সারাদিন সূর্যের সেই কি তেজ! শইলে আগুন ধরে ধরে অবস্থা। মাথার উপড়ে সূর্যডা চড়াইয়া কামলা খাটুনির
দিন গেসে মুকুলের। মাইজ রাইতে ঘরে ঢুইকা বসতেই শইলতে মরঘাম ছাড়ে। বরফ পানি দিয়া গোসল দিব
ভাবে। কলে এক ফোটা পানি নাই। কারেন্ট নাই। মোটর চালুর পথ নাই। মুকুলের বউ ছেছাইয়া কয়,"দূর গিয়া
বও। শইলতে চ্যাপা শুটকির বাসনা উঠতাসে''। পোড়া কপাল মুকুলের। স্বামী সোহাগী বউ কপালে জুটল না।
সারাদিন খাটনি কইরা আসে ভাবে একটু প্লাষ্টিকের হাতপাখাটা নিয়া বাতাস করব। উল্টা বউ ঝিমায়। মুকুল
নিজে নিজে বাতাস করে। বউয়ের শইলেও একটু একটু বাতাস লাগায়। এম্নে আর ভাল্লাগেনা।কারেন্ট আওনের
খবর নাই।
মুকুল গলির মোড়ে ছদরুলের চা স্টলে আইসা বসে। মুকুলের লেদাকালের দোস্তরাও এই মাইজ রাইতে
আড্ডা দিতাসে। মুকুলরে দেইখা জিগরি দোস্ত বকুল জিগাইল,'' দোস্ত, ভাবি সাব লগে শুইবার দেয় নাই বুঝি। "আরে না,
গরমের মইদ্দে ধস্তাধস্তি ভাল্লাগেনা। ভাবলাম তোমগো লগে একটু কথা কয়" মুকুল কইল। ছদরুল কাপে চামিচ
নাড়াইতে নাড়াইতে কইল, " ভাল করছ। আইজ আর দোকান লাগাইতেছিনা। এইনেই ভালআছি। আইজ দরজা লাগাইলে
সিদ্ধ হইয়া যামু। তার উপড়ে কারেন্ট ঘন ঘন নাইওর যাইতেসে"।'' দোস্তরে চা দেও'', বকুল কইল।
মুকুল: চা খামু না। এম্নেই শইলডা আইজ মাছভাজা হইছে।
বকুল: এক কাপ খাও। চা'র গরম গরম কমায়।
''আর কয়ডা দিন কষ্ট কর।হাসিনা আপায় কইসে রামপালে বড় বিদ্যুত অফিস হইতাসে'', ফখরুল কইল। বকুল কইল,'' দূর বেডা, অফিস না। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। দুমাইয়া কারেন্ট হইব''।
মুকুল : ফেসবুকে হগলে স্ট্যাটাস মারতাসে। কেউ ভালা কয়, কেউ মন্দ। বুঝতাসি না। আমি
এহনও কিছু কয় নাই। আগে হওক। ফলাফলডা দেহি।
হারেস : হরে ভাই, দেখতে দেখতে সুন্দরবনডানি ফালাফালাহইয়া যায়।
ফখরুল: সরকার বড়ই চালাক। লোডশেডিং হইলে পাবলিক গিয়া ওইনে ভাংচুর করতে পারব না। তারউপড়ে বাঘের ডর আছে
না। খামছায়া ধরব।
বকুল: নারে ভাই, হুনতাসি বাঘেরা সুন্দরবন থাইকা সমানে রিজাইন নিতাসে।
ছদরুল : রিজাইন নিব কে?
ফখরুল : বাঘ কি কয়লা খায় থাকব নি!!
ছদরুল : বাঘগো এলাকায় এত বড় কাম। তাগো সুবিধা দিব না। বনের ভিত্রে লাইটিং করুক। রাইতেও হরিণ ফকফকা দেখা যাইব।
ফখরুল : ওইনে খালি বাঘগো দেখলে হইব। হরিণগো অধিকার নাই।
বকুল: দুইন্নাত অসহায়ের দাম নাই। আমগো অত চিন্তা কইরা লাভ নাই। আমগো খুশির খবর একটাই অতি শীঘ্র ফেসিয়াল মাস্ক আসতাসে।
মুকুল মনে মনে কয় বউ বশে আনার জিনিস আসতাসে। হারেস কইল,'' লও, সুন্দরবনডা দেইখা আয়। যে যুগ পড়ছে দেখবা আমরা
বাইছা আছি। বনডা নাই''।
মুকুলের কপালে চিন্তার ভাজের চড় উঠে। দেখতেতো মনডা চায়। বউয়ের পারমিশন পাওয়াডা বড়ই টাফ।
সকলে হ হ কয়। সুন্দরবন যাইতে হইব। ছদরুল কাপ ধুইতে ধুইতে কয়,'' দোকান ফালাইয়া কেমনে যামু? দূর, যা আছে কপালে লও।মিস করা ঠিক হইব না''।
উন্নয়নের লাগাম ধইরা রাখা যাইতেছে না। আতকা শুনা যাইব রামপালের নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হইতাসে। পরে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ম্যাচ। ফ্লাড লাইটে মাঠ জ্বলজ্বলা।ফ্লাড লাইটের হাফ আলো ইন্ডিয়াগো হাফ আমগো। হোওয়াট এ কম্বিনেশন।
একটা জোনাক পোকা ছদরুলের দোকানে উড়তাসে। ঢিম ঢিম বাতি জ্বলতাসে।
বকুল চিক্কুর দিয়া ওঠে, দেখ! দেখ! জোনাকি। কতদিন পরে দেখলাম!
মুকুল : হ। ছোডবেলা কত দেখতাম! ঝোপের মধ্যে। হাজার হাজার। জ্বলত, নিভত। ওই সময় কারেন্ট লাগত না। তারপরেও বাত্তি জ্বলত।
এনার্জি বাল্বের আলোর নিচে জোনাকিডা হারায় গেছে।
কারেন্ট আইসা পড়সে। রামপালের কারেন্ট।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:২৮