somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম দার্জিলিং

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা - কলকাতা - নিউ জলপাইগুড়ি - শিলিগুড়ি - মিরিক - দার্জিলিং - টাইগার হিল - বাতাসিয়া লুপ - ঘুম মনেস্ট্রি - ঘুম রেল স্টেশন - সিলারি গাও - সাইলেন্ট ভ্যালী - দামসাং ফর্ট - রিশপ - লোলে গাও- লাভা - লাভা মনেস্ট্রি - কালিম্পং - ডেলো - বুদ্ধা টেম্পল - হনুমান মন্দির - তিস্তা - শিলিগুড়ি - নিউ জলপাইগুড়ি - কলকাতা - ঢাকা।

অসাধারন ১০টা দিন কাটালাম। আমি বলব জীবনের স্মরনীয় ১০টা দিন। এত অল্প সময়ে এতগুলো জায়গা কাভার করতে পারব, চিন্তাও করিনি। কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র গুনীদা (পিনাক ভট্টাচার্য্য - মিউজিক ডিরেক্টর) ও রাজুদা (view this link - চিফ, চলন্তিকা ট্যুরিজম) এর জন্য। কোথাও আমাদের একটা মিনিট ও দেরী হয়নি। সব কিছুই ছিল আগে থেকে ঠিক করা একেবারে প্লানমত। খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে ৩০হাজারের মত, যা আসলেই অনেক কম।

আমরা বাংলাদেশ থেকে ৪ জন, পুনে থেকে আমাদের এক কলিগ আর কলকাতা থেকে আরো ৪ জন। খুবই সুন্দর একটা টিম ছিল, ছিল অসাধারন পরিবেশ। আমাদের টিমে ৩জন মেয়ে মেম্বার ছিল। টেনশন ছিল, তারা এই কঠিন ট্যুরের সাথে তাল মিলাতে পারবে কিনা। পেরেছে - হ্যাট্স অফ টু দোস গার্ল্স!

যে স্মৃতিগুলো মনে থাকবেঃ

১। বেনাপোল বর্ডারে গতানুগতিক ঝামেলা।

২। স্মরনীয় ট্রেন জার্নি - কলকাতা টু নিউ জলপাইগুড়ি

৩। মিরিক থেকে মাতাল করা ভিউ

৪। দার্জিলিং এ মেঘের রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো - আমরা যেদিন ছিলাম, সেদিন এতই মেঘ ছিল যে ২ হাত দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। বার আর কিছু খাবারের দোকান ছাড়া সব দোকানই প্রায় বন্ধ ছিল বিকেল ৫টা থেকে।

৫। টাইগার হিল - দুর্ভাগ্য, মেঘ আর কুয়াশার কারনে সানরাইজ দেখতে পারিনি। সেদিন কিছুক্ষনের জন্য তাপমাত্রা -১ এ নেমেছিল। ভাল লেগেছে দেখে যে সেই ভোর ৩টার সময়েই মেয়েরা একা একা কফি বিক্রি করতে চলে আসে দার্জিলিং থেকে। জানতে চেয়েছিলাম, মেয়েদের জন্য রিস্ক না এত রাতে বেরোনো - উত্তরে বলে, একটা মেয়ের গায় কেউ হাত দিয়ে দেখুক, পুরো দার্জিলিংয়ে আগুন জ্বলবে! কাঞ্চনজংঘার চূড়া দেখেছিলাম ৭টার দিকে, ততক্ষনে সূর্য্য উঠে গেছে।

৬। বাতাসিয়া লুপ - আরো একটা অসাধারন জায়গা। এই পাহাড়ের চারিদিকে টয় ট্রেন লুপের মত করে ঘুরে ঘুরে নিচ থেকে উপরে উঠে। পাহাড়ের উপর থেকে ভিউটা অসাধারন। এখানে দার্জিলিংয়ের লোকাল পোষাক পড়ে ছবি তুলতে পারবেন।

৭। ঘুম রেল স্টেশন - পৃথিবীর সব চেয়ে উচু রেল স্টেশন

৮। সিলারি গাও - অদ্ভুত সুন্দর একটা জায়গা। যাবার রাস্তা একটু বিপদসংকুল, কিন্তু যাবার পরে সব ভয় উবে যাবে নিশ্চিত। এখানে প্রকৃতির নির্মমতা আর অসাধারন সৌন্দর্য্য একই ফ্রেমে দেখতে পাবেন। এখানে যাবার আগের ৫০কিমি তেমন কোনো লোকালয় নেই, মানুষ দেখবেনই না। দেখলে মায়া লাগে এদের, জীবনে কিছুই এদের দেখা হয়নি। এখানে আরো পাবেন প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত পাহাড়ে সিড়ি। একেকটা সিড়ি একেকটা ছোটো লোকালয়। সেখানে ছোটো ছোটো বাংলো। খেতে হবে ওদের ওখানেই, হোটেল তো ভাল - চা বিড়ির দোকান পান কিনা সন্দেহ! তবে প্রকৃতি দেখতে হলে তো আপনাকে প্রকৃতির সাথেই মিশতে হবে :)

৯। সাইলেন্ট ভ্যালীর মত সাইলেন্ট জায়গা আমি কখনো দেখিনি। দিনের বেলায়ও এমন ভুতুড়ে একটা নীরবতা, নিশ্চুপতা - ঘোর লাগিয়ে দিবে নিশ্চিত। হাজার হাজার ক্রিসমাস ট্রির ভীড়ে আপনি বাকি দুনিয়া ভুলে যেতে পারবেন।

১০। রিশপে আমরা যে হোটেলে ছিলাম, সেটা ওখানকার সব চেয়ে উচু হোটেল। এখানে আমাদের রুমের মধ্যে গাঢ় মেঘ ঘোড়াফেরা করত, ইচ্ছে করেই জানালা খোলা রাখতাম দিনের বেলায়। এখানে তাপমাত্রা ছিল ১-৩ডিগ্রী। আমাদের যাবার ৪ দিন আগে নাকি তুষারপাত হয়েছিল। রাতে বারবিকিউ করেছিলাম ২ দিন, আসলে রাতে করার কিছু থাকে না আর।

১১। লোলে গাও তে দেখলাম প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা একটা বন। এখন যদিও সেটা সরকারী তত্বাবধানে নেয়া হয়েছে, টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। ভিতরে আছে একটা ঝুলন্ত ব্রিজ। আসলে সেটাকে বলতে হবে দোলনা ব্রিজ, অদ্ভুত ভাবে দুলে সারাক্ষন।

১২। লোলে গাও থেকে লাভা যাবার রাস্তা বেসম্ভব টাইপ ভয়ংকর রকমের সুন্দর! গায়ে কাটা দিবে আপনার, পশম একবার দাড়ালে, বসার আর চান্স পাবে না নিশ্চিত। রাস্তার কিছু কিছু জায়গায় একটা গাড়ি কোনো রকমে যেতে পারে, আর দুই পাশে গহীন খাদ। ভাংগা মাটির রাস্তা, কোথাও কোথাও যে রাস্তা আছে তাই তো বুঝতে পারতেছিলাম না। আমাদের মধ্যে ২-১ জন চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছিল, একজন হেটেই যেতে চেয়েছিল। এখানকার ড্রাইভার গুলো অসম্ভব ভালো, এদের স্কিল অসাধারন। সমতল ভূমির যত ভালো ড্রাইভারই হোক না কেন, ওখানে চালানো অসম্ভব। ওখানে চালাতে হলে, ওখানেই জন্মাতে হবে, হাহা। যে কখনো ওখানে ড্রাইভ করেনি, সে যদি ওখানে গিয়ে বলে এখানে ড্রাইভ করতে পারবে, কোনো ব্যাপারই না - আপনি বিনা ঝুকিতে আগে কানের নিচে একটা মারবেন, এরপরে বলবেন - এবার ড্রাইভ করে দেখা!

কিন্তু হ্যা, আপনি যদি রাস্তার ২পাশের স্বর্গীয় সৌন্দর্য উপভোগ করা শুরু করে দেন, তাহলে রাস্তায় আপনি একটুও ভয় পাবেন না। আপনি দেখবেন, সামনে ভয়ংকর বাক ও খাদ, কিছু মনেই করবেন না, ট্রাস্ট মি।

১৩। ডেলো তে ভাল লেগেছে, ওখানে প্যারাগ্লাডিং আছে। আমাদের ২জন প্যারাগ্লাডিং করেছে ওখানে, যতদুর মনে পড়ে ২৫০০/- জন প্রতি, তবে আপনাকে দরদাম করে নিতে হবে।

১৪। তিস্তা দেখে আসলাম। পানি অদ্ভুত রকমের সবুজ। তিস্তার ২পাড়ে রাস্তা যা পাহাড়ের গা ঘেষে একেবেকে চলে গেছে সিকিম আর জলপাইগুড়ির দিকে। আমি সিওর, এই রাস্তায় বসেই গানটা লেখা হয়েছিল - এই পথ যদি শেষ না হয়।

১৫। শেষের ৩ দিন কলকাতা ছিলাম। পুরো একটা দিন কাটিয়েছি কবিগুরুর শান্তি নিকেতনে। টাকা থাকলে ওখানে একতা বাড়ি করে ফেলতাম :) একটা বিকেল কাটয়েছি মান্না দের বিখ্যাত কফি হাউজে। ওখানকার বই মেলাতে ঘুরলাম একটা সন্ধ্যা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালও অনেক সুন্দর। সাউথ সিটি মার্কেটটা ভাল লেগেছে, কিন্তু আমাদের বসুন্ধরা সিটির তুলনায় অনেক ছোটো। সন্ধ্যেবেলা প্রিন্সেপ ঘাটে ঘুরতে অনেক ভাল লেগেছে। আসার আগের দিন মেট্রো রেল আর ব্রিটিশ আমলে ঐতিহ্য ট্রামে ঘুরে এসেছি।

সিকিম ঢোকার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পারমিশন ম্যানেজ করতে ২ দিন অপেক্ষা করা লাগত। ২ দিন সময় এফোর্ড করতে পারিনি, আফসোস।
পুরো ট্যুরে আমি একাই ৩৩২৪টা ছবি তুলেছি :D কিছু ছবি আপলোড করেছি।

আগামী মাসে ইচ্ছে আছে মুম্বাই আর সাউথ ইন্ডিয়াতে ট্যুর দিব, কিন্তু লোকজন পাচ্ছি না সাথে, দেখা যাক কি হয় :)


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×