বেশ গরম পড়েছে। স্টেশনে এসে দেখি
ছোট খাট ধোপাখানা। অনেককেই
দেখছি গায়ের জামা খুলে চিপচে।
ভেবেছিলাম জানালার পাশের
সিটটায় বসব। এসে
দেখি একজন দখল করে বসে আছে। মেয়ে
মানুষ। বলে কয়ে উঠানোও বারণ। যাই
হোক ট্রেনটা ছাড়াতে একটু স্বস্তি
পাওয়া গেল। হালকা ঠান্ডা বাতাস
গায়ে লাগছে। মাথার উপড় ফ্যানটার
বার্ধক্যে ধরেছে। আগের মত জান চলে
না। কয়েকজন আবহাওয়াবিদের কন্ঠ
শুনলাম।আজ দেশ জুড়ে বন্যা বয়ে যেতে
পারে। শরীর জুড়ে ক্লান্তি ভর করেছে। ঘুম ঘুম ভাব আসছে।
অনিন্দিতার কথা মনে পড়ছে।সেই কবে থেকে
ঘরকুনো হয়ে আছে,ব্যাঙের মত।আসার
সময় সঙ্গে নিয়ে আসতে ছেয়েছি।
বেড়ানোর কথা শুনলে তার শরীরে
মহামারি এসে হামলা করে।জ্বর,মাথা
ব্যথা,সর্দি,কাশি,নাম না জানা
অনেক অসুখের।সম্মতি আদায়ে পুরো ব্যর্থ। ওর যতসব ব্যতিব্যস্ততা পরিবার সুরক্ষায়।সম্ভবত
ট্রেন জার্নিটা ও পছন্দ করে না।
অপছন্দের কারণটাও জানিনা।ট্রেনের
একটা টিকিট অনিন্দিতা খুব যত্ন করে
রেখে দিয়েছে।অনেকবার দেখেছি
টিকিটটায় অনিন্দিতা লুকিয়ে
লুকিয়ে চোখ বুলায়। আর ওর চোখ দুটো
ভিজে ওঠে।অবাক লাগল অনিন্দিতার
সেই টিকিটটার সাথে আমার আজকের
টিকিটটা হুবহু মিলে গেছে।"ছ"বগী
সিট নং-"৫২"।সময়, বার, তারিখটা পর্যন্ত
মিল।
ঘুমে দুচোখ অস্থির
হয়ে উঠছে।হকারদের চেঁচামেচিতে
আর চোখ বুজা গেল না।হঠাৎ পাশের
মেয়েটা জিজ্ঞেস করল," আপনি
কোথায় নামবেন"? ঘুমের রেশ কাটিয়
উত্তর দিলাম,"এয়ারপোর্ট "।
চেনা জানাটা অল্প সময়ের।এর মাঝে
মেয়েটা সম্পর্কে বেশ জানা হয়ে
গেল।নামটাও জানলাম,ইরিন।বকবক করে
ওই সব বলে দিচ্ছে। প্রাইভেট
ইউনির্ভাসিটিতে পড়ছে।মেয়েটার
সাথে অনিন্দিতার পার্থক্য বের
করলাম।
বিয়ের বয়সটা পার হয়েছে চার পাচ
বছর।আমি বাড়ি আসায় তার মুখে একটু
হাসি ফুটেছে এমনটি আজও চোখে
পড়েনি। কিংবা যাওয়ার বেলায়
চোখে এক ফোটা জল জমেছে।
সমস্যাটাও অনেকবার জানার চেষ্টা
করেছি।ফলাফল শূন্য।অনিন্দিতার
নিরবতার উত্তর আমার বুঝার সাধ্য হয়ে
উঠেনি।
কিছুটা অবাক হলাম যখন শুনলাম ইরিন
বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে।
ভার্সিটি ছুটিতে বাসায় গিয়ে শুনে
বিদেশি বর রেডি।যেখানে ইরিনের
সম্মতি শূন্যের কোঠায়।কলেজে
লাইফেই ইরিন একজনকে গলায়
বাজিয়েছে।সে তার
ভালবাসার মানুষটিকেই আপন করে
নিতে চাই।কিন্তুু ফ্যামিলির ব্যাঘ্র
হুংকার,তা কিছুতেই সম্ভব না।
প্রতিবার বাড়ি আসার সময় মাথা
বোঝাই স্বপ্ন নিয়ে আসি। ভাবি এবার
হয়ত অনিন্দিতা পাল্টে গেছে।ঘরতে
যাবে,শপিং এর বায়না ধরবে।
দিনশেষে মা হওয়ার হাহাকারে
ভালবাসায় ডুবিয়ে দিবে।
হঠাৎ ট্রেনটা থেমে গেল।জানালা
দিয়ে একজন উকি দিল।এলোমেলো চুল।
মুখে হালকা দাড়ি।শারিরীক ভাষা
খুব তাড়াহুড়ো। কাউকে মনে হয় খুজছে।
ট্রেন ছাড়তে একটু দেরি হবে।নেমে
প্লাট ফর্মে আসলাম।যে লোকটি
জানালা দিয়ে উকি দিয়েছিল সেই
লোকটি বসে আছে।আমাকে দেখে
এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,"আপনিতো
ছ বগীতে ছিলেন।আপনার সিট
নাম্বারটা কত"? আমি বললাম,"৫২"।
হর্ণ বাজল।ট্রেন ছেড়ে দিবে। উঠে
দেখি বেশ হৈচৈ।ইরিন নেই।সবাই কি
নিয়ে গুনগুন করছে।পাশের একজন বলল
ইরিনের মা-বাবা পুলিশ নিয়ে এসে
তাকে নিয়ে গেছে। মানুষজন টক শো
করার একটা ইস্যু পেয়ে গেছে।
ভালবাসার বাধাটুকু ইরিন টপকাতে
পারল না।
ট্রেন ছাড়ল।পাশের সিটটা খালি
পড়ে আছে।
লোকটির কথা ভাবছি।পাঁচ
বছর ধরে এই স্টেশনে আছে।আজও তার
বিশ্বাস তার ভালবাসার মানুষটি এই
স্টেশনে নামবে।তাকে চিঠিতে
এখানেই অপেক্ষা করতে বলেছিল।
এটাও বলেছিল সে থাকবে ছ" বগীর ৫২
নং সিটে।
আমার ফোনটা বেজে উঠল।মা ফোন
করেছে।অনিন্দিতা বাসায় নেই।
কোথাও খোজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৫