somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মারমা উপকথা (রি-পোষ্ট)

২৬ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন আগে এক বুড়ো তার স্ত্রীর সাথে দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় বাস করতো। বুড়োর মনে কোন সুখ ছিল না। কারণ বুড়ি ছিল বদমেজাজী, ঝগড়ুটে আর লোভী। সারাক্ষণই সে ময়ূরকন্ঠী কন্ঠে তারস্বরে চিৎকার আর বকা-ঝকা করত। সঙ্গী হিসেবে পোষা কাকাতুয়া ছাড়া তার আর কেউ ছিল না।
একদিন বুড়ো কাজে মাঠে গেল। বুড়ির আবার ওইদিন কাপড় কাঁচার কথা। এইদিনে বুড়ির সচরাচর মেজাজ থাকে চরমে। সেদিন বুড়ি পায়েস রান্না করে ঠান্ডা করার জন্য একটা প্লেটে রাখলো। কাজ শেষে ফিরে এসে বুড়ি দেখে তার পায়েস খেয়ে কাকাতুয়া দাঁড়ে বসে ঝিমুচ্ছে। ক্ষেপে গিয়ে বুড়ি দা দিয়ে কাকাতুয়ার ঠোঁট দিল কেটে। “কেমন লাগে চুরি করে খেতে? মজা তাই না? এইবার এখান থেকে ফুট আর কোনদিন ওই মুখ দেখতে চাইনা”।
রক্তাক্ত পাখিটা বৃত্তাকারে কয়েকবার ঘুরে বিষন্ন মনে চলে গেল। ওইদিন মাঠ থেকে ফিরে বুড়োর মন খুব খারাপ হলো। শুরু হলো খন্ড-প্রলয় যা গভীর রাত পর্‌্যন্ত চলল। এতে লাভের লাভ কিছুই হলো না। সন্তান-সন্ততিহীন বুড়োর নিসঙ্গ জীবনে ঝগড়াটে বুড়ি ছাড়া আর কেউ থাকলো না।
এরপর অনেক মাস পরে একদিন পাহাড়ে গাছ কাটার সময় কে যেন বলে উঠলো,“শুভ সকাল”। আরে এতো তার পাখি!! ঠোঁট কেটে যাওয়ায় সে এখন মানুষের মতো কথা বলতে পারে। বুড়ো আর পাখি একে অপরকে কুর্নিশ করলো। সে বুড়োকে তার বাড়িতে তার স্ত্রী আর কন্যাকে দেখতে যাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করতে লাগলো। সবুজে ঘেরা পাহাড়ের মাঝে সবচেয়ে সুন্দর ছোট্ট বাঁশের ঘরটা তার। ঘরের সামনে ছবির মতো বাগান, স্বচ্ছ ঝিরিঝিরি ঝর্ণা আর পাথুরে আঁকাবাঁকা পথ। রাতের বেলা তার স্ত্রী তাদের মিষ্টি জেলী, কাস্টার্ড আর পায়েস খাওয়ালো। খাওয়ার সময় সে বুড়োকে কাঠের চামচ দিতে ভুল করলোনা। ভোজনের পর তার স্ত্রী হাটু গেড়ে চা পরিবেশন করলো। বন্ধুত্বপূর্ণ এই আপ্যায়নে বুড়ো যারপরনাই খুশি হলো। পাখি-দম্পতির পীড়া-পীড়িতে বুড়ো সে রাতে থেকে গেলো। চারপাশে এতকিছু দেখার আর করার ছিল যে বুড়ো তার থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে দিল। এমন আতিথেয়তা এর আগে কেউ তাকে দেয়নি এবং কৃতঞ্জতায় তার মন ভরে গেল। দিনেরবেলায় বুড়ো আশপাশের স্বর্গীয় সৌন্দর্যে উপভোগ করতো অথবা ছোট্ট মেয়ের সাথে খেলতো। সন্ধ্যাবেলা তার স্ত্রী তাদের মমতাময় হাতে খাবার পরিবেশন করতো। বুড়ো তার একাকী জীবন প্রায় ভুলে যেতে বসলো। পঞ্চম দিনে তার হঠাৎ মনে হলো তার যাওয়া দরকার। পাখিটাকে খুব দুঃখিত মনে হলো। যাওয়ার আগমুহূর্তে পাখিটা পাটে বোনা দুটো ঝুড়ি নিয়ে এল। একটা ভারী আর একটা হালকা।
“স্মৃতি হিসেবে দুটার যেকোনো একটা বেছে নিন”, পাখিটা বলল।
বুড়ো ছিলো নির্লোভ আর তার কোন কিছুর অভাব ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই সে হালকা ঝুড়িটা বেছে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিল।
বুড়োর অনুপস্থিতিতে বুড়ির খুব চিন্তিত, বিধ্বস্ত, বিষন্ন হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এর ছিটে ফোটাও দেখা গেলনা তার মাঝে। বুড়োকে দেখামাত্র ক্ষ্যাপা কুকুরের মত বুড়ি ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। উপহার দেখানোর আগপর্যন্ত বুড়ি ক্ষান্ত হলোনা। একসাথে তারা ঝুড়িটা খুলল।
কি আশ্চর্য! ঝুড়ি ভর্তি সোনা, রূপা, স্ফটিক আর মণি-মাণিক্য। ওখানে একটা টুপি ছিল যা পড়লে অদৃশ্য হওয়া যায়; আরো ছিল জাদুর বই যা দিয়ে যেকোন কিছু পাওয়া যায়; ওখানে আরো ছিলো মানিব্যাগ যা সবসময় ভর্তি থাকে যতই খরচ করা হোক না। মুহুর্তেই বুড়ির দুচোখ লোভে চকচক করে উঠল।
“আমার আরো চাই”, বুড়ি ঘোষণা দিল।
বুড়ো তাকে থামানোর বৃথা চেষ্টা করলো। সে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলো যে, তাদের যথেষ্ট আছে এবং আরো চাওয়া হবে অভদ্রতা ও লোভীর মত কাজ। বুড়ি তার কোন কথাই শুনলো না। সে সোজা গিয়ে হাজির হল পাখির বাসায়। যতপ্রকারে ভদ্র হওয়া যায় সে সব প্রকারে ভদ্র হওয়ার চেষ্টা করলো। পাখিটাকে খুব একটা খুশী মনে হল না। তবুও সে তার সাথে যথেষ্ট ভদ্র ব্যবহার করল। কিন্তু আপ্যায়নের সময় তার স্ত্রী বা কন্যাকে দেখা গেলোনা। যথেষ্ট সময় নিয়ে বুড়ি খাওয়া দাওয়া শেষ করলো এবং যখন বিদায়বেলা ঘনিয়ে এলো তখনও উপহারের দেখা না পেয়ে সে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো। বুড়ির তাকানো দেখে পাখি বুঝে নিল সে কি চায়। ঝুড়ি দেখার সাথে সাথে বুড়ি বড় ঝুড়িটা ঝাপটে ধরলো। ঝুড়িটা ছিল খুবই ভারী। বিজয়ীর বেশে সে ঝুড়ি নিয়ে হাঁপাটে হাপাঁটে বাড়িতে পৌঁছাল।
“তুমি কি বোকা। ঝুড়িটাতে নিশ্চয় আগেরটার চাইতে দ্বিগুন জিনিস আছে”।
কিন্তু একি!!!!! খসখসে শব্দ ছারা কিছুই শোনা যাচ্ছেনা। সোনা-রূপার পরিবর্তে ঝুড়ির ভিতরে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সরীসৃপটাকে মাথা নাচাতে-নাচাতে উঠতে দেখা গেলো। সাপটা বুড়িকে পেঁচিয়ে ধরলো আর মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত এভাবেই ধরে রাখল। ভয়ঙ্কর প্রানীটা বুড়োর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করলো না।
বুড়ো এলাকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হল। সে নিজের জন্য দামী একটা বাড়ি কিনলো এবং এক শিশুকে দত্তক নিল। যাকে সে লোভের ভয়ঙ্কর পরিণতি আর নম্র-ভদ্র থাকার উপযোগিতা বোঝাতে কখনোই ক্লান্ত বোধ করতো না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:৩০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×