গল্পের নায়ক লিংকন। লিংকন রা ৮ ভাই। সবার বড় ভাই সন্ন্যাসব্রত নিয়ে সংসারত্যাগী। মেজ পল্লী চিকিৎসক... বাবার মৃত্যুর পর তিনিই ছোট ভাই গুলোকে আগলে রেখে বড় করেছেন। বাড়িতে অল্প জমিজমা, তিনটা ভাই সেখানে কৃষিকাজ করে।
লিংকনকে নিয়ে সবার অনেক স্বপ্ন। ভাই তার স্বপ্ন দেখেন, লিংকন ডাক্তার হবে, সংসার এর হাল ধরবে। শুরুটা ভালোই ছিল, পরিবারের কষ্টের টাকায় প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে লিংকন ডাক্তার হয়েছেও। তারপর? লিংকনের এ কি হলো! ও যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে! সারাক্ষণ ঘোরের মাঝে থাকে, চোখ দুটো লাল, মাঝে মাঝে মাথায় যন্ত্রণা। বাড়ির সবাই মাথার যন্ত্রণাটা টের পেতেন না, কিন্তু রক্ত লাল চোখ দেখে ঠিকই বুঝতেন লিংকন মাদক গ্রহণ করে। যে ভাইকে এতো স্বপ্ন নিয়ে মানুষ করেছেন, সেই ভাইয়ের এই অবস্থায় পরিবারের সবাই বিচলিত। ইতোমধ্যে লিংকন বিয়েও করেছে। ক্ষোভে, অভিমানে পরিবারের সবাই লিংকনের সাথে দূরত্ব তৈরী করেন। লিংকনও চলে যায় র্কমস্থল ইনাতগঞ্জে। সেখানে 'সূর্যের হাসি চিহ্নিত' ক্লিনিকে তার চাকুরী। কিছুদিন পর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে লিংকন ভর্তি হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরিবার বিমুখ, মাদকাসক্ত ছেলের পাশে, ভাইয়ের পাশে তারা কেন দাঁড়াবেন? যা হয় হোক।
মেডিকেল কলেজের হোস্টেল এ লিংকনের রুমমেট ছিলেন ডাঃ রাজীব, তিনি এসে শুনেন সব ঘটনা। যে লিংকন কখনো কোন ধরণের নেশা করতো না, প্রাণোচ্ছল সেই লিংকন মাদকাসক্ত! বিশ্বাস হয়না তার। জানতে পরেন, লিংকনের মাথায় ব্যাথা হয় প্রায়ই। করা হয় সিটি স্ক্যান। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় লিংকনের ব্রেন টিউমার হয়েছে।
আসলে লিংকন কখনোই মাদকাসক্ত ছিল না! শুরু হয় ছোটাছুটি। চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে জমিজমা বিক্রি করে ভাইরা। মা নন্দা রাণী সরকার শোকে মুহ্যমান। লিংকনের বন্ধুরাও এগিয়ে আসে। সবার প্রচেষ্টায় লিংকনকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। অপারেশন হয়, ব্যয় হয় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। লিংকন যখন ভারতে চিকিৎসাধীন, তখনই দেশে জন্ম হয় লিংকনের সন্তান 'নীল' এর।
না, এটা কোন সিনেমার গল্প নয়- এটা জীবনের গল্প।
অপারেশন এর মাধ্যমে লিংকনের ব্রেন টিউমারটির ৮০% বাদ দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ এখন ডালপালা ছড়াচ্ছে। এখন লিংকনের যে অবস্থা, প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উন্নত চিকিসা হলেই বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারেন লিংকন। আর তা না হলে- মৃত্যু। যেহেতু নিজের অতো টাকা নেই, ডাঃ লিংকন মৃত্যুর স্বপ্নটিকেই আঁকড়ে ধরে আছেন।
ডাঃ লিংকনকে আমি চিনতাম না। এখনো যে খুব বেশী চিনি তাই বা বলি কি করে! সিলেটের বন্ধু আরিফ এর কাছ থেকে নামটি প্রথম শোনা। আরিফও তাকে চিনেছে সিলেট থেকে প্রকাশিত 'দৈনিক সিলেটের ডাক' পত্রিকায় 'ডাঃ নরপতি সরকারঃ অবারিত স্বপ্ন এবং মৃত্যুর হাতছানি' শিরোনামের লেখাটি পড়ে। লেখাটি পড়ে আরিফ ডাঃ নরপতি সরকার লিংকনের বাসায় গিয়েছিল। এখান থেকেই শুরু, আরিফ বললো, 'আমরা কি লিংনের জন্য কিছু করতে পারি না?' জানি না, কেন সেদিন আমরা সবাই এক যোগে বলে উঠেছিলাম 'হ্যাঁ, পারি'। তারপর সবকিছু জানার পর আমাদের মনে হলো, 'আমাদের পারতেই হবে'।
একজনের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা অনেক টাকা, কিন্তু ৩০ লক্ষ মানুষের জন্য তো মাত্র ১ টাকা করে ত্যাগ! আমরা সেই প্রত্যাশা নিয়েই এগিয়ে চলেছি।
লিংকনের বন্ধুরা লিংকনকে সহায়তার জন্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকের সিলেট বারুদখানা শাখায় একটি একাউন্ট খুলেছেনঃ
ডাঃ নরপতি সরকার লিংকন, হিসাব নম্বর ১২১১০১৬৯৭৯২.
আরো তথ্যের জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন- বাপ্পাদিত্য ০১৭১৪১৩২৯৬৪ এ।