somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রধানমন্ত্রীকে কেন হজরত বলা হবে, বললেই সমস্যা কী ?

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্বাভাবিক অর্থে হজরত একটি ধর্মীয় শব্দ হিসেবেই পরিচিত। সেটা কেবলই সম্মানার্থে যে ব্যবহার না হয়ে ধর্মীয় পরিচয়ে ব্যবহার হয় সেটা জানার একটি অন্যতম কারণ হলো আমাদের বাংলাদেশ তথা দক্ষিণএশীয় দেশগুলোতে কেবলই একটি বিশেষ ধর্মের প্রবক্তা অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনদের নামের আগে হজরত শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ভাবগত ভাবে হজরত শব্দটির বেশ কয়েকটি প্রতিশব্দ বা ভিন্নার্থ আছে। বিশেষ করে নবী রাসূলগণের নামের আগে যখন হজরত শব্দটি ব্যবহৃত হয় তখন তা ধর্মপ্রচারক হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে বলে ভাষাবিদ এবং সাবেক কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর যথাশব্দ গ্রন্থে বলেছেন। আবার অন্য অর্থ বুঝতে গিয়ে এই শব্দের অর্থ তিনিই আবার বলছেন আদেশকর্তা বা প্রভু। হজরত শব্দের যথাশব্দ হিসেবে তিনি রাজা অধিনায়ক প্রতিপালক সম্রাট সুলতান সহ এধরনের অনেক শব্দ ব্যবহার করেছেন। অভিজন বা অভিজাত শ্রেণী হিসাবেও হজরত শব্দটিকে চিহ্নিত করেছেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। গুগল ঘেঁটে এই শব্দটির অর্থ জানতে গেলেও পাশাপাশি অর্থই পাওয়া যায়। তুরস্ক এবং বসনিয়া অঞ্চলের হাজরিতি শব্দ থেকেই হজরত শব্দটির উৎপত্তি এবং সে সময় কেবল নবী রাসূলদের নামের আগেই এই শব্দটি ব্যবহার হতো।
আমি ধারণা করছি কেবল দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও কোন ইসলামী প্রবক্তার নামের আগে হজরত শব্দটি ব্যবহার হয়না। অঞ্চলগত কারণে আমাদের এখানে এই হজরত শব্দটি হয়তোবা সম্মানিত বা মাননীয় অর্থে ব্যবহার করা হয়। আমার ব্যক্তিগত এই ধারণার কারন হলো বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের নামের তালিকা খুঁজতে যেয়ে আমি কারোই নামের আগে হজরত উপাধিটি খুঁজে পাইনি, আমি স্বীকার করছি কেবল এই যুক্তিতে আমার এই ধারণাটি প্রতিষ্টিত হয়ে যায় না।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হজরত শেখ হাসিনা বলে সম্ভোধন করার ব্যক্তিগত অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন সরকারদলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তাঁর এই ব্যক্তিগত খায়েশে আমি কোন দোষ দেখিনা। ব্যক্তিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অনেকে অনেকরকম সম্মানজনক শ্রদ্ধাপূর্ণ অভিধায় ভূষিত করে থাকি। সেটা হতেই পারে। প্রধানমন্ত্রীর অনন্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে রাষ্ট্রে সর্বস্থরের মানুষের সবধরনের খুঁজ খবর রাখার যে অভূতপূর্ব মানসিকতা সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে এবং এরকম নতুন নতুন সম্মানজনক শব্দে তাঁকে অভিনন্দিত করাই যায়। কিন্তু মাননীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এই অভিধাটি প্রধানমন্ত্রীর নামের আগে ব্যবহার করার পূর্বে যে বক্তব্যটি প্রদান করেছেন তা সুন্দর ছিলনা। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইসলাম ধর্ম বিষয়ক উন্নয়ন কর্মকান্ডকে সামনে নিয়ে এসে, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন বিবেচনায় তাঁর নামের আগে সংশ্লিষ্ট ধর্মের বিশিষ্টজনদের নামের আগে ব্যবহার হয় এমন একটি ধর্মীয়শব্দ জুড়ে দেবার মাধ্যমে মূলত মহান জাতীয় সংসদেই তিনি বাংলাদেশের সংবিধানকে অমান্য ও অপমান করেছেন।

১৯৭২ সালের বাংলাদেশের প্রাথমিক সংবিধানের চারটি প্রধান মূল ভিত্তির মধ্যে একটি ছিলো ধর্ম নিরপেক্ষতা। ভিত্তিটি ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে সরিয়ে ফেলে পুনস্থাপন করেন " পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র উপর। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ আদালত ধর্ম নিরপেক্ষতাকে সংবিধানের একটি মূল মতবাদ হিসাবে পুনঃস্থাপন করেন। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ফলে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা একটি মূল মতবাদ হিসেবে পুনঃস্থাপিত হবার কারণে সংবিধানের নির্দেশনা অনুসারে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিগুলো উপলব্ধি করা হবে নিম্ন লিখিত বিষয় গুলো বর্জন দ্বারা -

০১/যেকোনো প্রকারের সাম্প্রদায়িকতা
০২/রাষ্ট্রের কোন রাজনৈতিক অবস্থায় কোন ধর্মের স্বপক্ষতা
০৩/রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অবৈধ ব্যবহার
০৪/নির্দিষ্ট কোন ধর্ম চর্চার কারনে যেকোনো ধরনের বৈষম্য অথবা নিপীড়ন।

এখন স্বপন মাহমুদ সাহেব ইসলাম ধর্মের প্রচারক প্রবক্তা বা ধর্মগত উন্নয়নকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে চিহ্নিত করে হয় তিনি নিজে সংবিধানকে অগ্রাহ্য করছেন অথবা প্রধানমন্ত্রী সেটা করেছেন। যে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা চিনি, যাঁর মানবিক গুণাবলী এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত সেই প্রধানমন্ত্রীকে এখন পর্যন্ত আমরা সংবিধানকে অমান্য বা অগ্রাহ্য করতে দেখিনি। উনি নিজে ইসলাম ধর্মের মানুষ, তিনি একজন ধর্মীয় রীতিনীতি যথাসম্ভব পালনকারী মানুষ অপরদিকে একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল ধর্মের মানুষের প্রতিই রয়েছে তাঁর সমান সম্মান। দৃশ্যত ইসলাম ধর্ম কেন্দ্রিক উন্নয়নগুলো চোখে পড়ার কারণ শতকরা হিসেবে এই ধর্মের মানুষেরই অবস্থান বেশি বাংলাদেশে। সমানুপাতিক হরে অন্যান্য ধর্মেরও রক্ষনাবেক্ষন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্টানের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সরকারের রয়েছে সমান ভূমিকা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের মূল কারণ তারা মুসলমান সম্মানিত হুইপের এই তথ্য সঠিক নয়। আমাদের মানবিক প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার একদল নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ হিসেবেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। পৃথিবীময় সেটাই প্রচার পেয়েছে, ধর্মীয় পরিচয় সেখানে খুবই গৌণ ছিল। বাংলাদেশ একটি স্যাকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, আওয়ামীলীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিকদল। আওয়ামীলীগের কেবল চাটুকার শ্রেণীর রাজনীতিবিদরাই সেটা ভুলে যান। সম্মানার্থে হজরত বলা মন্দ কিছু নয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে অশিক্ষাগত কারণে অথবা পরিকল্পিত ভাবে ক্লাসিফাইড করে দেবার যে চেষ্টা সেটা নিশ্চয়ই নিন্দনীয়। মহান সংসদে এমন অনভিপ্রেত আচরণের জন্য স্বপন মাহমুদের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। মাননীয় স্পীকার এই শব্দটি এক্সপাঞ্জ করার মাধ্যমেই আমাদের রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে সম্মান প্রদর্শন করতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:৪৭
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×