শুক্রবার, করিম সাহেবের জন্য আরামের দিন। পুরো সপ্তাহ অফিসের কাজে ব্যাস্ত থাকার পর এই দিন তিনি একটু অলস সময় কাটাবার সুযোগ পান। সকালের অলস ঘুমের পর প্রায় দশটাবাজে তিনি উঠলেন। নাস্তা করে বারান্দায় এসে খবরের কাগজ নিয়ে বসলেন। নকশি, তাঁর মেয়ে, এই বছর নার্সারীতে ভর্তি হয়েছে। সপ্তাহের অন্যন্য দিন সকাল ভোরেই তাকে স্কুলে চলে যেতে হয়। আজ শুক্রবার তাই স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই। বারান্দার ঠিক উলটো দিকে বড় তাল গাছটার মাথায় বাবুই পাখিরা বাসা বুনছে। সকাল হলেই এই দিকটা কিচিরমিচিরে ভরে উঠে। নকশির পাখি খুব পছন্দ। সকালে নাস্তা করে সে বারান্দার এই পাশটায় বসে আছে। পাখিদের দেখছে। কাগজে আঁকাআঁকি করছে। বাবা বারান্দায় এসে বসায় সে বাবার পাশে এসে বসল-
-আব্বুগো।
-হুঁ।
-এগুলা কি পাখি?
-বাবুই পাখি।
-ওরা কি করে?
-বাসা বানায়।
-কেন বাসা বানায়?
-থাকার জন্য!
-ওদের বাসা নাই?
-না, সেজন্য বানাচ্ছে।
-ওরা কি স্কুলে যায়?
-না।
-ওরা কি ছোট?
-না।
-স্কুলে যায় না কেন?
-ওরাতো পাখি, সে জন্য।
-পাখি হলে অনেক মজা। স্কুলে যেতে হয় না।
-হুঁ। আবার আকাশেও উড়তে পারে।
-পাখি সুন্দর।
-হুঁ, আমাদের নকশি মত।
-না, আমি বেশি সুন্দর।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি বেশি সুন্দর।
নকশি মতযোগ দিয়ে আবার পাখি দেখতে থাকে। একটু পর-
-আব্বু।
-হুঁ।
-পাখিরা কি কাজ করে?
-করেতো। বাসা বানায়, খাবার সংগ্রহ করে, বাচ্চাদের দেখাশুনা করে।
-ছোট পাখিরা কি কাজ করে?
-না মনে হয়।
-পাখি হলে অনেক মজা। ছোট পাখিদের কাজ করতে হয় না।
-তোমারওতো কাজ করতে হয় না।
-কিন্তু, আফিয়াতো কাজ করে।
করিম সাহেব খবর কাগজ থেকে মুখ তুলে তাকায়-
-আফিয়া তোমাকে কিছু বলেছে?
-না।
-তাহলে একথা বলছ কেন?
-ওতো আমার সাথে খেলতে আসে না। বলে খালাম্মা বকা দিবে।
করিম সাহেবের মতটা খারাপ হয়ে গেল। আফিয়া আর নকশি একই বয়সি। আফিয়ার বাবা আরেক বিয়ে করে সে বৌয়ের সাথে থাকে। আফিয়াদের খোজ-খবর নেয় না। করিম সাহেব এবং তাঁর স্ত্রী শীলা দু’জনই চাকরি করেন। বাসার কাজে সাহায্য করার জন্য কাউকে একজনকে খুঁজছিলেন। আফিয়ার মা শোনার পর আফিয়াকে দিয়ে গেলেন। বাচ্চাটার এই বয়সে খেলাদুলা করার কথা, কন্তু তাঁকে অন্যের সংসারের ঘানী টানতে হচ্ছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন শীলাকে বলতে হবে, যেন আফিয়াকে মাঝে মাঝে খেলাদুলা করতে দেয়। এতে নকশিও একজন খেলার সঙ্গী পাবে।
[চলবে...]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৮