১।
আজও সেই ভয়াবহ দুঃস্বপ্নটা দেখে জেগে উঠলেন সবুর মিয়া। বাবুল যা বলেছিল বিষয়টা তাহলে তাই! অন্ধকার না হলে দেখা যেতো— তার চেহারায় একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
সবুর মিয়া যে টাইপের দুঃস্বপ্ন দেখছেন— তার যায়গায় অন্য কেউ হলে ভয়েই আধমরা হয়ে যেতো, কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে তিনি তেমন একটা ভয় পেয়েছেন। অবশ্য এর একটা কারণও আছে। সবুর মিয়া ছোট বেলা থেকেই সাহসী প্রকৃতির মানুষ, তার উপর এতোবড় বাড়িতে অনেকদিন ধরেই একা একা বাস করছেন। স্বভাবতই অন্য আর-দশজন মানুষের তুলনায় তার সাহস কয়েকগুণ বেশি।
.
চিরকুমার সবুর মিয়ার কোন ভাই বোন নেই। অতিদূর সম্পর্কের কোন আত্বীয় স্বজনকেও কোন দিন দেখা যায় নি। সবুর মিয়া অবশ্য এসব নিয়ে কখনোই মাথা ঘামন নি। তিনি নিজে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন, বাঁকি ফ্ল্যাট গুলোও এতোদিন ভাঁড়া দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার— বছর খানেক ধরে তার বাসায় কোন ভাড়াটিয়াই টিকছে না। তিনি কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলেন— তার বাসাটা নাকি হন্টেড! তিনি কিছুতেই ভেবে পেলেন না— হঠাৎ কি এমন ঘটনা ঘটলো যে, হুট করে তার বাসাটা হন্টেড হয়ে গেলো? বিষয়টা নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই ভাবছেন তিনি। তার উপর এই ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের উপক্রম বিষয়টা নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে তাকে। এতোদিন তার মনে হয়েছে— তার ভাড়াটেরা মিথ্যা কথা বলছেন, কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে— ঘটনা সত্য। তার বাসাটা আসলেই হন্টেড, এবং তার কারণ এই বিকটদর্শন প্রাণীটা। সবুর মিয়ার কপাল কুঞ্চিত। তিনি অন্ধকারেই তার আঙ্গুলটার দিকে তাকালেন। কিছুই দেখা যাচ্ছে না, তবে তার মনে হলো আঙ্গুলটা তিরতির করে কাঁপছে!
.
ঘুম ভাঙ্গার পর স্বপ্নের কথা সাধারণত কারো মনে থাকে না, কিন্তু সবুর মিয়ার সবকিছু স্পষ্ট মনে আছে। সম্ভবত টানা এক সপ্তাহ ধরে একই স্বপ্ন দেখার কারণেই এমনটা হয়েছে। স্বপ্নটা এরকম— সবুর মিয়া যথারীতি ঘুমিয়ে থাকেন। হঠাৎ কোত্থেকে বিকট আকৃতির একটা পশু এসে তার ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুলটা কামড়ে ধরে। তিনি চমকে উঠেন, ভয়ে চিৎকার করার চেষ্টা করেন— তার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। তার নড়াচড়াও বন্ধ হয়ে যায়। তার মনে হয় তার সমস্ত শরির অবশ হয়ে যাচ্ছে— একটু পরেই তিনি মারা যাবেন। কিছুক্ষণ পর পশুটা তার আঙ্গুল ছেড়ে দেয়, তিনি জেগে উঠেন। তৃষ্ণায় তার ছাতি ফেটে যায়।
.
পশুটা যখন তাকে আক্রমন করে ঘুমের মধ্যেই ব্যাপারটা টের পান তিনি। ঘুম ভাঙ্গার পরেও আঙ্গুলটাতে প্রচণ্ড ব্যাথা থাকে। এই ব্যাথা দীর্ঘায়িত হয় দুপুর পর্যন্ত। আজ যখন ঘুম ভাঙ্গলো তিনি জেগে উঠে অন্ধকারেই বসে রইলেন, লাইট জ্বাললেন না। তার একটু একটু বুক কাঁপছে, গলা শুকিয়ে আসছে। বাবুলের কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে শয়তানটা নিশ্চই ঘরেই কোথাও ঘাপটি মেরে আছে। তিনি আঙ্গুলটায় হাত বুলালেন— ভেজা ভেজা লাগছে। নিশ্চই শয়তানটা রক্ত বের করে দিয়েছ! তার আঙ্গুলের রক্ত তাকে তেমন একটা বিচলিত করলো বলে মনে হলো না। তিনি অন্য চিন্তায় বিভোর। দুঃস্বপ্নের ব্যাপারটা নিয়ে তিনি দেশের বিখ্যাত প্যারানরমাল স্পেশালিষ্ট বাবুল আহমেদের সাথে কথা বলেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন তার কথা শুনে বাবুল হাসাহাসি করবে, কিন্তু তিনি যখন দেখলেন— সমস্ত ঘটনা শুনার পর বাবুলের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো— তিনি ভয় পেলেন। সমস্যার সমাধানে বাবুল তাকে একটা প্লান দিয়েছিলো, বলেছিল কাজটা তাকেই করতে হবে। আজ সে কাজ বাস্তবায়ন করার দিন। সবুর মিয়ার বুকটা ধুকধুক করছে, প্লান অনুযায়ী কাজটা তিনি করতে পারবেন তো?
আশা নিরাশার দোলাচলে মনটা কে ছেড়ে দিয়ে বালিশের নিচে হাত দিলেন তিনি। হাত দিয়ে এক মুষ্টি বালি বের করে আনলেন। বাবুলের ধারণা ভয় দেখিয়েই শয়তানটা চলে যায় না, কিছুক্ষণ থাকে— ভিকটিমকে পর্যবেক্ষণ করে। সুতরাং তাকে ঘায়েল করতে হলে এই কিছুক্ষণের মধ্যেই করতে হবে। সে সবুর মিয়াকে একমুষ্টি বালি দিয়ে বলেছিল— অন্ধকারেই এটা শয়তানটার গায়ে ছুঁড়ে মারতে হবে। আলো জ্বালানো যাবে না। শয়তানটা আলো সহ্য করতে পারবে বলে মনে হয় না। সবুর মিয়ার ধারণা বাবুল ঠিকই বলেছে। তিনি তার নিশ্বাসের শব্দ ছাড়াও ঘরের মধ্যে অন্য একটা অস্পষ্ট আওয়াজ পাচ্ছেন। তার ধারণা এটা শয়তানটার নিশ্বাসের শব্দ। মনে মনে শয়তানটা কোথায় ঘাপটি মেরে থাকতে পারে তার একটা মোটামুটি আন্দাজ করে বিসমিল্লাহ্ বলে বালি গুলি ছুঁড়ে মারলেন তিনি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিকট একটা চিৎকার শুনা গেলো। সবুর মিয়ার কলিজা হীম হয়ে গেলো শব্দটা শুনে। সে তাড়াতাড়ি লাইট অন করলো। বাবুল বলেছিলো— বালিগুলি শয়তানটার গায়ে পড়লে সে কাবু হয়ে যাবে, তখন আর সে কিছুই করতে পারবে না। সবুর মিয়া দেখলেন— বিকট দর্শন একটা যন্তু ফ্লোরে গড়াগড়ি খেতে খেতে দরজার দিকে এগুচ্ছে। তিনি আর দেরি করলেন না, ঝাপিয়ে পড়ে প্রাণপণে যন্তুটার গলা চেপে ধরলেন।
.
২।
অর্জুন সাহেব যখন শুনলেন গতকাল রাতে তার পোষা শয়তানটা হারিয়ে গেছে— রীতিমতো ভিরমি খেলেন তিনি। তিনি কিছুতেই ভেবে পেলেন না, এটা কিভাবে সম্ভব? প্রায় এক কোটি ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে বহুল পরিক্ষিত এই জিনিষ আমদানি করেছেন তিনি। অথচ এতো সহজে সেটা হারিয়ে গেলো! সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কিউরেটরের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। তার চোখ রক্তবর্ণ। তিনি গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন— বলো, ডেভিলটার কি হয়েছে? গতকাল তো তার অপারেশন ছিলো সবুর মিয়ার বাড়িতে। সেখান থেকে সে হারালো কি করে?
কিউরেটর মি: অর্জুনের দিকে একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। তার চোখেমুখে রাজ্যের ভয় নেমে এলো। সে মিনমিন করে বলল— স্যার, ডেভিল সেখানে ঠিকমতোই গিয়েছিল কিন্তু কোন এক বিচিত্র কারণে ফেরৎ আসে নি আর। আমি ভোর পর্যন্ত সবুর মিয়ার বাড়ির সামনে অপেক্ষা করেছি, সকালে বিভিন্ন ভাবে খোঁজ খবর করেছি— কিন্তু ডেভিলের কোন পাত্তাই পাই নি। এতোবড় একটা জিনিস কিভাবে হাওয়া হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার ধারণা আমরা ডেভিলকে যেখান থেকে এনেছিলাম সেখানেই সে ফিরে গেছে।
কিউরেটর কথাটা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই অর্জুন সাহেব তার টেবিলের উপর থেকে ঢাউস সাইজের পেপার ওয়েট টা তুলে কিউরেটরের কপাল বরাবর ছুঁড়ে মারলেন।
সঙ্গে সঙ্গে লোকটার মাথা ফেটে চৌচির হয়ে গেলো। মি: অর্জুন রাগে ফেটে যাচ্ছেন তখনো। তিনি গজরাতে গজরাতে বললেন— স্টুপিড! তুই জানিস তাকে আমরা যা ইন্সট্রাকশন দেই সে শুধু তাই ফলো করবে। তার নিজস্ব কোন ইচ্ছা স্বাধীনতা নেই। তারপরও তুই আমার সামনে বেকুবের মতো কথা বলার সাহস পাস কোথা থেকে?
দুইজন অফিস স্টাফ এসে কিউরেটরকে সরিয়ে নিয়ে গেলো। আরেকজন এসে একটা চিঠি দিয়ে বলল— বুড়ো মতো একটা লোক এসে দিয়ে গেছে। বলেছে, আর্জেন্ট।
অর্জুন চিঠিটা খুলতেই তার কপাল কুঁচকে গেল। কম্পিউটার কম্পোজ করা চিঠিটাতে কোন সম্বোধন নেই, এমন কি যে লিখেছে তার কোন নাম পরিচয়ও নেই। সে চিঠিটা পড়তে শুরু করলো—
“ শয়তানির যে খেলা তুমি শুরু করেছো তার শেষ করবো আমি। তুমি শুধু বসে বসে তোমার ধ্বংস দেখবে, কিচ্ছু করতে পারবে না। একটা সুখবর দেই— তোমার বহু সখের, বহু দামী ‘ইম্পোর্টেড ডেভিল' এখন আমার কাছে। এটা আর ফেরৎ পাচ্ছো না তুমি। ভালো কথা, জিনিসটা যে কথাও বলতে পারে ধারণাই করতে পারি নি। স্বীকার করছি— একেবারে খাসা জিনিস আমদানি করেছো! কিন্তু দুঃখের বিষয়— তোমার সব প্লানিং মাঠে মারা গেলো! তোমাদের মতো মানুষগুলার জন্য আফসোস হয়, নিজের বুদ্ধিবৃত্তি আর অর্থ বিত্ত যদি সঠিক পথে ব্যায় করতে তবে তোমার নিজের যেমন উপকার হতো তেমনি তোমার দ্বারা জাতীও উপকৃত হতো। ধিক্কার তোমাদের। তোমরা শুধু মানুষের ঘৃণাই কামাই করতে জানো, ভালোবাসা নয়।"
.
চিঠিটা যেমন হুট করে শুরু হয়েছিল তেমনি হুট করেই শেষ হয়ে গেলো। অর্জুন সাহেব দু'হাতে মাথা চেপে ধরলেন। এতোবড় বিপদ তার জীবনে কখনো আসে নি। আবাসন ব্যাবসার আড়ালে অর্জুন সাহেব আসলে একজন ভূমি দস্যু। এতোদিন জোর যবর দখল করে মানুষের জমি আত্মসাৎ করে ব্যাবসায় চালাচ্ছিলেন তিনি। ক্ষেত্র বিশেষে গুম-খুনের মতো চরম পন্থা ও অনুসরণ করতে হয়েছে তাকে। ভালোই চলছিলো— কিন্তু হঠাৎ বিষয়টা জানাজানি হবার পর তারউপর সরকারি বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসা শুরু হলো। বাধ্য হয়ে ব্যাবসায়ের অন্য পথ খুঁজতে হলো তাকে। খুঁজতে খুঁজতে “প্রজেক্ট ডেভিল" নামে একটা অদ্ভুত পথও পেয়ে গেলেন তিনি। সবদিক বিবেচনা করে তার মনে হয়েছে— খরচ একটু বেশি হলেও তার ব্যাবসায় সম্প্রসারণে এটাই সবচে' নিরাপদ এবং আধুনিক পন্থা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মোটেও তা নয়। ডেভিল প্রজেক্ট হাতে নেয়ার পর মাত্র পাঁচটা বাড়ি খালি করতে পেরেছেন তিনি। এরমধ্যে হাতে এসেছে মাত্র দুইটা। বাঁকি বাড়িগুলোর মালিকেরা যথেষ্ট ত্যাঁদড়। সহজে বাড়ি হাতছাড়া করবে বলেও মনে হয় না।
.
ডেভিল প্রজেক্টের প্লানিং ছিলো এরকম— ডেভিলের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন বাড়িকে হন্টেড প্রমান করে সেগুলোকে খালি করে ফেলা। হন্টেড বাড়ি কিনবে কে? সুতরাং বাড়ির মালিকেরা বাধ্য হয়েই সেগুলো মি: অর্জুনের কাছে বিক্রি করবেন এবং অর্জুন যা দাম দেবে বাড়ির মালিকেরা তাতেই খুশি হবেন। কিন্তু বাস্তবিক দেখা গেলো ডেভিলকে দিয়ে সিকিভাগ কাজও হয়নি তার, অথচ ইতোমধ্যেই হাতছাড়া হয়ে গেছে সে! টাকা পয়সা তো গেছেই সাথে ফ্রি পাওয়া গেলো অচেনা শত্রুর হুমকি! সব মিলিয়ে অর্জুনের এখন পাগল প্রায় অবস্থা! তার ধারণা ছিলো ডেভিলটা খুবই বিশ্বস্ত, কিন্তু দেখা যাচ্ছে ব্যাপার তা নয়। সে তার সব প্লান প্রোগ্রাম শত্রুর কাছে ফাঁস করে দিয়েছে!
.
রাত প্রায় এগারোটার দিকে অর্জুন সাহেব ঘুমাতে গেলেন। সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদের কারণেই হয়তো বিছানায় পিঠ দেয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়েও পড়লেন। সেই ঘুম ভাঙ্গলো মাঝরাতে স্ত্রীর কনুইয়ের ধাক্কা খেয়ে। তিনি ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসতে বসতে বললেন— কি হলো নন্দিনী? এমন করছো কেনো?
অর্জুন সাহেবের স্ত্রী নন্দিনী তখনো ভয়ে কাঁপছেন। জীবনে এরকম ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন তিনি দেখেছেন কি-না মনে করতে পারলেন না। তিনি বললেন— একটা খুব ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখেছি, তাই...।
নন্দিনীর কথা শেষ না হতেই অর্জুন সাহেবের বুকটা ধড়াস করে উঠলো। তিনি টান দিয়ে নন্দিনীর ডান হাতটা লাইটের আলোয় তুলে ধরলেন। তার চোখ ঠিকরে বের হবার উপক্রম। তিনি যা আন্দাজ করেছিলেন তাই। নন্দিনীরও একই অবস্থা। দুজনেই অবাক হয়ে দেখলেন, নন্দিনীর ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুলটাতে গভীর একটা কামড়ের দাগ। ক্ষতস্থান ভেসে যাচ্ছে রক্তে। নন্দিনী রক্ত দেখতে পারেন না। রক্ত দেখলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এখনো নিজের আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই জ্ঞান হারালেন। অর্জুন সাহেবের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল শ্রোত নেমে গেলো। তাহলে কি তার এতোদিনের অপকর্মের ফল তিনি পেতে শুরু করেছেন! চিন্তাটা মাথায় আসতেই ভয়ে কুঁকড়ে গেলেন তিনি। ডেভিলের কথা মনে পড়লো তার। মনে পড়লো তার ভয়াল- হিংস্র চোখ দু'টোর কথা। তার মনে আছে চোখগুলো সব সময় ভাটার মতো জ্বলজ্বল করে। হঠাৎ তার মনে হলো সেই চোখ জোড়া বুঝি তার ঠিক পেছনেই! পেছন ঘুরলেই বুঝি সেগুলো দেখতে পাবেন তিনি। অর্জুন সাহেব স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তার দৃষ্টি শূন্যে।
————
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:২৮