somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবেগী পোষ্ট ( উৎসর্গঃ দেশী পোলা ভাইজান )

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশী পোলা ভাইজানের লোটাকম্বলের পোষ্ট আর মন্তব্যগুলান পড়লাম।

সত্যি কথা আমার অনেকদিন পরে কান্দন আইতাছে। মনে চাইতাছে মন খুইলা কান্দি।

আমার দেশের প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নাই, হতাশা নাই। আমার দেশের এটম বোম নাই। আমার দেশের গোলা ভরা জঙ্গী বিমান নাই। আমার দেশের মানুষ দিন আনে দিন খায়, না খাইয়াও দিন কাটায়। আমার দেশ খুবই দরিদ্র। আমার দেশরে অনেকেই চিনে না। খুবই সাদামাটা আমার দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রা।

কিন্তু আজকে বহুদিন পর সৃষ্টিকর্তার কথা মনে পড়ল। ধন্যবাদ দেওনের লাইগার উনার কথা মনে পড়ল। কাউরে আমার ধন্যবাদ দেয়া দরকার।

হে সৃষ্টিকর্তা তুমার কাছে আমার হাজার কোটি শুকরিয়া তুমি আমারে বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করতে পাঠাইছ। আমি এই পোড়া দেশের কাদামাটিতে জন্ম নিছি।

আমার দেশ। আমার অহংকার। আমার ভাষা আমার অহংকার।

না আমার দেশের ভাষা নিয়া আমার কোন চিন্তা নাই। আমার একটা পরিষ্কার, ষ্পষ্ট জাতীয়তা আছে, আমার একটা ভাষা আছে, আমার একটা দেশ আছে যেইটার নাম বাংলাদেশ।

মানলাম আজকালকার ডিজুস পুলাপানরা বাংলিশ চালায়, বহু ইংলিশ মিডিয়ামে সয়লাব রাজধানী।

তবুও আজ আমার ওদের প্রতি কোন ক্ষোভ নাই। ক্ষোভ করুম কার প্রতি??????? আমার নিজের ভাইয়ের প্রতি, বোনের প্রতি, বাবার প্রতি, মায়ের প্রতি, বন্ধুর প্রতি????

ওরাও তো আমার দেশে লোক। ওরাও তো আমার দেশের নাগরিক। মানলাম ওরা অনেক সাংস্কৃতিক বিষয় চর্চা করে না, তারপরেও ওদের প্রতি আজ আমার কোন ক্ষোভ নাই। আমার কোন ক্ষোভ নাই ঐ প্যান্ট কোমড় থিকা খুইলা যাওয়া ওই ডিজুসের প্রতি। কারণ ও আমার মতই এই দেশের মাটিতে বড় হইছে।

আজ আমি নতুন কইরা আরেকবার ঝালাই কইরা নিলাম নিজের অন্তরাত্মাকে। আমার জাতীয়তাকে। না আমার জাতীয়তা নিয়া আমার কোন দ্বিধা নাই। আমার ভাষা নিয়া আমার কোন দ্বিধা নাই। আমার ভাইয়েরা হয়তো আজ দুনিয়ার নানা দেশে নানা ভাষায় চলতাছে, অনেকেই হয়তো অন্য দেশের পাসপোর্টও নিছে কিন্তু তারা সবাই নিজের মূল বা উৎস নিয়া কোন দ্বিধায় ভোগে না। তারা যে যেমনে পারে এই কাদামাটির দেশ, পলিমাটির দেশ, ধানক্ষেতের দেশের জন্য যতটুকু পারে করে, তাদের মনে কোন দ্বন্দ নাই।

একটা দ্বন্দবিহীন দেশে জন্ম নেবার জন্য আজ আমি নিজের কাছে কৃতজ্ঞ, আমার বাবা মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ।

আমারে আজ চিন্তা করতে হয় না। নিজের ভাষায় কোন অনুষ্ঠান করলে, একটা জোরে ডাক দিলে দশজন আমার সাথে জুইটা যায়। আজও পুলাপান একটা স্বদেশীয় অনুষ্ঠান করার লাইগা, নিজ ভাষায় একটা অনুষ্ঠান করার লাইগা, নিজেদের একটা অনুষ্ঠান করার লাইগা বাবা মায়ের গালি খাইয়া, ঘরের খাইয়ায় বনের মোষ তাড়ানির লাইগা আইয়া পড়ে এক ডাকে।

আমার জাতীস্বত্ত্বা নিয়া আমার কোন চিন্তা নাই।

এটম বোম নাই?

বানামু।

সাবমেরিন নাই?

বানামু।

ফাইটার জেট নাই?

বানামু।

আমার দেশের পুলাপান এহনো বাংলায় পড়াশোনা করে যত কমই হোক না কেন। ডিগ্রীর অনেক পদার্থ, অংক বই পাওয়া যায় বাংলায়। আমার নিজের কাছে আছে কতগুলান। আমি বইগুলানরে নামাইয়া একটু চুমা খাইয়ায় লই। তারপরে লেখতাছি।

আমার সারা দেশের যে কোন জায়গায় আমি যাইতে পারি। হোক বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষা আমরা সবাই বাংলাভাষী, বাংলাদেশী। নিজেদের ভাষা নিয়া আমার কোন চিন্তা নাই।

আমার মনে চাইতাছে মুক্তিযোদ্ধাগোর পাও ধুইয়া পানি খাই। হে মুক্তিযোদ্ধারা তোমরা কি জান তোমরা আমারে একটা আস্তা দেশ দিয়া গেছ?????? আমি আজ সত্যিই আমার দেশের একজন গর্বিত নাগরিক। আমার নিজের একটা ঘর আছে, যেই ঘর সত্যিই একান্তই আমার ঘর। যেই ঘর আমার চাচার ঘর না, মামার ঘর না। আমার বাপের ঘর, আমার বসতভিটা। কেউ আমারে এইখানে কিছু কইতে পারব না। আমার পলিমাটি আজা আমার অহংকার।

কি কমু মনে চাইতাছে এহনই দেশে গিয়া একটা সিজদা দেই খোলা কপাল ঠেকাইয়া মাটিতে। আমার যে একটা নিজিস্ব দেশ আছে, আমার যে একটা নিজস্ব ভাষা আছে, কার কোন ছড়ি ঘোরানি নাই সেই দেশের উপরে সেই দেশের ভাষার উপরে আমার আজকে ভাবতে বড়ই ভাল লাগছে।

আমি স্বাধীন, পূর্ণ স্বাধীন। আমি ময়মনসিংহের যে কোন চায়ের দোকানে গিয়া কইতে পারি, এক কাপ চা দেন।

আমার দেশ আছে, আমার ভাষা আছে। দুর্নীতি করে আমার লোক। কোন বিজাতীয় আমার উপরে জোর খাটাইতে আইলে অন্তত সোজা খাড়াইয়া কইতে পারি, "যা ভাগ, এইডা আমার দেশ"।

হে ভাষা সৈনিকেরা তোমরা কোথায়। তোমাগোর পায়ের কাছে বইসা থাকতে ইচ্ছা করতাছে। তোমরা এইডা কি দিলা আমারে। হায় হায় একটা আস্ত মাতৃভাষা দিয়া ফালাইয়া আমারে। আমি এহন কি করুম! আমার একটা আস্ত মাতৃভাষা আছে। আমার ডাইনে বায়ে সামনে পিছে সবাই কয় দেই তাগোরো মাতৃভাষা এইডা। আমাগোর কলেজের পুলাপান দেহি বাংলাতে পদার্থবিজ্ঞান পড়ে।

হ ইংরেজী লাগে আমাগো উচ্চশিক্ষায়। কিন্তু আমার বড় ভাইরেও দেখছি আর্কিটেকচারের নোট বানাইতে বাংলিশে। মানে যত যাই হোক আমি বাংলা ব্যাবহার করতে পারি। যত সীমাবদ্ধতাই থাকুক না কেন আমি বাংলা ব্যাবহার করতে পারি।

হ ইংলিশ এহন প্রতাপশালী। কিন্তু ঐ ইংলিশ নিয়া যারা সারাদিন কাম করে ২১ ফেব্রুয়ারী হইলে হেরাও দেহি ফুল নিয়া দৌড়ায়! খালি পায়ে এহনো গ্রামে গঞ্জে মফস্বলে স্কুলের পুলাপানগুলি প্রভাতফেরীতে যায়।

আমার স্কুলজীবনে আমি দুইবার খালি পায়ে না হাটার জন্য প্রভাত ফেরীতে ফাকি দিছি। আমি সুদে আসলে এইডা শোধ করুম কথা দিলাম।

আইজকা কি যে শান্তি লাগতাছে কি কমু। আমার একটা দেশ আছে সেইখানে গেলেই বাংলাতে কথা কওন যায়। আমার দেশের প্রায় সব স্কুলগুলাতে বাংলায় পুলাপান পড়াশুনা করে। রবি, নজরুল, শামসুর, সুফিয়া কামাল কারো না কারো কবিতা পইড়া মুখস্ত করতে হয়। চারুপাঠের কথা মনে পড়তাছে খুব। সৈয়দ মুজতবা আলীর রসগোল্লার কথা আজ খুব মনে পড়তাছে। বঙ্কিমের রচনার শিল্পগুণ, মহাপতঙ্গ, একটি তুলসী গাছের কাহিনীর কথা খুব মনে পড়তাছে।

হ আমার একটা দেশ আছে যেইটা নিয়া আমারে কোন চিন্তা করতে হয় না। আমার একটা ভাষা আছে যেইটা নিয়া আমারে কোন চিন্তা করতে হয় না। বরং আমার মত বহু লোকের ভীড়ে আমি ডিজুসগোরে চ্যাপ্টা রাখতে পারি। ডাক দিলে আরো লোক আমার লগে জড়ো হয়। আমার একতা জাতীয়তা আছে যেইটা নিয়া আমারে চিন্তা করতে হয় না। এই পৃথিবীর মহাসৌভাগ্যবানদের আমি একজন।

আমি দেশী পোলা।

আমি বাংলাভাষী।

আমি বাংলাদেশী।

আর কি চাই!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২২
৮৮টি মন্তব্য ৮১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×