ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ডেনিস টার্ক যথার্থই মন্তব্য করেছেন, 'পিঠের ব্যথায় ভোগেননি এমন মানুষ বিরল।'
ঠিকই বলেছেন তিনি। এমন মানুষ সত্যি খুঁজে পাওয়া যাবে না যে কোন না কোন সময় পিঠের ব্যথায় ভোগেনি। তবে আমেরিকান জার্নাল অভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেডিসিন-এর মতে, পুরুষদের মধ্যে পিঠের ব্যথায় সবচে' ভোগে রাজমিস্ত্রী, কাঠ মিস্ত্রী, মেকানিক, ট্রাক ড্রাইভার এবং কৃষকরা। আর মেয়েদের মধ্যে এ উপসর্গটি দেখা যায় বেশি যারা হাসপাতালের নার্স, বাসার চাকরানী, ঝাড়ুদারনী, এবং হেয়ারড্রেসার তাদের মাঝে। যাঁরা লেখালেখির কারণে এক টানা টেবিলে বসে থাকেন তাঁদেরও পিঠ ব্যথার শিকার হতে হয় কখনও কখনও।
তবে পিঠের ব্যথা দূরীকরণের ওষুধ আছে আপনার হাতের নাগালেই। এজন্যে আপনাকে যা যা করতে হবে তা হলো:
1. নিজের যত্ন নিজেই করুন: ধরুন, সকাল বেলা বেশ কিছু বাক্সপঁ্যাটরা তুলতে গিয়ে পিঠে ব্যথা শুরু হয়ে গেল। এক্ষেত্রে ইবুপ্রফেন, অ্যাসপিরিন বা এসিটামিনোফেন ট্যাবলেট খেয়ে নিলে বেশ আরাম পাবেন। আর পিঠের ব্যথায় মেঝেতে শুধু একটা মাদুর পেতে শুলেও কাজ দেবে। শোবার সময় দুই হাঁটুর মাঝখানে একটা বালিশ রাখবেন। আর দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে কাজ করবেন না, পিঠের ব্যথা থাকলে ভারী জিনিসও তুলবেন না। এতে পিঠ ব্যথা আরও বেড়ে যাবে।
2. ব্যায়াম: পিঠের ব্যথায় বিছানায় শুয়ে, না ঘুমিয়ে বরং রেগুলার এক্সারসাইজ করুন। এক্ষেত্রে হাঁটা হতে পারে সবচে' ভাল ব্যায়াম। এতে পিঠ এবং পেটের পেশী শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর জিমনাসিয়ামে গেলে ট্রেনারের পরামর্শ মত ব্যায়াম করবেন।
3. রিলাক্সেশন টেকনিক: ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ডাক্তার রিচার্ড ডিয়ো বলেছেন, স্ট্রেসের কারণে শরীর আড়ষ্ট হয়ে ওঠে, পিঠের ব্যথা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে রিলাক্সেশন টেকনিক অবলম্বন করলে টেনশন চলে গিয়ে ব্যথার উপশম হতে পারে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অভ হেলথ-এর বিশেষজ্ঞরা 1995 সালের এক সমীক্ষায় দেখিয়েছেন, ধ্যান এবং সম্মোহন ক্রনিক ব্যথা নিরাময় করে। এটাই হলো রিলাক্সেশন টেকনিক। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এসব টেকনিক বা কৌশল নার্ভাস সিস্টেমকে সতেজ ও সাবলীল করে তোলে। ফলে শরীরের ব্যথা-বেদনাও দূর হয়ে যায়। এ ছাড়া যোগ ব্যায়াম এবং তাই চিও পিঠের বেদনা দূরীকরণের মহৌষধ বলে বিবেচিত।
4. ফিজিও থেরাপি: পঞ্চাশোর্ধ এক লোক পিঠের ব্যথায় এতই কাবু হয়ে পড়েছিল যে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারত না। ফিজিও থেরাপির সাহায্যে তার পিঠের ব্যথা দূর হয়ে গেছে।
একজন ফিজিকাল থেরাপিস্ট আপনাকে এমন সব ব্যায়াম শিখিয়ে দিতে পারবেন যার সাহায্যে পেশির দুর্বলতা দূর করা সম্ভব।
5. ম্যাসাজ: পিঠ ব্যথা দূরীকরণে ম্যাসাজ দারুণ ফলদায়ক একটি ব্যায়াম বলে স্বীকৃত। ম্যাসাজ করার সময় পিঠের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, আড়ষ্ট মাস্ল্গুলো শিথিল হয়ে ওঠে। ম্যাসাজ নানারকমের আছে। এর মধ্যে একটি হলো নিউরো মাসকুলার ম্যাসেজ থেরাপি। এতে নির্দিষ্ট কিছু প্রেসার পয়েন্টে ম্যাসাজ করা হয়। পিঠের নিচের অংশের ব্যথা দূর করতে এই ম্যাসাজ বেশ কাজ দেয়।
6. আকুপাংচার: 1997 সালে ইউ.এস. ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ হেলথ প্যানেল পরীক্ষা করে দেখিয়েছিল পিঠের নিচের অংশের ব্যথা দূরীকরণে আকুপাংচারের তুলনা নেই। আকুপাংচার শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক 'বযফড়ৎঢ়ধরহ' রিলিজ করে। ফলে ব্যথা চলে যায়।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মেডিকেল আকুপাংচারিস্টরা বলেছেন, তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ রোগী জানিয়েছেন আকুপাংচারের ফলাফলে তারা সন্তুষ্ট।
7. অপারেশন: পিঠ ব্যথার যত রকম রোগী আছে তাদের মধ্যে মাত্র দু'ভাগের পিঠের ব্যথা দূর করার জন্যে অপারেশনের দরকার হয়। ডাক্তার ডিয়ো অপারেশনের জন্যে চারটে কারণ দেখিয়েছেন_মাস খানেক ধরে হাঁটুর নিচের যবৎহরধঃবফ ফরংপ- এ বাতের ব্যথা দেখা দিলে, ংঢ়রহধষ পধহধষ সরু হয়ে এলে, কাশরুকা স্থানচু্যত হলে, কিংবা টিউমার বা এ ধরনের কিছু দেখা দিলে।
তবে পিঠের ব্যথার জন্যে যদি শেষপর্যন্ত ডাক্তারের ছুরি-কাঁচির নিচে শুয়ে পড়তেই হয়, অবশ্যই অভিজ্ঞ কোন সার্জনকে এ কাজের জন্যে বেছে নেবেন। নইলে পরে পস্তাতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০