অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়

এবার সৌর বিদ্যুতেই চলবে ফিল্টার। ব্যাটারি ছাড়াই ওই ফিল্টারে প্রতিদিন ৪০০লিটার পানীয় জল পরিশুদ্ধ করতে পারবে। ভারতের সৌর গবেষণার দিশারি ডঃ শান্তিপদ গণচৌধুরির এই নতুন উদ্ভাবনকে ঘিরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ ২৪পরগনার হোসেনপুরের আরাধনা স্কুল অব অরফ্যানে প্রথম এই ফিল্টার ব্যবহারের জন্য তুলে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তা এখন ওই স্কুলে কাজও করছে।
সল্টলেকের অর্ক রিনিউয়েবেল কলেজে বছরখানেকের গবেষণা চালিয়ে এই নতুন সৌর ফিল্টারটি তৈরি করেছেন ডঃ শান্তিপদ গণচৌধুরি। তিনি জানান, এখনো দেশের ৬৫শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন। রাতের আলো সঙ্গে পানীয় জলের সমস্যা সেখানে অত্যন্ত বেশি। শহর অঞ্চলেই এই ফিল্টার খুব কার্যকর। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রকের সহযোগিতায় ডঃ গণচৌধুরি এই প্রথম দেশের কোনও বিদ্যুৎবিহীন আধুনিক জলের ফিল্টার তৈরি করে দেখালেন। মজার কথা এই ফিল্টার চালাতে কোনও ব্যাটারিও লাগে না। প্রতিদিন এই ফিল্টার গড়ে ৩০০-৪০০লিটার বিশুদ্ধ পানীয় জল তৈরি করতে পারবে। গ্রামীণ স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এমনকি গ্রামের ট্যুরিস্ট লজে যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বড়ই অনিয়মিত সেখানে এই ফিল্টার দারুণ কাজে আসবে।
অর্ক রিনিউয়েবেল কলেজের চেয়ারম্যান ডঃ গণচৌধুরি জানাচ্ছেন, শুধু জলে মিশে থাকা ভাসমান কণাও নয়, নতুন এই সৌর ফিল্টার জলের আয়রন ও ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলতে যথেষ্ট সক্রিয়। পরিশোধনের অন্যান্য পদ্ধতির পাশাপাশি এতে ব্যবহার করা বিভিন্ন প্রক্রিয়া। এই ফিল্টারে রয়েছে অতিবেগুণি রশ্মির ব্যবহার। খাওয়ার জন্য দুই দিনের জলকে এই ফিল্টারের সংগ্রহ করে রাখা যাবে। সমীক্ষায় বলছে, দেশের গ্রামীণ এলাকায় পরিশুদ্ধ জলের অভাবে ৩৫শতাংশ রোগে আক্রান্ত হন সেখানকার বাসিন্দারা। জলবাহিত রোগে গ্রামীণ এমনকি শহরতলির মানুষরা দারুণ ভোগেন। ইদানীং কলকাতা ও শহরতলিতে মারাত্মক আকার নিয়েছিল জলবাহিত রোগ। মৃত্যুও ঘটতে দেখা গেছিল। অপরিশোধিত জল খেয়ে অসুস্থ হওয়ার জন্য এখনো ৪৭লক্ষ ঘণ্টার শ্রমদিবস নষ্ট হয়। সব কিছুই এক লহমায় বদলে দেবে এই সৌর ফিল্টার।
দক্ষিণ ২৪পরগনার হোসেনপুরে আরাধনা অরফ্যান স্কুলে রাজ্যের প্রথম সৌর ফিল্টার বসানো হলো। আরাধনা স্কুলের ১০০জন অনাথ শিশু এবার থেকে বিশুদ্ধ পানীয় জল খাওয়ার সুযোগ পাবে। রাজ্যে এই ধরনের ফিল্টার এই প্রথম বসানো হলো। সৌরশক্তি ব্যাটারিকে চার্জ দেওয়ার বদলে এবার জলকে পরিশোধন করে রেখে দেবে। এই ফিল্টারের দাম দাঁড়াচ্ছে ৫০হাজার টাকা। উৎপাদন বাড়লে এই ফিল্টারের খরচ কমার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে জলকে পরিশোধন করে ২০০লিটার ট্যাঙ্কে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যাটারি চার্জ নয়, সরাসরি জলকে পরিশোধন করে রাখাই উদ্দেশ্য।