somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোস প্রেম বনাম ক্ষ্যাত প্রেম

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আধুনিক 'বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড'রা ভালোবাসা নামক অদৃশ্য পদার্থটাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। একটু খোলাসা করে বলি।

এখনকার বয়ফ্রেন্ড আর গার্লফ্রেন্ডরা সারা দিন ফেসবুকের নীল সাদা জগতে ম্যাসেজ চালাচালি করে, দেখা করতে ইচ্ছে হলে ছবি সেন্ড করে দেয়। মাঝে মাঝেই তারা 'ডেটিং' করতে বের হয়। মেয়ের পরনে থাকে টাইট জিন্স আর শার্ট। ছেলেটাও খুব মাঞ্জা মেরে বের হয়। ডেটিং করতে চলে যায় যমুনা ফিউচার পার্ক অথবা বসুন্ধরা সিটিতে। সেখানে একে অপরের পশ্চাৎদেশের কিঞ্চিৎ উপরে হাত রেখে ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে তাদের হাত নিচে নেমে আসেনা এমনটা বলা যায় না। তারা প্রমান করতে চায় যে তারা আসলেই 'বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড' এবং একের শরীরের উপর অন্যের পূর্ণ অধিকার আছে। আধুনিক বলে কথা!

বিশেষ বিশেষ দিবসে দামী দামী গিফট দিয়ে একে অপরকে খুশি রাখে। এক্ষেত্রে ছেলেরা অগ্রগামী। ছেলেরা বন্ধুদের সামনে দিয়ে তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে বুক ফুলিয়ে হেটে যায়। যেন সুন্দরি এক মেয়েকে পাশে নিয়ে হেটে বেড়ানোয় খুব বাহাদুরি আছে! মেয়েরা তাদের বান্ধবীর কাছে লাজুক কন্ঠে বলে না "জানিস, ও না আমাকে অনেক ভালোবাসে।" তারা খুব গর্ব করে বলে "এই দেখ, ভ্যালেন্টাইন ডে তে যদু মিয়া আমাকে এই রিং টা গিফট করসে। এটার দাম কতো জানিস? ফাইভ থাউজ্যান্ড টাকা!" অন্যদিকে ছেলেটা তার বন্ধুদের কাছে গিয়ে বলে "দোস্ত, কী যে এক খান মাল পাইসি না! পুরা মাথা নষ্ট।"

তারা মাঝে মাঝে ঝগড়া করে যার টপিক থাকে "তুমি ঐ মেয়েটার দিকে তাকালে কেনো?" "তোমার ফ্রেন্ড লিস্টে এই ছেলেটাকে রাখতে মানা করসি না?" "এই তোমার মোবাইলে তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার কেনো?" মূল প্রচেষ্টা থাকে একে অপরের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। বয়ফ্রেন্ডটা গার্লফ্রেন্ডের রাগ ভাঙ্গাতে মাঝে মাঝে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে আলো আঁধারে যা করে তাকে দেহ বিনিময় ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। যখন সেই নশ্বর দেহটার উপর আর আকর্ষন থাকে না তখন তারা ব্রেক আপ নামক বিচ্ছেদ যন্ত্রের ভিতর ঢুকে যায়। কিছুদিন একা থাকার পর তারা আবার সংগী জুটিয়ে ফেলে। আবার শুরু হয় ভালোবাসার নামে এক ধরনের অভিনয়। অর্থাৎ এই দেহটাই যেন আধুনিক ও স্মার্ট(!!!) বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডদের 'রিলেশনের' মূল চালিকা শক্তি। মন বিষয়টা এখানে গৌন।

উল্ট টাও দেখা যায়। কিছু কিছু ছেলে মেয়ে আছে যারা তাদের ভালোবাসার সম্পর্কটাকে 'বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড' আখ্যাযিত না করে 'প্রেমিক-প্রেমিকা' আখ্যায়িত করতে পছন্দ করে। ছেলেটা রাত জেগে খারাপ হাতের লেখায় চিঠি লিখে। পরদিন কোনো নোটের ফাঁকে সেই চিঠি তার প্রিয়তমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। মেয়েটা সেই চিঠি রাতের বেলায় পড়ে আর মুচকি মুচকি হাসে। চিঠিটা বুকে জড়িয়ে সুখের স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। যখন তাদের দেখা হয় তখন তারা একে অপরের দিকে লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসি দেয় যে হাসির মানে "এই আমি কিন্তু সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি।" তাদের ভালোবাসায় রুটিন বেধে দেখা করা বা ফোন করে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা থাকে না। মাঝে মাঝে দেখা হয় আর তখনই তারা আবেগের দোলাচালে হারিয়ে যায়। একে অপরের সাথে সময় কাটানর জন্য রমনা বা গুলশান লেকে যায়। তাদের ভালোবাসায় প্রতিদিনই ভ্যালেন্টাইন ডে। তাদের সম্পর্কে থাকে খালি নিষ্পাপ চাহনি। বিশেষ দিবসের জন্য ছেলেটা হাত খরচের টাকা থেকে টাকা জমায়। মেয়েটা তার প্রেমিকের অবস্থা বুঝতে পেরে দামী কোনো রেস্টুরেন্টে যেতে চায় না। আহ্লাদি কন্ঠে বলে "এই, চলোনা আজ ফুচকা খাই।" কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগের দিন ছেলেটা বলে "কাল তুমি সেই নীল শাড়ীটা পরে এসো। শাড়িটায় তোমায় খুব সুন্দর লাগে।" ঘুরতে ঘুরতে যখন ফুল দেখতে পায় তখন ছেলেটা ফুল কিনে এনে তার প্রেয়োষীনির খোপায় ফুল লাগিয়ে দিয়ে বলে "বাহ, বেশ লাগছে তো!" মেয়েটা তখন লাজুক একটা হাসি দেয়। হাটতে হাটতে তারা কুটুস কুটুস করে বাদাম ভেঙ্গে খায় আর সুখ দুঃখের গল্প করে। ছেলেটা হয়ত বেসুর গলায় একটা রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া শুরু করে। মেয়েটা হাসতে হাসতে গড়া গড়ি খায়।

ছেলেটার ছেড়া পাঞ্জাবী দেখে মেয়েটার খুব মায়া হয়। সে রিক্সা ভাড়া বাঁচিয়ে একটা সুন্দর পাঞ্জাবী কিনে ছেলেটাকে উপহার দেয়। উপহার হিসেবে কোনো দামী গিফটের বদলে মেয়েটা প্রেমিকের কাছ থেকে একটা কবিতা আশা করে। হোকনা সেটা ছন্দ ছাড়া!
রাতের বেলা তাদের ঘুম আসে না। "ঘুমালে হয়ত প্রিয় মানুষটাকে স্বপ্নে দেখব" এই ভেবে জোর করে ঘুমায়।
দিনে অগনিত বার ইংলিশে "I Love You" বলার চেয়ে দিন শেষে একবার লাজুক ভঙ্গিতে "ভালোবাসি" বলতেই তারা স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
মাঝে মাঝে তাদের মন কষাকষি হয়। মেয়েটা কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ছেলেটা তখন হয়ত একটা কবিতা বলে আর মেয়েটা অমনি হেসে দেয়। মনে মনে বলে "তোমার এই কবিতা শোনার জন্য আমি হাজার বার তোমার উপর রাগ করতে রাজি আছি।"

বিচ্ছেদ যে তাদের মধ্যে হয়না তা না। বিচ্ছেদ হলে তারা বুঝতে পারে আসলেই সেই মানুষটির জন্য তার ভিতর কত ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। বিচ্ছেদ হলে তারা নতুন সংগীর সন্ধানে যায় না। আগের স্মৃতি গুলো হাতড়াতে হাতড়াতে তারা আবার মিলে যায়। এভাবে দিন গড়ায়। তাদের ভালোবাসা আরও গাঢ় হয়। তাদের প্রেম রং হারায় না। কারন শরীর নশ্বর হলেও মন তথা আত্মা নশ্বর না। তাদের ভালোবাসা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টিকে যায়। হয়ত শেষ বয়সের এক পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার সময় ছেলেটা তার দাঁতবিহীন মুখ দিয়ে বলে উঠে "এই, তোমাকে অনেক ভালোবাসি।" মেয়েটিও কিশোরী দের মত বলে "যাহ, কী যে বলে না!"
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫৯
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×