somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'একাত্তরে আমরা ভুল করিনি' - গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি

১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত শতাব্দীর আশির দশকে গড়ে ওঠা জামাত-শিবিরবিরোধী আন্দোলনে শাহাদত চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিচিত্রা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। তখনকার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলো যখন জামাত-শিবির এবং অবৈধ নাগরিক গোলাম আজমের বিরোধিতায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল তখন এসব প্রশ্নে বিচিত্রা ছিল আপসহীন ও অনড়। সব দ্বিধা-হুমকি উপেক্ষা করে বিচিত্রা এ সম্পর্কিত অনেক প্রচ্ছদ কাহিনী প্রকাশ করে। বলতে গেলে বিচিত্রার হাতেই ক্রমান্বয়ে দানা বাঁধতে থাকে জামায়াত-শিবিরবিরোধী আন্দোলন। বিচিত্রা এই আন্দোলনের সূচনা ঘটিয়েছিল ১৯৮১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত প্রচ্ছদ কাহিনীর মাধ্যমে। ইতিহাসের বিবেচনায় এটি নতুন প্রজন্মের জন্যও সমান গুরুত্ব বহন করে। সেই গুরুত্বের কারণে প্রচ্ছদ কাহিনীটি পুনর্মুদ্রণ করলাম। এখানে তৎকালীন বিচিত্রার বানান রীতি অবিকল রাখা হয়েছে। প্রচ্ছদ কাহিনী লিখেছিলেন মাহফুজ উল্লাহ, আহমেদ নূরে আলম, শেহাব আহমেদ ও মতিউর রহমান চৌধুরী। সহায়তা করেছেন কাজী জাওয়াদ, মাহমুদ শফিক ও হাসান হাফিজ।

'একাত্তরে আমরা ভুল করিনি' - গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি

সেই কালো শক্তি জামাতে ইসলামী এখন সর্বশক্তি নিয়ে সক্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। সক্রিয় ধর্মের নামে। ধর্মের নামেই ৭১ সালে জন্মলগ্নে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করতে সর্বাত্মক অপপ্রয়াস চালিয়েছিল জামাত। সেই জামাত ৮১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে ঘোষণা করেছে। তাদের এই ঘোষণা এসেছে স্বাধীনতা অর্জনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশে জামাতের সকল কার্যকলাপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামাত কর্তৃক নির্বাচিত কিন্তু অঘোষিত আমীর এবং পাকিস্তানী নাগরিক অধ্যাপক গোলাম আজম। ৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র বিরোধিতার অভিযোগে ‘নাগরিকত্বহীন’ অধ্যাপক গোলাম আজম-এর নাগরিকত্ব পুনর্বহালের দাবীতে জামাত সংগঠিত হচ্ছে। অধ্যাপক গোলাম আজমের নেতৃত্বে জামাতীরা তাদের তথাকথিত ধর্মীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠায় রক্তাক্ত পথ অনুসরণের পক্ষপাতী। তারা শ্লোগান দিচ্ছে মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী ইত্যাদি। কাফনের সাদা কাপড় পরে তারা বহু স্থানে মিছিল বের করেছে। কিন্তু এই জামাতী নেতা শুধু ৭১ সালে নয়, ৭৩ সালেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন। ৭৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চাইলে অধ্যাপক গোলাম আজমই ছিলেন অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা। এমনকি বহু মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে ‘একঘরে’ করে রাখার অপচেষ্টা করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যাতে স্বীকৃতি না দেয় সেজন্যে উল্কার মতো তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার ও তার দলের সকল অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আজো অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। যে দেশের স্বাধীনতা চাননি, সশস্ত্র বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হননি যিনি, স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী এই ব্যক্তিটি এখন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের জন্যে কেনো মরিয়া হয়ে উঠেছেন? এই প্রশ্ন এখন সকলের মনে। বাংলাদেশকে তিনি চান কি না, বাংলাদেশের অস্তিত্ব বা আদর্শে বিশ্বাস করেন কি না সে প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় নি। এব্যাপারে তিনি যা বলেছেন তাতে দৃঢ়ভাবে মনে করা যায় বাংলাদেশকে তিনি ‘রাষ্ট্র’ হিসেবে এখনো গ্রহণ করেন নি। তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ ‘একটা জমি, একটা মাটি, আর কিছু নয়। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আদর্শ কি সে ধারণা আমার নেই। শুধু জানি, বাংলাদেশ একটা জমি, একটা মাটি, মাটির কোনো আদর্শ থাকে না। এই ভূখন্ডের অধিবাসীরাই ঠিক করবে কোন আদর্শের ভিত্তিতে দেশ চলবে।’ তার এ-কথা ৭১ সালের ৩১ আগস্টেরই কথার প্রতিধ্বনি। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘কোনো ভালো মুসলমান তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থক হতে পারে না।’ গোটা জাতি যেখানে স্বাধীনতার পক্ষে ছিলো সেখানে তিনি কেনো স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন? এ-প্রশ্নের উত্তর এখনো তিনি দেন নি। তবে জামাত দেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা অরাজকতা বিশৃঙ্খলতার দিকে দেশকে ঠেলে দেবে বলে বিভিন্ন মহলের রাজনীতিকরা আতংকিত। ইসলামী ভাবাপন্ন দলগুলোও জামাতের ক্রিয়াকলাপে আশংকিত। জামাত দেশে আবার ‘রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার নীল নকসা’ তৈরি করছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। জামাতীরা কেবল নিজেদেরকেই ‘মোমিন’ মনে করে, তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আর সবাই ‘কাফের’, হোক সে মুসলমান বা অন্য যে কোনো ধর্মের।
এই দেশের ধর্মপ্রাণ-ধর্মভীরু মুসলমানরা আর যাই হোক জামাতের দৃষ্টিতে মোমিন নয়। জামাতী হলেই তারা প্রকৃত মুসলিম হন। ধর্মকে সামনে রেখে জামাত এক সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়, সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন ঘটনাগুলো থেকে সকলের এ-ধারণা হয়েছে।

অতীত ও বর্তমান
১৯৪১ থেকে ১৯৮১। ৪০ বছর। ইতিহাসের পালা বদলের পালায় জামাতে ইসলামী। পাঞ্জাবের মওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী জন্ম দিলেন জামাতে ইসলামী হিন্দের। বৃটিশ ভারত বিভাগ হল ১৯৪৭। দু-দেশে দুটি শাখা গঠন করে মওলানা মওদুদী অস্তিত্ব বজায় রাখলেন দলের।
প্রথমে ধর্মীয় আন্দোলন তারপর রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন মওলানা ও তার সংগঠন। ইসলাম ধর্মকে তার নিজস্ব ধ্যান ধারণার ছাচে ফেলে অসংখ্য বই পুস্তিকার মাধ্যমে প্রচার করতে লাগলেন জামাত অর্থাৎ যূথবদ্ধ জীবন ও ইসলামের প্রাথমিক শাসন পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের দর্শন। বিরোধ বাধল। প্রথমে মওলানা আলেমদের সঙ্গে ইসলাম সম্পর্কে তার নিজের ব্যাখ্যা নিয়ে এরপর সংঘাত পাকিস্তান প্রশ্নে।
মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হবার পর মুসলিম লীগ পাকিস্তান আন্দোলন নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
মওলানা মওদুদী বললেন, কেবলমাত্র জামাতে ইসলামীর নেতৃত্বেই কায়েম হতে পারে মুসলিম রাষ্ট্র। মুসলিম লীগের পাশ্চাত্য শিক্ষিত নেতাদের হাতে নয়।
১৯৪৭-এর ভারত বিভক্তির পর ১৯৫১ সালে মওলানা মওদুদী আবার বিতর্ক সূচনা করলেন কাদিয়ানী প্রসঙ্গ নিয়ে। তারা মুসলমান নয় এ ফতোয়া দেবার পর লাহোরে বেধে গেল রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য মওলানা মওদুদীর বিচার হলো। ফাসির দন্ডাজ্ঞা সত্ত্বেও ক্ষমা পেয়ে গেলেন। এই ক্ষমায় বহিঃশক্তির হাত ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও জামাতের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আরও বিতর্ক বিরোধ চলল জামায়াতে ওলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম এবং অন্যান্য আলেমদের সঙ্গে।
১৯৬১ সালে আবার মওলানা মওদুদী জেলখানা থেকে বেরিয়ে বিতর্কের সূচনা করলেন। জন্মশাসন পরিকল্পনা ও মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরুদ্ধে সারা পাকিস্তানব্যাপী বিক্ষোভ ও জন্মশাসনের প্রচারণার সাইন বোর্ড ভাঙার মাধ্যমে।
১৯৭১ সালে মওলানা মওদুদী যে পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিলেন তা রক্ষার জন্য হাত মেলালেন পাকিস্তানী সামরিক জান্তার সঙ্গে।
জন্ম হল পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর (প্রধান) অধ্যাপক গোলাম আজমের নেতৃত্বে দলের সশস্ত্র শাখা আল-বদর সংগঠনের।
২২ নভেম্বর ১৯৭১। জেনারেল নিয়াজীর বাহিনীর পরাজয়ের লক্ষণ সুস্পষ্ট হয়ে যাবার মুহূর্তে মওলানা মওদুদী তলব করলেন গোলাম আজম ও পাকিস্তান জামাতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর (সহসভাপতি) মওলানা আবদুর রহীমকে।
এক বিমানে তারা দুজন লাহোর পৌঁছালেন। ২৩ নভেম্বর পাকিস্তান রক্ষার সংগ্রামে তাদের ভূমিকার জন্যে সংবর্ধনা দেয়া হল।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি রাষ্ট্র সংযোজিত হল। ঘাতকের অস্ত্র উপেক্ষা করে রক্তের ভিত্তির উপর জন্মগ্রহণ করল বাংলাদেশ।
বেঁচে গেলেন অধ্যাপক গোলাম আজম ও মওলানা রহীম। ১৯৭২ সালে পাকিস্তান ছেড়ে হজ্জ করার জন্য জেদ্দা গমন করলেন গোলাম আজম। সেখান থেকে দুবাই, আবুধাবী, কুয়েত, বৈরুত ও লিবিয়া সফর শেষে এপ্রিল ১৯৭৩ তিনি লন্ডনে চলে যান।
১৯৭৩-এ পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বাংলাদেশের স্বীকৃতির প্রশ্নে মতামত আহ্বান করেন।
এ উপলক্ষে পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর মজলিশে সূরার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শুধু দুজন সদস্য মওলানা আবদুর রহীম ও চৌধুরী রহমতে এলাহী বলেন স্বীকৃতি দেয়া যায়। বিরোধিতা করলেন অধ্যাপক গোলাম আজম ও অন্যান্য নেতারা।
মওলানা রহীম এরপর প্রত্যাবাসন ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসেন।
জানা গেছে গোলাম আজমের উদ্যোগে ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে যে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার সপ্তাহ’ পালিত হয় মওলানা রহীম তার বিরোধিতা করেন। জামাতে ইসলামী স্বাধীন বাংলাদেশে ভিন্ন প্রেক্ষিতে পাকিস্তানী আমলের রাজনীতি বর্জন করে গড়ে তোলার প্রশ্নে বিরোধ ক্রমাগত দানা বাধতে থাকে। এ ছাড়াও তিনি জামাতে ইসলাম নামে সংগঠনকে পুনর্জাগরিত করতে চাইলেন না বিশেষতঃ কালো অতীতের কারণে। জামাতের গোড়া রাজনীতিও তিনি এবং দলের অধিকাংশ কর্মীই চাচ্ছিলেন না। তারা অতীতের বিশেষতঃ ১৯৭১ এ দলের ভূমিকা ভুল বলে বিশ্লেষণ করে মতামত প্রকাশ করতে থাকেন। ফলে দলের চরমপন্থী নেতাদের সঙ্গে তাদের বিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে থাকে। শঙ্কিত গোলাম আজম দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
জামাতে ইসলামী পুনর্জাগরিত করার ব্যাপারে কর্মীদের অনিচ্ছা থাকলেও গোলাম আজম বাধ্য করেন তার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে। দলের প্রতি সুশৃঙ্খল অনুগত কর্মীরা নীরবে মেনে নিলেও অনেকেই এ সময় দল ছেড়ে যান।
জামাতকে পুনর্জাগরিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও অনেকেই মওলানা রহীমকে নেতৃত্বে দেখতে চান। তারা বলেন, যেহেতু গোলাম আজম দেশের নাগরিক নন তাকে দলের নেতৃত্বে আনা ঠিক হবে না। এরপর গোলাম আজমের নির্দেশে মওলানা রহীমের এবং তার সঙ্গের অনেকের নাম পর্যন্ত দল থেকে খারিজ করে দেয়া হয়।
গোলাম আজম লন্ডন থেকে শুরু করেন ফেলে যাওয়া দলের সাথীদের সংগঠনের প্রক্রিয়া। মওলানা রহীম তার অবর্তমানে দায়িত্ব নেন বাংলাদেশে জামাতে ইসলামীকে পুনর্গঠনের। গোপনভাবে কাজ চলতে থাকে। লন্ডনে এ সময় জড়ো হতে থাকেন ১৯৭১-এ পালিয়ে যাওয়া দলের নেতা ও কর্মীরা, পূর্ব পাকিস্তান জামাতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম সাপ্তাহিক হিসেবে লন্ডনে প্রকাশিত হয়।
ইতিমধ্যে, এপ্রিল ১৯৭২ তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। ১৯৭৬-এর ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের এক প্রেসনোটে বলা হয় যাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন। গোলাম আজম সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন থেকে নাগরিকত্ব ফিরে পাবার জন্যে দরখাস্ত করেন। ১৯৭৭ এবং ১৯৭৮ তিনি আবার দরখাস্ত করেন। ২০ মার্চ ১৯৭৮ সরকার তাকে নাগিরকত্ব প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। ১১ জুলাই ১৯৭৮ তিনি পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে তিন মাসের ভিসায় ঢাকায় ফিরে আসেন। ভিসার আবেদনে উল্লেখ করেন তার মাতা অসুস্থ। অসুস্থ মাতাকে দেখার সুযোগ দেবার জন্যে মানবিক কারণে তাকে ভিসা প্রদান করা হয়।
আট বছর পর এলেন তিনি। কিন্তু বসে থাকতে পারলেন না। দলকে পুনর্গঠনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন। প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের এক পুনর্মিলনী সভায় অতিথিদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেন। তারপর নারায়ণগঞ্জ। সভা করতে পারেন নি প্রতিরোধের মুখে। জামালপুরে সভা করতে পারেন নি। এরপর ফরিদপুরে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তার জেলায় প্রবেশে বিধি নিষেধ আরোপিত করা হয়। তবুও গোপনে তার কার্যকলাপ চলতে থাকে।
১ জানুয়ারি ১৯৮১। বায়তুল মোকাররমে প্যালেস্টাইন মুক্তি বাহিনীর পক্ষে ইসরাইলীদের সঙ্গে যুদ্ধে দুজন বাংলাদেশী শহীদদের জানাজায় অংশগ্রহণে এলেন তিনি। জানাজা শেষে হঠাৎ উপস্থিত জনতা তাকে চিনে ফেলে। তাকে কয়েকজন মারধরও করে।
পাকিস্তানী নাগরিক হিসাবে নাগরিকত্ব বিবেচনাধীন থাকাকালীন হঠাৎ কেন তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নিচ্ছেন।
সমস্যায় পড়ে যান গোলাম আজম ১৯৭৩ সালে মওলানা রহীমের দেশে প্রত্যাবর্তন এবং জামাতের নেতৃত্ব গ্রহণের পর। মওলানা আবদুর রহীম গোপন দলের কাঠামো বজায় রেখে ‘ইসলাম পছন্দ’ ছয়টি দক্ষিণপন্থী দলের সমবায়ে ২৪ আগস্ট ১৯৭৬ গড়ে তোলেন ইসলামিক ডেমক্রেটিক লীগ। প্রাক্তন নেজামে ইসলাম নেতা মওলানা সিদ্দিক আহমদকে এ দলের সভাপতি নির্বাচিত করে মওলানা রহীম হন প্রথম সহ-সভাপতি। অবশ্য জামাতের নেতৃত্বে প্রাক্তন পিডিপি, খেলাফতে রব্বানী, ডেমক্রেটিক পার্টি ইত্যাদির সমবায়ে এ মোর্চা গঠনের প্রক্রিয়ায় এ দলগুলোও বিভক্ত হয়ে যায়।
কিন্তু মওলানা রহীম জামাতকে সংগঠিত করলেও প্রবাসী গোলাম আজমের সঙ্গে ক্রমাগত দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। দলের চরমপন্থীরা বাংলাদেশকে মেনে নেয়ার প্রশ্নে মওলানা রহীমের যৌক্তিকতাকে চ্যালেঞ্জ করেন। মওদুদীর অধিকাংশ বইয়ের অনুবাদক ও দলের অন্যতম তাত্ত্বিক মওলানা রহীমকে তারা অভিযুক্ত করতে থাকেন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ‘আঁতাতের’ জন্যে। এমনি পরিস্থিতিতে মওলানা সিদ্দিক আহমদ ও অন্যান্য অজামাতপন্থী দলগুলো বেরিয়ে যান জামাতের হস্তক্ষেপের কারণে ২৩ অক্টোবর ১৯৭৭।
গোলাম আজম ফিরে আসার পর মওলানা রহীমের সঙ্গে সংঘাত বেড়ে যায়। ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্টারী নির্বাচনের পর আই, ডি, এল-এর ছয়টি আসন লাভের পর গোলাম আজম অনুভব করেন দলকে স্বকীয় রূপে নিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া মওলানা রহীমের সঙ্গেও তার বিরোধ তীব্র হতে থাকে। এমনকি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার পরিচালনা নিয়ে মারপিটও ঘটে। সম্পাদক আখতার ফারুককে পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়।

২৫, ২৬, ২৭ মে ১৯৭৯ ঢাকায় জামাতে ইসলামীর বাংলাদেশে প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে। গোলাম আজমকে গোপনে আমীর নির্বাচিত করা হয় নাগরিকত্ব লাভ সাপেক্ষে। প্রকাশ্যে ইয়াহিয়া খানের শেষ গভর্নর আবদুল মালিকের অন্যতম মন্ত্রী আব্বাস আলী খানকে অস্থায়ী আমীর নির্বাচিত করা হয়। ফেব্রুয়ারি ১৯৮০ দলের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী সাংগঠনিক পক্ষ পালন করা হয়। পাশাপাশি গোলাম আজমের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল কমিটিও দাঁড় করানো হয়। সারা দেশব্যাপী পোস্টার প্রচারপত্র ও স্বাক্ষর অভিযান চালানো হয় গোলাম আজমের নাগরিকত্ব দাবি করে।

১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ প্রথমবারের মতো বায়তুল মোকাররমে জামাতে ইসলামীর জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সাত ডিসেম্বর ১৯৮০ দলের পক্ষে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে আব্বাস আলী খান ৫ দফা দাবীনামা পেশ করেন। এ সাংবাদিক সম্মেলনে আব্বাস আলী খান বলেন, ‘১৯৭১ সালে দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য যা করেছি ঠিকই করেছি ভারতীয় আগ্রাসনের হাত থেকে জনগণকে হেফাজত করার জন্যে’। এ বক্তব্য নাড়িয়ে দেয় দশ বছর আগেকার কালো অতীতকে। নতুন করে দৃষ্টি আবদ্ধ হয় জামাতের উপর।
১ মার্চ ১৯৮১ বায়তুল মোকাররমে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র’ কায়েমের লক্ষ্যে ‘ইসলামী বিপ্লব’-এর ৭ দফা পেশ করেন আব্বাস আলী খান।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ২৫ মার্চ ’৮১ প্রদত্ত বক্তৃতায় ‘স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্যে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের মানুষ আবার অস্ত্র তুলে নেবে’ এবং ‘কতিপয় লোক স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তাদের আমরা ভালভাবে চিনি। ১৯৭১-এ স্বাধীনতা বিরোধীরা কিছুই করতে পারেনি, আজ যারা বিদেশী অনুপ্রেরণায় স্বাধীনতাকে দুর্বল করতে চাচ্ছে তারাও কিছু করতে পারবে না, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ধ্বংস করে দেবে।’ এ বক্তব্যের পূর্বাহ্নেই ২১ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক ১ মে থেকে ‘রাজাকার আলবদর প্রতিরোধ’ সপ্তাহ পালনের ডাক দেয়। এর উত্তরে রংপুরে জামাত আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস। সারা দেশ হয়ে ওঠে প্রতিবাদ মুখর। এরপর ২৯ মার্চ আব্বাস আলী খান এক সাংবাদিক সম্মেলনে আবার ’৭১ এ আমরা যা করেছি ঠিকই করেছি’ এবং ‘একাত্তরে বাংলাদেশের কনসেপ্ট সঠিক ছিল না’ বলে পুনরায় তাদের অতীত ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। এ বক্তব্যে আবার তাদের প্রতি সবার দৃষ্টি আবদ্ধ হয়।
এই প্রত্যক্ষ চ্যালেঞ্জের পর বিভিন্ন স্থানে ঘটতে থাকে মুক্তিযোদ্ধা ও জামাতের সঙ্গে সংঘর্ষ।
মূলতঃ ৪০ বছরে জামাতে ইসলামী প্রতি দশ বছর পরপর বিভিন্ন বক্তব্যে জনগণের সঙ্গে কনফ্রনট্রেশনে আসছেন।
এ পরিস্থিতিতে তারা দলের ভবিষ্যৎ অতীতের নিরিখে কি নিরীক্ষা করবেন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বাস্তবতার ভিত্তিতে না পুরানো অতীতকে নিয়ে আসবেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এটাই ১৯৮১-র প্রশ্ন।

২৫ মার্চ। ১৯৭১ মধ্যরাতে হঠাৎ গর্জে উঠলো বন্দুকের হিংস্রতা। এমন হিংস্রতা, ধ্বংসলীলা, হত্যাযজ্ঞ এই নীরব নিভৃত সবুজ-শ্যামল দেশ আর কখনও দেখেনি। এসব চলেছে শুধু ধর্মের নামে, যে ধর্মকে এদেশের মানুষ প্রাণের চেয়ে বড়ো বলে জেনেছে। কেবল ধর্মের নামে শোষণ-বঞ্চনা অব্যাহত রাখবে এদেশের মানুষের ওপর পরবর্তী ২৬৬ দিন চলেছিলো অমানুষিক বর্বরতা, যা নাদির শাহ চেঙ্গিজ খানের রক্তলোলুপতাকে ম্লান করে দিয়েছিলো। এই ২৬৬ দিন গোলাম আজম নাকি এ-দেশের মানুষের জান-মালের হেফাজত করেছিলেন। এ-কথা বলেন জামাতীরা। তারা স্বাধীনতা যুদ্ধকে বলেন গৃহযুদ্ধ। তারা নাকি শুধু ভারত বিরোধিতা করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিরোধ নেই। তিনি বাংলাদেশকে ‘তথাকথিত’ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দুষ্কৃতকারী’ বলেন। ২৬৬ দিন চালিয়েছিলেন জুলুম-হত্যা-ধর্ষণের অকথ্য বর্বরতা (এরা নাকি এসব করেছিলেন ইসলাম রক্ষার জন্যে)। দক্ষিণপন্থী দলগুলোর মধ্যে জামাত সবচেয়ে সংগঠিত অংশ হিসেবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে শুধু সমর্থনই নয়, জনবল দিয়ে সহায়তা করেছে। জামাতের এদেশীয় এজেন্টরাই ছিলো সবচেয়ে ভয়ংকর। তাদের সদস্য রাজাকার, আলবদর ও আল শামস পাকসেনাদের নিয়ে যেতো জনপদে। ‘মুক্তি’ ধরার নামে চালাতো জুলুম, হত্যা। রাজাকার বাহিনীতে দলের বাইরের লোক বেশী থাকায় জামাত আলবদর ও আল শামস বাহিনী গঠন করে। এরা কাজ করে এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে। এবং এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা চরম নৃশংসতায় বহু কলঙ্কিত চিহ্নও রেখেছে। এদের পাকিস্তানের সূর্য অস্তমিত হওয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জামাতীরা আদর্শ ভূমি ‘পাকিস্তানকে’ রক্ষার সকল প্রকার প্রচেষ্টা বা নীচতা হীনতা হিংস্রতা দেখিয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সকালেও এরা রাজধানীতে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে গেল যাদের লাশ পাওয়া যায় বিভিন্ন বধ্যভূমিতে।

২৫ মার্চের পর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কি ঘটেছে তার সাক্ষী বাংলার তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রায় সকলেই এখনো জীবিত। তারা ঘটনাগুলোর সাক্ষী। তৎকালীন সময় সংবাদপত্রগুলো, অবরুদ্ধ সংবাদপত্রগুলোয় যেসব খবর ছাপা হয়েছে তারই ভিত্তি করে জামাতে ইসলাম ও গোলাম আজমের কার্যকলাপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নীচে দেয়া হলো।

৮ এপ্রিল : পূর্ব পাকিস্তানের জামাতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম ও সাধারণ সম্পাদক এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন : ভারত পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। তারা ঘোষণা করেন, ভারতীয় বা পাকিস্তান বিরোধী এজেন্টদের বা অনুপ্রবেশকারীদের যেখানেই দেখা পাওয়া যাবে দেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানীরা তাদের নির্মূল করবে।
কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতাকামী জনগণের প্রতিরোধ যত তীব্র হতে থাকে জামাতীরা মিথ্যের আশ্রয় ততো নিতে থাকে। ১৯ মে পূর্ব পাকিস্তান জামাতের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক ও শ্রম সম্পাদক মোহাম্মদ শফিউল্লাহ এক যুক্ত বিবৃতিতে স্বদেশের পবিত্র মাটি থেকে পাকিস্তান বিরোধীদের উৎখাত করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, আল্লাহর মেহেরবানীতে পাকিস্তান বিরোধী দুষ্কৃতকারী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ত্রাসের রাজত্ব খতম হয়েছে এবং পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে। গণহত্যার রক্তস্রোতে যখন নদীমাতৃক প্রান্তর রক্তে রক্তে লাল, নির্যাতিত-লাঞ্ছিত এদেশের অনেক পবিত্র মা-বোনেরা, তখন জুলাইয়ে জামাতের জেনারেল সেক্রেটারি আবদুল খালেক বিবৃতিতে সন্তোষ প্রকাশ করছেন এ বলে, সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে গ্রাস করার ভারতীয় চক্রান্ত জনগণ পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানের শত্রু দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যায়িত করেন জামাত প্রধান মওলানা আবুল আলা মওদুদী। ১০ জুলাই ’৭১ লাহোরে পাকিস্তানের এই সংকটকালে জনসাধারণকে আল্লাহ ও রসুলে করীমের পথে অবিচল থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, অন্যথায় শত্রু ও দুষ্কৃতকারীদের চক্রান্ত নির্মূল করা সম্ভব নাও হতে পারে। ৮১ সালের ২৪ মার্চ রংপুরে জামাতীরা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা করে। এটা নতুন কিছু নয়। ৭১ সালের ১৩ জুলাই রংপুরে জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদ মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী ও পাকিস্তানের শত্রু বলেছিলেন এবং তাদেরকে খতম করার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন।
১৫ জুলাই মিয়া তোফায়েল পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ নামে কুখ্যাত লেঃ জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন গভর্নর হাউসে। তার সঙ্গে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামের আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম। এরপর ১৭ জুলাই কুষ্টিয়ায় মিয়া তোফায়েল সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের (অর্থাৎ মুক্তিকামী জনগণকে) দমন করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। ১৯ জুলাই করাচী ফিরে গিয়ে মিয়া তোফায়েল বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে এবং বিদ্রোহ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়েছে। কিন্তু ‘বিদ্রোহ’ যে নির্মূল হয়নি, মুক্তিযোদ্ধাদের হানা তীব্রতর হচ্ছিলো তার প্রমাণ ২৫ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর জেনারেল সেক্রেটারী এবং কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহক সদস্য আবদুল খালেক সীমান্ত এলাকা বরাবর ভারতের বিরামহীন উস্কানীমূলক তৎপরতার তীব্র নিন্দা করে এক বিবৃতি দেন।
৭১ সালে জামাত ঢাকায় মহা ঘটা করে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস পালন করে। এ দিন জামাতের তরফ থেকে বলা হয় : ২৪ বছর পাকিস্তানের আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। তাই আজ পূর্ব পাকিস্তানের ঘরে ঘরে পাকিস্তানের দুশমন সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা পাকিস্তানের পহেলা নম্বরের দুশমন ভারতকে বন্ধু বলে মনে করছে।
৮১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে যখন জামাতীরা বলেন, ৭১ সালে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জনগণের কোনো রিজার্ভেশন নেই বা গোলাম আজমের নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার কমিটি ৭১ সালে গোলাম আজমের ভূমিকা সম্পর্কে যখন বলেন : ‘ভীত-সন্ত্রস্ত জনতার মাঝে জীবনের নিরাপত্তাবোধ এবং দেশে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্যে অধ্যাপক গোলাম আজমের সেদিনের বলিষ্ঠ ভূমিকা সর্বজনবিদিত। নিরীহ জনতার উপর টিক্কা খানের সামরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন।’ তখন রাজনৈতিক মিথ্যা ভাষণ ছাড়া আর কিছুই মনে হতে পারে না। বক্তৃতা বিবৃতিই নয়, আলবদর-আলশামস সৃষ্টি করে সর্বস্তরের জনগণকে হত্যার করুণ স্মৃতিই মনে পড়ে। ৭১ সালের ১৪ আগস্টেও গোলাম আজম এক পাকিস্তানে বিশ্বাস করতেন। সেদিন এক বিবৃতিতে তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব জোরদার করতে আন্তরিক চেষ্টার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, জাতি যে চরম সঙ্কটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের স্বাধীনতা দিবস পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের আদর্শের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতাই জাতীয় সঙ্কটের মূল কারণ।’
এর চারদিন পরের বিবৃতিতে বোঝা যায় গোলাম আজম মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর কি পরিমাণ রুষ্ট ছিলেন। ১৮ আগস্ট লাহোরে তিনি বলেন, ভারত দুষ্কৃতকারীদের (৭১ সালে পাকিস্তানীদের ভাষায় মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন দুষ্কৃতকারী) সাহায্য করছে। তাই পাকিস্তানের উচিত কাল বিলম্ব না করে ভারত আক্রমণ করা এবং আসাম দখল করা।
লাহোরে গোলাম আজম গিয়েছিলেন জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অধিবেশনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্যে আহূত বৈঠকে যোগ দিতে। ১৯ আগস্ট দলের সদর দফতরে নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুর রহিম এ-বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে ৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত উপনির্বাচন, পাকিস্তানের ভাবী শাসনতন্ত্র, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কতিপয় বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ, পূর্ব পাকিস্তানের বাস্তুহারা (ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী) লোকদের পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়।
২০ আগস্টের অধিবেশনে জামাত ভারতের অব্যাহত উস্কানী ও শত্রুতামূলক আচরণের প্রেক্ষিতে জেহাদের জন্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতির আহ্বান জানায়। অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের আমীর গোলাম আজম ও সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল খালেক বক্তৃতা করেন।
স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে ২৩ আগস্ট গোলাম আজম লাহোরে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে তা ভারত ও তার চরদের ষড়যন্ত্রেরই ফল। একমাত্র ইসলামের শক্তিই দেশের অখন্ডতা রাখতে পারে।
গোলাম আজম বলেন, ‘যারা জামাতে ইসলামীকে দেশপ্রেমিক সংস্থা নয় বলে আখ্যায়িত করছে তারা হয় জানে না বা স্বীকার করার সাহস পায় না যে, ইসলামের আদর্শ তুলে ধরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরোধিতা করার জন্যেই কেবল পূর্ব পাকিস্তানে জামাতের বিপুল সংখ্যক কর্মী দুষ্কৃতকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে।’ জামাতের এই অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক জীবন ধারা পুনরুদ্ধার, মিলিতভাবে দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করার জন্যে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি আবদেন জানায়।
তাই ৮১ সালেও গোলাম আজম ‘এক পাকিস্তান’ না ‘স্বাধীন বাংলাদেশে’ বিশ্বাস করেন তা নিয়ে সন্দেহগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। জামাতের কাউন্সিলের পর ৭১ সালের ২৮ আগস্ট গোলাম আজম পেশোয়ারে বলেন, শুধুমাত্র ইসলামী আদর্শই দেশের (পাকিস্তানের) দুই অংশের ঐক্য বজায় রাখতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জামাত নেতা পাকিস্তানের সংহতি রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
গোলাম আজম এরপর পাকিস্তানের রাজনৈতিক গতিধারা পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন, মন্ত্রীসভা গঠন, পাকিস্তানের শত্রুদের খতম করা ইত্যাদিতে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। গোলাম আজমের এ পর্যায়ের ভূমিকা শুরু হয় আগস্ট থেকে, যখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কান্নার রোল, রাস্তা-ঘাট-নদী খালে স্বাধীনতাপ্রিয় নারী-পুরুষের লাশ, নির্জন জনপদ, সর্বত্র বিরাজমান ভয়-ভীতি সন্ত্রাসের ছাপ।
৭১ আগস্ট গোলাম আজম হায়দারাবাদে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সদস্যপদে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানান। এ প্রসঙ্গে গোলাম আজম বলেন, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত ও সরকার কর্তৃক বহাল ঘোষিত ৮৮ জন সদস্যের অধিকাংশই পাকিস্তানে নেই। তিনি বলেন, বর্তমান মুহূর্তের আশু প্রয়োজন হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানে দেশপ্রেমিক ও ইসলাম-প্রিয় লোকজনের হাত শক্তিশালী করা। এ-সব লোক পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে সাহায্যে করছে এবং দুষ্কৃতকারীদের রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ ও বিদ্রোহীদের দমনে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে পূর্ণ সহেযাগিতা দান করছে। অধ্যাপক গোলাম আজম দেশকে খ–বিখ- হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্যে সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসছে। পরদিন গোলাম আজম পূর্ব পাকিস্তানে সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দেয়ার দাবী জানান।
তিনি এ প্রসঙ্গে ভাসানী ন্যাপ, আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগ, ওয়ালী খানের ন্যাপের পূর্ব পাকিস্তান শাখার নাম উল্লেখ করেন। তার মতে এসব দলের সদস্যরা এখনো পূর্ব পাকিস্তানে গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে হতাশার ভাব সৃষ্টি করছে। অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, কোন ভালো মুসলমানই তথাকথিত ‘বাংলাদেশ আন্দোলনের’ সমর্থক হতে পারে না। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিমূর্ল করার জন্যে একমনা ও দেশপ্রেমিক লোকরা একত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। রাজাকাররা খুবই ভালো কাজ করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান জামাতের ডেপুটি আমীর মওলানা মুহম্মদ আবদুর রহীম, পূর্ব পাক জামাতের আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম ও সাধারণ সম্পাদক এক যুক্ত বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদে ডাঃ এ এম মালিকের (স্বাধীন বাংলা বেতারের চরমপত্রের ভাষায় ঠ্যাটা মালেইক্যা) নিয়োগকে অভিনন্দিত করেন এবং সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা শাখা জামাতের সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতিতে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে ৬ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবস’ পালনের জন্য শাখাগুলোকে নির্দেশ দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন : এদিন আমাদের পাকিস্তানের সংহতি ও অখ-তার জন্যে শপথ নিতে হবে।
১০ সেপ্টেম্বর গোলাম আজম এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের বিরোধিতা করার জন্যে গঠিত পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলটি গঠনের সমালোচনা করে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিধিদলটি যথাযোগ্যভাবে গঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, প্রতিনিধিদলের তালিকায় হামিদুল হক চৌধুরী, বিচারপতি (অব.) এ কে এম বাকের, মৌলভী ফরিদ আহমদ, বিচারপতি হামদুর রহমান, ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, খান এ সবুর, ফজলুল কাদের চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিলো।
১৭ সেপ্টেম্বর অপরাহ্নে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডাঃ মালেক ১০ সদস্যের মন্ত্রী পরিষদের ৯ জনের শপথ গ্রহণ করেন। এরা এর আগে কখনো মন্ত্রীত্ব করেননি। মন্ত্রীদের মধ্যে ২ জন জামাতে ইসলামেরÑ মওলানা আব্বাস আলী খান (বর্তমান বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর) এবং মওলানা এ কে এম ইউসুফ (বর্তমান জামাতের নায়েবে আমীর)। ২০ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক গোলাম আজম এক বিবৃতিতে গভর্নরের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। ২৪ সেপ্টেম্বর জামাত মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের এক সংবর্ধনা দেয়। এখানে গোলাম আজম বলেন, জামাতের কর্মীরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদকে মেনে নিতে রাজী নয়। ২১ সেপ্টেম্বর গোলাম আজম এক বিবৃতিতে উদ্ধাস্তুদের (ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী পূর্ব পাকিস্তানী) জীবন নিয়ে ছিনিমিনি না খেলতে এবং তাদের দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দানে ভারতকে বাধ্য করার জন্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রতি আকুল আবেদন জানান।
৭১ সালের ইয়াহিয়ার দোসর হয়ে পাকিস্তানকে অখ- রাখার সর্বশেষ প্রচেষ্টা জামাত চালায় অক্টোবর, নবেম্বর, ডিসেম্বরের ১৭ পর্যন্ত। অবরুদ্ধ সংবাদপত্রে যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে নির্বাচন-নির্বাচন খেলা, গোলাম আজম ও জামাতের তৎপরতা এবং আলবদর, আল-শামসের কার্যকলাপের একটি খ-িত চিত্র পাওয়া যায়। নেপথ্য প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, রাস্তা-ঘাটে-গ্রাম-গঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সহাসিকতা এবং স্বাধীনতা প্রিয় জনগণের অসহযোগিতার চিত্র পাওয়া না গেলেও দশ বছর আগের সংবাদপত্রগুলো মূল্যবান দলিল।

৩ অক্টোবর ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান জামাতে
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:৫৩
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×