ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেজাজটা খিঁচড়ে যায় আমার ।
বউয়ের আদরের ছোটভাই, মানে আমার ছোট শ্যালক, থাকে আবুধাবী । শালা সারাটা রাত ফোনে বড্ড যন্ত্রণা দিয়েছে । রিং হয়, ধরলেই লাইন কেটে যায় ।
'হ্যালো, আমি সাজু...।' ব্যস, এটুকু বলেই সাজু গায়েব । মোবাইলের একাউন্টও হালার একেবারে শুন্য । শেষ রাতের দিকে চোখটা একটু লেগে এসেছে, এমন সময় কর্কশ শব্দে আবার রিং বেজে ওঠে....।
যাক সকালে তারাহূরা করে ডিউটিতে আসলাম । ইদানিং কাজের প্রতি তেমন মনযোগ দিতে পারিনা । তারপর গত রাত ভাল ভাবে ঘুমুতে পারিনি বলে শরীরটা কেমন ম্যাজ ম্যাজ করছে,কাজে ভাল করে মন বসছেনা,মেজাজটা খিটখিটে হয়ে আছে । তখন দুপুর প্রায় একটা হবে, পাশের স্কুলের ছুটি হয়েছে মাত্র । ছাত্ররা ক্লাস থেকে বেরিয়ে আমার ক্যাফের সামনে জড়ো হয়ে হৈ-হল্লোর করছে । সৌদি ছেলেরা যে কেমন অভদ্র স্বভাবের হয় তা নিজে না দেখলে বুঝতে পারবেননা । ওদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে বসের কাছে অনেকবার নালীশও করেছি । ওরা যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে সে জন্য কাঁচের মেইন দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিলাম । বাহির থেকে একটি বেয়াদব ছেলে দরজা খোলতে না পেরে ঢিল ছুঁড়তে থাকে । তার বেয়াদবিটা দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে নরম গলায় বলি "মালীশ মালীশ,বসের নিষেধ আছে যেন ছোটরা প্রবেশ না করে ।" আচমকা সে আমাকে গালি দিয়ে বসে । তার এই আপত্তিকর মন্তব্যে আমি বড্ড আহত হই । হাতের কাছে লম্বা লাঠির একটা ঝাড়ু পেয়ে দরজা খুলে সটান সটান করে পিঠে লাগিয়ে দিলাম । লাঠি ভেঙ্গে দুটকরো...! মুহূর্তে একঝাক ছেলের দল ক্যাফের চারিদিকে জড়ো হতে থাকলো । সঙ্গে সঙ্গে বসকে ফোন করে সব জানালাম । মুহূর্তে বসের সৌদি সেক্রেটারী হাজীর । অতঃপর পুলিশের হুইশেল বেজে ওঠে । পুলিশ দেখে কলিজা কেঁপে উঠল । দুজনকেই থানায় বড় অফিসারের সামনে নিয়ে গেল । উভয় পক্ষের বক্তব্য শুরু হল ।
ঃ আমি একজন সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোক ।' আমার কণ্ঠে জোরাল প্রতিবাদ । ভিতরে ভিতরে অবশ্য অসম্ভব ঘাবড়ে যাই আমি । হায়-খোদা! কেন যে পেটাতে গেলাম ! রাগের মাথায় নিজের পাছাতেই কষে লাথি মারতে ইচ্ছে করে । যাক কিছুক্ষন পর ছেলেটির বাবা থানায় এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে বলছেন যে, "আমার ছেলে নিশ্চই কোন অপরাধ করেছে- বিধায় মার খেয়েছে,এতে আমার কোন অভিযোগ নেই ।" ছেলেটির বাবার কথা শোনে হালে পানি পেলাম । যাক ঘন্টাদুয়েক থানায় থাকার পর আরবী লেখা কাগজে দস্তখত করে থানা থেকে বেরিয়ে আসলাম । আমার জীবনের এই প্রথম ''অ্যাডভেঞ্চার বৃত্তান্তের'' অভিজ্ঞতা বউকে ফোন করে জানালাম ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০