তূর্ণা নিশীথা। চাটগাঁইয়া রেলগাড়ি। রাইত ১১.৩০ টায় স্টার্ট লয়।
আগেভাগে ১০:৩০ টায় এয়ারপোর্টে। সাথে রুমান মামু, আকাশ সাহেব, শামীম। বিমানের টিকিট কাটি নাই। ট্রেনেই উঠমু। টিপু স্যার আমগো আরও এক ঘন্টা আগ থাইক্কা প্লাটফর্মে বসা। স্যারের আবার ঘুমের বেরাম আছে। আমরা আসার আগ পর্যন্ত কতক্ষণ ঘুমাইল কইতে পারলাম না। শইলে উত্তেজনা শুরু হইছে। রাইত গেলেই সমুদ্র। দুই চারখান সেলফি খ্যাচল টিপু স্যার। দুই চার খান ট্রেন সামনে পিছে দৌড়াইল ভিন্ন রুটের।আড্ডা জমে। যাইতেছি কক্সবাজার টিপু স্যারের কথা হুইনা মনে হইতেছে ছেড়াদ্বীপ। মাত্র ৬ ঘন্টার লাইগ্গা এই দ্বীপ বুক টান দিয়া খাড়ায়.........।
নাইম সাহেবের ধীরগতির খ্যাতি আছে। হেইলাদুইলা সেই ভাব নিয়া ঠিক টাইমেই পৌছাইছে। শুরু হইল হিসাব নিকাশ। বাজেট কম। খরচ চিপাইয়া। দরকার হইলে এক দুবেলা না খাইয়া। কইতে কইতে ১৪৫ টাকা খরচ। রাতের নাস্তা। সর্বনাশি ব্যাপার স্যাপার। চিটাগাং থাইক্কা মনে অয় ফেরত আসা লাগব। টিপু স্যারের বিরাট হিসাব নিকাশ। উনি আবার আমাগো সাজেকের গাইড। কড়াই কড়াই হিসাব করা লাগব। আপাতত ২ টাকার সেন্টার ফ্রুট খাওয়াও আইনত দন্ডনীয়।
ট্রেন আইসা লাগল ১২:৩০ টায়। দুমাইয়া বগী খোজ। বগীতে উইঠায় রুমান মামুর ফোন, "কই তোরা"? মামু ঠাহর করতে পারে নাই কে কোন দিকে গেল। না হয় "ত" "ঠ" গোলাইয়া ঠ তে গিয়া উঠছিল।
ট্রেন ছাড়ছে। স্টেশনের পর স্টেশন দৌড়ায়। নিকোটিনের নেশা উঠে। দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বলে। দড়জায় গিয়া দাড়ামু। রাইতে খোলা নিষেধ। ডাকাতির ভয় আছে। দেশের পরিস্থিতি ভাল না। নিরাপত্তার দরকার আছে। কুমিল্লা পাড় হইতেই আমগো বগীর এক মহিলা ছ্যাত কইরা উঠল। চলতি ট্রেনেই উনার ব্যাগ ধইরা ছিনতাইকারী টান দিছে। আমার পাশের যাত্রী সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষন করিয়া কইল, ছিনতাইকারি হইতেই পারে না। উনি আসলে গাছের ডাইলের সাথে বাড়ি খাইছে।
টিপু স্যার হাল্কা ঘুম দিয়া উঠে। পেটে টান পড়ে । পাউরুটি চিবায়। কোকের ঢেকুর উঠে। আমগো আড্ডা জমে। ছেড়াদ্বীপ। পানির ৭০ ফিট নিচে স্পষ্ট পাথর দেখন যায়......... । আড্ডায় মিশে চাটগাঁইয়া রাসেল ভাই। সেন্ট মার্টিন যাওয়ার টিপস,সাজেক যাওনের টিপস। গানের পর গান। সুর আর সুর। বাতাস বয়। একটু একটু কইরা সমুদ্রের কাছাকাছি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। চিন্তার ভাজ খাড়ায়। দূর থাইক্কায় সমুদ্ররে টাটা দেয়া লাগব।
আযান শুনা যায়। ভোর হয়। শইলে ঝিম ধরে। কেউ কেউ ঘুমায়। ৭:৩০টায় ট্রেন থামছে। খরচ বাচাও, সময় বাচাও। হোটেল আর কক্সবাজার গামী বাস সুন্দর কইরা জজড়াজড়ি কইরা দাড়ায় আছে। দুমসে খাও, বাসে উঠ। বাস যায় আর যায়। পুরা শরীর জুইড়া ক্লান্তি।এই ঘুম এই সজাগ। পথ শেষের খবর নাই.
বাস থামে। আরও পাঁচ মিনিটের পথ। গাট্টিগোট্টা লইয়া সি.এন জিতে। সামনে আগাইতেই সমুদ্র। সিএনজির গ্লাস দিয়া দেখলাম সাদা কালো টিভিতে যেমন দেখা যায়। উত্তেজনা চরমে। গাট্টি রাখার ব্যবস্থা করণ লাগব। দুই মোড় ঘুইরা ঠিকানা হোটেল দ্যা ওশেনিয়া। গাট্টিগোট্টা রাইখা সোজা বীচে। আহ! সমুদ্র। হাত- পায়ে খিচনি ওঠে। মাঝখান গিয়া ঝাপাইয়া পড়ি। ঢেউয়ের পরে ঢেউ। আমগো ধাপাধাপি,ঝাপাঝাপি। ফটো খিচা। ক্লিকের পর ক্লিক। মামু ঘাড় ডাইনে কাত করে,বায়ে করে।মাথা উপড়ে তোলে।পানিতে ডুইবা থাকে। সব এঙ্গেলে পোচ। টিপু স্যার ফিলিংসের উপ্রে আছে। মাঝেমইদ্দে দাত মুখ ভেংচাইয়া উঠে। ফটো তোল। নাইম বস আইসা ঘোড়ার লগে পোচ দেয়। ঢেউয়ের সাথে হেড দেয়। শামীম দুই পা চেগায়া বসে,খাড়ায়। হাত মেলায় ধরে। নায়িকা নায়িকা পোচ লয়। ক্যামেরার দিক মুখ কইরা থাকে। আকাশ সাহেব চিল্লান দিয়ে ওঠে। তিরিংবিড়িং হাটে। আমার কিছু দাতলা ছবি উঠে।বুঝতে পারছি কিছু পয়সা বাচাইতে পারলে ডেন্টিস্টের কাছে যামু। কলাতুলি থাইক্কা লাবণী পয়েন্ট। ফটো খিচার উপ্রে।
পেটের টান পড়া সিগন্যাল দেয়। হোটেল আইসা সুরতখানা ফ্রেস কইরা খাওয়াতে। খরচ চিপাইয়া।ডাল, আলু ভর্তার উপ্রে। টেবিলে আইলো মুরগি, লইট্যা,সবজি। আলু ভর্তা শরমে আর আসে নাই।
মেলা খাটনি গেছে। একটু জিরান দরকার। হোটেল আইসা ঘুমের হুদাই চেষ্টা। সন্ধ্যা নামে। হুনচি সাগড়পাড়ে আইসা মানুষ কাঁকড়া চিবায়, চিংড়ি চিবায়। গেলাম সুগন্ধা। বাহারি চিংড়ি,শামুক,মাছ,কাকড়া আরও কত কি। দাম শুইনা বুক কাপে। জিহ্বাও পিছায় না। দাম ঠেইল্যা মুখে ঢোকাও। পাতে উঠল চিংড়ী, কাকড়া,রূপচাঁদা। কাঁকড়া দেইখা পয়লা পয়লা ঘেন্না লাগছিল।খাওনের পর কাকড়ার কাছে মাফ চাইয়া আসা উচিত আছিল।
ঘুরতে যহন আইয়াই পড়লাম বার্মিজ মার্কেটের লগেও মোলাকাত করা দরকার। কক্সবাজার ভালই নাম ডাক এর। রাইতের বেলা বার্মিজে।(থাইল্যান্ড, চীন,বার্মার নানা পণ্য পাওয়া যায় বার্মিজ মার্কেটে। বেশিরভাগ দোকানগুলো স্থানীয় আদিবাসীদের দ্বারা পরিচালিত)।
বেবাক কাম সাইরা রাইতে আবার হোটেলে। টিপু স্যার, মামু, শামীম রাইতের পেট চুক্তিতে। ফােকতে বাকি তিন পিনিকে মাথা আওলায়। সমুদ্রের মাদকতা শিরায় শিরায় হান্দাইছে। সমুদ্রে ডাকে।রাতের সমুদ্র। আহা! প্রত্যেক ঢেউ আইসা নিয়া যাইতে চায়। আয় ঝাপ দেয়। সারা শইলে নেশা ধরায়। জগত মাথা থাইক্কা বাইর হইয়া যায়। খালি সমুদ্রের প্রেমে প্রেম জাগায়। আহা! কি মাদকতা। শুধু নেশা ঢুকাইবারই মন চায় বাহির হইতে চায় না।
বাদের দিন সকাল। নেশা কাইটা ঘুম ভাংছে। শুরু হইছে বাজেট বিতর্ক। সাজেক যাওয়া খানদানি ব্যাপার। টেকার হিসাবে সবাই ফকির। যা দেখছি আমগো লাইগ্যা তাই বেশি।
সাজেক পরে ইনানী আর হিমছড়ি যায়। অটোরিক্সায়। কক্সবাজার টেকনাফ মহাসড়ক। রাস্তার এক সাইডে সাগড় অারেক সাইডে পাহাড়। মাঝেমইদ্দে আতকা ব্রেক।জায়গাটা ভাল্লাগছে। ফটো খিচ। শামীম যুদ্ধের সৈনিকের মত পজিশন লয়। ইনানী বিচ। পাড়ে আইসা ডাব দোকানের সারি। দাম লইয়া ঘ্যানর ঘ্যানর। সেই সামর্থ্য নাই দাম চাইতেই খচখচ দিয়া দিমু। যাই হোক ডাব লইলাম। ভিতরে এক টিউবওয়েল পানি। পেট ভইরা যায়। খালি খায় নাই, ফাকে রূপচর্চাও হইল।আকাশ সাহেবের সুরতখান পানি দিয়া ওয়াশ কইরা লইল। আবার বীচ।নেশা ধরে।রাইতের মত ভারী না, হাল্কা। নেশা ছাড়াইতে মন চায় না।
দুই ঘন্টার অটো নিয়া দেড় ঘন্টা এইনেই শেষ। শেষে অটো ড্রাইভার সামছু আলম বার্তাবাহক পাঠাইয়া আমগো সরাজ্ঞান করলেন। লাস্ট স্টপেজ হিমছড়ি। একটা ঝর্ণা আছে। টিপু স্যার আবার ঝর্ণার কথা হুনলে বন্য আচরণ স্টার্ট করে। হিমছড়ি গেইট দিয়া ঢুইকা একটু সামনে আগাইলেই ঝর্ণা। নাম মাত্র ঝর্ণা।জগ থাইক্কা গেলাসে পানি ঢালার মত। সিড়ি বাইয়া পাহাড়ের উপ্রে। না হাপাইয়া উপায় নাই। ওইনতে সমুদ্রের ডাকে সাড়া না দিয়া উপায় নাই। সমুদ্রের পুরা যৌবণ উতলায়ে ডাকে। সাবধান। মাতাল হওন যাইব না।পা পিছলাইলে শেষ।
আমগো সমুদ্র দেখাও শেষ। চোখ থাইক্কা দূর হইছে মনের পিনিক কাটে নাই।বেলা ডুবতাসে। সাজেক ডাকতাসে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৩