতাকা হাতে এগিয়ে যাচ্ছ তুমি

মধুর কেন্টিনে যাই
নিত্য নতুন প্রোগ্রাম, মিছিল সভা বটতলা
অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দুর্জয় শপথ
সামরিক জান্তার ছোবল থেকে
শিক্ষাজীবন, শিক্ষাঙ্গনের স্বায়ত্বশাসন রক্ষার অঙ্গীকারে
ডাক দেই দেশবাসীকে

তোমারি মত নিরাপত্বাহীনতায়
প্রতিটি ছাত্রের দুর্বিষহ জিম্মীজীবন এখনো এ ক্যাম্পাসে
হলে গেটে গেটে পড়ে থাকে ভংকর বিস্ফোরন্মোখ তাজা বোমা
প্রতিদিন চর দখলের মত হল দখলের হিংস্র মহড়া
গুলি ও বোমা ফাটার শব্দ
এখনো আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ
এ অস্ত্রের উৎস কোথায়?

মধুর কেন্টিনে যাই
প্রতিদিন আমাদের জীবন হাতের মুঠোয়
প্রতিদিন হামলা রুখতে হয়
বসু, আজ সেই প্রতিরোধের সারিতে তুমি নেই
আজ বড়ই অভাব অনুভব করছি তোমার

শিক্ষাভবন অভিমুখে সামরিক শাসন ভাঙ্গার প্রথম মিছিলে তুমি ছিলে
রক্তাক্ত ১৪ই ফেব্রুয়ারীর কাফেলায় তুমি ছিলে
৪ঠা আগস্ট সশস্ত্র দুবৃত্তদের কবল থেকে
আমাদের পবিত্র মাটি রক্ষা করার সম্মুখ সমরে তুমি ছিলে
এমন কোন ধর্মঘট, হরতাল, ঘেরাও, মিছিল আন্দোলন নেই যে তুমি ছিলে না

সেই নৃশংস ঘাতক রাতেও
তুমি অস্ত্রধারীদের দূর্গের দিকে অবিচল যাত্রা অব্যাহত রেখেছিলে
ঘাতক বুলেট ভেদ করে গেছে তোমাকে
কিন্তু তুমি পিছু হটনি
তুমি বীর, তুমি সাহসী যোদ্ধা, তুমি সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান
যুগে যুগে সংগ্রামীদের অফুরান প্রেরণা

মধুর কেন্টিনে যাই
অরুনের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে
বসু, তোমাকে মনে পড়ে যায়।

কাউন্টারের সামনে কতদিন
তোমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খেয়েছি
কতদিন তুমি আমাকে চায়ের পয়সা দিতে দাওনি
কতদিন চায়ের সঙ্গে একটি সিঙ্গারা বা কেকের আবদার করেছ
কতদিন তোমার সঙ্গে খোশগল্প হাসিঠাট্টায় মেতে উঠেছি
বসু, আজ সব কথা মনে পড়ে যায়।

রিপার বিয়েতে তুমি বলেছিলে
অ্যাকশনে আপনার আর আগে থাকার দরকার নেই,
আমরা তো আছি
বসু, তুমি রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে সে কথা প্রমান করে গেলে
বসু, তুমি আমার শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার একটি রক্তকরবী বৃক্ষ

মধুর কেন্টিনে যাই
বসু, তোমাকে মনে পড়ে যায়।

তোমার মৃত্যুর সেই নৃশংস ঘাতক রাত্রিতে
আমি ছিলাম ঢাকার বাইরে
তোমার গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশ আমি দেখিনি
তোমার মৃত্যুর খবর শুনে
বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলো মন
তবু সেই রাত্রেই আড়াইশত মাইল দূর থেকে
সঙ্গে সঙ্গে রওয়ানা দিয়েছিলাম
তোমার হত্যার প্রতিশোধ নিতে
তোমার খুনীদের রক্তে হাত রাঙ্গাতে

বসু, আমরা বহুবার তোমার হত্যার প্রতিশোধ নেবার শপথ গ্রহন করেছি
অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে, শহীদ মিনারে, বটতলায়, বায়তুল মোকারমে,
সারাদেশ তোমার হত্যার বদলা চায়
কিন্তু এখনো তোমার খুনীরা প্রকাশ্যে সগর্বে ঘুরে বেড়ায়
এখনো তোমার ঘাতকেরা ক্ষমতার কালো কেদারায় বসে
রাইফেল তাক করে আছে আমাদের প্রতি

বসু, আমাদের শিক্ষানীতি এখনো বদলায়নি
সামরিক খাতে ব্যয় শিক্ষাখাতের চেয়ে আরো বেড়েছে
নতুন নতুন ক্যান্টনমেন্ট তৈরীর পরিকল্পনা হলেও
সংস্কারের অভাবে জগন্নাথ হলের জীর্ন ছাদ ধ্বসে
তোমার অনেক বন্ধু মারা গেছে
এখনো হলে হলে মেধাভিত্তিক সিট বন্টন চালু হয়নি

বসু, তুমি এসবের পরিবর্তন চেয়ে জীবন দিয়েছ
কিন্তু আমরা এখন তোমার একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে পারিনি
বসু, আমরা তোমার কাঙ্খিত লড়াই চুড়ান্ত করতে পারিনি
আমরা তোমার হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারিনি
আমরা এখনো অজস্র বসু হতে পারিনি বলেই...

মধুর কেন্টিনে যাই
বসু, তোমাকে মনে পড়ে যায়।
খুব মনে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:২৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×