আমার একমাত্র ছেলেটার বয়স সাড়ে চার। কাজের চাপে তাকে একেবা্রেই সময় দিতে পারি না। গতকাল সন্ধ্যায় একটু সময় পেয়ে তাকে নিয়ে হাটতে বের হলাম। বাসার কাছেই সংসদ চত্ত্বর। সেখানে পৌঁছাতেই শুরু হল ছেলের আবদার এ খেলনা কিনে দাও, ওই খেলনা কিনে দাও। খেলনাওয়ালারাও বেশ চালাক। তারা আমার ছেলে কাছ থেকে সরে না। তাই ছেলেকে কোলে নিয়ে ভিড় এড়িয়ে আসাদ গেটের দিকে হাটতে শুরু করলাম।
এক জায়গায় দেখলাম একটা লাইটের নিচে ওজন মেশিন নিয়ে একজন লোক বসে আছেন। সিগারেটও বিক্রি করেন। একটু হুজুর টাইপের, বেশভূষা পরিচ্ছন্ন। এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে দাঁড় করিয়ে দিলাম ওজন মেশিনে। ওজন দেখার পর আশে পাশে অনেক ফাঁকা জায়গা দেখে ছেলেটাকে নামিয়ে দিলাম দৌড়াদৌড়ি করার জন্য।
আমি সিগারেট বিক্রেতা কাম ওজন পরিমাপকারীর পাশে বসে তার সাথে গল্প শুরু করলাম।
আমি - ভাই কী করেন? ( প্রশ্নটা করে ভাবলাম লোকটা তো বলবে ওজন মাপি আর সিগারেট বেচি।)
লোকটি - একটা চাকুরী করি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যার পরে এখানে বসি।
আমি- চাকুরী থেকে কত পান?
লোকটি - ৫০০০ টাকা।
আমি - কত আয় হয় ওজন মেপে?
লোকটি - ৪০-৫০ টাকা থাকে।
আমি - সিগারেট বেচে?
লোকটি - এইরকমই।
আমি - তাহলে দৈনিক ১০০ টাকা থাকে?
লোকটি - কোনদিন ৮০ - কোনদিন ১০০ ঠিক নাই।
আমি - পুলিশে ঝামেলা করে না?
লোকটি - না।
আমি - পুলিশে টাকা পয়সা নেয় না?
লোকটি - না, তবে যখন উইঠা যাইতে বলে তখন সাথে সাথেই উইঠা যাইতে হয়।
এর মধ্যে এক দুজন সিগারেট নিলো, ওজন মাপালো। গ্রাম্য টাইপের দুজন লোক এসে বসলো। লোক দুটিকে দেখে আমার টাউট প্রকৃতির মনে হল। যা হোক কিছুক্ষণ পরে লোক দুটো বিদায় নেয়ার পরে আবার শুরু করলাম আলাপচারিতা।
আমি- লোকগুলো কি আপনার পরিচিত।
লোকটি - না
আমি- আমার কাছে কিন্তু দুজনকে টাউট মনে হয়েছে।
লোকটি - কত পদের মানুষ এখানে আসে। একবার একজনে একহাজার টাকার জাল নোট দিয়া গেছে।
আমি - কেমনে?
লোকটি - এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট নিয়া এক হাজার টাকার নোট দিছে। আমার একবার সন্দেহ হইছে। পাশে আরেকটা বেডারে দেখাইলাম, সে কইলো টাকা ঠিক আছে, জাল না। আমিও চিন্তা করলাম একটু দোনোমোনো কইরা ৮৬০ টাকা ফেরত দিলাম। ১৩০ টাকা কিনা ১৪০ টাকা বেচলাম। পরের দিন ব্যাংকে নিয়া গেলাম টাকাটা ভাঙ্গাইতে। ব্যাংকের ক্যাশিয়ার টাকাটা নিয়া দেইখাই কইল জাল। ম্যানেজাররে দেখাইল। তারপর টাকাটা ছিদ্র কইরা দিল। ( আমি মানস চক্ষে লোকটার কলিজা ছিদ্র হয়ে যেতে দেখলাম)