somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন স্বার্থে পোষ্ট-8 ঃ রক্তের ক্যান্সার

২৬ শে নভেম্বর, ২০০৬ সকাল ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রক্তের ক্যান্সার
--জাহাঙ্গীর আলম

সিএমএল কি?

লিউকেমিয়া হচ্ছে রক্ত ও অস্থিমজ্জার এক ধরনের ক্যান্সার (অস্থির ভেতরের অংশ, যেখানে রক্ত কণিকা তৈরি হয়)। লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে দুটো জিনিস ঘটে থাকে। প্রথমত, কিছু রক্ত কণিকা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে, দ্বিতীয়ত, আমাদের দেহ প্রচুর পরিমাণে এ সকল অস্বাভাবিক কোষ তৈরি করতে থাকে।
সিএমএল (ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া) হচ্ছে এক ধরনের লিউকেমিয়া। ক্রনিক বলতে বোঝায় এটি একটি ধীর গতির ক্যান্সার, যা পূর্ণতা লাভ করতে অনেক বছর সময় নেয়। মাইলয়েড হচ্ছে মাইলয়েড কোষ নামক এক ধরনের শ্বেত কণিকা হতে ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অস্বাভাবিক রক্ত কণিকা। সুতরাং ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া হচ্ছে একটি ধীর গতির ক্যান্সার, যার ফলে দেহে প্রচুর পরিমাণে ক্যান্সার আক্রান্ত মাইলয়েড শ্বেত কণিকা তৈরি হয়। সিএমএল-এর তিনটি পর্যায় বা ধাপ রয়েছে। যেমন: ক্রনিক পর্যায়, একসিলারেটেড পর্যায় এবং ব্লাস্ট ক্রাইসিস পর্যায়। রোগীরা এসকল ধাপ ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করার সাথে সাথে তাদের রোগের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং শরীরে নানাবিধ উপসর্গ দেখা দেয়।

রোগের উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ
সিএমএল মাঝ বয়সের একটি রোগ (বর্তমানে মধ্যবতর্ী বয়স হচ্ছে 42 বছর)। রোগীরা সাধারণত দুর্বলতা, রাতে ঘামানো, হালকা জ্বর নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। এ সকল উপসর্গ অতিরিক্ত শ্বেত কণিকা তৈরি হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। প্লীহার আকার বৃদ্ধির ফলে রোগী পেটে ভার ভার বোধ করে। এছাড়া ঘটনাক্রমে শ্বেত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি ধরা পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসকষ্ট ও ঝাপসা দৃষ্টির সমস্যা হয়। এ রোগের মাত্রা বৃদ্ধি (একসিলারেটেড পর্যায়ে) পেলে জ্বর হয়, তবে সংক্রমণ, অস্থিতে ব্যথা বা প্লীহার বৃদ্ধি হয় না। ব্লাস্ট ক্রাইসিস-এর ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জার ব্যর্থতার ফলে রোগীদের রক্তক্ষরণও সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
কেন?
একজন ব্যক্তির সুস্থ অবস্থায় প্রাপ্ত নির্দেশনা (সিগনাল) দেহকে নতুন রক্ত কণিকা তৈরি করতে বলে। এই নির্দেশনা আদি রক্তকোষে পেঁৗছায়, যাকে বলে স্টেম কোষ। দেহের প্রয়োজনীয় রক্ত কণিকা তৈরির জন্যে নির্দেশনাগুলো স্টেম কোষকে সক্রিয় অথবা নিষ্ক্রিয় করে। একজন ব্যক্তির সিএমএল হলে, তার ডিএন-এতে একটি পরিবর্তন ঘটে, এর ফলে এই নির্দেশনা সব সময় সক্রিয় থাকে। নির্দেশনার এই সার্বক্ষণিক সক্রিয়তার জন্যে দেহ আরও অধিক পরিমাণে লিউকেমিয়া কোষ তৈরি করে।

চিকিৎসা পদ্ধতি
সিএমএল সাধারণত অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা অথবা উভয়ের সমন্বয়ে চিকিৎসা করা হয়।
বি এমটি স্টেম কোষ ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট (এসসিটি) হিসেবেও পরিচিত। এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির দুটো ধাপ রয়েছে। প্রথমত, রোগীকে উচ্চ মাত্রার ওষুধ দেয়া হয়, যা অস্থিমজ্জার অধিকাংশ কোষকে নিমর্ূল করে (ক্যান্সার কোষ ও স্বাভাবিক কোষ)। দ্বিতীয়ত, ধ্বংসকৃত সকল স্টেম কোষকে কেবলমাত্র সুস্থ কোষ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। এ পুনঃস্থাপিত কোষগুলো অন্য কোন ব্যক্তি থেকে নেয়া হয় (এটি অ্যালোজেনিক ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট নামে পরিচিত), এবং কখনও কখনও রোগীর নিজের দেহ থেকে নেয়া হয়ে থাকে (যা অটোলোগাস ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট নামে পরিচিত)।
একজন রোগীকে অ্যালোজেনিক ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট অথবা অটোলোগাস ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট, যাই দেয়া হোক না কেন, একবার স্টেম সেল প্রতিস্থাপিত হলে তা রোগীর অস্থিমজ্জায় আশ্রয় নেয় এবং বৃদ্ধি পেয়ে রক্ত কণিকা তৈরি করে। কেবল মাত্র বিএমটি চিকিৎসার মাধ্যমেই কিছু ব্যক্তি সিএমএল হতে নিরাময় লাভ করতে পেরেছে। তাই চিকিৎসকরা তাদের রোগীর ক্ষেত্রে এটি প্রথম চিকিৎসা হিসাবে বিবেচনা করেন। দুর্ভাগ্যবশত এ পদ্ধতিতে অনেক ঝুঁকি রয়েছে এবং কেবল অল্প কিছু সংখ্যক রোগী এর জন্যে উপযুক্ত প্রাথর্ী হতে পারে।
যে সব রোগীর বিএমটি চিকিৎসা করা যায় না তাদেরকে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। সিএমএল চিকিৎসায় যেসব ওষুধ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তার তালিকা নিচে দেয়া হলো:
1. ইন্টারফেরন আলফা (আইএফএন-আলফা), ইন্টারফেরন হচ্ছে দেহে উৎপাদিত প্রাকৃতিক জিনিস। রোগীর দেহে বাড়তি ইন্টারফেরন ইনজেকশান দেয়ার ফলে লিউকেমিয়া কোষগুলোর বৃদ্ধি হ্রাস পায় (এবং তা আয়ু বৃদ্ধি করে), কিন্তু এর ফলে সিএমএল হতে সম্পূূর্ণ নিরাময় হয় না। আইএফএন-আলফা অনেক ক্ষেত্রে শুধু এককভাবে দেয়া হয়, এবং অনেক ক্ষেত্রে সাইটারবিন (আরা-সি নামে পরিচিত) সহযোগে দেয়া হয়। এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো সহনীয়তা। অনেক ব্যক্তিই আইএফএন-আলফা চিকিৎসার পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া সহ্য করতে পারেন না। সে জন্যে উন্নত সংস্করণ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে যার মাধ্যমে রোগীরা আইএফএন-আলফা চিকিৎসা সহ্য করতে পারে। সিএমএল রোগের চিকিৎসা নতুন ওষুধ গি্লভেক আবিষ্কারের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে।

গি্লভেক কিভাবে কাজ করে
গি্লভেক একটি কার্যকর থেরাপি যা সিএমএল রোগের কারণকে সুনির্দিষ্ট ভাবে স্থির করে। ইতিমধ্যে বলা হয়েছে যে সিএমএল রোগে একটি সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দেহকে অব্যাহতভাবে অস্বাভাবিক শ্বেত রক্ত কণিকা তৈরি করে যেতে বলে। গি্লভেক এই নির্দেশনাকে বন্ধ করে দেয়। যার ফলে অতিরিক্ত শ্বেত কণিকা আর তৈরি হয় না।
এই প্রথম বারের মত সিএমএল রোগের কারণকে লক্ষ্য করে চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি হয়েছে। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় এটির একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। বিএমটি চিকিৎসায় রোগীর অস্থিমজ্জার অধিকাংশ কোষ (ক্যান্সার কোষ ও সুস্থ কোষ) ধ্বংস হয়। পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া প্রকট হতে পারে। কেমোথেরাপিতে ওষুধ রক্তে পেঁৗছে এবং যত বেশি সম্ভব কোষকে ধ্বংস করে। এক্ষেত্রেও ক্যান্সার কোষ ও সুস্থ কোষ উভয়ই ধ্বংস হয়। কিছু ধরনের ওষুধ গ্রহণের ফলে রোগীদের অনেক পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং অনেক সময় তারা চিকিৎসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে গি্লভেক ইউনিট লিউকেমিয়া কোষ উৎপন্নকারী সিগনাল বা নির্দেশনাকে লক্ষ্য করে কাজ করে। ফলে অধিকাংশ সুস্থ কোষ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়। গি্লভেক সেবনকারী অধিকাংশ রোগীর পাশর্্ব-প্রতিক্রিয়াজনিত সমস্যা দেখা দেয় না।
এ চিকিৎসার লক্ষ্য হচ্ছে দু'টি। প্রথম লক্ষ্য, রক্তে অস্বাভাবিক শ্বেত কণিকার সংখ্যা, দ্বিতীয় লক্ষ্য এ রোগের অবস্থার অবনতি রোধ করা বা একে একটি কম ক্ষতিকর অবস্থায় রূপান্তর করা। একটি নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে গি্লভেক সেবনে এই দুটো লক্ষ্যই অর্জন হতে পারে। গি্লভেক-এর উপর ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় দেখা যায় যে, অধিকাংশ রোগীর রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা হ্রাস পায়। অল্প কিছু সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে রোগের অবনতি রোধ হয়। প্রকৃত পক্ষে এসব রোগীর একটি অংশ সিএমএল রোগের শেষ অবস্থা হতে ক্রনিক পর্যায়ে রূপান্তর হয়।

রোগের ফলাফল
পূর্বে মধ্যবতর্ী বেঁচে থাকার হার ছিল 3-4 বছর। ইন্টারফেরন চিকিৎসার মাধ্যমে মধ্যবতর্ী বেঁচে থাকার হার বেড়ে 5-6 বছর হয়। গি্লভেক সেবনে বেঁচে থাকার হারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটবে এবং এটি অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জায়গা দখল করবে বলে আশা করা যায়। এই ওষুধের মাধ্যমে প্রথম অবস্থার ক্রনিক পর্যায়ের কম বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে নিরাময় হার এই ওষুধের মাধ্যমে 70-80% হবে বলে আশা করা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×