আপনার ডায়াবেটিস আছে কি?
থাকলে কিভাবে নিমর্ূল করবেন?
হিরন্ময় দাস
আমরা দৃশ্যমান শত্রু নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে অদৃশ্য শত্রুর কথা বেমালুম ভুলে যাই। এই অদৃশ্য শত্রু বা ঘাতক আর কিছুই নয়, এটা হলো মানুষের শরীরের রোগ-ব্যাধি। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এশিয়ায় সর্বাপেক্ষা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করবে ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস কি?
শরীর যখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন এই পর্যায়কে ডায়াবেটিস বলা হয়। এই অবস্থায় দেহে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। ইনসুলিন হলো এক প্রকার হরমোন, যা অগ্নাশয়ে তৈরি হয়। ইনসুলিন মাংসপেশী এবং টিসু্যর মধ্যে গ্লুকোজ স্থানান্তরের মাধ্যমে দেহে শক্তি যোগায়। কিন্তু ডায়াবেটিস হলে যেটুকু ইনসুলিন উৎপন্ন হয় সেটাও কার্যকরভাবে ব্যবহার হয় না। সাধারণত দু'ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। টাইপ-1 এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিস।
টাইপ-1 ডায়াবেটিস
এই ধরনের ডায়াবেটিস অপেক্ষাকৃত কমবয়সী মানুষের মধ্যে দেখা যায়।
* এ ধরনের ডায়াবেটিসের হার শতকরা 10 থেকে 15 ভাগ।
* এই রোগ হওয়ার প্রকৃত কারণ আজও অজ্ঞাত। তবে সাধারণত ধারণা করা হয় ডায়াবেটিস হলো বংশগত। তাছাড়াও পারিপাশ্বর্িক অবস্থা, মানসিক কারণও এই রোগ হবার পিছনে ভূমিকা রাখে।
* অনেকের আবার এই রোগ একদম স্বাভাবিকভাবে অথবা হঠাৎ করে অথবা নাটকীয়ভাবেও হতে দেখা যায়।
* সাধারণত 30 বছরের মধ্যে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
* অগ্নাশয়ের মধ্যে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে রোগীকে সুস্থ রাখতে হলে ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়া দরকার।
* টাইপ-2 ডায়াবেটিস: এধরনের ডায়াবেটিস বয়স্ক লোকদের হয়ে থাকে।
* অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের ডায়াবেটিসের হার শতকরা 90 ভাগ।
* মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপনের কারণেও এই ধরনের ডায়াবেটিস হতে পারে। যেমন_শরীরের অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবন এবং যে কোনও শারীরিক চাপের জন্যেও ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। এছাড়া বংশগতির কারণেও ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
* এই ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস খুব ধীর গতিতে দেখা দেয়। কারণ রক্ত প্রবাহে খুব ধীরে ধীরে গ্লুকোস তৈরি হয়।
* 40 বছর বয়সে এই ধরনের রোগ হওয়ার আশংকা বেশি থাকলেও ইদানীং শিশু এবং কিশোর কিশোরীদের মধ্যেও এই রোগ ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
* শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয়। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অথবা দেহের অতিরিক্ত চর্বি এই ইনসুলিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে।
বহুরূপী ব্যাধি: ডায়াবেটিস হলে, সেই সঙ্গে শরীরে আরও বহুবিধ রোগ বাসা বাঁধে। তাই একে বহুরূপী ব্যাধি বলা চলে।
যেমন_
রক্ত সঞ্চালন: অনেক দিনের ডায়াবেটিস মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
হৃৎপিণ্ড: ডায়াবেটিস রোগীদের করোনারী আর্টারী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা অনিবার্যভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্নায়ুতন্ত্র: স্নায়ুসমূহ নষ্ট হয়ে কমে যাবে শরীরের সংবেদনশীলতা। ফলে হ্রাস পাবে যৌন শক্তি।
চোখ: অক্ষিগোলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তবাহী নালী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের চোখে গ্লুকোমা ও ছানি পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কিডনী: রক্তে দীর্ঘমেয়াদী গ্লুকোজের উপস্থিতির ফলে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তবাহী নালী নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে কিডনীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
রক্ত সঞ্চালন: দীর্ঘকালীন ডায়াবেটিসের ফলে রোগীর দেহে রক্ত সঞ্চালন বিঘি্নত হয়। ফলে স্নায়ুসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঊরু এবং পায়ে পচনশীল ঘা দেখা দিতে পারে। তখন পা কেটে ফেলা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
ডায়াবেটিস চিকিৎসা করবেন কিভাবে?
ডায়াবেটিস কখনও নিরাময় হয় না। কিন্তু এটাকে দারুণভাবে সুনিয়ন্ত্রিত রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও দীর্ঘ জীবন যাপন করা সম্ভব।
যদি আক্রান্ত ব্যক্তি_
* স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করে।
* পরিমিত ব্যায়াম করে।
* শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
* রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে।
* নিয়মিত মেডিক্যাল চেক-আপ ও ওষুধ গ্রহণ করে।
আগে উল্লেখ করা টাইপ-1 ডায়াবেটিসের জন্যে ইনসুলিন গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। টাইপ-2 ডায়াবেটিক রোগীদের সহজ নিরাময় পদ্ধতি হচ্ছে_সুশৃংঙ্খল জীবন যাপন।
আপনার ডায়াবেটিস আছে কিনা?
যদি আপনার নিম্নে উল্লেখিত সবগুলো অথবা যে কোন একটি উপসর্গ থেকে থাকে তবে আপনার ডায়াবেটিস আছে।
* অস্বাভাবিক পিপাসা বোধ করা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
* ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া।
* শরীর অতিরিক্ত অবসন্ন হওয়া। ঘন ঘন খিদে পাওয়া।
* আকস্মিকভাবে শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
* শরীরের ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া। বারবার ঘা হওয়া।
* দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।
শতকরা 50 ভাগ ডায়াবেটিস রোগী এই সমস্ত উপসর্গ সম্বন্ধে কিছুই টের পায় না। টাইপ-1 ডায়াবেটিসের চাইতে টাইপ-2 ডায়াবেটিসের উপসর্গসমূহ কম বোঝা যায়। পরিশেষে বলা যায় সুশৃঙ্খল জীবন যাপন, পরিমিত ব্যায়াম ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস রোগের একমাত্র চিকিৎসা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০