somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলুপ্ত হতে চলেছে ফরিদগঞ্জের মৃৎ শিল্পের কারিগড়রা! হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎ শিল্প!

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিলুপ্ত হতে চলেছে ফরিদগঞ্জের মৃৎ শিল্পের কারিগড়রা! হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎ শিল্প!

রিফাত কান্তি সেনঃ-

ব্যাস্থ সময় পার করছেন ফরিদগঞ্জের কুমার সম্প্রদায়ের লোকেরা। ছবি: রিফাত।

মৃৎ শিল্প বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প।
জমিদারদের আমল থেকে এ শিল্পের সাথে জড়িত কুমার সম্প্রদায়।
আমাদের দেশে পাল বংশের লোকেরা ই মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত।
সুনিপুন কারুকার্য,দৃষ্টিনন্দন, বাহারী, রকমারী মাটির জিনিসপত্র বানিয়ে চলেছেন এরা।

মৃৎ শিল্পীদের বড় পরিচয় হলো, এদের কুমার নামে ডাকা হয়।এদের মৃৎ শিল্পের য়াদুকর ও বলা হয়ে থাকে।

আমাদের পূর্ব পুরুষরা নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারিক বস্তু হিসাবে মৃৎ শিল্প ব্যবহার করতেন।

এরা সাধারনত মাটির তৈরি পাতিল,সড়া,জলকন্দা,পিঠা তৈরির খাঁজ,খোবা,হাঁড়ি,পুতুল,ঘোড়া,গরু, হাতি সহ নানা রকম বাহারী দৃষ্টিনন্দন খেলনা তৈরি করেন।

কথা বলেছিলাম ফরিদগঞ্জের, ৭ নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড এর মৃৎ শিল্পীদের সাথে।


এরা হলেন---বলরাম পাল,যুবরাজ পাল,হৃদয় পাল,তুলসী পাল,স্বপনা পাল সহ প্রমুখ।

তারা জানান,মানুষ এখন আর মাটির জিনিসপত্রের প্রতি আগ্রহী না!

এলুমিনিয়াম,মেলামাইন,প্লাস্টিকের মেটাল সামগ্রীর সাথে খাঁপ খাইয়ে বাজার টিকে থাকাও কষ্টকর।

স্বপ্ল মূল্যে, বাজারে এসব সামগ্রী অহরহ পাওয়া যায়,ফলে মৃৎ শিল্পের প্রতি মানুষ ততটা আগ্রহী না।

তাদের বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এখন এই মহৎ পেশা থেকে সড়ে আসছেন।

যারা করছেন, তারা ও পৈতৃক প্রচলন ধরে রাখতে বানিয়ে চলেছেন মাটির তৈরি জিনিস।

বলরাম পাল ও যুবরাজ পাল, জানান--- মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্র তৈরি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়।
তাদের ঘরের মহিলারা মাটি মাড়িয়ে নরম করে ,যা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ।
তারা বলেন আমাদের খবর তেমন একটা কেউ নেয় না।

মা ছেলে মিলে তৈরি করছেন মাটির তৈরি কারুকার্য।

এর আগে ও একবার কোন সাংবাদিক এসে জেনো ছবি তুলেছিলো তাতে লাভ হয় নি।

তবে এতো দিন পর এই অজো পাড়ায়, সাংবাদিক দেখে খুশি তারা।

বললেন তাদের কোন এন,জি,ও সংস্থা ঋন এর ব্যবস্থা করে দেয় না।

তাদের খবর কেউ ই রাখে না!

নেই বিদ্যুত সংযোগ! যাতায়াত ব্যবস্থা ও নাজুক।

তারা বলেন, যদি বিদ্যুত আর যাতায়াত ব্যবস্থা সরকার ভাল করে দিতো,এবং প্রশাসনের তাদের নানা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতো তবে তারা এখান থেকে অনেক বড় কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারতো।যা আত্ম- কর্মসংস্থানে ব্যাপক প্রাধান্য বিস্তার করতো।

আধুনিক মেশিন যদি কিনতে পারতো এরা, তবে তাদের কারুকার্য যেমন আধুনিকতার ছোয়া পেতো, তেমনি জনসাধারন ও মাটির তৈরি শিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখাতো।

আবার ঐসব মেশিন বিদ্যুত ছাড়া চলেনা, তাই মেশিনগুলো কেনার চেষ্টা ও করেন না!কেনো না আজ ও তারা বিদ্যুতের সেবা পাননি।

তুলসী পাল------ ছোট বেলা থেকে ই মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত।





কখনো মাটির হাঁড়ি,কখনো কলস,কখনো বা খেনলা বানিয়ে চলেছেন এতটি বছর।

পরিবর্তন বলতে আগে তারুন্যের ভাব ছিলো তার মাঝে।
এখন বাধ্যক্য এসে তাকে ধরা দিয়েছে।
কিন্তু সেই যে মাটি দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত মাটির সরঞ্জাম বানিয়ে চলা, সেটার পরিবর্তন আদৌ হয়নি।

এত পরিশ্রমের পর ও জীবিকার তাগিদে বানিয়ে চলেছেন মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্র।

একটু ক্ষোভের ভাষায় বললেন----এত কষ্ট করে ও - এতো মনের মাধুরি মিশিয়ে যে কারুকার্য তৈরি করি, তার যথাযত মূল্য পাইনা।বিক্রি হয়না বলে বাজার থেকে ফিরিয়ে আনতে হয় এসব মাটির তৈরি জিনিসপত্র।
প্রতিদিনই আগে হাট বাজারে মাটির তৈরি এ সব সামগ্রী পাওয়া যেতো।

কিন্তু এসব মৃৎ সামগ্রী এখন আর তেমন চোখে পরে না।

সাধারনত আমাদের দেশে বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শিত হয় মাটির তৈরি এসব জিনিস পত্র।পহেলা বৈশাখ,হ্রাস মেলায় পাওয়া যেতো মৃৎ সামগ্রী।

এছাড়া এই মৃৎ শিল্পীরা তৈরি করেন হিন্দুদের পূজার প্রতিমা ও।

অসাধারন কারুকার্যময়,মন আঁকড়ানো প্রতিমা তৈরি করেন এরা।
শরৎ এর প্রাক লগ্ন থেকে ই প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্থ সময় পার করেন মৃৎ শিল্পীরা।

প্রতিমা তৈরির সাথে সংযুক্ত কুমোত পাল বলেন, এখন আর আমাদের চাহিদা তেমন নেই।
আমাদের প্রতিমা রং করার মত কোন আধুনিক প্রযুক্তি নেই,এছাড়া আমরা যেই খেলনা গুলো তৈরি করি তার ফিনিশিং ও তেমন ভাল দিতে পারি না।
আর এর জন্য আবার ও তিনি তাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে দোষারপ করেন।

তারা বলেন একসময় এই মৃৎ শিল্প দেশ থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কেনো না এই পেশায় তেমন কোন লাভ দেখছেন না তারা।
তাদের সন্তানরা ও এ পেশায় আসতে রাজি না।
তবে তারা মনে করেন তাদের যদি ঋন,বিদ্যুতের যথাযত যোগান দেওয়া যেতো।
বিভিন্ন এন,জি,ও,- এবং সরকারের নানা সুবিধা পেতো।
প্রযুক্তির নতুন নতুন ব্যবহার মৃৎ শিল্পে খাঁটানো যেতো, তবে এখান থেকে ও অনেক সম্ভাবনা বেড় হয়ে আসতো।

এই গ্রামটিতে প্রায় চল্লিশ টি পরিবার সরাসরি মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত।

হৃদয় পাল, তুলসী পালের ছেলে।স্কুল পড়ুয়া।মায়ের সাথে অবিরাম মাটির তৈরি জিনিস তৈরি করে চলেছেন।





সে জানায় তাদের চারুকারু বইতে নাকি এসব মাটির শিল্পের কথা উল্ল্যেখ আছে।
সে গর্ব করে বলে,এটা একটা মহৎ পেশা।
বইয়ের পাতায় আমাদের পেশা সমন্ধে ভালো,ভালো লেখা আছে।
প্রশাসনের উচিত আমাদের এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে আসা।
এই শিল্প শুধু কুমারদের নয়,এটা বাংলার ইতিহাস,ঐতিহ্যের ধারক।
এটি বিলুপ্ত হলে অনেক পরিবারকে ই পথে বসতে হবে।
কারন তাদের জীবিকার একমাত্র উৎস যে এই মৃৎ শিল্প।


[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/banglarjomidarrifat/banglarjomidarrifat-1454610309-d0619d1_xlarge.j
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিক্ষাঙ্গনে অপ্রীতিকর ঘটনার মুল দায় কুৎসিত দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৫

সোস্যাল মিডিয়ার এই যুগে সবাই কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবি সাজতে চায়। কিন্ত কেউ কোন দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে রাজী নয়। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটা মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে । এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোমলমতিদের নিয়ে আমি কি বলেছিলাম?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



আমি বলেছিলাম যে, এরা ভয়ংকর, এরা জাতিকে ধ্বংস করে দেবে।

ড: ইউনুসের সরকারকে, বিশেষ করে ড: ইউনুসকে এখন খুবই দরকার; উনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, কোমলমতিদের থামাতে হবে; কিভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পিটিয়ে মানুষ মারার জাস্টিফিকেশন!

লিখেছেন সন্ধ্যা প্রদীপ, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩

এদেশে অনেক কিছুই সম্ভব।বর্তমান এলোমেলো সয়য়ে যা সম্ভব না বলে মনে করতাম তাও সম্ভব হতে দেখেছি।তবে মানুষকে কয়েক ঘন্টা ধরে পিটিয়ে মারাকে ইনিয়েবিনিয়ে জাস্টিফাই করা যায় এটা ভাবিনি।তাও মেরেছে কারা?
একদল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত গভীর ষরযন্ত্র লিপ্ত। মুর্তি ভাঙ্গা,আগুন বিস্ফোরণ ও বোমা হামলা হতে পারে তাই দেশবাসীর সর্তক থাকুন।

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৪


পিনাকী ভট্টাচার্য ও বললেন ভারত ভেঙ্গে ১০ টুকরা হওয়ার পথে। যাদের বিন্দুমাত্র ভূ-রাজনৈতিক জ্ঞান আছে তারা এই একই কথা বলবে৷ আমি সেটা পিনাকীর আগেই বলেছিলাম। যাদের দিল মে হিন্দুস্তান তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আহা তোফাজ্জল

লিখেছেন সামিয়া, ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৪




মৃত্যু এখন এমনি সহজ
ভিডিও করতে করতে;
কথা বলতে বলতে
ভাত খেতে দিতে দিতে;
কনফিউজড করতে করতে
মেরে ফেলা যায়।

যার এই দুনিয়ায় কেউ অবশিষ্ট নাই
এমন একজনরে!
যে মানসিক ভারসাম্যহীন
এমন একজনরে!
যে ভবঘুরে দিক শূণ্য
এমন একজনরে!
যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×