ছবি - sharechat.com
প্রেম যে কখন কিভাবে কার জীবনে আসবে তা আগে থেকে কেউ বলতে পারেনা বা তা পরিকল্পনা করেও হয়না। তবে সমাজে প্রচলিত একটি বাণী " প্রথম দেখাতেই ভালোবাসা " - এটা কিভাবে যেন আমার জীবনে শতভাগ সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছিল । যদিও এর পূর্বেও জীবনে কয়েকবার প্রেম আসি আসি করছিল যার শুরুটা হয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণীতে থাকা অবস্থায়ই (তা হয়ত ভাল লাগা ছিল ,প্রেম নয় তবে সে এক চমতকার ঘটনা ছিল)। তার পর দশম শ্রেণীতে এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে থাকা অবস্থায়ও সে আসবার চেয়েছিল তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল না থাকার কারনে এবং অন্যের ভারবহনে (দায়িত্ব পালন) অক্ষমতার কারনে সে সব প্রেমের কলি আর ফুল হয়ে ফুটেনি ,কলি থেকেই ঝড়ে গিয়েছিল।
মানুষ সামাজিক জীব। সে একা বাঁচতে পারে না। জীবনে চলার পথে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের সংগীর প্রয়োজন।যদিও আমরা সবাই জানি দিন শেষে আমরা সবাই একা তবে একটা সময় আমরা সবাই সংগী চাই আর তখন সবাই বেমালুম ভুলে বসে থাকি, "আসবার কালে আসলাম একা, যাইবার কালেও যাইব একা…"। তারপরেও আমরা ভালবাসি-তবুও আমরা ভালোবাসি। যখন আমরা ভালোবাসি কাউকে, তখন ভাবি, " ভালোবাসার থেকে সুন্দর আর কিছু নেই"। আর যখন কারো ভালোবাসা-বঞ্চিত হই, তখন ভাবি, " ভালোবাসা বড়ই নিষ্ঠুর,ভালোবাসা যতটুকু দেয়,তার থেকে বেশি নেয়" - হায়রে বিধাতার খেয়াল…….. হায়রে অবাক ভালোবাসা।
জীবনের অনেকটা সময় পাড়ি দেওয়ার পরও কখনো সুযোগ হয়নি কোন ১লা ফাল্গুনে বাসন্তী রঙ এর শাড়ী পড়া কারো হাত ধরে ‘বসন্ত-বরণ উৎসব’ দেখতে যাওয়ার বা কোন ২রা ফাল্গুনে সকাল বেলায় সুদর্শনা বংগদেশী ললনার খোঁপায় একখানা লাল গোলাপ গুঁজে দিয়ে বলা হয়নি ভালোবাসি তোমাকে অথবা ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে ঘোরা হয়নি বিশেষ কাউকে নিয়ে রমনার বটমূলে। তারপরেও কয়েকবারই এসেছিল প্রেম এই অভাগার জীবনে।
অনার্স প্রথম বর্ষ কিভাবে যেন চলে গেল টেরই পেলামনা। প্রেম হয়নি তবে আমার ঠিক আগের রোল নং ছিল আমারই নিজ জেলার ছোটখাট গড়নের চমতকার এক সহপাঠি লিপি (প্রথম বর্ষের পরীক্ষার পর ছুটিতে মারা যায় লিউকোমিয়ায় ভূগে। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন ) এবং আরেক সহপাঠি মোনার সাথে মিলেমিশে।
ছবি - sharechat.com
ক্লাসমেটের সাথে প্রেম হঠাত করে হয়ে গিয়েছিল ( এ যেন অনেকটা - Right moment never comes stupid, right moment always has to be made by yourself! ) অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের আষাড়ের ঘনঘোর বর্ষার এক ম্যারাথন বৃষ্টির দিনে ।
সকালে টিউটরিয়াল পরীক্ষা ১১ টায় শেষ করে বৃষ্টির কারনে পরবর্তী ক্লাস বন্ধ । বারান্দায় বৃষ্টি দেখতে দেখতে স্রষ্টার আরেক সৃষ্টির মাঝে কখন যে হারিয়ে গিয়েছিলাম টের পাইনি ।ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসা এবং আলাপ পরিচয়ের মাঝে কিছু সময়ের পরে অবাক হয়ে দেখি সেই বংগললনা (বাবলী) আমারই ক্লাসের (সেইম ইয়ার) এবং একই বিষয়ের । প্রায় অনেকটা সময় কাটিয়ে যখন বৃষ্টি বন্ধের পর নিজেরা যার যার পথে গিয়েছি পরে দেখি বৃষ্টির কারনে প্রকৃতি যেমন কিছুটা সিক্ত হয়েছে ঠিক তেমনি আমাদের হৃদয়ও কখন যেন সিক্ত হয়ে গেছে , নিজেদের অজান্তে ।
ছবি - http://khonjkhobor.in
তার পর কি হলো ?
তার পরের কাহিনী ?
যা হওয়ার কথা তাই হয়েছে। একসাথে-হাতে হাত রেখে শিক্ষা জীবন শেষে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস (সংসার) শুরু তবে মাঝখানের কাহিনী এতটা সুখের নয়। একসাথে থাকার জন্য পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা কঠিন ও বন্ধুর পথ । সে আরেক বিশাল ও করুণ কাহিনী।
আর এখন ?
সংসার জীবনে এখন সুখী না দুঃখী?
এটাও কোটি টাকার প্রশ্ন তবে খারাপনা । তবে, " যাকে চাই,তাকে ভুল করে চাই,যাকে পাই,তাকে চাই না" - এমন নয়।
ভাল-মন্দ মিলিয়ে চলে যাচছে দু'জনের একসাথের পারিবারিক জীবন (ইতিমধ্যে সাথে বোনাস আরো দুই দুইটা বদের পয়দা,যারা নিজেরাও হতে পারে ভবিষ্যতের ক্লাসমেট প্রেমিক - কারন ,তাদের সামনেই রয়েছে উদাহরন) এই দুনিয়ার তাবত জটিলতার মাঝেও।
সৃষ্টিকর্তার কাছে এখন একটাই চাওয়া, জীবনের বাকী দিনগুলি যেন বুড়া-বুড়ি একসাথে মিলে-মিশে পাড়ি দিতে পাড়ি , দুনিয়ার সকল জটিলতার পরেও।