somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ ও তার আদ্যোপান্ত

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের পৃথিবীর উপগ্রহের
সংখ্যা একটি। চাঁদ নামেই এটি
সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে যেমন
প্রতিনিয়ত ঘূর্ণনশীল তেমনি
সৌরজগতের আরো অনেক গ্রহ
রয়েছে যাদেরকে কেন্দ্র করে
একটি চাঁদ নয় একাধিক চাঁদ
ঘূর্ণয়মান।
যেমন মঙ্গলের দুইটি উপগ্রহ বা চাঁদ
রয়েছে। এছাড়া শনির ৬২টি,
ইউরেনাসের ২৭টি, নেপচুনের
১৪টি, প্লুটের ৫টি এবং বৃহস্পতির
ওপর সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী এ
গ্রহের মোট ৬৭টি চাঁদের সন্ধান
পাওয়া গেছে। কিন্তু
সৌরজগতের এইসব চন্দ্র সমূহের
মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় কে?
পৃথিবীর চাঁদ নাকি অন্য গ্রহের
কোনো চাঁদ? এই প্রশ্ন তো থেকেই
যায়।
বেশ কিছুদিন পূর্বেও ধারণা করা
হতো, শনির উপগ্রহ টাইটানই
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় চাঁদ।
কারণ টাইটানই একমাত্র উপগ্রহ
যার ঘন আবহাওয়ামণ্ডল রয়েছে
এবং সেটা আয়তনে বিশাল।
বিজ্ঞানীদের মতে, টাইটান
এতই শীতল যে, এখানের গ্যাস
কণিকার চঞ্চলতাও কম। ফলে কিছু
গ্যাস কণিকা আটকে পড়েই এই ঘন
আবহাওয়া মণ্ডলের সৃষ্টি
করেছে। এর বায়ুমণ্ডলের ৯৯
শতাংশই হচ্ছে নাইট্রজেনে
ভরপুর। আয়তনে টাইটান বুধ গ্রহের
থেকে বেশ কিছুটা বড়।
কিন্তু গ্রহের ব্যাসার্ধ মাপার
পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর জানা
গেল টাইটান নয়, বৃহস্পতির উপগ্রহ
গ্যানিমিড-ই হল সৌরজগতের
সবচেয়ে বড় চাঁদ। ব্যাসার্ধে
টাইটান গ্যানিমিডের কিছুটা
ছোট। এই উপগ্রহটি সর্বপ্রথম
আবিষ্কার করেন
জ্যোতির্বিদ্যার জনক হিসেবে
খ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও
গ্যালিলি। তবে তিনি শুধু
গ্যানিমিড-ই নয়, ১৬১০ সালের
জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে
সর্বপ্রথম তার দূরবীনের সাহায্যে
একসঙ্গে আবিষ্কার করেছিলেন
বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ। তিনি
পরের রাতে উপগ্রহ চারটির ওপর
পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারেন
উপগ্রহ চারটি বৃহস্পতিকে কেন্দ্র
করে ঘূর্ণয়মান।
এই চারটি উপগ্রহই বৃহস্পতির
সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। বাকি তিনটি
হল- আইও, ইউরোপা এবং
ক্যালিস্টো। তবে গ্যালিলিও
আবিষ্কার করলেও এই উপগ্রহটির
নামকরণ করেন বিখ্যাত
জ্যোতির্বিদ সাইমন মেরিয়াস।
গ্রিক পুরাণের দেবতা জিউসের
প্রেমিকের নামে গ্যানেমিড
নামকরণ করা হয়।
গ্যানিমিড হল বৃহস্পতির তৃতীয়
উপগ্রহ। সৌরজগতের অন্য উপগ্রহের
তুলনায় গ্যানিমিড একটি
বৈশিষ্টের কারণে সবচেয়ে
আলাদা। কারণ গ্যানিমিডই হল
সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ
যেটিতে গ্রহের মতো
ম্যাগনেটিক ফিল্ড বিদ্যমান।
মূলত এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড
থাকার কারণে গ্রহকে কেন্দ্র
করে উপগ্রহ ঘূর্ণয়মান এবং এই
ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারণেই
সমগ্র সৌরজগৎ একটি নির্দিষ্ট
সিস্টেমে কোটি কোটি বছর
ধরে একইভাবে ঘূর্ণয়মান।
গ্যানিমিডের ব্যাস ৫২৬৮
কিলোমিটার। এই ব্যাস হিসেব
করলে দেখা যায় এই উপগ্রহটি বুধ
গ্রহের থেকে প্রায় ৮% বড় এবং
সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ
টাইটানের থেকে ২% বড়।
আয়তনে এই উপগ্রহটি প্লুটো গ্রহ
থেকেও বড়। মহাকাশযান
পায়োনিয়ার-১০ এর সবচেয়ে
কাছে গিয়ে (প্রায় ৪৪০
কিলোমিটার) যে তথ্য প্রেরণ
করে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই
উপগ্রহটির পৃষ্ঠ সম্পূর্ণরূপে পাথুরে
পাহাড়ে ভরপুর। এই পাহাড়ে
সালফারের পরিমান বেশি। এসব
পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে জমাট
পানির অস্তিত্বও পাওয়া
গেছে। ১৯৭৯ সালে মহাকাশযান
ভয়েজারের পাঠানো ছবিতে
এই দৃশ্য সর্বপ্রথম দেখা যায়। তবে
এর ভূ-অভ্যন্তরে যে পরিমান
পানি রয়েছে তার পরিমান
পৃথিবী পৃষ্ঠের সকল সমুদ্রের
মিলিত পানির চেয়ে কয়েকগুণ
বেশি।
শুধু পানিই নয় গ্যানিমেডের ভূ-
অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমানে গলিত
তপ্ত লোহাও রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই
লোহাই গ্যানিমিডের
ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মূল রহস্য।
উপগ্রহটিতে অক্সিজেনের
হালকা বায়ুমণ্ডলও বিদ্যমান।
গ্যানিমিডের কক্ষপথ বৃহস্পতি
থেকে প্রায় ১০৭০৪০০
কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর
কক্ষপথ সামান্য উৎকেন্দ্রিক। এটি
প্রতি সাত দিন তিন ঘণ্টায়
বৃহস্পতিকে একবার ঘুরে আসে।
এদিকে এই সময়ের মধ্যে আইও
চারবার এবং ইউরোপা দুইবার
বৃহস্পতিকে ঘুরে আসে।
সবমিলিয়ে রহস্যমণ্ডিত
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় এই চাঁদ।
আগামীতে বৃহস্পতির নতুন রহস্য
উন্মোচন এবং গ্যানিমিডের নতুন
সব তথ্যের খোঁজ পেতে
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি
২০২২ সালে বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে
‘জুপিটার আইসি মুন এক্সপ্লোরার’
শিরোনামের একটি
মহাকাশযাত্রার ঘোষণা
ইতোমধ্যেই দিয়েছে। সে সময়
গ্যানিমিড সম্পর্কে নতুন কোনো
তথ্য আবিষ্কার হবে কিনা সেটা
এখন দেখার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×