somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"যেমন কর্ম তেমন ফল-নেতা নির্বাচনে থাকুন সচেতন"

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হ্যালো!
হ্যালো!!
হ্যালো!!!
রিক্সাওয়ালাকে নিজের দিকে তাকাতে বাধ্য করতে কয়েক বার হ্যালো হ্যালো বলার পরও তিনি শুনছেন না।রিক্সাওয়ালা সোজা রিক্সা থামালেন এক অফিসের দরজায়।রিক্সায় আরোহী ভদ্রলোক অবাক!তার গন্তব্যের বিপরীতে চলে আসায় অনেকটা রাগ হয়েই বললেন।
-আরে বেটা তোরে একটা চড় দিতে মন চায় বুঝলি,তুই যাবি আমার অফিসে আর তুই এলি এদিকে।
-স্যার,রাগ কইরেন না…সময় শেষ তাই আজই কিনতে হবে।
-মানে!
-মানে স্যার নমিনেসন পেপার।আমি ইলেকসনে খারাইমু।
ভদ্রলোক এবার হার্টফেল করার অবস্থা।বলে কি বেটা!।ভদ্রলোকের মুখভঙ্গি দেখে রিক্সাওয়ালাও একহাত নিলেন।
-কেন স্যার!আমরা কি মানুষ না এ দেশের জনগণ না?
-তা কেনো!আমি ভাবছি ইলেকসন করতে হলেতো সামান্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে তাছাড়া নমিনেসন পেপার কিনতে আর জমা দিতে কম করে হলেও পচিশ ত্রিশ হাজার টাকা লাগবে।
-কোন সমস্যা নাই স্যার,আমি মেট্ট্রিক পাস আর টাকা! আমার আরো দুটো ব্যাটারী রিক্সা আছে ওগুলা বিক্রি কইরা দিমু।
-এর পর তুমি চলবে কি করে?
-কি যে কন স্যার,আমি পাস করলে কি আর এগুলা চালামু!
-আগেতো পাস করবি তারপর না হয় ভাববি।
-কেন? এ দেশে এতো এতো চোর মাস্তান পাস করতে পারলে আমি পারমু না কেন? হুনছি আমাগো খেলোয়ার মাশরাফি,হিরো আলমও নাকি নির্বাচন করব আমি হেগো থেকে কম কিসে?পরিশ্রম করে খাই হুম।তাছাড়া আর কত কাল এমন গরিবী হালে থাকমু কন?পাস যদি নাই করতে পারি তবে ইলেকসন খারানোর কারনে এলাকায় মানষে আমারে এমপি সাব কইয়া ডাকবো তাতেই আমি কোটিপতি হইয়া যামু।বুঝলেন স্যার,আস্তে আস্তে কই-এদেশে রাতরাতি কোটিপতি হইতে রাজনিতীই হইল এহন উত্তম জায়গা।দেহেন না এহন রাজনিতী কে না করে বলেন!দেশের সব কিছুর কেন্দ্র বিন্দুই এহন রাজনিতীর কাতারে।

ভদ্রলোক ভাবলেন এর সাথে তর্কে পারা যাবে না।এ দিকে অফিসের সময়ও যায় যায়।
-ঠিক আছে ঠিক আছে,এই নাও তোমার ভাড়া।
রিক্সাওয়ালা ভদ্রলোকের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন।
-ছি ছি স্যার লজ্জা দিয়েন না,ভাড়া লাগবে না শুধু দোয়া চাই।
এ কথা বলে রিক্সাওয়ালা রিক্সার চাকায় লক করে নমিনেসন পেপার কিনতে দিলেন দৌড়।ভদ্রলোকটি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।আর ভাবেন হায়রে রাজনিতী তুই এখন কোন পর্যায়ে চলে গেলি।না আছে বংশপরায়নপর রাজনীতির অভিজ্ঞতা না আছে শিক্ষা আর জনপ্রিয়তার আলো।ইচ্ছে হলেই,যে কেউ নেতা হতে চায়,হয়েও যায়।

অফিশিয়াল ব্যাগটি হাতে নিয়ে মাথা নীচু করে কিছুটা হেটেই যাচ্ছিলেন তার অফিসের দিকে।হঠাৎ সামনে এসে দাড়ালেন তার এক সহকর্মী।
-আরে স্যার যে,হেটে হেটে কি অফিসে যাচ্ছেন?
-আরে না ভাই রিক্সায় আসছিলাম হঠাৎ রিক্সাওয়ালার সাধ জাগল নেতা হবার।সে অনেক কথা।চলুন ঐ চা দোকানটায় একটু চা পান করে রেষ্ট নিয়ে নেই।

ব্যাস্ত শহরে আজ কাল মানুষের ঢল।আসছে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন।তাই নমিনেসন পেপার কিনতে মানুষের জোয়ার।নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে তেমন কঠিন কোন নিয়ম নীতি না থাকায় দিন দিন বাড়ছে নেতা বা প্রার্থীর সংখ্যা।কখনো দেখা যায় একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী,দেবর-ভাবীর নমিনেসন নেয়া এবং নির্বাচনী লড়াই।আজব মানুষ আমরা কোন একটা সেক্টর বা উৎসতে প্রফিটেবল দেখলে যেন আমরাই হ্যামিলনের বাশিঁর সূরে মেতে উঠি।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতেই সেই দোকানে দল বল নিয়ে হাজির হলেন এক নির্বাচনী প্রার্থী।মার্কার কাগজটি জনে জনে বিলি করছেন তার কর্মীরা আর সে নিজে যখন, যেখানে যাকেই পাচ্ছেন বুকে বুক লাগিয়ে দোয়া ও দাওয়া চাচ্ছেন।ঠিক সেই সময় সেখানে হঠাৎ উদয় হলেন এক উড়নচন্ডী পাগলের।পাগলের শরিরের অবস্থার কথা বর্ননা নাই বা দিলাম তার শরির হতে নির্গত দুগন্ধ যেন আমাদের রাস্তাঘাটে ফেলে দেয়া পচা ডাষ্টের চেয়েও অসহনীয়।সেই পাগল আচমকা প্রার্থীকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকেন…যাবে যাবেগো এবার যাবেগো ইত্যাদি পাগলের যা প্রলাপ।
বেচারা প্রার্থী!নিজেকে খিচ মেরে সংযত রেখে পাগলের আলিঙ্গনকে স্বাগত জানালেন।তৎক্ষনাত তার কর্মীরা এসে পাগলটিকে ধীরে ধীরে নেতার কাছ হতে সরালেন।নেতার শরিরে জামা পুরোটাই ময়লা আর পাগলের মুখের লোল পড়ে নষ্ট হয়ে গেল।চায়ের দোকানে আর সবাইকে সালাম দিয়ে তড়িৎ তিনি চলে গেলেন তার দলবল নিয়ে।দোকানদারও কিছুটা স্বস্তি পেলেন।সেই দোকানেই বসা দুজন লোকাল বাসিন্দা বলাবলি করছেন।

১ম জন-শালায় একটা ভন্ড!গত বারও এ ভাবে ভোট ভিক্ষা চাইয়া এলাকায় কোন কাম করে নাই খালি নিজের পকেট ভরেছে।
২য় জন-তাতো হবেই!দেখতে হবে না ওর বংশ পরিচয়!ওর জাত খান্দান!ও’তো নন মেট্ট্রিক,ট্রাকের হেলপারি করত।দিন আনতো দিন খেতো।মায় করত বেশ্যাগিরি বাবা করত কুলিগিরি…ও আর কত ভালা হইব!ট্রাকষ্টেসনের সদস্য হইয়া কিছু টাকা কামাইছিলো!সেই টাকার গরমের নির্বাচনে দাড়াইয়া টাকা উড়াইয়া পাস করছিলো।এই বার কি করবে?
পাশেই বসে চা পান করছিলেন ভদ্রলোক ও তার সহকর্মী।লোকাল বাসিন্দাদের এমন তর্কে যেন কিছু বলতে ইচ্ছে করছে তার মন।এক সময় তর্কের সাথে তাল মিলালেন।মাঝে মধ্যে তার সহকর্মীও দু একটা কথা বলে ফেললেন।
-হ্যালো!ভাইজানরা কি এখানকার লোকাল পাবলিক?
-হ’ভাই।
-আচ্ছা,এই যে তর্ক করছেন দুজনে,এখানে কি আমি কিছু কথা বলতে পারি?যদি অনুমতি দেন।
লোক দুটো খুব উৎফুল্ল ভাব নিয়ে অনুমতি দিলেন।
-জি জি বলেন।
-আপনাদের কথায় বুঝতে পারলাম তিনি মানে ঐ যে কিছুক্ষণ আগে একজন নির্বাচন প্রার্থী এসেছিলেন ভোট চাইতে।তিনি সাবেক সাংসদ ছিলেন তাইতো?
১ম জন- জি,এমপি ছিলেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে,তো তিনি এমপিতে পাস করলেন কি ভাবে?আপনারা মানে জনগণ কি তাকে ভোট দিয়ে পাস করান নাই?নাকি সে ভোট ছিনতাই করে সন্ত্রাসী কায়দায় এমপি হয়েছেন?
২য় জন-না,না,সে ভোট পেয়েই পাস করেছিলো।
-তাহলে তার এমপি হওয়াতে তার দোষটি কোথায়?আপনি আমরাইতো তাদেরকে ভোট দেই তাই না?যদি আমরা আমাদের দেখবালের প্রতিনিধি নির্বাচনে সঠিক যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকে বেছে নিতে না পারি তবে তার এমপি হওয়ার পরবর্তী অপকর্মের দায় কার?নিশ্চয় আমাদের?
১ম জন মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললেন।
-এবার আসি আপনার শেষের কথায়।আমাদের দেশে প্রতি পাচ বছর অন্তর অন্তর আমরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেই।ভোট দেয়া একটি পবিত্র দায়ীত্ব এবং মৌলিক অধিকার।এখন আপনি আমি যদি সেই পবিত্র ভোটটিকে অপবিত্র করি টাকা খেয়ে তবে দোষ কার?আমি আমার কর্মফল ভোগ করব এটাই চিরন্তন সত্য,তাই নয় কি?সেতো আপনাকে আমাকে টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলল এ অবস্থায় তার কাছ থেকে কি আর কোন সুবিদা আশা করতে পারি?সেতো ভোটে পাস করে তার লগ্নি তুলবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?।
তর্ক করা দুজনেই একদম বোবা হয়ে গেলেন। এবার ভদ্রলোকটির সহকর্মী বললেন।
-আর ঐ যে বললেন বংশ পরিচয়!।ভাল এবং যোগ্য নেতা হতে হলে ভাল কোন বংশ পরিচয় লাগে না।জগতে এ রকম বহু উদাহরণ আছে যারা মুচির ঘরে জন্মেও সমাজ সেবায় জীবন দিয়েছেন,হয়েছেন জগৎ বিখ্যাত।তাইতো গুণিজনেরা বলে গেছেন”জন্ম হোক যথা তথায় কর্ম হোক ভাল”।
আর একটা কথা মনে রাখবেন,যে দেশের রাজনৈতীক নেতারা কেবল মাত্র তাদের স্বার্থ সম্বলিত নির্বাচনী প্রক্রিয়া কি ভাবে হবে তা ঠিক করতেই পার করে দিয়েছেন দীর্ঘ ৪০/৪৫টি বছর সে দেশের জনগণ হয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে আমাদের ভবিষৎ ভাল করার নেতা নির্বাচনে।শুধু অন্যের দোষ নয় নিজেকেও মাঝে মধ্যে আয়নায় দেখতে হবে নিজের চেহারাটা কেমন।তাই আসছে নির্বাচনে সঠিক নেতা নির্বাচনেই দেশ ও দশের উন্নয়ণ ঘটবে নতুবা আমরা যেই আছি সেই থেকেও পিছিয়ে পড়ব বহুগুণ দূরে।

তর্ক কারীদের মুখ বন্ধ-মাথা নত।শুধু মুখে বলে যাচ্ছেন,জি জি….স্যার।

ছবি:অনলাইন সংগ্রীহিত
প্রথম প্রকাশ:
প্রথম প্রকাশ সোনেলা ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×