somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিজাত পাড়ার হলুদ শার্ট সমাচার

০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হালে আমাদের স্থানীয় আন্তর্জালিক সমাজে হলুদ নিয়ে হট্টগোল চলছে। হলুদ নিয়ে হরেক রকম নাক সিটকানো কথা আমাদের সমাজেও প্রচলিত আছে। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যারা পাপী হয়ে যায় তাদেও বলা হয় হলুদ সাংবাদিক। আর যাদের নির্দিষ্ট কোন আদর্শ নেই, সুবিধাবাদী, সব মহলেই যারা সমান তাল দিয়ে চলে তাদের বলা হয় হলুদের গুড়া, মানে সব তরকারিতেই খাটে। হলুদের আবার মনোজাগতিক অর্থও আছে। রঙটা নাকি আভিজাত্য, বুদ্ধিমত্তা, সুখ ও আশাবাদের প্রতীক। পৃথিবীর বিভিন্ন রাজন্যবর্গ এবং প্রতিভাবান ব্যক্তিদের পছন্দের রঙও নাকি হলুদ। রঙের বিজ্ঞানে হলুদের গুরুত্ব অনেক। তাছাড়া এটা একটা নিরপেক্ষ রঙ। বর্ণান্ধ ব্যক্তিরা খুব সহজেই এই হলুদকে দেখতে পায়, দেখে শান্তি পায়, জীবন সম্পর্কে আশাবাদী হয়ে উঠে।
গত দুদিন আগে আমাদের এই দরিদ্র রাষ্ট্রের একটি অভিজাত অংশে হলুদের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। হলুদ খবর হয়ে এসেছে মিডিয়ায়। হট্টগোলের শুরু সেখান থেকেই। হলুদ টি শার্ট গায়ে জড়িয়ে আমাদের সমাজের অভিজাতদের গুটি কয়েক সন্তান রাজপথে গাড়ি থামিয়ে লাল লাল ফুল বিক্রি করছে। হলুদ শার্ট গায়ে জড়িয়ে রাজপথে নেমে আসার দৃশ্য এই বঙ্গভূমিতেই যে প্রথম ঘটলো তা নয়। আমাদের নিকটতম একটি রাষ্ট্র থাইল্যান্ডেও এমন শার্ট পড়ে একবার রাজপথ দখল করেছিল সে দেশের জনতার একটি অংশ। সে ২০০৮ সালের কথা। থাকসিন বিরোধী সেই জনতা রাজপথে নেমেছিল তার সরকারের বিদায় ঘন্টা বাজাতে। সেবার সে আন্দোলনের নাম দেয়া হয়েছিল ইয়েলো শার্ট মুভমেন্ট। ধার ছিল সে আন্দোলনের। থাকসিন বিরোধী জনতার এই যে হলুদ প্রেম তারও একটা রাজনৈতিক অর্থ ও তাৎপর্য ছিল। হলুদ হলো থাই রাজা ভূমিবলের রঙ, মানে রাজতন্ত্রের প্রতীক। থাইল্যান্ডে সপ্তাহের প্রতিটি দিনের জন্য আলাদা আলাদা রঙ আছে। রাজা ভূমিবল জন্মে ছিলেন সোমবারে আর থাইল্যান্ডের সংস্কৃতিতে সোমবারের রঙ হলো হলুদ। এ জন্যই রাজার সব পোশাক, অনুষ্ঠান ও আরো অনেক কিছুতে প্রাধান্য থাকে হলুদের। থাকসিন বিরোধী আন্দোলনের নাটের গুরু যেহেতু ছিল সেনাবাহিনী তাই তারা জনতার কেবলা ঘুরিয়ে দিয়েছিল রাজার দিকে। অনেকটা আমাদের মঈনের মত। গুপ্ত থেকে রক্ত চোষা- এই আরকি।
তো, আমাদের এই বঙ্গদেশের অভিজাত সন্তানেরা ঠিক কোন কারণে যে হলুদ শার্টকে বেছে নিল তা আমার জানা নেই। তবে যে কারণেই নিক না কেন এতে তাদের সব উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে তারা অভিজাত, প্রমাণ হয়েছে তারা আশাবাদী, প্রমাণ হয়েছে তারা উন্নত-মেধাবী। তারা হয়তো এও প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, তারা পরিবর্তন প্রত্যাশী।
সমাজের সবচেয়ে সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের এই সন্তানেরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে রাজপথে নেমেছে তা মহৎ, আমার সহমত। রাজপথে যে শিশুরা জীবিকার জন্য জান-প্রাণ নিয়ে খাটে তাদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে ও দারিদ্র দূর করতে তাদের এই প্রচেষ্ট। এমন কাজ আমাদের সমাজের আরো অনেক সংগঠনও করে থাকে। ব্লগারদের মধ্যেও এই প্রবণতা আছে। অসুস্থ্য কোন শিশুর জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে অনেক ব্লগারকেও এই কাজ করতে দেখা গেছে। সে কর্মচিত্র ব্লগেও শোভা পেয়েছে। এটা ভাল। কিন্তু আমাদের এই হলুদ সন্তানেরা যে কাজটা করছে তা নিয়ে অনেক বক্র মত লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে বলেছে, এভাবে রাস্তায় ফ্যাশনেবল ভিক্ষা করার চেয়ে ওদের বাপের কাছে হাত পাতলেই তো চলে। যাদের দৈনিক পকেট খরচ হাজার হাজার টাকা তাদের আবার পথিকের পকেটে হাত দেবার প্রয়োজন কী? নিজেরটা দিয়ে দিলেও তো এর চেয়ে অনেক টাকা ওঠে। এ কথা সত্য। তবে চেয়ে নেবার মধ্যে একটা আনন্দ আছে, ওরা হয়তো সে আনন্দটুকুই পেতে চাইছে। ভাল। বেঁচে থাকতে হলে আনন্দের প্রয়োজন আছে।
কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। সমস্যা হলো এদের পরিচয়। এরা কারা? এরা তারাই যাদের কারণে সমাজ আজ ভারসাম্যহীন। ওদের সামনেই একদল না খেয়ে শুকিয়ে মরে আর ওরা দামি তরলে নিজেদের পাকস্থলী সিক্ত করে। ওরা সমাজের সেই অংশ যাদের কোন সংস্কৃতি নেই। ওরা অন্যের সংস্কৃতির ভাড়া খাটে। একটি সমাজে ভিনদেশী সংস্কৃতি যে পথ দিয়ে বিনাবাধায় প্রবেশ করে সে পথের নাম হলো অভিজাত মহল। একটি সমাজ যাদের দ্বারা বেশি পঙ্কিল হয় তাদের নামও অভিজাত মহল। একটি সমাজ যাদের দ্বারা শোষিত হয় তাদের নামও অভিজাত মহল। এই অভিজাত মহল নেবার বেলায় নিয়েছে বিদেশী সংস্কৃতি, উন্নত শিক্ষা আর রাষ্ট্রের সবটুকু স্বীকৃতি। কিন্তু দেবার বেলায় দিয়েছে মধ্যরাতের বেহায়াপনা, ইয়াবার সুরসুরি আর অসহায়দের লাথি। তাই এই মহলের ছেলে মেয়েরাই যখন পথে নেমেছে ভিক্ষা করতে তাও আবার এমন মানুষদের জন্য যাদের আজকের এই দুরাবস্থার জন্য দায়ি তাদের অভিজাত নামক একটি ক্ষুদ্র সমাজ।
এ এক সাম্রাজ্যবাদী আচরণ। প্রথমে দংশন পরে বিষ মোচন। কিন্তু পিতার দোষে সন্তানদের দোষী করা যায় না। তাই এই সব অভিজাত সন্তানদের এই কর্মকে ততক্ষণ সমর্থন করা যায় যতক্ষণ প্রমাণিত না হয় যে এদের উদ্দেশ্য অসৎ, লোক দেখানো এবং হীন স্বার্থ সিদ্ধিমূলক। এই কাজের মাধ্যমে তারা যদি প্রমাণ করতে পারে গায়ে হলুদ শার্ট জড়ালেও তাদের মানসিকতা এখনো হলুদ (সংকীর্ণ অভিজাত) হয়ে যায়নি তবে- অভিনন্দন। কিন্তু দুদিনের এই মহত্ত্ব প্রদর্শন শেষে তারা যদি আবারো ফিরে যায় সেই পুরনো বিনাশী বৃত্তে, যে বৃত্ত সমাজকে গিলে ফেলতে চায় আভিজাত্যে তবে আমরা ওদের প্রতি রয়ে যাবো নিস্পৃহ।

নোটাবিনি: আমার প্রিয় রঙগুলোর মধ্যে হলুদ একটি।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×